ভিয়েতনাম সরকারের লক্ষ্য সক্রিয় কর্মীদের ফেসবুক পাতা

viet tan

ফেসবুকের জন্য যুদ্ধ (সূত্র: www.facebook.com/viettan)

সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহ ধরে ভিয়েতনামের সুপরিচিত সক্রিয় কর্মীরা হঠাৎ করে নিজেদের ফেসবুক একাউন্টে আর লগ-ইন করতে পারছেন না। এমনকি তারা ফেসবুকের কোন নিয়মনীতি লঙ্ঘন না করা সত্ত্বেও। তাদের ব্যক্তিগত পেজগুলোর বিরুদ্ধে “অপব্যবহারের” অভিযোগ এনে সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

এঞ্জেলিনা ট্রাং হিউনও এ মাসের শুরু থেকে তাঁর নিজের একাউন্টে সাময়িকভাবে প্রবেশ করতে পারছিলেন না। তাঁর মতে এ ঘটনার মূল হোতা হচ্ছে ভিয়েতনাম সরকারের অনলাইন সেনাবাহিনী। যাদেরকে “মতামত আকারদানকারী” (ডু লুয়ান ভিয়েন) হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এই মতামত আকারদানকারীরা ফেসবুকের “রিপোর্ট এবিউজ” ব্যবস্থাটি ব্যবহার করেছে। তারা বিভিন্ন একাউন্টকে লক্ষ্য করে সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিতে ফেসবুককে পরিচালিত করে থাকে। এ কাজে তারা একাউন্টগুলোকে বিন্যস্ত করতে ফেসবুকে রিপোর্ট করে প্রচন্ড আক্রমণ চালায়। 

Instructions for reporting Viet Tan's Facebook page

ভিয়েট তানের ফেসবুক পাতায় রিপোর্ট করার জন্য নির্দেশনা। ভিয়েত তান হচ্ছে একটি গনতন্ত্রমনা দল, যার সদস্যরা ভিয়েতনামের ভেতরে এবং সাড়া পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে আছে। (সূত্র: “আমি ভিয়েতনামিজ নিরাপত্তা পুলিশকে ভালোবাসি” ফেসবুক ফ্যান পেজ)

দেশটিতে ফেসবুক একটি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, যেখানে ২৫ মিলিয়ন ব্যবহারকারী রয়েছে। ২০০৯ সালে ফেসবুক চালু করার পর থেকে ভিয়েতনাম কর্তৃপক্ষ নানা উপায়ে এটির ব্যাপক বিস্তার রোধ করার চেষ্টা করছে। কেননা এটি বাক স্বাধীনতা প্রয়োগের একটি মুক্ত মাধ্যম হিসেবে ভূমিকা পালন করে আসছে।

ফেসবুক বন্ধ করতে কর্তৃপক্ষ শুরুতে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিল সেগুলোর কোনটি সফল হয়নি। কীভাবে ফেসবুকের ব্যবহার এড়িয়ে যেতে হয় সে সম্পর্কে তারা নেটিজেনদেরকে শিখতে উৎসাহিত করেছেন। আর এ কারনেই কর্তৃপক্ষ নাগরিক অবাধ্যতার ক্ষেত্রে এক পদ্যে পরিণত হন।

৩০ বছর বয়সী দিনহ হাত উই ভিয়েতনামের প্রথম সক্রিয় কর্মী, যাকে ফেসবুকে বিভিন্ন কার্যক্রম চালানোর জন্য ২০১৩ সালে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে “গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার অপব্যবহার” করার অভিযোগ আনা হয়। কারন তিনি তাঁর ছোট ভাইয়ের মুক্তি দাবি করে ফেসবুকে বিভিন্ন স্ট্যাটাস আপডেট দিয়েছিলেন। তাঁর ছোট ভাইকেও ভিন্নমত প্রকাশ করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। উইয়ের গ্রেপ্তারের ঘটনাটি স্ফুলিঙ্গ আকারে ছড়িয়ে সবার মনোযোগ আকর্ষণ করে। কিন্তু রাজনৈতিক আলোচনা এবং জোট গঠন করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহারের জন্য জনগণকে তা আরও আগ্রহী করে তুলতে পারেনি।

ভিয়েতনাম সরকার কর্তৃপক্ষ এখন ফেসবুক একেবারেই বন্ধ করে দেয়ার নীতি থেকে সরে এসেছে বলে মনে হচ্ছে। কারন কর্তৃপক্ষ ইন্টারনেট স্বাধীনতার ক্ষেত্রে কথা ও কাজের মাঝে কতোটা সমন্বয় বজায় রাখছে তাঁর উপর দেশটির অর্থনীতি এবং ভাবমূর্তি নির্ভর করছে।

তবে, “মতামত আকারদানকারী” কর্তৃপক্ষ বাক স্বাধীনতার শ্বাসরোধ করতে স্পষ্টভাবে তাদের লক্ষ্য অর্জনের আশা করছে। এই অনলাইন সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে একটি ভীতি প্রদর্শনকারী এবং হয়রানিমূলক পরিবেশ সৃষ্টি করার অভিযোগ উঠেছে। জনসাধারণের প্রচন্ড আবেগ উচ্ছ্বাস সম্পর্কে বিষাক্ত এবং ধর্ম বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য করে তারা তাদের কাজের প্রমাণ দিয়েছে। 

গণহারে একাউন্টগুলোকে অকার্যকর করে দেয়ার ঘটনাগুলো কোন ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনায়াল অব সার্ভিস (ডিডিওএস) আক্রমণ নয়। বরং কোন ফেসবুক প্রোফাইল বা সাম্প্রদায়িক পেজে যদি এই হ্যানয় সরকারের বিরুদ্ধে কোন প্রচার সূচী থেকে থাকে তবে এই সরকারি পোষা গুন্ডারা সেটিকে দ্রুত বন্ধ করে দেয়ার পদক্ষেপ নেয়। 

ফেসবুকার ত্রিনহ হু লং সম্প্রতি বন্ধ করে দেয়া ফেসবুক একাউন্টগুলোর একটি তালিকা পোস্ট করেছেন। তালিকাটি দেখে মনে হচ্ছে যেন ভিয়েতনামের অনলাইন সক্রিয় কর্মীদের নামের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছেঃ 

ভিয়েতনামের সাম্প্রদায়িক পুলিশ ফেসবুকের ভিন্ন মত প্রকাশকারী পেজগুলোর বিরুদ্ধে সম্প্রতি একটি নতুন কৌশল অবলম্বন করেছে। ফেসবুকের নিয়ম নীতির মাঝে “রিপোর্ট এবিউজ” নামে একটি অপশন আছে। তারা সেটি ব্যবহার করছে। পুলিশ এবং সরকার পক্ষের “মতামত আকারদানকারীরা” কয়েক হাজার মিথ্যা রিপোর্ট কার্ড তৈরি করেছে। একই সময়ে এ ধরনের চিহ্নিত ফেসবুক পেজগুলোর বিরুদ্ধে রিপোর্ট করতে তারা এ কৌশল অবলম্বন করেছেন। এই ফেসবুক পেজগুলো “ঘৃণা মূলক বক্তব্য ধারণ করছে” বা “এতে অসামঞ্জস্য প্রচার সূচী রয়েছে” এমন ধারণা ছড়িয়ে দিয়ে তারা রিপোর্ট পাঠাচ্ছে যেন ফেসবুক কর্তৃপক্ষই পেজটি বন্ধ করে দেয়। 

ভিয়েতনামের নেটিজেনরা আবারও অনশন শুরু করবেন এমনটি আশা করে এঞ্জেলিনা ট্রাং হুউন বলেছেনঃ 

শান্তিকামী সক্রিয় কর্মীদেরকে অফলাইনে শারীরিকভাবে আক্রমণ করার জন্য কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা পুলিশ বাহিনী তৈরি করেছেন এবং তাদেরকে ব্যবহার করছেন। আর অনলাইনে ব্লগারদেরকে চুপ করিয়ে রাখার জন্যতারা “মতামত আকারদানকারীদের” ব্যবহার করছেন। ভিয়েতনামের সরকার কি আসলেই মনে করেন যে তারা এ ধরনের অন্যায় কাজ করে পার পেয়ে যাবেন? 

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .