দক্ষিন আফ্রিকার কার্টুনিস্ট এএনসির প্রেসিডেন্টকে এক হাত নিয়েছেন

এএনসির প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা সম্প্রতি শিরোনামে উঠে এসেছিলেন যখন অন্যান্য জিনিষের মধ্যে দূর্নীতির জন্য তার বিরুদ্ধে মামলা আদালত বাতিল করে দেয়। এটি অনেক দক্ষিণ আফ্রিকাবাসীর মনোবেদনা সৃষ্টি করে কিন্তু তার লাখ লাখ সমর্থক, বিশেষ করে এএনসি দলের শরিকরা এতে আনন্দ প্রকাশ করে। জোনাথন শাপিরো বা জাপিরো নামক দক্ষিন আফ্রিকার শীর্ষ রাজনৈতিক কার্টুনিস্ট জুমাকে নজরে রেখেছিলেন এবং সানডে টাইমসে একটি বিতর্কিত কার্টুন ছাপান (ওয়েইটিং ইন ট্রানজিট ব্লগের সৌজন্যে):

এটা আমার দেখা একটা খুবই খারাপ কার্টুন আর আমি নিশ্চিত যে জাপিরো এর জন্য বিপদে পড়বে কার্টুনের মূল চরিত্রের সাথে, যদি তা এখনো না হয়ে থাকে। তবে ব্যাপার হলো যে কার্টুনে উন্মুক্ত হওয়া গল্প দেখে যদিও আমি সিটিয়ে যাচ্ছি কিন্তু তা তো সত্যি। জুমার ব্যাপারে আমার মাথায়ও এই চিন্তা (বা ধারনা) এসেছে কয়েকবার আর আমি জানি অনেকেই এরকম ভেবেছে। জাপিরো তার সৃজনশীল ক্ষমতা ব্যবহার করে এই চিন্তাগুলো ছবিতে দেখিয়েছেন।

আর এই কারনে আমি জাপিরোর এতো বড় ভক্ত।

এই কার্টুন দেখে জুমা প্রকাশ্যে এটাকে তিরষ্কার করেছে আর ভয় দেখিয়েছে যে সে জাপিরোর বিরুদ্ধে মামলা করবে। জাপিরো মনে হয় জুমার মন্তব্যে দমে যাবে না। ওয়েটিং ইন ট্রানজিট এ নিয়ে আর একটা পোস্ট দিয়েছে – “জুমার উপর আবারো জাপিরোর দংশন” নামে যেখানে জাপিরোর দ্বিতীয় কার্টুন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে যা বেশীরভাগ মিডিয়া কাভার করেনি…

জাপিরো আজকে আবারও একেছে তার সম্পুর্ণ গুণ দিয়ে, তার প্রথম কার্টুনের মূল চরিত্রের সাথে সংঘাতের প্রেক্ষিতে। যাক, আবার জাপিরো স্টাইলের ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন দিয়ে সে আঘাত করেছে।

গ্লাস পার্ল মার্কেটিং জাপিরোর জন্য তাদের সমর্থন দেখিয়েছে…

ভোর ৬.১৫ তে আমি একেবারেই সজাগ ছিলাম যখন এডেন থমাস, ক্যেপ টক ব্লগে জানালো যে সানডে টাইমসে জাপিরোর নতুন বিতর্কিত কার্টুন প্রকাশিত হয়েছে। খুবই ভালো লাগে জেনে যে জুমা আর তার সমর্থকদের নিয়ে কথা বলার মতো সাহসী কেউ একজন আছে। ভালো করেছেন জাপিরো!

ইন দ্যা নিউজ একটা মজাদার দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে দেখেছে ব্যাপারটা…

মনে হচ্ছে এএনসির প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমাকে আজকাল সংবাদের শিরোনাম থেকে দূরে রাখা যায় না। গত সপ্তাহান্তে, কার্টুনিস্ট জোনাথন শাপিরো যিনি জাপিরো ছদ্মনামে পরিচিত একটি কার্টুন ছেড়েছেন যেখানে দেখানো হয়েছে যে জুমা তার প্যান্ট খুলছে আর তার জোট সঙ্গীরা ন্যায়ের দেবীকে নীচে ধরে রেখে তাকে প্ররোচিত করছে, যা বোঝাচ্ছে যে জুমা ন্যায়কে ধর্ষণ করতে যাচ্ছেন। যেমন সানডে টাইমসে এই কার্টুন দেখে বেশীরভাগ আশা করেছিল, জুমা এই কার্টুনকে সহজে নেবে না আর পরামর্শ দেয়া হচ্ছে যে জুমা জাপিরোকে অভিযুক্ত করবে। জুমা জাপিরোকে মানহানীর দায়ে অভিযুক্ত করবে। এটা প্রথমবার না কারন এর আগেও জুমাকে নিয়ে জাপিরো কার্টুন ছেপেছে যখন ২০০৬ এ জুমা ধর্ষণের অভিযোগ থেকে মুক্ত হন।

মনে হচ্ছে জুমা আর জাপিরোর মধ্যে এবারের এই ঝগড়া আদালত পর্যন্ত গড়াবে। কার্টুন প্রকাশের পর জাপিরো এগিয়ে এসে বলেছে, ”আমি কার্টুনের পাশে দাড়াচ্ছি আর আমি ক্ষমা চাইব না। যদি সে আমাকে অভিয়ুক্ত করতে চায় তাহলে আমি লড়ব।”

যদি আপনি কার্টুনটা না দেখে থাকেন এখানে ক্লিক করে দেখতে পারেন আর আমদেরকে জানান যে আপনি কি মনে করেন। এই কার্টুন কি ভুল? জাপিরোকে এর জন্য কি অভিযুক্ত করা উচিত? এএনসি কি ঠিক বলছে যে এই কার্টুন ভুল? অনেক প্রশ্ন উঠছে। আপনাদের কাছ থেকে শোনা যাক।

পিয়েরে দে ভস বলেছেন ধর্ষণের রুপকটা ব্যবহার করা যথাযথ হয়নি:

হয়তো কেউ তর্ক করতে পারেন যে একজন কার্টুনিস্ট একটা বিপদজনক বা অনৈতিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করার জন্য ধর্ষণের রুপককে ব্যবহার করতে পারে – যদিও আমি নারী না আর কখনো ধর্ষিত হইনি, তাই হয়তো আমি সঠিক ব্যক্তি না এটা বিচার করার। ধর্ষণের রুপক অবশ্যই জোরালো- বিশেষ করে দক্ষিন আফ্রিকার মতো দেশে যেখানে এতো নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে এবং হচ্ছে।

কিন্তু আমি অবিশ্যই চিন্তা করি যে ধর্ষণের রুপক ব্যবহার করে, জাপিরো ধর্ষণের বিভীষিকাকে সস্তা করে ফেলছেন না- আমাদের গভীরভাবে পিতৃতান্ত্রিক আর যৌননির্ভর সমাজের প্রেক্ষিতে- আমাদেরকে এই আঘাত থেকে অনুভুতিহীন হতে সাহায্য করছে না। এমন সমাজ যেখানে অনেক পুরুষ নারীকে এখনো দখলের জিনিষ মনে করে, আমি চিন্তা করি যে হয়তো এই ধরনের কার্টুন তেমন পুরুষদেরকে ইঙ্গিত দেবে যে ধর্ষণ খুব একটা খারাপ কিছু না।

আর একজন কার্টুনিস্ট, দ্যা পেপার বয়, তার নিজের একটা আকর্ষনীয় কার্টুন দিয়েছে যেখানে জুমা আর জাপিরোর মধ্যকার দ্বন্দ্ব তুলে ধরা হয়েছে (এবং বলেছেন):

দক্ষিণ আফ্রিকার আন্তর্জাতিক পুরষ্কার প্রাপ্ত স্থানীয় সম্পাদকীয় কার্টুন শিল্পী, জোনাথন সাপিরো বা জাপিরো এএনসির প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমাকে ক্রোধান্বিত করেছেন (জাতীয় সংবাদপত্র সানডে টাইমসে একটা কার্টুন ছাপিয়ে)।

ঘটনার আর এক দৃষ্টিভঙ্গী হচ্ছে যে সব সময় নিম্নমানের কার্টুনিস্টরা জনগণের কাছে পরিচিতি পায় না যেমন পায় সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের (পড়েন রাজনীতিবিদদের) কাছ থেকে, … দৃষ্টিকটু কার্টুনটি এখানে দেখেন।

… পরিশেষে, আই লাভ এস এ, বাট… সম্প্রতি একটা লেখায় মন্তব্য করেছেন এই কার্টুন কিভাবে সরকারের মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রনের চেষ্টাকে বাড়িয়ে দিয়েছে…

জাপিরোর সাম্প্রতিক কার্টুন আপনি পছন্দ করেছেন, হ্যা? এএনসি একটা বিল পাশের চেষ্টা করছে যা জাপিরোর মতো এমন কার্টুনকে বেআইনি ঘোষণা করবে।

এরা এমন লোক যারা ঘৃণা ছড়ায় আর হত্যার ভয় দেখায় কিন্তু কেউ একটা বোকার মত কার্টুন আকলে বা তাদেরকে অপমান করে কিছু লিখলে তারা দু:খিত হয়। হঠাৎ করে তারা চিৎকার করে ‘আমাদের সেন্সরশীপ দরকার!’

খুবই খারাপ যে আমরা একটা বিল পেতে পারিনা যাতে অল্পবুদ্ধির লোক জনগনের সামনে কথা না বলতে পারে তা রোধ করা যায়। দেশটা কিছু নিস্তব্ধতা কাজে লাগাতে পারতো।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .