জাপান: সব মাখন কোথায়?

মাখন কোথায়? – এই চিৎকার জাপানী ক্রেতাদের যারা সব জায়গায় এই পণ্য খুঁজছে। দুগ্ধ উৎপাদন নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে যা খাদ্যশস্যের মূল্য বৃদ্ধির ফলে জটিল হয়েছে; আর তার সাথে বিশ্বে দুগ্ধ পণ্যের ব্যবহারের ধরনের পরিবর্তনের ফলে জাপানে মাখনের গুরুতর ঘাটতি দেখা দিয়েছে। দোকানের দুগ্ধপণ্যের খালি তাক অনেক দিন ধরে মাখনের আমদানি দেখেনি আর দোকানে এর জন্য দু:খ প্রকাশ করে নোটিশ দেয়া হচ্ছে।

দোকানের দুগ্ধপণ্যের একটি খালি তাক যেখানে দোকান কর্তৃপক্ষের একটি নোটিশ ঝুলছে যে কবে মাখনের পরবর্তী আমদানি হবে তা তারা জানে না।

যদিও অনেক ব্লগার মাখনের এই ঘাটতি আর অসুবিধার জন্য অভিযোগ করতে ভোলেন নি, বেবে কোবো ব্লগের ব্লগার, যাদের নিজেদের পরিবার পরিচালিত ছোট দুগ্ধ খামার আছে, দুগ্ধ উৎপাদকদের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের অসুবিধার বর্ণনা দিয়েছেন যার ফলে মাখনের এই ঘাটতি হচ্ছে:

টেলিভিশন আর পত্রিকায় যা বলা হয়েছে তা থেকে বোঝা যায় মাখনের এই সঙ্কট গুরুতর।

আগেই বলা হয়েছে এই সংকট দুধের ঘাটতির কারনে। দুধের চাহিদা এক জায়গায় স্থির ছিল আর ২০০৬ এ দেখা গিয়েছে হোক্কায়ডোতে (অতিরিক্ত উৎপাদনের কারনে) দুধ ফেলা হচ্ছে। অনেক গরু জবাই করাও হয়েছে মাংসের জন্যে। এর আগে তারা মাখন তোলা গুড়ো দুধ ফেলে দিতে পারত না, তাই দুগ্ধ পণ্য উৎপাদকরা বাধ্য হত সিমেন্ট ব্যাগের মতো বড় বড় ব্যাগে এই দুধ কিনতে, আর এর মূল্য তাদের সমবায় থেকে প্রাপ্য হতে কেটে নেয়া হত। বছর শেষে তাদেরকে বাধ্য করা হত অনেক মাখন কিনতে যার মূল্য তাদের প্রাপ্য থেকে আবার কেটে নেয়া হত ( আজকে তা অবিশ্বাস্য মনে হয়)।

দুধের ব্যবহারে স্থবিরতার পেছনে কিছু কারন আছে। অনেক ধরনের হালকা পানীয় আছে। স্কুলে দুধ খাওয়ার হার কমে যাচ্ছে কম জন্মহারের জন্য। এলার্জি, আর কিছু লোক যারা এলার্জিক নয় কিন্তু বলতে চায় যে দুধ খুব খারাপ কিছু… আমি কিছু ব্লগ পেয়েছি যেখানে দুধকে হেয় করে আশা করা হয়েছে যে দুধ উৎপাদনকারিরা যাতে গায়েব হয়ে যায়।

বিশেষ করে সানমাক পাব্লিশিং থেকে প্রকাশিত শিন্তানা হিরোমিতসুর জনপ্রিয় বই ‘জীবনধারণ যা আপনাকে অসুস্থ করে না’ তা এমন। এই বই এমন দৃষ্টিভঙ্গী থেকে লেখা হয়েছে যে দুধ খারাপ, এমন একটা জিনিষ যা শুধু দুগ্ধ উৎপাদনকারী নয় বরং শিক্ষিত লোককেও রগিয়ে দিয়েছিল আর দুধের ভাবমূতি যা ইতোমধ্যে খারাপ ছিল তাকে আরো ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল।

বেশী করে গরু জবাইয়ের ফল ক্রেতাদেরকেও আঘাত করেছে। মাখনের ঘাটতি এর একটা কারণ। একটি বাছুর দুধ উৎপাদনে সক্ষম হয় ২ বছরে। প্রাকৃতিক নিয়মের বাইরে যাওয়া যায় না।

ডেইরি সামগ্রী রাসায়নিক পদার্থ না। গরুকে সুস্থ ভাবে পালন না করতে পারলে, মাখনের ঘাটতির মত জিনিষ আরো বেশী হবে। আমি ভোক্তাদের বোঝার অনুরোধ করছি।

পরে দেয়া আর একটা লেখায় এই ব্লগার মাখন ঘাটতির মূল কারন গুলো তুলে ধরেছেন:

১) ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের দেশগুলোতে (যেমন ফ্রান্সে) দুগ্ধ পণ্য রপ্তানি আর সরকারী ভর্তুকি পায় না আর পূর্বে তাদের মাখন যা জাপানেও পাঠানো হত তা এখন দেশে ব্যবহারের জন্য রাখা হয়। আরো একটা ব্যাপার যে রাশিয়া, ভারত আর চীনের জীবন যাত্রার মান উন্নত হয়েছে আর মাখন এই সব জায়গায় চলে যাচ্ছে আমদানি কৃত মাখনের ঘাটতি তৈরি করছে।

২) এর সাথে অস্ট্রেলিয়ায় গত ২ বছর ধরে বড় খরা হচ্ছে। এর ফলে শুধু খাবারের দামই বাড়ে নি, যে পরিমাণ মাখন রপ্তানি হত তার উপর ও প্রভাব পড়েছে।

৩) দেশের মধ্যে ব্যাপারটি হল যা আমি ডাইরিতে এর আগে লিখেছি, পর্যাপ্ত দুধের অভাবে দুধের সরবরাহ স্বাভাবিক হচ্ছে না। এ ছাড়াও মাখন বানালে যেহেতু মাখন তোলা (স্কিমড) গুড়ো দুধ তৈরি হয়, এই গুড়ো দুধ বিক্রি না হলে মজুত বাড়তে থাকে। যার ফলে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয় যেখানে মাখনের উৎপাদন একবারে বাড়ানো যায় না। যেমন, ক্যানের কফির সাথে তাজা দুধ পাউডার দুধের থেকে খেতে ভালো লাগে, আর তাই তাজা দুধের সরবরাহ এই জন্যে বেশী হয় আর তাজা দুধের ঘাটতি বেড়ে যায়।

যাই হোক রাষ্ট্রিয় পর্যায়ে একটা সুষম চাহিদা – সরবরাহ এর ব্যবস্থা দ্রুত না নিলে আমার ভয় হচ্ছে যে মাখনের এই ঘাটতি আবার হবে। মাখন নিয়ে এত চিৎকার ‘ খাদ্যে সয়ংসম্পূর্ণতা'র একটি অংশ।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .