প্রেসিডেন্টের বোকার মতো সাক্ষাৎকারে মেসেডোনিয়ানদের মাঝে হাস্যরস

মেসেডোনিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে বর্তমানে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ইভানোভ মেসেডোনিয়ান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের মাঝে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। নির্বাচনের প্রচারাভিযানে দেয়া তাঁর প্রথম সাক্ষাৎকারে কয়েক দফা হঠকারি কথাবার্তা বলে তিনি এই আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি করেছেন।

#স্কপি (জর্জ – জর্জে নামের স্প্যানিশ সংস্করণের একটি ব্যাঙ্গাত্মক মেসেডোনিয়ান বর্নান্তর) হ্যাশট্যাগটি ব্যবহার করে ব্যবহারকারীরা খুব দ্রুততার সাথে ইভানভের বোকার মতো দেয়া সাক্ষাৎকার সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করেছেন। হ্যাশট্যাগটির মাধ্যমে দেশের ভেতরে এবং বাইরে বিপুল সংখ্যক দর্শকের কাছে তথ্যগুলো দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছে।

সাক্ষাৎকারের অন্যান্য ভুলের মাঝে অন্যতম ভুল হচ্ছে ইভানভ সাবেক ফ্রেঞ্চ প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাককে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে উল্লেখ করেছেনঃ  

তিনি বলেছেন, জ্যাক শিরাক যখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখন তিনি প্যারিসের মেয়রের দায়িত্ব পালনের পর এ পদে আসীন হন। তিনি আরও বলেন যে মেয়র হিসেবে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা থাকার কারনেই তিনি অভিবাসী ইস্যুটিকে ভালভাবেই মোকাবেলা করতে পেরেছিলেন। 

মেসেডোনিয়ান প্রধান সংবাদ সংস্থা এ১অন ডট এমকে প্রচারকৃত টেলিভিশন সাক্ষাৎকারটি কিছুটা ভিন্নভাবে প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছেঃ 

কাজাখস্তানে নতুন একটি মেসেডোনিয়ান দূতাবাস স্থাপনের কথা উল্লেখ করে ইভানভ দাবি করেছেন যে ইউরোপের সবগুলো দেশের চেয়ে কাজাখস্তান বড়ঃ  

“এমনকি আমি কাজাখস্তানে গিয়েছি এবং সেখানে একটি দূতাবাস খুলেছি। আর কাজাখস্তান কতো বড় আয়তনের তা যদি আপনাদের দেখাতে চাই তবে বলব – কল্পনা করুন ইউরোপ কত বড় এবং সবগুলো ইউরোপিয়ান দেশের একত্রিত আয়তন কতটুকু। কাজাখস্তানের ভূমি এতোটাই বিশাল।” 

নির্বাচনী প্রচারাভিযান শুরু করার পর থেকে জানা যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট জনসম্মুখে যেকোন বিতর্কে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকছেন। প্রচারাভিযানে অংশ নেয়ার পাশাপাশি তিনি শাসনতন্ত্র সমর্থিত কয়েকটি প্রচার মাধ্যমে সাক্ষাৎকার প্রদান করেছেন। 

Bju4miECYAAGQib

মেসেডোনিয়ান জনপ্রিয় ভার্সন “কে হতে চায় কোটিপতি” অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট জর্জ ইভানভ এর ব্যঙ্গ ছবি। ছবিঃ বেনামী – বিশ্বব্যাপী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত। 

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারাভিযানের শুরুতে দেশটির অন্যতম একটি জাতীয় টেলিভিশন কেন্দ্র তেলমা দাবি করেছে, তারা তথ্য পেতে অসম প্রবেশাধিকার এবং প্রচার মাধ্যমের বাজারে অন্যায় প্রতিযোগীতার মুখোমুখি হচ্ছে। তেলমা বিবৃতি দিয়েছে যে সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হবে এমন একটি সাক্ষাৎকারে তারা ইভানভকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কিন্তু তিনি তাদের আমন্ত্রণ উপেক্ষা করেছেন। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় তেলমা তাদের প্রধান প্রধান সংবাদ প্রচার অনুষ্ঠানে বলেছে, “উপেক্ষা করা অনিশ্চয়তা থেকে বাঁচার একটি প্রক্রিয়া মাত্রঃ” 

তিনি এমন একজন মানুষ যিনি সকল নাগরিকের প্রেসিডেন্ট হতে চান। আর আমরাও তাই চাই। আমাদের সদর দপ্তর থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে নিয়ম নীতি মেনে একটি সাক্ষাৎকার নেয়া হবে। কিন্তু আমাদের উপেক্ষা করা হল। এমনকি আমাদের জানানো পর্যন্ত হয়নি যে তিনি আমাদের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন কিনা! 

তেলমা টেলিভিশনের আয়োজিত সাক্ষাৎকারে অংশ নিতে ইভানভের অস্বীকৃতি জানানোর ঘটনাটি মেসেডোনিয়ার টুইটার ব্যবহারকারীদের মাঝে ব্যাপক আলোচনার ঝড় তুলেছে। রাজধানী স্কপি থেকে টুইটার ব্যবহারকারী তথা একজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সক্রিয় কর্মী @পারগো বলেছেনঃ 

#স্কপিতে তিনি আমন্ত্রণ অস্বীকার করতে শুরু করেছেন। আমার মনে হয় সাক্ষাৎকার গ্রহণের স্টুডিওতে একটি চেয়ার খালি থাকতে যাচ্ছে। অথবা তাদের কাছে অন্যকোন [একটি খালি চেয়ার] উপায় আছে। 

এ টুইটটি পোস্ট করার পর অন্যান্য ব্যবহারকারীরা জানিয়েছেন যে ইভানভ অন্যান্য স্বাধীন প্রচার মাধ্যম চ্যানেলগুলো থেকে দেয়া  সাক্ষাৎকার অথবা বিতর্কের আমন্ত্রণও অস্বীকার বা উপেক্ষা করেছেন।

সংবাদ প্রচারকারী ওয়েবসাইট লিবারটাস উল্লেখ করেছে, ইভানভের অমার্জিত টেলিভিশন সাক্ষাৎকার সম্পর্কে অনলাইন আলোচনা শুরু হওয়ার কয়েক ঘন্টা পর প্রশ্নবিদ্ধ সেই সাক্ষাৎকারের প্রচারিত অংশ সম্বলিত কয়েকটি ভিডিও ইউটিউব থেকে মুছে ফেলা হয়েছে। ভিডিওগুলো মুছে দেয়ার পর কয়েকজন টুইটার ব্যবহারকারী ইভানভকে তুর্কি প্রধানমন্ত্রী রিসেপ তায়্যেপ এরদোগানের সাথে তুলনা করেছেন। রিসেপ তায়্যেপ এরদোগানও ২০১৪ সালের মার্চ মাসের শেষে কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দেয়ার কারণে সমালোচনার শিকার হন। 

আমি গতকাল দেখেছি ভিডিওটিতে ইভানভ জ্যাক শিরাককে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বলে আখ্যায়িত করেছেন। সে ভিডিওটি পরে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ভুলে যাবেন না, এরদোগানের সাথে #স্কপিয়ের প্রাণ জড়িয়ে আছে। 

ভিডিওগুলো আর কেন দেখা যাচ্ছে না তা এখনও স্পষ্ট নয়। কয়েকজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী পরামর্শ দিয়েছেন যে ব্যবহারকারীদের অভিযোগ জানানোর কারণে ইউটিউব হয়তবা ভিডিওগুলো সরিয়ে নিয়েছে। ভিডিওগুলোর আসল পোস্টারগুলো হয়তো এখন এমনিতেই মুছে গেছে। অথবা কর্তৃপক্ষের চাপের কারণে জোরপূর্বক সেগুলো সরিয়ে নেয়া হয়েছে। 

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .