দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া: এক সারি দু:খজনক ঘটনা

মিয়ানমারে একটি ধংসাত্মক সাইক্লোন। চীনে বিশাল এক ভূমিকম্প যা হ্যানয় আর ব্যাংকক পর্যন্ত অনুভূত হয়েছে। সুমাত্রা দ্বীপে দুটি ভূমিকম্প যা ইন্দোনেশিয়া আর মালায়েশিয়াকেও নাড়িয়ে দিয়েছে। একটি শক্তিশালী টাইফুন যা ফিলিপাইন্সের অনেক শহর ধ্বংস করেছে।

গত মাসে, প্রাকৃতিক বিপর্যয় দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় আঘাত হেনে হাজার হাজার জীবন হানি ঘটিয়েছে আর শত কোটি টাকার সম্পত্তির ক্ষতি করেছে।

ব্লগার লিন লেং ল্যাং বলেছেন:

“আহ, এটা খুবই দু:খজনক। এশিয়াতে হচ্ছেটা কি?!”

মিয়ানমার এখনো ভুগছে যেখানে সাইক্লোন আক্রান্তরা ক্ষুধা আর অসুখে জর্জরিত। সামরিক শাষকদের অযোগ্যতা আর একটা অনর্থ যা মিয়ানমারের সাইক্লোন আক্রান্ত এলাকায় পরিস্থিতি আরো খারাপ করেছে।

হয়তো একজন আমেরিকান অফিসার ঠিক বলেছেন যে এই সামরিক শাষকদের অপরাধমূলক অবহেলার জন্য তারা সাইক্লোন এ আক্রান্তদের কাছে বড় ধরনের আন্তর্জাতিক সাহায্য পৌঁছাতে দিচ্ছে না। অথবা সিঙ্গাপুরের প্রধান মন্ত্রী যেমন বলেছেন, “মিয়ানমার বাইরের সাহায্য সংস্থার প্রবেশ ভয় পায় কারন তা প্রমাণ করতে পারে যে শাসক গোষ্ঠী এই বিপর্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।”

সামরিক জান্তার এমন ব্যবহারের জন্য এন্ডো'স ডানজিওন ব্লগ মনে করে যে মিয়ানমারে সাহায্য দেয়ার ব্যাপারে বাইরের সবার দ্বিধা ঠিকই ছিল। এটা সত্যিই অবাক হওয়ার মতো ঘটনা যে সাইক্লোন হওয়ার তিন সপ্তাহ পরে মিয়ানমারের নেতারা এই সংক্রান্ত সরকারী বক্তব্য দিয়েছে। ১ লাখেরও এর বেশী লোক মারা গেছে আর জেনারেল থান শোয়ে এটি চেপে রাখতে সমর্থ হয়েছেন। অন্য দেশ হলে এই নেতাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হত।

বিপর্যয় সামলানোতে সফল হবার জন্য সরকার গ্রহণযোগ্যতা থাকা গুরুত্বপূর্ণ। সাহায্য সহজে আসবে না যদি সরকার অত্যাচারী হিসেবে প্রমাণিত হয়। এজ জিউটস এজ ইট গেটস ব্লগ এর মনোভাব এমনই:

“ আমি নিশ্চিত যে আমাদের সবার হৃদয় অনেক বড় আর আমরা সবাই সাম্প্রতিক চীন আর মিয়ানমারের আক্রান্তদের সাহায্য করতে উন্মুখ। আমি শুধু বলতে চাই যে কোন জায়গায় আমরা সাহায্য দিচ্ছি তা একটু খেয়াল করা উচিত। যদি কোন ধরনের মিয়ানমার রিলিফ ফান্ডে আমরা সাহায্য করতে চাই, খেয়াল করবেন যাতে সেই সংস্থা সরাসরি ওখানে দুর্গতদের সাহায্য করতে যায়। তারা যেন সামরিক জান্তা সরকারের হাতে টাকা না তুলে দেয়।”

অত্র অন্চলের অনেক ব্লগারই সামরিক জান্তার ভক্ত না। সিঙ্গাপুর থেকে জেরে – আই আ্যম হোয়াট আই আ্যম ব্লগ লিখেছে:

“সরকারের কাজ মানুষকে শাসন করা, তাদের জীবন সহজতর আর ভালো করা, তাদের খেয়াল রাখা আর রক্ষা করা। মিয়ানমারের সরকার তার দেশের মানুষের জীবন আর মঙ্গলের ব্যাপারে একেবারেই খেয়াল করেনি। সাহায্য দেরি করিয়ে আর বিপর্যয়ের সময় দ্রুত সাড়া না দিয়ে, তারা শুধু নিজের লোকদের হত্যা করেছে।”

ফিলিপিনো ব্লগার আন্ডার দ্যা সান যোগ করেছেন:

“কি ধরনের সরকার বিপর্যয়ের সময়ে স্বার্থপরভাবে জনগনের মঙ্গলের আগে নিজেদের নিয়ে চিন্তা করে, যেখানে জন্ম আর মৃত্যুর মধ্যে বেছে নিতে হচ্ছে?”

থাইল্যান্ডে ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা বলে একটা নতুন আইন অনুযায়ী এ দেশের সব নতুন ভবন ভূমিকম্প রোধক হতে হবে। সাম্প্রতিক চীনের ভূমিকম্প ব্যাংককেও অনুভূত হওয়ার ফলে সে দেশে পুরানো বাড়ি আর উঁচু তলার বাড়ির নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা দেখা দিয়েছে ব্লগারদের মধ্যে

মালায়শিয়ায় ভবিষ্যতের শক্তিশালি কম্পনের বিরুদ্ধে নেয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে ক্রাঞ্চি ব্লগ প্রশ্ন করেছেন:

“মালায়েশিয়ার বাড়ি আর উচ্চ দালান কি সামান্য ভূমিকম্প মোকাবেলার উপযুক্ত? নাকি দালান নির্মাতাদের জন্য নির্দেশনার চিন্তা করা হচ্ছে যাতে বাড়ি একাধিক বারের কম্পনও রোধ করতে পারবে? ‘তিদাক আপা’ (অবহেলার) মনোভাব নিয়ে আর কিছু মানুষ বা গোষ্ঠী যারা নিজেদের পকেটের চিন্তা শুধু করেছে, আমার সন্দেহ হয় এইসব ব্যাপার কিছু না ঘটা পর্যন্ত হয়ত গুরুত্ব পাবে না। আপনার কি মনে হয়? আমি কি খুব বেশী ভীতু?”

উত্তর ফিলিপাইন্সে শক্তিশালি টাইফুনের ফলে ঘটে যাওয়া ক্ষতি মিডিয়াতে অনেক দিন পর্যন্ত ঠিক মত রিপোর্ট হয় নি। সরকারও ক্ষতির পরিধি সম্পর্কে ঠিকমতো জানত না। টাইফুনের একদিন পর ফিলিপিনের প্রেসিডেন্ট মধ্য ফিলিপাইনে স্কুবা ডাইভিং করছিলেন।

টাইফুন আঘাত হেনেছে এমন একটি অংগ রাজ্যের অবস্থা সম্পর্কে ডারলিনস ব্লগ লিখেছে:

“টাইফুন কোস্মে ৭ লাখ বাড়ি ভেঙ্গেছে আর প্রায় ৩৮,০০০ পরিবারকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এই ঘটনায় বাসিন্দাদের সাহায্য কেন্দ্রে যাওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। তাছাড়া কোস্মের ফলে ভূমিধস হয়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আর বড় ধরনের বন্যায় কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”

স্ট্রেঞ্জলি আউট অফ প্লেস ব্লগ বিস্মিত ছিল:

“পরের দিন, ক্যান্ডেলারিয়া অন্চলকে অনেক আলাদা লাগছিল। সব বিদ্যুতের লাইন মাটিতে ছিল। বড় বড় আম আর আকাশিয়া গাছ বাড়ির ঊপরে পড়ে ছিল। গির্জা, স্কুল আর পাবলিক লাইব্রেরীর কিছু জানালা ভাঙ্গা ছিল। প্রায় প্রত্যেক মোড়ে ছাঁদ বিহীন বাড়ি দেখা যাচ্ছিল। কিছু পুরানো বাড়িকে কার্ডবোডের স্ট্রাকচারের মতো লাগছিল। শহরটি আমার মার কথা অনুযায়ী ‘ভয়ঙ্কর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।”

দ্যা হারভেস্ট ইজ গ্রেট সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ছবি আপলোড করেছিল। নর্দার্ন ফিলিপিন্স টাইমস সরকারকে তাদের অকার্যকারিতার জন্য ধিক্কার করেছে:

“প্রত্যেক বছর সরকারি কমকর্তারা বলেন শুকনো মৌসুমে ঝড়ের মতো দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য তাদের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু প্রত্যেক বার এক একটা টাইফুন হানা দেয়ার পর বেশীরভাগ সরকারি কমকর্তাকে চুপ থাকতে দেখা যায় যখন রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়, বারাঙ্গা (গ্রাম) যখন ডুবে যায় আর বিদ্যুত যখন চলে যায়। দুর্যোগ মোকাবেলার কার্যক্রম প্রতিরোধমূলক নয় বরং ধ্বংস হবার পর নড়ে উঠতে দেখা যায় তাদের।”

নাতাশা লাভস নুডুলজ ব্লগ চীনের ভুমিকম্প, মিয়ানমারের সাইক্লোন আর ফিলিপিনের টাইফুন নিয়ে মন্তব্য করেছেন। সিংগাপুরের পররাষ্ট্র মন্ত্রী মিয়ানমারের দুর্যোগ মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সাহায্যের প্রয়োজনের কথা বলেছেন তার বক্তৃতায়। এমনিভাবে অত্র এলাকার অন্যান্য দেশেও সাহায্য দেয়া যায়:

“ আমরা আসিয়ান একা এই কাজ করতে পারবো না। মিয়ানমারের প্রয়োজন মিয়ানমার একা বা আসিয়ান মিলে পূরণ করা সম্ভব না। তাই আসিয়ান আর ইউ এন মিলে এক সাথে এই সাহায্য সংগ্রহ কনফারেন্স ঠিক করেছে। আমরা আসিয়ানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যাদের সামর্থ আছে আর মিয়ানমার সরকারের মধ্যে বিশ্বাস তৈরীর সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করা ছাড়া বেশী কিছু করতে পারি না।”

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .