দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে ভোট দেয়ার অপরাধে আঙুল হারালেন বেশ কয়েকজন আফগান

The Independent Election Commission is embroiled in a scandal following the 2014 Afghan vote. Photo via Wikipedia Commons

২০১৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিতর্কে জড়িয়ে পড়লো আফগানিস্তানের নির্বাচন কমিশন। ছবি উইকিপিডিয়া কমন্সের সৌজন্যে।

গত শনিবারের নির্বাচনে ৭ মিলিয়ন আফগান ভোট দিয়েছেন বলে জানিয়েছে আফগানিস্তানের নির্বাচন কমিশন। আর এই নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গণতান্ত্রিক উপায়ে সরকার পরিবর্তন হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের উত্তরসুরী কে হবেন, তা ঠিক হতে যাচ্ছে। নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে ৪০% ছিল নারী ভোটার

এদিকে ভোট দেয়ার অপরাধে তালিবানরা ১৮ জন আফগান সৈন্য এবং ৭৬ জন সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। তাছাড়া ১০ জনের বেশি ভোটারের হাতের আঙুল কেটে দিয়েছে।

তালিবানদের এমন হিংস্র কর্মকাণ্ড ভোটারদের ভোট দানে বিরত রাখতে পারেনি। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষণা সহকারী আহমেদ সুজা ব্যাখ্যা করে বলেছেন, ভোটাররা ভোটদানে অবিচল ছিলেন:

ভোট শুরু হওয়ার আগমুহূর্তে তালিবানরা কাবুলের মুখে মূহুর্মুহু রকেট লাঞ্চার নিক্ষেপ করেছে। ভুমিকম্পের মতো কেঁপে উঠেছে চারপাশ। তবে ভোটাররা এরচেয়েও তুমুল বেগে উচ্ছ্বাসের সাথে ভোট দিতে গেছে।

জুলাই মাসের ২ তারিখে প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশিত হবে। তখনই জানা যাবে আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ না আশরাফ ঘানি দেশটির পরবর্তী প্রধান নির্বাচিত হবেন। পুর্ণাঙ্গ ফলাফল জানা যাবে জুলাইয়ের ২২ তারিখে। এদিকে আফগানিস্তানের জন্য এই নির্বাচন কেন গুরুত্ববহ টুইটারে তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন আফগান সাংবাদিক ফারজাদ লামি:

আজ থেকে পনের বছর আগে নিজের পছন্দমতো পোশাক পরার অধিকার ছিল না আফগানদের। আজ তারা তাদের নেতা নির্বাচনের জন্য ভোট দিচ্ছে।

এই নির্বাচনের মাধ্যমে আফগানিস্তানের দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যতের উপরও প্রভাব ফেলবে। এশিয়া সোসাইটির আফগান বিষয়ক ফেলো রামিন আনসারি লিখেছেন:

নির্বাচনে ভোট দিয়ে লক্ষ লক্ষ আফগান তাদের পরিপক্কতার প্রমাণ দিলেন। সাধারণ মানুষের ভোটাধিকারের প্রতি সম্মান দিয়ে এখন রাজনীতিবিদরা পরিপক্কতার প্রমাণ দিলেই হয়।

ভয়েস অব আমেরিকার সাংবাদিক জীলা জান তালিবান কর্তৃক আঙুল কেটে নেয়া একজন ভোটারের উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন:

নির্বাচনের সময়ে হেরাতে তালিবানরা যে ভোটারের আঙুল কেটে দিয়েছে তিনি আশনাটিভি-কে বলেছেন, যেকোনো সময়ে ভোটের জন্য তার ৯টার বেশি আঙুল আছে।

আফগানিস্তান বর্তমানে নানা ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করছে। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে তালিবান কর্তৃক নিরাপত্তা সমস্যা। তাছাড়া অর্থনীতি, নাজুক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, দুর্নীতির বিষয় তো রয়েছেই। তবে গত কয়েক মাসে দু'দফা নির্বাচনে আফগানদের ব্যাপক উপস্থিতি এটাই প্রমাণ করে, এইসব সমস্যা নিয়েও আফগান জনগণ সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চায়।

নির্বাচনে নির্বাচনী দুর্নীতি একটি বড় ইস্যু ছিল। কিছু মিডিয়া অবশ্য নির্বাচন কমিশনের দাবি করা ৭ মিলিয়ন ভোটার উপস্থিতির বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। এদিকে নির্বাচন কমিশনের প্রধান জিয়া-উল-হক আমারকাহিলের একজন সহকারি নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্যালয় থেকে অব্যবহৃত ব্যালট বক্সসহ ধরা পড়েছেন। এ ঘটনায় এক সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমারকাহিলের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি এই ব্যালট বক্স তার পছন্দের কোনো প্রার্থীর পক্ষে ব্যবহার করতেন। যদিও আমারকাহিল সব অভিযোগ প্রত্যাখান করেছেন।

প্রেসিডেন্ট প্রার্থী আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ নির্বাচনের দিন এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘটনার তদন্ত দাবি করেছেন। তা না হলে তিনি নির্বাচনের ফলাফল বর্জনের হুমকি দিয়েছেন। আরেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ঘানিও টুইটারে নির্বাচনী দুর্নীতির তদন্ত দাবি করেছেন:

আমরা জোর দাবি জানাই নির্বাচন কমিশন এবং ইসিসি দুর্নীতির বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করুক। এবং এ ব্যাপারে তদন্ত পরিচালনা করুক।

এদিকে ঘানির নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ভোটের আগেই ভোটারদের কাছে অনুরোধ করেছিল, দুর্নীতির ঘটনা দেখামাত্রই তারা যেন তাদেরকে অবহিত করেন।

সবার কাছে অনুরোধ, আপনারা কোনো ধরনের দুর্নীতি দেখামাত্র এই নম্বরগুলোতে ফোন করে আমাদের জানাবেন।

নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দু'টি দলের সমর্থকদের মধ্যেও ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের ভা্ষ্যমতে, আবদুল্লাহ'র সমর্থকরা ঘানি'র সমর্থকদের মারপিট করেছেন। তবে আবদুল্লাহ তার এক টুইটারে ঘানির সমর্থকদের আগ্রাসনকারী হিসেবে অভিহিত করেছেন:

বিরোধী পক্ষ আমাদের পর্যবেক্ষকদের ওপর আক্রমণ করেছে। এটা শুধু অবিবেচকের মতো কাজই নয়, একই সঙ্গে এটা নির্বাচনী আইনেরও লংঘন।

আগামী জুলাই মাসের ২২ তারিখে নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা করা হবে। দুজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকেই ঠিক করতে হবে তারা পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবেন, না প্রতিযোগিতায় নামবেন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .