রাশিয়া: বোমা ট্রেনকে লাইনচ্যুত করেছে

গত সোমবার (১৩ই আগস্ট) রাতে মস্কো থেকে সেন্ট পির্টাসবুর্গে যাওয়ার পথে একটি যাত্রীবাহি ট্রেন ঘরে তৈরি বোমা বিষ্ফোরনে লাইনচ্যুত হয়েছে। কেউ নিহত হয়নি কিন্তু ২৩০ জন যাত্রীর মধ্যে প্রায় ৬০ জন আহত হয়েছে যাদেও মধ্যে ৩ জনের অবস্থা গুরুতর।

কিছু সময়ের জন্য রাশিয়ান ব্লগাররা সংবাদ মাধ্যমের আগে এই খবর প্রচার করছিল।

মস্কো সময় ৯.৩৮ এ দুঘটনা ঘটেছে আর এলজে প্লাটফর্ম ব্যবহারকারি লাইটবার্ড ৯.৫৪ এ প্রথমে এর খবর তার ব্লগে দিয়েছেন

আমার সহকর্মী এখনই আমাকে ফোন করেছে যে মস্কো – সেন্ট পির্টাসবুর্গে একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে। সবকিছু ধোঁয়ায় ঢাকা, ট্রেনের বগিগুলো উল্টিয়ে আছে । সে ঠিক আছে, কিন্তু কিছু তো করা উচিত। আমরা কি করে সাহায্য করতে পারি? এখন পর্যন্ত খবর নেই কোন।

১০.১৫ থেকে মালায়া ভিসেরা থেকে এলজে ব্যবহারকারি কাটোগা এনিয়ে সরাসরি ব্লগ করেছেন কারন তার স্বামী দুর্ঘটনা স্থলে ছিলেন:

আমার বন্ধুর কাছ থেকে এইমাত্র শুনলাম যে বুর্গা গ্রামের কাছে নেভস্কাই এক্সপ্রেস নম্বর ১৬৬ ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে। কারন এখনও পরিষ্কার নয়। তারা একটি বিষ্ফোরনের কথা বলছেন। কিছু মানুষ আহত হয়েছে। মালায়া ভিসেরা থেকে পুলিশ আর এম্বুলেন্স যাচেছ। আমাদের জানালার বাইরে সাইরেন শোনা যাচ্ছে .. ভয়ংকর । খবরে এখনও কিছু নেই। কিন্তু ওদের কিছু একটা জানাতে হবে। শিঘ্রী..

পুনশ্চ: ১) রাত ১০.৫০ এখনই এনটিভি খবরটি নিশ্চিত করল। জানাল যে অনেকে আহত হয়েছে। দুর্ঘটনার কারন এখনও জানা যায়নি । আসল জিনিষ হচ্ছে যে সবাই যেন বেঁচে যায় ..

পুনশ্চ: ২) রাত ১০.৫৫ ওখান থেকে ফোন এসেছে। কেউ মারা যায়নি। দুইজন গুরুতর আহত। অনেকেই আহত কিন্তু এই দুই জনের অবস্থাই গুরুতর।

আবার আগস্ট। এই মাসকে আমি ভয় পেতে শুরু করেছি .. ( ভয়ংকর জিনিষ – যেমন ২০০০ সালের কুরস্ক সাবমেরিন দুর্ঘটনা বা ২০০৪ এর প্লেন দুর্ঘটনা – মনে হয় আগস্টে হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। মাইস্টিলহার্ট নামক একজন ব্লগার মন্তব্য করেছেন আর এক লেখায় যে ,”এটি আগস্ট বন্ধু। আমাদের নিয়ম হয়ে গেছে এই মাসে সন্ত্রাসি হামলা হয় ।”)

কিন্তু এবার সবাই বেঁচে আছে আর এটাই গুরুত্বপূর্ণ ..

আপনাদের কারো যদি ওখানে আত্মীয় বা বন্ধু থাকে তাহলে আমার সাথে যোগাযোগ করবেন (ফোন নম্বর)। আমি মাত্র ১৫ মিনিট দূরে আছি। আপনাদের লোকেরা মালায়া ভিসেরা এসে আমার এখানে থাকতে পারবে। রাত্রে এখানে থেকে, শান্ত হয়ে কালকে যেখানে যেতে চায় যেতে পারবে ট্রেনের কোন ঝামেলা ছাড়া। সবাইকে স্বাগত ।

কাটোগার পোস্টের মন্তব্যে সোমবার রাত্রে দুর্ঘটনার কয়েক ঘন্টার পর আলোচনা হয়েছে যে কি ধরনের বিষ্ফোরন এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে :

কাটোগা:
(..) তারা বেশি বেগের জন্য বেঁচে গেছে । ব্রীজের কাছে বিষ্ফোরন হয়েছে। খুব জোরে না গেলে ট্রেন ব্রিজের নিচে পড়ে যেত। এটি ২৫ মিটারের মত। কিন্তু ট্রেনটা ভারি আর জোড়ে যাওয়ার জন্য ব্রিজের উপর থেকে উড়ে গিয়ে লাইনচ্যুত হয়েছে ।

ইগনেসসেনটিস:
এর মানে বিষ্ফোরনটি (যদি আসলেই বিষ্ফোরন হয়ে থাকে ) খুব জোড়ালো ছিলনা। নাহলে অধিক গতি শুধু পরিস্থিতিকে তিক্ত করতো ।

কাটোগা:
হ্যাঁ, খুব সম্ভব্ত খুব জোর ছিল না। গর্ত ১.৫ মিটারের মত হয়েছিল।

ইগনেসসেনটিস:
কিন্তু এমনও হতে পারে যে বিষ্ফোরন হয়নি। দুর্ঘটনার জায়গা দেখলে অনেক সময় মনে হয় যে বোমা হামলা হয়েছে। আর ভীতির কারনে পরিস্থিতি যা তার থেকে অনেক সময় খারাপ অনুভুত হয়।

কাটোগা:
বিষ্ফোরন অবশ্যই হয়েছিল বিশেষ বাহিনীও এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ইগনেসসেনটিস:
দেখা যাক । কালকেই হয়তো তারা উল্টো কোন কথা নিশ্চিত করবে।

ব্লগার ইগোরিচ২৩৯ তাদের মধ্যে একজন যিনি বিশ্বাস করেন যে সামনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য এই দুর্ঘটনা হতে পারে:

হতে পারে এটা প্রাক-নির্বাচনী ব্যাপার-স্যাপার। তার পর একজন আসবে যে সব ঠিক করে দেবে।

ব্লগার কেএ৫২এভার মস্কো-সেন্ট পিটার্সবুর্গ ট্রেনটিতে ছিল যখন দুর্ঘটনাটি ঘটে। এখানে তার দেখা ঘটনার কিছু বিবরন:

“ঘুমুচ্ছিলাম। হঠাৎ একটি বিস্ফোরনের আওয়াজ শুনলাম আর আমার পাশে বসা লোকটি বললেন “শক্ত করে ধরো”। আমি চোখ খুলে দেখি সবাই সিট থেকে লাফিয়ে তাদের বাক্স-পেটরা সামলাচ্ছে। আমি বের হওয়ার দরজার দিকে তাকিয়ে সেখানে ধোঁয়া দেখতে পেলাম। আমি প্রথমে আগুন লেগেছে ভেবে ভয় পেয়েছিলাম। পরে বোঝা গেল ওটা সিমেন্টের গুঁড়োর ধোঁয়া।

আমরা নেমে গেলাম। ট্রেনের যাত্রী-সহকারী উচু হিল পড়া যুবতীটি সবাইকে হাতে ধরে নামাতে সাহায্য করলেন।

ট্রেনের বগীগুলো লাইনচ্যুত হয়ে পরে রয়েছে। লাইনটি ভাঙা। ছিঁড়ে যাওয়া তারগুলো বের হয়ে রয়েছে। ছাদের কিছু অংশ মাটিতে ভুপাতিত হয়েছে.. আর দেখতে ভয় লাগছিল। অন্য বগীগুলো পাশে পরে রয়েছিল।

লোকজন সাথে সাথেই তাদের আত্মীয়স্বজনদের জানাতে শুরু করল। সবাই একই কথা বলা শুরু করল “চিন্তা করোনা, আমি ভাল আছি। ট্রেনে একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এটি লাইনচ্যুত হয়েছে।”
[…]
প্রায় বিশ মিনিট পরে দুটো গাড়ী করে পুলিশ আসল। তারা বোধহয় খুবই হতভম্ব ছিল ঘটনাটি নিয়ে কারন তারা ঠিকমত জবাব দিতে পারেনি আসলে আমরা কোন স্থানে রয়েছি এই প্রশ্নের।

এবং সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ছিল ট্যাক্সি ড্রাইভাররা। তারা প্রায় দুর্ঘটনার সাথে সাথেই এসে পড়েছিল এবং সেন্ট পিটার্সবার্গ নিয়ে যাবার জন্যে ৩,৫০০ রুবল (১৪০ ইউএস ডলার) ভাড়া হাকাচ্ছিল।
[…]
প্রায় একঘন্টা পরে এম্বুলেন্স, পুলিশ ইত্যাদিরা আসা শুরু করে। এবং অবশ্যই সাংবাদিকরা…

আমি কেমন বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিলাম। আজও আমার কেমন অস্থির লাগছে।

অন্যান্য যাত্রীরা অবশ্য খুব শান্ত ছিলেন। কেউই হিস্টিরিয়াগ্রস্ত হননি ও চেচামেচি করেননি। একে অন্যকে সাহায্য করেই সময় কেটেছে তাদের।

এই দুর্ঘটনাটি রাশিয়ার সবচেয়ে ব্যস্ততম একটি রেল সার্ভিসকে বন্ধ করে দেয়। ব্লগার সেরনি সে রাতেই সেন্ট পিটার্সবুর্গ থেকে মস্কো যাচ্ছিলেন এবং ৮ ঘন্টার বদলে প্রায় ২৭ ঘন্টা ট্রেনে কাটিয়েছেন তিনি। এই ক্লান্তিকর ভ্রমনে খাদ্য ও পানীয় খুব কমই পেয়েছেন তিনি। তার কষ্টের সাথী ছিলেন একটি বাচ্চা এবং একটি ডায়াবেটিক মহিলা যার ইনসুলিন শেষ হয়ে গিয়েছিল। এখানে তার একটি মন্তব্য:

মজার ব্যাপার হচ্ছে একটি ছোট বোমা রাশিয়ার ইউরোপ অন্চলের সম্পুর্ন রেলযাত্রা অচল করে দিয়েছে। যদি যুদ্ধ বাধে তাহলে?…

-ভেরনিকা খখলোভা

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .