৩০০: একটি চলচিত্রের চেয়েও বেশী অনেক ইরানীর জন্যে

300 Cartoon

(কার্টুন আফসিন সাবুকি অন্কিত প্রজেক্ট ৩০০ থেকে নেয়া। এটি ৩০০ চলচিত্রের বিরুদ্ধে একটি শৈল্পিক জবাব।)

ফ্রান্ক মিলারের কমিক বুক অবলম্বনে নির্মিত ৩০০ চলচিত্রটি একাধারে বক্স অফিস হিট হয়েছে এবং ইরানী মিডিয়ায় বহুল আলোচিত হয়েছে । জাক স্নাইডার পরিচালিত এই ছবির মুল ঘটনা হচ্ছে পার্সিয়ান রাজা জেরজেস এবং তার লাখো সৈনিকের দলের সাথে ৩০০ জন স্পারটানের যুদ্ধ।

অনেক ইরানী ছবিটি সম্পর্কে বিরুপ মন্তব্য করেছে। দৈনিক পত্রিকা আয়ান্দে নো বলেছে এই চলচিত্রটি পৃথিবীকে বলতে চাচ্ছে যে ইরান, যাকে কেউ কেউ বর্তমানে শয়তানের চক্র বলে, প্রাচীন যুগ থেকেই একটি দুষ্টচক্র ছিল। এবং ইরানের বর্তমান প্রজন্মও ৩০০ ছবিতে দেখানো কুৎসীৎ নির্বোধ বন্যদের মত খুনী। ছবির নির্মাতা ওয়ার্নার ব্রাদার্স অবশ্য এই ছবিটিকে ঐতিহাসিক পটভুমিতে নির্মিত একটি কল্পিত কাহিনী হিসাবে অভিহিত করতে দেরী করেননি।

ইরানী ব্লগাররা এই ছবিটি সম্পর্কে নানাবিধ মন্তব্য করেছেন:

রাগ এবং আশা:

লেগো ফিশ ব্লগ প্রজেক্ট ৩০০ (দি মুভি) নামে একটি গুগল বোমা তৈরি করেছে যাতে সার্চ ইন্জিন ব্যবহার করে এই ছবিটি সম্পর্কে জানতে আসা লোকজন আরেকটি সাইটে চলে যাবে যেখানে ’প্রাচীন পারস্য’ থিম ব্যবহার করে বিভিন্ন শিল্পকর্মের একটি গ্যালারী রয়েছে। এই ব্লগার আবেদন করছেন এই উদ্দ্যোগকে সমর্থন করতে এবং এই সত্য প্রচার করতে যে চলচিত্রে যা প্রদর্শিত হয়েছে ইরানীরা আসলে তা নয়। তিনি আরও বলছেন যে যদিও অনেকে সন্দেহ পোষন করেন, প্রজেক্ট ৩০০ প্রতিশোধমুলক বা সংঘর্ষমুলক কোন উদ্যোগ নয়। এটি পারসিয়ানদের শৈল্পিক দিকগুলো উপস্থাপনের একটি যৌথ প্রচেষ্টা , বর্তমানে মিডিয়াতে যা খুবই কম দেখা যায়।

দ্যা স্পিরিট অফ ম্যান সমগ্র স্পারটান সমাজের ইতিহাস পর্যালোচনা করে বলছেন স্পারটান সমাজ অ্যারিস্টোক্রাটিক ও টোটালিটারিয়ান (সমগ্রতাবাদী) ছিল, এই টার্মগুলো উদ্ভাবনের ২০ শতক আগেই। তিনি মত দিচ্ছেন যে ৩০০ চলচিত্রটি তার দেখা সবচেয়ে নিন্মমানের চলচিত্র এবং অন্য সবাইকে অনুরোধ করছেন যে এই ছবিটির দেখার জন্যে তাদের কষ্টার্জিত অর্থ নষ্ট না করতে।

মোহাম্মাদ আলী আবতাহী বলছেন হলিউড এই ছবিটি বানিয়েছে ইরানীদের হেয় করার জন্যে। তিনি আরও বলছেন যে এই চলচিত্রটি হয়ত আহমাদিনেজাদের মত ইরানী নেতাদের হলোকাষ্ট বিরোধী অবস্থানের প্রতিক্রিয়া হিসাবেই বানানো হয়েছে। তার মতে “এটি পৃথিবীব্যাপি ইতিহাস জানা লোকদের উপর কোন প্রভাব ফেলবে না”

কুরোশ জিয়াবারি চলচিত্রে ইতিহাসকে আরও সঠিকভাবে উপস্থাপনের পক্ষে কথা বলেছেন:

আমি শুধু প্রশ্ন করতে চাই কি হতো যদি ছবি নির্মাতা, প্রযোজক, কাহিনীকার এবং শিল্পীরা ঐতিহাসিক সত্যগুলো চেপে যাওয়ার চেষ্টা না করত এবং ইতিহাসের পাতা থেকে তারা যা উপস্থাপন করতে চায় সেটুকু ছেঁকে বের করে না আনতো? আমি জিজ্ঞেস করতে চাই কি হতো যদি পারস্য এবং গ্রীসের মধ্যে যুদ্ধের সঠিক চিত্রটি তুলে ধরত?

কাকস্য পরিবেদনা:
ফারশানেভেস্ত বলছেন চলচিত্রটি পারস্যবাসীদের একটি খারাপ ইমেজ দাড় করালেও এটি অপমানজনক নয়। এই ব্লগার জিজ্ঞেস করছেন কেন সবাই আবেগপ্রবন হয়ে যাচ্ছে এই ইস্যুতে “ছবিটির প্রদর্শনীর মাত্র তিন দিন আগে শুরু করে কিভাবে গুগল বম্ব ও পিটিশনের উদ্যোগ সফল করা যাবে?”

পুইয়া যিনি ছবিটি এরমধ্যে দেখেছেন বলছেন:

আমি বুঝতে পারছি কেন অনেক ইরানী ছবিটি সম্পর্কে বিরুপ মন্তব্য করছে। এই চলচিত্রটিতে বর্নবাদী মনোভাব রয়েছে এবং এতে পারস্যবাসীকে স্বৈরাচারী, কামুক, লুটেরা এবং দাসত্বপ্রথা প্রসারী জাত হিসাবে দেখিয়ে পারস্যের ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে । যদিও বলা হচ্ছে এটি ঐতিহাসিক পটভুমিতে নির্মিত একটি কল্পকাহিনী।

সত্যিকারের ঘটনা কি?

ইরানিয়ান ট্রুথ চিন্তা করছেন যদি এই চলচিত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদটিকে অন্যভাবে উপস্থাপন করা যেত:

এটা সত্যিই নৈরাশ্যজনক যে ইরানীরা এই ছবিটির বিরুদ্ধে তাদের ঝাল ঝাড়ছেন যেখানে এর চেয়েও বড় এবয় গুরুত্বপুর্ন বিষয় রয়েছে চিন্তা করার জন্যে। যেমন ইরানের বিরুদ্ধে একটি সম্ভাব্য যুদ্ধ যেটা হাজারো মানুষের মৃত্যুর কারন হবে। অথবা ইরানী মহিলা প্রতিবাদীদের অপহরন বা ইরান ও আমেরিকায় লাগাতারভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন।

এই ব্লগার ইরানীদের পরিচালিত বিভিন্ন পিটিশনের তুলনা করেছেন:

ইরানের রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির জন্যে পিটিশনে সই করেছেন মাত্র ২৯৩ জন ইরানী। ৪০৮৩ জন সই করেছেন ইরানী নারী বন্দীদের মুক্তির জন্যে। ৫১০৮ জন সই করে জেল, টর্চার ও মৃত্যু থেকে মুক্তি চেয়েছেন আহমেদ বাতেবীর। কিন্তু ৬১৫৩ জন সই করে দেখিয়েছেন যে একটি কমিক্স বুক অবলম্বনে নির্মিত একটি ছবির ইরানের গর্বকে ক্ষুন্ন করা তাদের কাছে বেশী গুরুত্বপুর্ন।

মাজিদ জোহারী বলছেন গ্রীসের প্রাচীন পারস্য সম্পর্কে শ্রদ্ধা বর্তমান ইসলামিক রিপাবলিকের পারস্য ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধার চেয়ে বেশী মুল্যবান। এই ব্লগার প্রশ্ন করছেন কে ইরানীদের জাতীয় সম্মান বেশী ভুলুন্ঠিত করছে?

ইরানী বিনিয়োগকারীরা কই?

আজারমেয়ার বলছেন যে একজন স্থানীয় পরিচালক পারস্য ইতিহাস সম্পর্কে একটি চলচিত্র বানাতে চেয়েছিলেন কিন্তু কোন বিনিয়োগকারী খুঁজে পাননি।

কয়েক বছর আগে আলেক্জান্ডার জোভী নামে একজন নবীন পরিচালক সাইরাস দ্যা গ্রেট সম্পর্কে একটি চলচিত্র বানাতে চেয়েছিল। আমি আজাদী টিভিতে আলেকজান্ডারের একটি ইন্টারভিউ নিয়েছিলাম। উক্ত চলচিত্রের বাজেট ছিল ৫০ মিলিয়ন পাউন্ড। দুইজন বিনিয়োগকারী (ইরানী নয়) প্রত্যেকে ২০ মিলিয়ন করে বিনিয়োগ করতে চেয়েছিলেন। উভয় বিনিয়োগকারীই সাইরাসের সহনশীলতা ও মহত কে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। এই ছবিটি নির্মিত হলে তা সব ইরানীরই গর্বের কারন হতো। কিন্তু দরকারী ১০ মিলিয়ন পাউন্ড নিয়ে কোন স্থানীয় নির্মাতা এগিয়ে আসেনি।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .