দক্ষিণ ওসেটিয়া: যুদ্ধ সম্বন্ধে একজন ফটোসাংবাদিকের মতামত

দক্ষিণ ওসেটিয়া সংকটের বিস্তারিত ও তাজা খবরের জন্যে গ্লোবাল ভয়েসেস বিশেষ কাভারেজ পাতা দেখুন

ককেশাসের বর্তমান সংঘর্ষপূর্ণ এলাকা থেকে প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ এখনও রাশিয়ার ব্লগোস্ফিয়ারের এখানে সেখানে দেয়া হচ্ছে। দক্ষিণ ওসেটিয়া এবং জর্জিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার এক মাস পরে সেপ্টেম্বরের ৮ তারিখে রাশিয়ার ফটোসাংবাদিক ওলেগ ক্লিমোভ যুদ্ধ সম্পর্কে তার মতামতগুলো তার ব্লগে দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন যে যুদ্ধ কেমন ছিল, এর গন্ধ কি এবং এর অভিজ্ঞতা কি ছিল, প্রচার মাধ্যম ও বিভিন্ন প্রপাগান্ডা সম্পর্কে, এবং যুদ্ধের সময়কার লুটপাট (যা মনে হয় সব যুদ্ধেই দেখা যায়) সম্পর্কে তার মতামত ব্যক্ত করেছেন।

[ওলেগ ক্লিমোভের তোলা ‘তস্খিনভ্যালি আর গোরীর মাঝে’ থাকা শান্তিরক্ষীদের ছবি]

[ওলেগ ক্লিমোভের তোলা ‘ফিউনারেলের পর তস্খিনভ্যালির ধ্বংসাবশেষের ছবি’]

[ওলেগ ক্লিমোভের তোলা ‘তস্খিনভ্যালি আর গোরীর মাঝে একটি গ্রামের’ ছবি]

সবচেয়ে খারপ ব্যাপার হলো আমার কাছে যুদ্ধের গন্ধ অসহ্য লাগে। পোড়া ভেঁজা প্লাস্টিক ও কাঠের গন্ধ, মৃত মানুষের গন্ধ ইত্যাদি সম্মিলনে একটি বদ গন্ধ। “যেন এক কড়া সুগন্ধি'। যুদ্ধের এই গন্ধ যেন মানুষের পঞ্চেন্দ্রিয়েরই একটি যার দ্বারা কিছুদিন আগের ঘটে যাওয়া অতীত সম্পর্কে আঁচ করা যায়। আমার সবসময়ই একটি খেদ আছে যে তোলা ছবির কোন গন্ধ থাকে না, যেমন টাকাপয়সারও কোন গন্ধ নেই। থাকলে আমরা সবাই এতদিনে তার দ্বারা অসুস্থ হয়ে পরতাম। যুদ্ধ থামার পরবর্তী সময়গুলোতে বিশেষ করে, যখন আমরা ছিন্নবিচ্ছিন্ন লাশ এবং অন্যান্য বিভীষিকা দেখি ছবির মাধ্যমে।

আজকে, আমি ভেস্তি-২৪ চ্যানেলে (রাশিয়ার একটি সরকারী টিভি চ্যানেল) একটি ডকুমেন্টারী দেখলাম। এখানে বলা হচ্ছে যে জর্জিয়ানরা যুগ যুগ ধরে ‘আবখাজ’ ও ‘ওসেটিয়ানদের’ বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়েছে। আমি সত্যিই জানি না ‘জাতিগত বিদ্বেষ’ ছড়ানোর বিরুদ্ধে কোন আইন আছে কি না। এই বিদ্বেষ শুধুমাত্র রাজনীতিবিদ আর সাংবাদিকদের মাধ্যমেই ছড়ানো হচ্ছে না, সাধারণ মানুষের মাধ্যমেও। এখন মানুষ মানুষকে ঘৃণা করে। এবং ‘বিজ্ঞ রাজনীতিবিদরা’ বলেন যে মানুষের মন বোঝা কঠিন কিছু না.. কিন্তু এক্ষেত্রে মানুষের মনের ভাব বুঝতে কষ্ট হচ্ছে।

জর্জিয়ানদের বাড়ীঘর পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে এবং লুটপাট চালানো হচ্ছে। ওসেটিয়ানদের বাড়ীঘরেও এমন হচ্ছে। এবং তারা ক্রমাগত লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালিয়েই যাবে। হয়ত এটিই মানুষের স্বভাব। ‘জাতিগত যুদ্ধ'গুলোতে সবসময়ই এরুপ হয়ে থাকে। বসনিয়া এবং কসোভোতে এমন হয়েছিল। ‘পালা'য় (সারায়েভোর কাছে) এবং নিউট্রাল জোনে রুশ কশাক এবং ভাড়াটে যোদ্ধারা লুটপাট করেছে। এসবটুকুই যেন পূর্ব পরিকল্পিত ছিল। তারা জীবন বাজি রেখে কার্পেট, টিভি সেট ইত্যাদি সার্বিয়ান জোনে নিয়ে গিয়ে দালালদের কাছে বিক্রি করেছে। এরা আবার দামী জিনিষগুলো বেসরকারী মার্কেটগুলোতে বিক্রি করেছে। আমি এসব নিজে দেখেছি এবং এর স্বপক্ষে বলতে শুনেছি: “স্বপ্রণোদিত যোদ্ধাদের” তো এছাড়া কিছুই পাবার নেই কারন “অন্য কারো যুদ্ধে” লড়ার জন্যে কেউ তো তাদের সম্মানী দিচ্ছে না।

তস্খিনভালের বাইরে (এবং ভেতরেও) কোন খালি বাসার সামনে একটি গাড়ী থামানো থাকলে বোঝা যাবে যে লুটেরারা ব্যস্ত। আপনি যদি জিজ্ঞেস করেন, “তারা কি করছে?”। তারা উত্তর দেবে “ওহ কিছু না, আমাদের আত্মীয়রা এখানে থাকত..”। এমনকি বেশ কিছু খুনও হয়েছে আর লুটেরারা সব পুরুষই নয় মহিলারাও ছিল। ব্ল্যাকমেইলের ঘটনাও শোনা গেছে। যেমন, এক গ্রামে স্থানীয় পুলিশ সব বাসিন্দাদের ডেকে বলেছে “যদি তোমরা ১০০০০ ডলার না দাও আমরা পুরো গ্রাম পুড়িয়ে দেব!”(এই ঘটনার সত্যতা ডাচ দুতাবাস দ্বারা সমর্থিত)।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .