পেরু: পৃথিবীর অন্যতম সপ্তম আশ্চর্য হিসাবে মাচু পিচ্চুকে ঘোষনাকে উদযাপন করলো ব্লগাররা

পেরু

ছবি: সি জে শেকসনেইদারের সৌজন্যে এবং অনুমতি নিয়ে প্রকাশিত

অবশেষে অনেক প্রতিক্ষার পর পৃথিবীর নতুন সাতটি আশ্চর্য ঘোষিত হয়েছে আর সারা বিশ্বের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা চতুর্থ স্থানে নির্বাচিত করেছে ইনকা'র হারানো শহর হিসাবে পরিচিত মাচু পিচ্চুকে। দেখা যাক পেরুভিয়ান ব্লগাররা এ ব্যাপারে কি বলে:

অবশ্যই বেশিরভাগ ব্লগাররা খুশি যা ডিট্টোডো ব্লগের ’মাচু পিচ্চু , বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম সপ্তম আশ্চর্য’ নামক লেখায় স্পষ্ট বোঝা যায়:

আমার বাবা কুজকোতে থাকেন আর আমি আমার শৈশবের একটা অংশ এই সুন্দর জায়গায় কাটিয়েছি . . . . আমার বাবাকে সপ্তম আশ্চর্যের ফলাফলের জন্য উৎসুক হয়ে অপেক্ষা করতে দেখে মনে হলো যে পেরুবাসী হওয়া সহজ নয়। আমি চিন্তা করছিলাম যে তাদের ও তার সমসাময়িক লোকদের এ দেশে বসবাস সহজ ছিল না। এখন একটা সময় যখন আমরা গর্বিত হয়ে বলতে পারি পেরু দীর্ঘজীবি হোক (মেক্সিকো ও ব্রাজিলের জন্যেও আমি আনন্দিত.. অভিনন্দন) ।

লেটরা সুয়েলটা তার ছোট লেখায় (মাচু পিচ্চু: পৃথিবীর নতুন আশ্চর্য: বিষ্মিত?) স্পানিশভাষী বিভিন্ন পত্রিকার খবর আলোচনা করেছেন:

পত্রিকায় এনিয়ে অনেক প্রচার হয়েছে: এল কোমেরকিও (পেরু), ক্লারিন (আরজেনটিনা), এল পেয়ী (স্পেন), এল ইউনিভার্সাল (মেক্সিকো), এল মারকিউরো ( চিলি). . . আর অবশ্যই বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ব্লগ ফলাফলকে অনেক গুরুত্ব দিয়েছে। অবশেষে ল্যাটিন আমেরিকা তিনটি সেরা বিষ্ময়ের স্থান।

ফিসিকা৩ ব্লগের আরনেস্টো পেরুর এই বিজয়ের পিছনের কারণ ব্যাখ্যা করেছে ’পেরুবাসীদের মাচু পিচ্চুকে সমর্থন করা কাজে লেগেছে’ নামক লেখাতে:

পেরুর বিজয়ের কারণ? সহজ . . এটি অনেক আগে কাজ শুরু করা আর অনেক পেরুভিয়ানরা ব্যাপারটাকে জাতীয় সম্মানের মনে করে নিজেদের ওয়েব সাইটে ব্যানার দিয়েছে যা মানুষকে বিগত বছরে ভোট দিতে উৎসাহিত করেছে। অন্য কথায় এটা শুধু ভাগ্য নয় বরং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কঠোর পরিশ্রম আর অধ্যাবসায় যা আমরা লিবিডো, টি কে ওয়াই লা গ্রিংগা সোফিয়া নামক ব্লগগুলোতে দেখেছি।

এই আনন্দ উদযাপনের মধ্যেও পেড্রোভিলকাপাজা ব্লগ ’মাচু পিচ্চু , বর্তমান বিশ্বের বিষ্ময়’ লেখাতে ইনকা শহরকে রক্ষার কথা স্মরন করিয়ে দিয়েছেন:

পেরুবাসী হিসাবে আমাদেরও দায়িত্ব এই মানব উত্তরাধিকারকে রক্ষা করা যাতে এটা সময়ের গহ্বরে হারিয়ে না যায়। ধন্যবাদ সরকারি কর্মকর্তাদের যারা এই প্রচারে সাহায্য করেছে আর বিজ্ঞাপনে যেমন বলা হয়, ’মাচু পিচ্চু একটা বিষ্ময়, পেরুবাসী হওয়াও একটি বিষ্ময়।

মাচু পিচ্চুর আগের থেকেও বেশি যে যত্নের প্রয়োজন এ কথা উঠে এসেছে কুয়াদেরনো দো বোরাদোর এর লেখা ’সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে মাচু পিচ্চু চতুর্থ স্থানে‘:

পেরুবাসীদের কি এই প্রতিযোগিতার দরকার ছিল জানার জন্য যে মাচু পিচু একটা বিষ্ময়? পেরুবাসীদের জন্য হয়ত নয়, কিন্তু বাকি পৃথিবীও এখন জানে। প্রতিযোগিতা হোক বা না হোক আমরা সেখানে যাব আর ভালবাসব মাচু পিচ্চু কে (০৭/০৭/০৭ এর আগে লেখা)। এই প্রতিযোগিতার পর এর জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসাররা কি প্রস্তুত পর্যট্কদের ঢল সামলানোর জন্য? তারা কি টিকেটের দাম বাড়িয়ে দেবে? তারা কি জায়গাটার অরও ভাল খেয়াল নেবে?

শুধুমাত্র উপরের লেখাটা মাচু পিচ্চুর আরও পর্যট্ক ধারণের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন করেছে। মিডিয়া পেরু তার ‘মাচু পিচ্চু কি সপ্তম আশ্চর্য হতে প্রস্তুত?‘ নামক লেখায় ন্যাশনাল চেম্বার অফ টুরিজম এর প্রতিনিধির একটি উত্তর জানিয়েছেন:

পেটরোজ্জি বলেন যে মাচু পিচ্চুতে ঢোকার চারটি রাস্তা যার মধ্য থেকে এখন মাত্র একটি ব্যবহার করছে প্রতিদিন প্রায় ১৫০০ দর্শক। জয় উদযাপনের পর দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তর দর্শক এর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং ইনকা শহরের উন্নতি নিয়ে পরিকল্পনা করবে।

সমালোচনার এই শেষ নয। দেসদে এল টেরকার পিসো তার ‘পুরানো চুড়া, নতুন বিষ্ময়?‘ নামক লেখায় মাচু পিচ্চুতে পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধির বিরুদ্ধে যুক্তি দেখিয়েছে:

কুজকোর শোষণ দেশের অন্যান্য জায়গার ক্ষতির কারণ হবে। সুন্দর মারসেডিজ আরোজকে মাচু পিচ্চুর জন্য প্রচার করতে দেখে দুটো জিনিষ আমার মনে হয়েছে: ১) শুধুমাত্র কুজকোর ভাবমূর্তি উন্নিত করার বাইরেও কি পর্যটনের ক্ষেত্রে আমরা সরকারের সাহায্য পাবো? ২) আমাদের কি আরও সুন্দর পর্যটন স্থান আছে? কয়েকটার কথা মনে পড়ে: নাজকা লাইন, চাভিন দে হুয়ানটার,সিনর দে সেপান এর জাদুঘর, উত্তরের সমুদ্র সৈকত, টুম্বস এর ম্যানগ্রোভ জলাভূমি, এরিকুইপা, পুনো, জঞ্জল, কুয়েল্যাপ, চোকিকিরাউ আর ঐতিহাসিক লিমা ।

পেরুয়ানিস্তা এসব থেকে দূরে সরে ‘পৃথিবীর নতুন দুই বিষ্ময়‘ নামক লেখায় সুচিন্তিত মতামত দিয়েছে:

এই সম্মানটি শুধু আবিয়া ইয়ালা (আমেরিকা) মহাদেশে গড়ে ওঠা বুদ্ধিদীপ্ত আদিবাসী সভ্যতার কাজ, সৃজনশীলতা, জ্ঞান এবং শ্রেষ্ঠত্তকে সম্মান দেখানোই নয় এটি এই আদিবাসী লোকদের অধিকার পুন:প্রতিষ্ঠারও ডাক। আমাদের পূর্বপুরুষরা এই সভ্যতার পত্তন করেছিল বলেই কিন্তু আজ আমরা গৌরবান্বিত। এই সভ্যতা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় ইয়রোপীয়রা আমাদের দেশ দখল করে তাদের অস্ত্র, ঘোড়া, ধর্ম এবং রোগ ছড়িয়ে দেওয়ার সাথে সাথে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করতে চাই যে এই সবই অতীতের কথা। ঐ সময়ের কথা নিয়ে মন খারাপ না করে আমাদের এই ব্যাপারটি উদযাপন করা উচিৎ যে আমাদের উন্নত মহাদেশ ভিন্ন সংস্কৃতি ও লোকদের ধারন করেছে।

মাচু পিচ্চু একটি বিষ্ময় যা আমাদের রক্ষা করতে হবে: এটি পরিস্কার। বেশ কয়েকটি গবেষনা ইতিমধ্যে হয়েছে যা অতিরিক্ত পর্যটক এই বিষ্ময়ের উপর কিরুপ প্রভাব ফেলবে তা বর্ননা করেছে। এই স্থানটির নীচে অগোছালো ভাবে গড়ে ওঠা বসতির মাধ্যমে ইতিমধ্যেই অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। এবং আমরা এখনও চিন্তাই করছি না ঐখানে পরিকল্পিত একটি কেবল কার বসানোর ফলাফল কি হবে তা নিয়ে। আমি শেষ করছি স্প্যানিশ ভাষায় এ নিয়ে যেসব ব্লগের লেখা প্রকাশিত হয়েছে তার একটি লিস্ট দিয়ে (মুল লেখাটি দেখুন লিন্কের জন্যে)।

এখানে মাচু পিচ্চুর একটি ভিডিও রয়েছে (এনলাচে নাসিওনাল ব্লগের মারফত)। বিদায়।

-  ইংরেজীতে অনুবাদ লিন্ডা রড্রিগে

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .