আরবদেশঃ আমি একজন পেশাদার পুরুষ বেশ্যা

‘আমি একজন পেশাদার পুরুষ বেশ্যা এবং খন্ডকালিন মাদক ব্যবসায়ী’ , এখন থেকে আমি এই উত্তর দেব যদি কেউ আমার পেশা কি জিজ্ঞেস করে, কারন একজন আরব ডাক্তার হওয়ার চেয়ে এখন এগুলো হওয়া ভাল ।

যুক্তরাজ্যে সম্প্রতি বোমা হামলায় আরব মুসলিম ডাক্তাররা জড়িত ছিলেন খবরটি শোনার পর এভাবেই লিখছেন হারীগা নামে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারি জর্দানি ডাক্তার।

হারিগা নিজের সাথে জর্দানি ডাক্তার মোহাম্মদ আশার তুলনা করেন যাকে তার স্ত্রীসহ লন্ডন এবং গ্লাসগো এর ব্যর্থ বোমা হামলার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে ।

মোহাম্মদ আশা … জর্দান বিশ্ববিদ্যালয় – মেডিসিন বিভাগ (১৯৯৮-২০০৪)
আপনার অনুগত … জর্দান বিশ্ববিদ্যালয় – মেডিসিন বিভাগ (১৯৯৬-২০০২)

যদি তোমরা না জান, তাহলে মেডিসিন বিভাগটি খুবই ছোট এবং ৪র্থ-৬ষ্ঠ বর্ষের ছাত্রেরা তাদের প্রায় সমস্ত সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতাল বিভাগ এ অতিবাহিত করত। আল বশির এর মত অন্য হসপিটালেও তারা কিছু সময় কাটাত। যার জন্যে প্রায় সব ছাত্র একে অপরকে নামে অথবা চেহারায় চিনত। যদিও ১০ মিনিট মনিটর এর দিকে তাকিয়ে থেকেও আমি একে চিনতে পারিনি, কিন্তু আমি নিশ্চিত যে একে আমি কোন বারান্দা বা হাসপাতালের ক্যাফেটারিয়ার লাইনে দেখেছি। তাকে না চিনতে পারার প্রধার কারন হলো যে তার মুখচ্ছবি খুবই সাধারন। তার দাড়ি এত ঘন ছিল না (পুর্বের ছবি দেখে) আর তাই তাকে ৩০-৪০% জর্দান বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্রের মতন লাগে।

হারীগা মনে করে যে নিন্মোক্ত কারনের জন্য আশা নির্দোষ হতে পারেঃ

প্রথমতঃ সে জুবিলী স্কুল থেকে পাস করেছে। আমি এই স্কুল সম্পর্কে জানি কারন আমি ১৯৯৪ এ সেখানে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলাম। কিন্তু এটি নতুন এবং GCE প্রোগ্রাম নেই বলে আমার পিতামাতা সেখানে ভর্তি হতে বারণ করে। কিন্তু স্কুলটি অনন্য ছিল কারন এটি ভিন্ন সংস্কৃতি সম্মন্ধে ছাত্রদের শেখাত। পরবর্তী বছরগুলিতে এর ছাত্ররা শুধু ভাল ফলাফলই অর্জন করেনি তারা বিদেশে পড়ার সুযোগ পেয়েছে এবং অন্য দেশের লোকের সাথে সহজে মিশতে পেরেছে।

আরেকটি বিষয় বলতে হয়: শুধু তাই নয় যে তার বাবা ফক্স টেলিভিশনকে দেয়া এক আবেগময় সাক্ষাতকারে বলেছেন যে তার ছেলে অনেক সময়ই শুক্রবারের নামাজ বাদ দিত আর কোরানের থেকে বেশি পছন্দ করতো ‘গ্রে'র এনাটমী’ পড়তে। এ ছাড়াও জর্দানিয়ান গোয়েন্দা সংস্থাও বলেছে যে জর্দান ছেড়ে যাবার আগে তার রেকর্ড ছিল পরিষ্কার। আমরা সবাই জানি যে জর্দানিয়ান গোয়েন্দা সংস্থার কাছে পরিষ্কার রেকর্ড থাকা সহজ নয় কারন তারা সব জানে।

যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পর পরিস্থিতি পালটে যেতে পারে যেহেতু আমরা জানি কি ধর্মোন্মাদ ওখানকার ইসলামী আন্দোলনগুলো। কিন্তু এইসব গোঁড়াদের লক্ষ্য থাকে সাধারণতঃ আর্থিক বা সামাজিক সমস্যা আছে এমন তরুন মুসলিম পুরুষ, যা আশার ক্ষেত্রে খাটে না। ডাক্তারদের বেতন সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের থেকে ভাল।

এই লোকের মতন আমিও একইরকম জীবনযাপন করেছি বেশ কিছুদিন এবং আমাদের ক্লাস থেকে আরও ডাক্তাররা পাস করে বেরিয়েছে। হ্যা, এদের মধ্যে কেউ কেউ খুব ধর্মপ্রান ছিলেন, এমনকি হামাস বা হিযবুল্লাহ কে প্রকাশ্যে সমর্থন করে কিন্তু আমি এটা বিশ্বাস করি না যে তারা সত্যি সত্যি কোন জঙ্গী দল এর সাথে যুক্ত এবং সাধারন মানুষের উপর আক্রমন চালাবে। আমাদের অতীত আর বর্তমান আমাদের জন্য চিকিৎসা ছাড়া অন্য কিছু চিন্তা করা প্রায় অসম্ভব করে তোলে ।

এর মধ্যে জর্দানিয়ান ব্লগে এনিয়ে অনেক লেখা ও বিতর্ক হচ্ছে এবং নাতাশা টাইনেস মেন্টাল মেয়হ্যাম ব্লগে সেগুলো সংকলিত করেছে এই পোস্টে:

ব্লগার ফিরাস জিজ্ঞেশ করেছেন যে “কি ভুল হয়েছে?”

মোহাম্মদ একজন কর্মঠ জর্দানিয়ানের সত্যিকারের দৃষ্টান্ত। তার বাবা হেয় আল যুহুর এ বসবাসকারি একজন শিক্ষক। সে ক্লাসে সবসময় ভাল করত। তার ৭ ভাইবোনের মধ্যে ৩ জন ডাক্তার। তার বাবা মা বলেছেন যে সে কখনই গোঁড়া ছিল না, কখনই সেরকম ইঙ্গিত দেয়নি, অন্য মুসলিমদের মতই সে নামায পরত।

তাই প্রশ্ন হচ্ছে যে কোথায় ভুল হয়েছে, এটা ধরে নিয়ে যে ব্রিটিশ গোয়েন্দার তার সম্বন্ধে তথ্য ঠিক।

ফিরাস আরও বলছেন:

যদি সে সত্যিকারের জড়িত থাকে তাহলে তার ব্যাখ্যা থাকবে, আর আমি নিজে যা দেখেছি তা এইঃ

আরব ছাত্ররা যখন বিদেশে এমন জায়গায় পড়তে যায় যেখানে রাজনৈতিক আর ধর্মীয় স্বাধীনতা আছে, যেমন আমেরিকা, ব্রিটেন, কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়া তখন সাধারণত: তাদের অন্য মুসলিম ছাত্রদের সাথে পরিচয় হয়। এদের মধ্যে বিশেষ করে কিছু পাকিস্তানি ছাত্রদের মধ্যে গোঁড়ামি থাকে আর তাদের মাধ্যমে তারা গোঁড়ামিতে প্রভাবিত হয়। এটি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে – এক কাছের বন্ধু আমার সাথে কথা বন্ধ করে দিল কারন আমি নাকি খ্রীষ্টানদের মত কথা বলি- সে পাঁচ মাসে ব্রেন ওয়াশড হয়ে গিয়েছিল। পাকিস্তান এর মতন এখানেও গোঁড়া দল আছে যারা এদেশে খুব গেড়ে বসেছে আর ৯/১১ এর পর আরব ছাত্ররা যখন নিজেদের নতুন আর বিরুপ পরিবেশে পায় তখন এসব গোঁড়াদের কথার কিছু প্রভাব তো থাকবেই।

জর্দানের বেশিরভাগ লোকই ধর্মপ্রান মুসলিম যাদের কাছে ইসলাম হল অপরকে শ্রদ্ধা করা আর শান্তিতে সহাবস্থান করা। অনেক শতক ধরে জর্দানিয়ানরা বিদেশে পড়ে ভাল ফলাফল অর্জন করছে আর সর্বোত্র ভাল বন্ধুত্ব তৈরি করছে। খারাপ সঙ্গ আর কোন ব্যক্তির সংকীর্ন চিন্তা সব কিছু ধ্বংশ করতে পারে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে আশা যদি জরডান থেকে না বের হতো তাহলে কি সে এসবের মধ্যে জড়িয়ে পড়ত? এই প্রশ্নটা অবশ্যই গুরুত্বপুর্ন।

খালাফ মনে করেন যে যুক্তরাজ্য ইসলামি জঙ্গি তৈরির আখড়া:

লন্ডনে সবচেয়ে গোঁড়া ধর্মীয় জঙ্গির আখড়া এখনও রয়েছে যেখানে তারা পুরো স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করতে পারছে। তাই একজন মেধাবি ডাক্তার তার স্ত্রীকে নিয়ে যখন জর্দান ছেড়ে ২ বছর আগে এখানে আসে তখন তারা এই সব ঘৃণা আর সঙ্ঘাত এর প্রচারকদের সহজ শিকারে পরিনত হতে পারে। এই লোক ও তার স্ত্রী তাদের পড়ালেখা আর পেশা নিয়ে ব্যস্ত ছিল, নিরাপত্তা রেকর্ড তাদের ভাল ছিল, অন্য কোন ধরনের কাজের সাথে তারা যুক্ত ছিল না। এটা এখনও কোর্টে প্রমানিত হয়নি যে তারা আসলেই এই সন্ত্রাসবাদী পরিকল্পনার সাথে যুক্ত ছিল কিনা, বা ঠিক কতটা যুক্ত ছিল। কিন্তু এটা মনে হয় যে তারা কিছু খারাপ লোকের সঙ্গে মিশেছিল।

ব্যক্তিগতভাবে আমি এই ধরনের প্রচারকে সমর্থন করিনা যারা বলে যে পশ্চিমা দেশের এই স্বাধীনতাই মানুষের গোঁড়ামিতে রুপান্তর ঘটাতে সাহায্য করছে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য এত বড় ছিল যে সূর্য কোনদিন অস্ত যেত না। এই সাম্রাজ্যের বংশধররা এত অক্ষম হতে পারে না যে কয়েকটা সোস্যাল ওয়েলফেয়ার ভাতাপ্রাপ্ত গোঁড়াকে সায়েস্তা করতে পারছে না। তারাই তো ইরাককে ধংস করে হাজার হাজার মানুষকে মারতে দ্বিধাবোধ করেনি, লাখো লোককে গৃহহীন করেছে আর সে দেশের জনগনকে অপরিসীম কষ্টের মধ্যে ফেলেছে। তারাই শুধুমাত্র কয়েকজন ঝামেলা সৃষ্টিকারীর নাগরিক অধিকার সম্পর্কে এত সংবেদনশীল এবং তাদের বিরুদ্ধে ভদ্র ও আইনসম্মতভাবেই ব্যবস্থা নিতে পারছে না এটি বিশ্বাসযোগ্য না।

এটা বুঝতে অসুবিধা হয় না যে ব্রিটিশ কতৃপক্ষ এই মানুষদের সহ্য করে একটা উদ্দেশ্যে এবং এই উদ্দেশ্য খুব ভাল নয়। পরিস্থিতি এমন হচ্ছে যে এইসব সন্ত্রাসী ধারনা প্রচারকারীদের জন্য মুসলিম সমাজ কোনঠাসা হয়ে পড়ছে আর ব্রিটিশ নাগরিকদের মধ্যে মুসলমানদের সম্পর্কে ভীতি জাগিয়ে রাখতে সাহায্য করছে। পশ্চিমা দেশগুলোতে এই সহনশীলতা গোঁড়ামিকে গেড়ে বসে থাকতে সাহায্য করে এবং আরব আর মুসলিম দেশগুলোকে তাদের দেশের গোঁড়াদের উপর এরুপ সহনশীলতা প্রদর্শন করতে চাপ প্রয়োগ করে। শুধুমাত্র একজন পাগল বা বিশাসঘাতক এই ধরনের আচরণ সমর্থন করবে।

তাই আমরা যেখানে ইরাক, আফগানিস্তান, বা পাকিস্তান এ ধমী গোঁড়াদের উত্থান নিয়ে চিন্তিত সেখানে মনে রাখা দরকার যে যুক্তরাজ্য একমাত্র দেশ যেখানে মৃত্যুর হুমকি প্রদান করা লোকেরা সহজে থাকার সুবিধা, ভাতা আর আইনগত আশ্রয় পায়।

এছাড়াও ইরাকি ব্লগার সালাম আদিল এ সম্পর্কে ইরাকী ব্লগারদের প্রতিক্রিয়া সংকলিত করেছেন এখানে

- আমিরা আল হোসাইনি

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .