থাইল্যান্ডে বিক্ষোভ: অভিজাতদের সংঘাত

থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সামাক সুন্দারাভেজকে সরকারী পদে থাকাকালীন সময় টিভির একটি রান্নার অনুষ্ঠানে (পারিশ্রমিকের বিনিময়ে) অংশগ্রহনের জন্য সংবিধান লংঘনের অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আদালত তাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বলেছে

প্রথমে সামাকের (সরকারী) দল তাকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে পুন:নির্বাচনের কথা দেয়। কিন্তু পরে দলের নেতারা জানান যে তাকে এই পদের জন্য আর বিবেচনা করা হবেনা। আসছে বুধবার সংসদ নতুন এক নেতা নির্বাচন করবে

বিক্ষোভকারী যারা গভার্নমেন্ট হাউস দখল করে ছিল তারা সামাককে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। কিন্তু তারা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবে যেহেতু তারা রাজনৈতিক সংস্কার দাবি করছে।

আরও বিস্তারিত বলার আগে থাইল্যান্ডের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সংকটের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা: পিপলস এলায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি (পাড) এর বিক্ষোভকারীরা গত আগস্টে গভার্নমেন্ট হাউসে হামলা করেছে সামাকের পদত্যাগ দাবী করে। তারা সামাককে পদচ্যুত নেতা থাকসিন সিনাওয়াত্রার হাতের পুতুল বলে দাবী করেছে। পাড নেতারা নতুন ধরনের সরকার চাচ্ছে। তারা একটি গভার্নিং বডি দ্বারা বেশীর ভাগ সংসদ সদস্যকে নিয়োগ করাতে চায় যেহেতু তারা ভয় পায় যে থাকসিনের ধনী সহচররা থাইল্যান্ডের গ্রামের দরিদ্রদের ভোট কিনতেই থাকবে।

গত শুক্রবার থাইল্যান্ডের বর্তমান সংকট সম্পর্কে আলোচনার জন্য পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকজন ব্লগার ভার্চুয়াল একটি সভা করেছে। এবসল্যুটলি ব্যাঙ্কক.কম এর ড্যান আমাদের প্রধান সমন্নয়কের কাজ করেছে।

থাইল্যান্ডের সংকটকে ড্যান “অভিজাতদের সংঘাত” হিসাবে ব্যাখ্যা করেছে। সে লক্ষ্য করেছে যে পুরানো অভিজাতের মধ্যে সেনাবাহিনী, ব্যাঙ্কক এর অভিজাতশ্রেনী আর শিক্ষাবিদ। নতুন অভিজাতরা থাকসিনের দলের।

ড্যান আরো ব্যাখ্যা করেছেন আর তথ্য দিয়েছেন কেন আদালত সামাকের বিরুদ্ধে দ্রুত রায় দিয়েছে:

“থাকসিন কেকের বড় এক টুকরো নিয়ে নিয়েছিল (পুরানো অভিজাতদের কাছ থেকে) এখন মনে হচ্ছে পুরানো অভিজাতরা চেষ্টা করছে আর পারছেও কিছু কলকাঠি নাড়তে… এমনকি আদালতকে প্রভাবিত করতে। আমি বলতে চাচ্ছি সাংবিধানিক আদালত সামাকের ব্যাখ্যা সোমবার শুনেছে, আর মঙ্গলবারই তাকে দোষী হিসেবে রায় দেয়া হয়েছে।”

এই সংকট থাইল্যান্ডকে গভীরভাবে বিভক্ত করেছে:

“আপনারা দেখতে পাচ্ছে, দুই বড় শক্তি পরস্পরের বিরোধীতা করছে। মধ্যবর্তী অবস্থানে আছে ‘নিমিত্তকারী’ আর চরমপন্থী ব্যক্তিরা। থাকসিনের আমলের থেকেও বেশী ঘৃণায় সমাজ বিভক্ত। এটা পুরোপুরি শহর বনাম দেশ… শিক্ষিত ব্যক্তি বনাম গরীব কৃষক…একটি সম্পূর্ণ সাদা কালো দুনিয়া কোন সমঝোতার অবস্থা ছাড়া।

হংকং থেকে কেভিন লি মন্তব্য করেছে:

“দুর্ভাগ্যবশত: শহর-গ্রাম বিভেদ রাজনৈতিক সংগ্রামে ব্যবহার করা হচ্ছে।”

(ভার্চুয়াল) সভায় আগতরা পাড এর প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছে। বিক্ষোভকারীরা ‘নতুন রাজনীতি‘ চায় বা ‘পরিচালিত গণতন্ত্র‘। কেউ কেউ এটাকে ‘কার্যকর গণতন্ত্র’ বলেছে। সংক্ষেপে তারা কম ভোট প্রক্রিয়া এবং নতুন সংসদ স্থাপনে বেশী পরিমানে নিয়োগ চাচ্ছে।

এটা অনেকটা হংকং এর রাজনৈতিক ব্যবস্থার মতো। ওইওয়ান সাথে সাথে জানিয়েছে যে হংকং এও এই ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে সমালোচিত। সে মনে করে যে পাড এর এই প্রস্তাব থাইল্যান্ডের ক্ষমতা নেয়ার অজুহাত।

ড্যান এটি মানছেন:

“তারা শুধু চায় একটা নতুন ধরনের অপ্রমানিত রাজনীতি যা কেউ আসলে বুঝবে না। এমনকি পাড তার অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে। পাড এর আদর্শ হয়ত উত্তম কারও তাতে দ্বিমত নেই। কিন্তু পদ্ধতি কার্যকর না।”

তাইওয়ান থেকে পোর্টনয় একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করেছে: কারা এই আগ্রহী দল বা শিক্ষাবিদকে (গভার্নিং বডি) নিয়োগ করবে? পাডের প্রস্তাব অনুযায়ী, এরাই বেশীরভাগ সংসদ সদস্যদের নিয়োগ দেবে। পোর্টনয় চিন্তিত যে ‘একদল অনির্বাচিত অভিজাত আর একদল অনির্বাচিত অভিজাতকে নির্বাচন করবে।’

ড্যান বলেছেন:

“এটা আর একটি অমিমাংসিত প্রশ্ন। এটি ‘সংখ্যালঘুদের উপর জুলুম’ হবে, ছদ্ম গণতন্ত্রের আড়ালে।”

কেভিন লির সংশ্লিষ্ট একটি পর্যবেক্ষন আছে:

“লোকের দৃষ্টি যখন ব্যাঙ্ককের দিকে, মনে হচ্ছে কেউ খেয়াল করছে না যে উত্তর থাইল্যান্ডে কি ঘটছে… সেখানে পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে।”

ওইওয়ান যোগ করেছেন যে গ্রামীন দরিদ্রদের কথাও শোনা দরকার:

ড্যান লিখেছে যে “থাইল্যান্ড বিশাল এক শূন্যতার মধ্যে- কেউ জানে না কাল কি হবে।” কেভিন লি শেষ করেছে:

“আমি মনে করি একদিন বিক্ষোভ শেষ হবে, কিন্তু অর্থবহ ফল ছাড়া।”

ভার্চুয়াল এই আলোচনা পূর্ব এশিয়ার ব্লগারদের দ্বিতীয় উদ্যোগ। প্রথম ভার্চুয়াল আলোচনা একমাস আগে তাইওয়ানের দূর্নীতি কেলেন্কারী নিয়ে হয়েছিল।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .