কলোম্বিয়াঃ ডাচ মহিলার গোপন এফএআরসি গেরিলা ডাইরি

১লা সেপ্টেম্বর কলোম্বিয়ার এল টিএম্পো খবরের কাগজ গত জুলাই মাসে সেনাবাহিনী কর্তৃক একটি বিদ্রোহীদের ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে পাওয়া জিনিষ নিয়ে লিখেছে। এর মধ্যে সব থেকে আলোচিত খবর ছিল ছিল ক্যাম্পে পাওয়া একটা ডাইরি, কারন বিদ্রোহি নেতা কারলোস এন্টোনিও লোজাডার ল্যাপ্টপে পাওয়া গুরুত্বপুর্ণ তথ্য জনসাধারনের জন্যে উন্মুক্ত করা হয়নি । এই স্পাইরাল নোটবুকে লিপিবদ্ধ আছে তানিয়া নিজমিয়ের নামক একজন ডাচ মহিলার চিন্তা এবং অনুভবগুলো যিনি বিগত ৫ বছর ধরে এফএআরসির (কলোম্বিয়ার বিপ্লবী সশস্ত্র বাহিনী) সাথে থেকেছেন আর কাজ করেছেন । এই দলে সে আইলেন নামে পরিচিত। এই ডাইরীর কিছু অংশ পত্রিকা আর অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে স্পানিশ ভাষায়, আর রেডিও নেদারল্যান্ড ওয়ার্ল্ডওয়াইডে ইংরেজিতে।

কলোম্বিয়াতে টিয়েরা গ্যালাক্টিকা ই কস্মিকার পল ও'লিয়ারি এটা সম্বন্ধে লিখেছেনঃ

… এই ডাইরিতে তানিয়া নিজমিয়ের লিখেছেন যা আমরা কলোম্বিয়াতে সবাই জানি আর যা পৃথিবী এখন জানছে; বিশেষ করে ইউরোপিয়ানরা, যারা মনে করে যে এই ড্রাগ বিক্রেতারা তাদের জীবন আর স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করছে (এদের থেকে বড় হত্যাকারি আর ধর্ষনকারী খুব কম আছে)… তিনি লিখেছেন যে এটা একটা জেল, একটা আস্তাকুড়… যেখানে কারো কারো রোলেক্স আছে আর কাউকে পশুর মত ব্যবহার করা হয় (যেমন তাকে)। তিনি গেরিলাদের ব্যক্তিগত জীবন সম্বন্ধেও লিখেছেন। তিনি লিখেছেন যে জঙলের একাকিত্বের মধ্যে গেরিলারা সারাদিন যৌন কাজে রত থাকে, অন্য কথায় বলতে গেলে মনে হয় যে এইডস না হওয়া পর্যন্ত তারা এমন করে।

টুম্বো ২ ব্লগের এ স্টুলতাভিরো একটু মজা করে লিখেছেন:

আইলেন নামে নেদারল্যান্ডের একজন মহিলাকে নিয়ে হইচই হচ্ছে যে এফএআরসিতে যোগ দিয়েছে। একটি সংস্থার (কলম্বিয়ায় কি হচ্ছে আমরা জানিনা কিন্তু এফএআরসি বেশ একটি দল) মুখপাত্র ঘোষনা করেছেন যে তারা পুরো আমস্টার্ডামে কয়েকটা রেজিস্ট্রেশন টেবিল খুলছে যেখানে ওই মহিলার মত এফএআরসিতে যোগদান করতে পারে তাদের দেশের উৎসাহিত নবীন মহিলারা, যারা গত সপ্তাহের হিসাবে প্যারিস হিল্টন, হ্যারি পটার আর শ্রেককে জনপ্রিয়তায় ছাড়িয়ে গেছে।

ইকুইনোক্সিও ব্লগের ড্যানিয়েল রামোস গেরিলা গার্ল নামক প্রামান্য চিত্রের কথা মনে করে চিন্তা করছেনঃ

তানিয়া আর ইসাবেলসহ আর সব নবীন প্রজন্ম যারা এফএআরসিতে যোগদান করছে একটি সামাজিক ন্যায় আর সমতার জন্য তারা আসলে দু:খজনকভাবে একটি কাল্পনিক কাজের জন্য তাদের জীবনকে নিয়োজিত করেছে। ঠিক যেমন কলোম্বিয়াতে অপরাধের কোন শেষ নেই আর ঠিক একই ভাবে তা ঠিক করতে পারবে এমন ভুল ধারনারও কোন শেষ নেই।

অ’ মেডিও ডেল রুইডো ব্লগের মরিসিও ডুকূ আরুব্লা অন্যান্য তথ্য আর ব্লগের সাথে লিঙ্ক করেছে যারা এই খবরটা আলোচনা করছে, তার পর সে লিখেছেঃ

আশা করা যায় যে পশ্চিম ইউরোপ সরকার এই ঘটনার পর সন্ত্রাসীদের উপর চাপ প্রয়োগ করবে, একই ভাবে তাদের উপর চাপ দিক যে ভাবে তারা প্যারা-মিলিটারি বাহিনীর সাথে যোগাযোগের জন্য কলোম্বিয়ান সরকারের উপর চাপ দেন। উরিবের সরকারের উপর নজরদারি বন্ধ করা উচিত নয় আর সেরকমটিই শুরু করা উচিত এফএআরসির মাদক ব্যবসায়ী আর ঘাতকদের দিয়ে।

পুয়োর বাট হ্যাপি ব্লগে কলোম্বিয়ান আর বিদেশীরা মিলে বিতর্ক করেছেন, যেখানে টিন্টো যথাযথভাবে লেখাটি দিয়েছেন আর তা মন্তব্যের মাধ্যমে জীবন্ত হয়ে গেছে। আলোচনা হয়েছে গোপনতার ব্যাপারগুলো, সম্ভাব্য প্রতিশোধ, এফএআরসির আন্তর্জাতিক নিয়োগের চেষ্টা এবং কি জন্য বিদেশীরা এই গেরিলাদের সাথে যোগদান করে এইসব বিষয়গুলো নিয়ে।

সিনিয়র টেরটুস
মন্তব্য করেছেনঃ

এখানে আর একটা ব্যাপার আছেঃ সে অপরাধী হোক বা না হোক তার গোপনীয়তার স্বাধীনতা বজায় রাখা উচিত, তাই নয় কি? তার ডাইরি তার ব্যক্তিগত নথি, আর পুলিশ আর সেনাবাহীনি তা তাদের তদন্তের জন্য ব্যবহার করতে পারে, কিন্তু তা উন্মুক্ত করে দিয়ে কি লাভ?

বিলি বি এর মন্তব্যে দেখা যায় যে বেশীরভাগ কলোম্বিয়ান যা চিন্তা করছে কিন্তু বলতে পারে না সেই কথা উঠে এসেছেঃ

যখন রাজনৈতিক আর সাধারন অপরাধের মধ্যে পার্থক্য করা হয় তখন এই ধরনের সংস্থার ক্ষেত্রে যেখানে পার্থক্য অস্পষ্ট সেখানে কি করতে হয়? আর তার খারাপ যদি চাই, সে এমন একটা সংস্থাতে যোগদান করেছে স্বত:স্ফূর্তভাবে যারা আমার ৩ জন কাজিনকে অপহরন করেছে যাদের একজনকে মাথায় গুলি করা হয়েছে আর একজনকে আমরা এখনও দেখিনি তাহলে আমি নিশ্চিত যে সেও এমন অভিযানে অংশগ্রহন করেছে যেখানে নিরপরাধ লোক মারা গেছে। তার ডাইরিতে কোথাও এর জন্য অনুতাপ নেই। বরং সে যে হেলিকপ্টারের লোককে মারতে পারেনি এ জন্য তার আফসোস ছিল। এফএআরসিতে যোগদান করে সে কি ভাল করতে চেয়েছিল তা আমি জানিনা কিন্তু তা আমার হিসাবে এফএআরসির নিরাপরাধ লোকের সাথে করা কাজের ভারসাম্য এনে দেয় না। তাই তাকে ছাড় দেয়ার কোন কারন আমি দেখিনা। বিদেশীসহ বেশ কিছু লোকের কাছে কলোম্বিয়ার সমস্যা তাদের একটি মনস্তাত্তিক কাজে ভালো লাগার জন্য অংশগ্রহনে অনুপ্রানিত করে, কিন্তু আমাদের অনেকের কাছে তা একটি তিক্ত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা।

মনে হয় তানিয়া একমাত্র বিদেশী নয় যে এফএআরসিতে যোগদান করেছে, আর এখনো দেখা বাকি যে তার কি হবে, এফএআরসি তাকে অপহরন, নির্যাতন অথবা হত্যা করবে কিনা তার বিচারবুদ্ধির অভাবের জন্য নাকি তারা তাকে মুক্ত করে দেবে কলোম্বিয়া আর ডাচ সরকারকে তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়ার জন্য।

(ছবি জিনস্টিলের সৌজন্যে)

-হুলিয়ানা রিন্কন পারা

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .