ইরানঃ মুদ্রাস্ফীতি ও অস্পৃশ্য টমেটো

ইরান সরকার প্রায়শ:ই মুদ্রাস্ফীতির অস্তিত্ব অস্বীকার করে, এবং দাবি করে যে এটা বিদেশী তথা মিডিয়ার আবিষ্কার। তথাপি, স্মরণকালের মধ্যে এ মাসে ইরানে সর্বোচ্চ ও দ্রুতগতিতে মুদ্রাস্ফীতি ঘটেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি হয়তো একটা কারণ, কিন্তু অনেক মানুষই প্রধান কারণ হিসেবে ব্যর্থ অর্থনৈতিক নীতিকে দায়ী করেন। কিছু ব্লগার নিত্যদিনের জীবন যাপনে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে তাদের ধারণা ও অনুভূতির কথা ব্যক্ত করেছেন।

নিঃসহায় কৃষক এবং “অমনযোগী নেতৃবৃন্দ”

এঘতেসাদ্দানেহ লিখেছেন (ফার্সী ভাষায়) যে সরকারী কর্মকর্তারা ইরানী কৃষকদের প্রতিনিধিত্ব ও রক্ষা করে না। ব্লগার আরো বলেছেন:

কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষকদের নয়, মধ্যবিত্ত ও চাকুরীজীবিদের প্রতিনিধিত্ব করে। কৃষকরা সবচেয়ে নির্বাক শ্রেণী। আপনি কি কখনও তাদের প্রতিবাদ করতে শুনেছেন? আপনি কি কখনও শুনেছেন কৃষি মন্ত্রণালয় বাণিজ্য অবমুক্ত করার প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে দাড়িয়েছে?

তিনি লিখেছেনঃ

বেশীরভাগ শিল্পোন্নত ও ল্যাতিন আমেরিকার দেশগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষকদের জন্য যেমন সাহায্য বরাদ্দ করা হয়, ইরানে তেমন নেই। আমার শহর কাসান-এ ঠান্ডার কারণে পমগ্রানেট (বেদানা) বাগানের প্রায় বেশীরভাগই ধ্বংস হয়ে গেছে।

Pomegranateপ্রাক্তন সংস্কারবাদী সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আথালোলাহ মহাজেরানী বলেছেন (ফার্সী ভাষায়), প্রভাবশালী ধর্মগুরু মাধাভি কানীর বক্তব্যের জবাবে, জনগনের ভোগকৃত দ্রব্যের পরিমানের অভাবের সাথে মুদ্রাস্ফীতির কোন সম্বন্ধ নাই। ব্লগাররা লিখেছেন যে সরকার যোগ্যতা সম্পন্ন বিশেষজ্ঞদের কথা শোনে না এবং মনে করে মুদ্রাস্ফীতির জন্য লোকানুবর্তি এবং স্লোগান সর্বস্ব নীতি দায়ী।

সাওয়েদা লিখেছেন (ফার্সী ভাষায়), ইরানী পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট হাদাদ আদেল বলেছেন, দেশে মুদ্রাস্ফীতি থাকতে পারে, কিন্তু নিরাপত্তা তো আছে। ব্লগার ধারণা করেন যে হাদাদ হয়তো বোঝাতে চেয়েছেন ইরান তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর তুলনায় অনেক বেশী নিরাপদ; কিন্তু সেই সাথে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে মুদ্রাস্ফীতি ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় এই নিরাপত্তাকে ঝুঁকিপূর্ণ করতে পারে।

ভগ্ন অঙ্গীকার

দেহারী বলেছেন, বক্তৃতার মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতি রোধ করা সম্ভব নয়। তিনি লিখেছেন:

যখন আহমাদিনেজাদ দুইবছর আগে প্রথম মুদ্রাস্ফীতি অস্বীকার করেছিলেন, তিনি বলেছিলেন, বিগত চল্লিশ বছরের মধ্যে এটা সর্বনিম্ন। তারপরে মাত্র ছয় মাস আগে তিনি অঙ্গীকার করলেন একটা ভাল ভবিষ্যত গড়ার; কিন্তু এই সব বক্তব্য আসলে পুরোটাই মিথ্যা।

ব্লগার বলেছেন, সমাজ এই ঊর্ধ্বমুখী মুদ্রাস্ফীতি আর সহ্য করতে পারছে না। আহমাদিনেজাদের সিদ্ধান্ত বিশেষজ্ঞ মূল্যায়ন বা মৌলযুক্তির উপরে ভিত্তি করে নয় বলে দেহারী মনে করেন।

আমির খসরুবক্তব্য অনুযায়ী (ফার্সী ভাষায়) দশ জন সংসদ সদস্য আহমাদিনেজাদ ও তিনজন মন্ত্রীকে মুদ্রাস্ফীতি বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছিলেন।

ইসলামিক এসোসিয়েশন অব সাহর কুর্দ স্টুডেন্টস
ব্লগ জানিয়েছে (ফার্সী ভাষায়), পার্লামেন্টের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মেহদী কারোওবী সম্প্রতি আহমাদিনেজাদের সমালোচনা করেছেন এবং বিশ্ব পরিচালনার চেষ্টা বাদ দিয়ে আবাসন ও উপজীবিকা নিয়ে ভাবার জন্য তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

অস্পৃশ্য টমেটো

আজারমোগান বিদ্রুপ করে লিখেছেন (ফার্সী ভাষায়) টমেটোর দাম এত বেড়ে যাচ্ছে যে আমরা এখন গর্বিতভাবে টমেটোর সাথে নিজেদের ছবি তুলতে পারি। সবচেয়ে দামী ফল হিসাবে কলার স্থান টমেটো দখল করে নিয়েছে।
পারস ডার বোঝোরগ্রাহ লিখেছেন (ফার্সী ভাষায়) গতবছর আহমাদিনেজাদ বলেছিলেন যে তার নিকটবর্তী এলাকাতে টমেটোর দাম কম এবং লোকজন তা কিনতে পারছে, কিন্তু এ বছর মনে হচ্ছে সবাই এই উচ্চ মূল্য মেনে নিয়েছে। স্যান্ডউইচ থেকে টমেটো উধাও হয়ে গেছে।

শ্যাগার্ড বলেছেন (ফার্সী ভাষায়) প্রতি কেজি টমেটোর দাম দুইশ দশ টাকা, যেখানে একজন শ্রমিকের মাসিক আয় মাত্র আট হাজার চারশ টাকা!

ফ্লিকার থেকে ছবি:
* ভারাহরানের তোলা বরফআচ্ছাদিত ইরানের পমগ্রানেট (বেদানা)।
* মেরি লুজমোরের তোলা হামাদান বাজারের টমেটো।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .