চাদ: ফরাসী এনজিওর দত্তক কেলেন্কারী

জোয়ির আর্ক, “তোমার প্রেম আমার কন্ঠরোধ করেছে!”

লো ব্লগ দু প্রেসি ব্লগে লেখেন একজন ফ্রেন্চ ক্যামেরুনিয়ান ব্লগার যিনি একটি ফরাসী এনজিওর সাম্প্রতিক কেলেন্কারী সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন। এই এনজিও চাদ-সুদান বর্ডারের কাছ থেকে ১০৩ শিশুকে (মনে হয় ডারফুরের শরনার্থী) নিশ্চিত মৃত্যু থেকে উদ্ধার করে ফ্রান্সে তাদেরকে পালক নেবার জন্যে স্থানান্তরের ব্যর্থ চেষ্টা করেছে।

চ্যারিটি লো আর্ক দো জো (জোয়ির আর্ক) এর ছয় সদস্যকে চাদে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল “শিশুদের অপহরন করে তাদের সামাজিক মর্যাদা পরিবর্তনের জন্যে;” মানে তাদের নতুন পিতামাতা দেবার জন্যে। এর শাস্তি পাঁচ থেকে বিশ বছরের সশ্রম কারাদন্ড।

জোয়ির আর্ক কোন অনিয়ম হয়েছে সে কথা অস্বীকার করেছে এবং বলেছে যে শিশুরা ছিল সুদানের এতিম। কিন্তু বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী এবং জাতিসঙ্ঘের কর্মকর্তারা এবং ফরাসী কুটনীতিকদের বক্তব্য অনুযায়ী এইসব শিশুর অনেকের বাবা মা ছিল এবং তারা সুদানের নয়, চাদবাসী। উভয় দেশই আন্তর্জাতিক দত্তক অনুমোদন করে না।

পরিস্থিতি আরও জটিল করতে, চাদের প্রেসিডেন্ট ইদ্রিস ডেবী অনুমান করছে যে এই চ্যারিটি, যেটি ২,৪০০ ইউরো দত্তক ফি নিচ্ছিল নাকি এই শিশুদের পোডোফাইলদের কাছে বিক্রি করতে চাচ্ছিল অথবা তাদের অঙ্গ বিক্রি করতে চাচ্ছিল

ফরাসী প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি এতে অখুশী। এই ঘটনাটি দুই দেশের সম্পর্কে চাপা উত্তেজনা এনে দিয়েছে যেখানে পূর্ব চাদ এবং উত্তর পূর্ব কেন্দ্রীয় আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে ফরাসী নেতৃত্বে একটি জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।

লো দু প্রেসি! মন্তব্য করছেন জোয়ির ঘটনা, তারকা দত্তক, এবং একটি প্রেমের যে ভাল অভিপ্রায় সত্ত্বেও কন্ঠরোধ হলো এ বিষয় গুলো নিয়ে:

…জোয়ির আর্ক বায়ুর মধ্য দিয়ে গর্জন করে উড়ল এবং কিছু দরিদ্র আফ্রিকান শিশুকে মৃত্যূ থেকে উদ্ধার করতে মরুভূমির ওপর নেমে আসল। উদ্দেশ্য: ১০৩ শিশুকে তাদের গন্তব্যে নিয়ে আসতে [ফ্রান্সে] যেখানে তাদের দত্তক নেয়ার জন্যে কিছু পরিবার অপেক্ষা করছিল। এই অপারেশনের খরচ: প্রতি পরিবারের জন্য ২,৪০০।

সবকিছু ঠিক ছিল, ফেরত যাত্রা সহ, কিন্তু চাদ কর্তৃপক্ষ বাধ সাধল। এই পরিকল্পনাটির উন্মোচন হলো এবং শুরু হল বিচার [জোয়িস আর্কের এর] “প্রতারনা এবং শিশুদের অপহরন করে তাদের সামাজিক মর্যাদা পরিবর্তনের জন্যে”। অবশ্য জোয়িস আর্কের সদস্যরা ক্ষুব্ধ হয়েছে তাদের প্রতি এই অসৌজন্যমুলক ব্যবহারের জন্য, কারন এই শিশুদের মৃত্যু থেকে বাঁচিয়ে তারা বিশ্বের কল্যান করতে চেয়েছিল। তারপর আমরা জানলাম যে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতারনা ছিল – কারন শিশুগুলো এতিম বা দারফুরের নয়।

মানবিক অপহরন এবং টাকা খরচ করে দত্তক নেয়ার মধ্যে পার্থক্য কোথায়?

কয়েক মাস আগে বড় সংবাদ ছিল ম্যাডোনা অনেক টাকা খরচ করে দত্তক নেয় (অন্য শব্দ ব্যবহার করছি না) কয়েকটি নাইজেরিয়ান শিশুকে – যদিও আমি মানবিক অপহরন এবং টাকার খরচ করে দত্তক নেয়ার মধ্যে পার্থক্য দেখিনা? আমি জনগণ এবং মিডিয়া থেকে একই উপলব্ধির জন্যে অপেক্ষা করছিলাম কারন এই ঘটনা বেশীদিন আগের নয়। এবং শীঘ্রই হয়ত পাপরাজ্জি প্রিয় প্যারিস হিলটনের পালা আসবে রুয়ান্ডার শিশুদের সাথে একই রকম করার। যদি তা ঘটে, তাহলে আমার কথাই সত্যি হবে। অন্তত: তখন সবকিছু ভেঙ্গে পড়ার সত্যটি প্রতিষ্ঠিত হবে এবং আমরা বলতে পারব আমরা “সব গুবলেট করে ফেলছি এবং এটি আমরা ভালই পারছি”।

দুই পন্থা, একই ফল, হয়ত একই লক্ষ্য নয়, কিন্তু না! শিশুদের মূল পরিবারটি কি এই আরোপিত মানবতাবোধটির সত্যিই প্রয়োজন বোধ করে? এবং যদিও এই শিশুদেরকে ভাল জীবনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে (এবং তারা হয়ত যেতে প্রলুব্ধ হয়েছে) ভেবে দেখা উচিৎ সেটি কি তেমন গুরুত্বপূর্ণ এবং এর মাধ্যমে সমস্ত পরিবার কাঠামোর প্রতি অবজ্ঞাকে (গন্তব্যের শুরু ও শেষের উভয় পরিবারের) সমর্থন করা যায়?

ফ্রান্সে উপস্থিতির পর যদি দত্তক নেয়ার পদ্ধতিতে অথবা ওই সব পরিবারের নিজেদের মধ্যে সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে আমরা দেখব ১০৩ চাদ শিশুকে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে ১০১ ডালমাশিয়ান্স ছবির মত, সৌজন্যে [স্বরাস্ট্র মন্ত্রনালয়]।

জোয়ি তোমার আর্ক সহ তোমার ভালবাসা আমার গলা টিপে ধরছে।

- জেনিফার ব্রিয়া

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .