সেন্সরশিপ নিয়ে ইঁদুর-বিড়াল খেলায় বুদ্ধিতে সরকারকে ছাড়িয়ে গেছে ইরানের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা

Photo by Frederic Jacobs, used with permission.

ছবিঃ ফ্রেড্রিক জাকব, অনুমতিক্রমে ব্যবহৃত। 

অনেক ইরানি ইন্টারনেট সেন্সরশিপকে পাশ কাঁটিয়ে যেতে টর নামে একটি জনপ্রিয় টুল ব্যবহার করেন। এটি কোন ব্যক্তির পরিচয় লুকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। জুলাই মাসের শেষ থেকে আগস্ট মাস শুরু হওয়া পর্যন্ত টুলটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। টুলটি বন্ধ করে দেয়ার ফলে ইরানের শতকরা ৭৫ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী অর্থাৎ হিসেব অনুযায়ী ৪০ হাজার দৈনিক ব্যবহারকারী টর এর সাথে যুক্ত হতে পারেন নি।

ইরান সরকার কিছুদিন অন্তর অন্তর ইন্টারনেট ছাঁকনের জন্য নতুন নতুন নিয়ম নীতি গ্রহণ করে থাকে। টর ট্রাফিক বন্ধ করে দেয়ার উদ্দেশ্যেই নতুন নিয়ম করা হয়েছে। টর ব্যবহারকারী সম্প্রদায় বৈশিষ্ট্য সূচকভাবে একই দিনে এই প্রতিবন্ধকতার প্রতিষেধক আবিষ্কার করে ফেলেছেন।

সক্রিয় কর্মী, প্রতিবাদকারী এবং নাগরিক সাংবাদিকেরা ২০০৯ সালের সবুজ আন্দোলনের সময় থেকে টর ব্যবহার করতে শুরু করেন। তখন থেকে এটির কিছু নির্দিষ্ট স্পর্শকাতরতা ছিল। সারা বিশ্বের ডিজিটাল সক্রিয় কর্মীদের ব্যবহৃত সফটওয়্যারটির মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা তাদের পছন্দসই ওয়েবসাইটগুলোতে প্রবেশ করতে পারতেন। একটি নেটওয়ার্কে মধ্যস্থতাকারী আরেকটি সার্ভার ব্যবহার করার মাধ্যমে সুরঙ্গ তৈরি করে সফটওয়্যারটি কাজ করে। ফলে এ প্রক্রিয়াতে ব্যবহারকারী তাঁর ব্যবহারের সমগ্র পথ জুড়ে নাম পরিচয় গোপন রাখতে পারেন। এতে করে আইএসপিদের পক্ষে ব্যবহারকারীদের অবস্থান নির্নয় করা সম্ভব হয় না। এভাবে তারা সরকার কর্তৃক আরোপিত সেন্সরশিপ খুব সহজেই পাশ কাঁটিয়ে যেতে পারেন। টর একটি ওপেন সোর্স সফটওয়্যার। একটি বিশাল সম্প্রদায় এটি ব্যবহার করেন। বিপুল সংখ্যক সফটওয়্যার প্রস্তুতকারক ইন্টারনেট নিরাপত্তা ছিদ্র এবং যান্ত্রিক ত্রুটি অনুসন্ধান করতে এবং এগুলো দূর করতে কাজ করেন। এগুলোর পাশাপাশি তারা সরকের আরোপিত ছাঁকন ব্যবস্থা অকার্যকর করে দিতেও কাজ করে থাকেন।

টর প্রকল্পটি গত ৩০ জুলাই তারিখে জানিয়েছে, ইরানে সফটওয়্যারটির নিয়মিত ব্যবহারকারীরা টরের সাথে আর যুক্ত হতে পারছেন না। টর এ সংযুক্ত হওয়া ব্যবহারকারীর সংখ্যা টর মেট্রিক্সে প্রতিদিন কমে যেতে দেখা যাচ্ছে।

টর প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক এ্যান্ড্রু লিউম্যান ৪ আগস্ট তারিখে গ্লোবাল ভয়েসেসের কাছে পাঠানো একটি ই-মেইলে বার্তায় ব্যাখ্যা করেছেন, কর্তৃপক্ষ টুটি চেপে ধরছেন বা কঠোরভাবে নেটওয়ার্ক ট্রাফিকের গতি ধীর করে দিচ্ছে। তিনি বলেছেন, “ইরান যেকোন প্রটোকলের টুটি চেপে ধরছে। ফলে এটিকেই দেখতে এসএসএল ট্রাফিক বা এনক্রিপশন এর মতো লাগছে। এতে স্থানীয় টর অন্তর্ভুক্ত আছে। তবে প্লাগেবল ট্রান্সপোর্টগুলো বেশ ভালো কাজ করে”।

টর এবং অন্যান্য পরিচয় গোপনকারী টুলগুলোকে যে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় লিউম্যান সেটি চিহ্নিত করেছেনঃ সাধারনত সরকার যখন পরিচয় গোপনকারী ট্রাফিক কোডগুলোকে অনলাইনে ভাঙ্গতে পারে না, তখন তারা খুব সহজেই পরিচয় গোপনকারী বা এনক্রিপটেড ট্রাফিকগুলোকে একটি থেকে আরেকটিকে আলাদা করতে পারে। আর তারা যদি চান তবে এই পৃথককারী ট্রাফিকগুলো বন্ধ করে দিতে পারেন। কয়েক সপ্তাহ আগে ইরান সরকার এ কাজটিই করেছে।

লিউম্যান এ সমস্যার একটি সমাধান খুঁজে পেয়েছেন, যার নাম “প্লাগেবল ট্রান্সপোর্ট”। এটি এক ধরনের টর সংযোগ। এটি ব্রিজ নামে পরিচিত যা একটি লুকানো পথ ব্যবহার করে নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত করে থাকে। এই কাজের পদ্ধতিটি সরকারের পক্ষে ট্রাফিক খুঁজে পাওয়ার কাজটি আরও জটিল করে তোলে। আর এভাবে সরকারের পক্ষে ট্রাফিকটি বন্ধ করাও বেশ কঠিন হয়ে যায়।

ইন্টারনেট নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষক ফ্রেডেরিক জ্যাকোব গ্লোবাল ভয়েসেসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্যাখ্যা করেছেন, “আমি মনে করি, এ ব্যাপারটি বেশ ভালো যে তারা সাময়িকভাবে এটি [টর] বন্ধ করে দিয়েছেন। তারা এমন এক মুহুর্তে কাজটি করেছেন, যখন এটি সক্রিয় কর্মীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেনি।” জ্যাকব আরও ব্যাখ্যা করেছেন, অনেক ইরানি ব্যবহারকারীকে এটি শিক্ষা দিল যে তাদেরকে ব্রিজ ব্যবহার করা শুরু করতে হবে। সেন্সরকারীদের পক্ষে ব্রিজ বন্ধ করে দেয়া খুব কঠিন কাজ। তবে জুলাই মাসের শেষ দিকে টর বন্ধ করে দেয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত আরও ৩০০০ জন নতুন ব্যবহারকারী টর ব্যবহার করতে শুরু করেছেন। তারা নিয়মিত টর সংযোগের বাইরেও বিভিন্ন ব্রিজ ব্যবহার করছেন।  

জ্যাকব বলেছেন, “একেবারে মূল বিষয়টি হচ্ছে টর যদিও পরিচয় গোপন রাখতে ব্যবহৃত হয়, তবে আপনি টর ব্যবহার করছেন তা কিন্তু এই সফটওয়্যারটি লুকিয়ে রাখতে পারে না। আপনি যদি প্লাগেবল ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার না করেন তবে আপনি যে টর ব্যবহার করছেন তা প্রকাশিত থেকে যাবে।

টর মেট্রিক্স দেখিয়েছে যে স্থানীয় টর সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়ার পর থেকে টর ব্রিজ ব্যবহারকারী ইরানির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গেছে।

লন্ডন ভিত্তিক ইন্টারনেট গবেষক নারিমান ঘারিব ৫ আগস্ট তারিখে তাঁর টুইটার পেজে জানিয়েছেন টর সংযোগ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।  

#ইরানে সরাসরিভাবে #টর এ প্রবেশের সংযোগ আবার খুলে দেয়া হয়েছে।  

ইরান সরকার ২০১১ সাল থেকে টরের সাথে ইঁদুর-বিড়াল খেলায় যোগ দিয়েছে। দেশটিতে টর এর সাথে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতেই তারা এ খেলা খেলছেন। এখন পর্যন্ত খেলাটি চলছে।  

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .