ইউক্রেন: “আমার কোলেই মারা গেল এক তরুণ” #ইউরোময়দান

From the roof of Globus shopping center

ইউক্রেনের রাজধানী ক্রিয়েভের গ্লোবাস শপিং স্টোরের ছাদ থেকে নেয়া স্বাধীনতা চত্ত্বরের ছবি (১৯ ফেব্রুয়ারি)। ছবি তুলেছেন আনাস্তাশিয়া ভ্লাসোভা। স্বত্ত্ব: ডেমোটিক্স।

ঘটনা আঠারো ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবারের। সেদিন বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের চরম সংঘর্ষ চলছে। গুলিতে মারা গেছেন ২৫ জন। আর আহত হয়েছেন কয়েক হাজার প্রতিবাদী জনতা। সেই দিন ইউক্রেনের কিয়েভের এক শিক্ষার্থী সকাল থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত টু্‌ইটারের মাধ্যমে তুলে ধরেন ঘটনার জলজ্যান্ত চিত্র।

এই দিন ইউক্রেনের সংসদ প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের ক্ষমতা কমাতে ব্যর্থ হয়। গত তিন মাস ধরে স্বাধীনতা চত্ত্বরের আন্দোলনকারীদের মূল দাবি ছিল এ্টাই।

ঘটনার দিন দিন স্বাধীনতা চত্ত্বরেই ছিলেন মিরা_এমপি (@Mira_mp)। সেখানে যেসব ঘটনা ঘটেছিল, তার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন তিনি। তাছাড়া আহতদের সাহায্য করার জন্য সেখান থেকে হাসপাতালেও ছুটে গিয়েছিলেন। তিনি সেসব ঘটনা নিয়ে টুইট করেছিলেন। সেখান থেকে কিছু নির্বাচিত টুইট তুলে ধরা হলো।

তার প্রথম টুইটেই ফুটে উঠে সংঘর্ষ শুরুর দিকের অবস্থা:

মনে হচ্ছে, গ্যাসের রাজ্যে নিশ্বাস নিয়ে বাঁচতে হবে।

রুসেভস্কোগোতে টায়ার জ্বলছে। (মাস খানেক আগে এখানেই প্রথম সংঘর্ষ হয়েছিল)।

মারিনস্কি পার্কে সমবেত জনতা টিটুস্কিদের (বিক্ষোভকারীদের সাথে লড়তে সরকার এদের ভাড়া করেছে) “দাস” বলে গালি দিচ্ছে, তাদের টাকা দেখাচ্ছে। এ ঘটনায় লজ্জা পেয়ে তারা চলে গেছে।

মারিনস্কি পার্কে একটি তাঁবু জ্বলছে। সাধারণ জনতা বুঝতে পারছে না এখানে আসলে কী ঘটছে। একটি মাত্র মোবাইল নেটওয়ার্কের সংযোগ রয়েছে।

তার পরের টুইট হাসপাতালে রওনা হওয়ার। সংসদ ভবনের কাছে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ এবং বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর ক্র্যাকডাউনের পরের ঘটনা এটা।

আমরা এখন হাসপাতালে যাচ্ছি। বাবা'র দুই বন্ধু মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। তারা মাথায় এবং হাতে আঘাত পেয়েছেন। এই বিপ্লব একটি যুদ্ধে পরিণত হচ্ছে।

যারা জখম হয়েছেন পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। তিনি টুইট করেছেন:

আমরা বোধহয় হাসপাতালে যাবো না। একটি ঔষধের দোকান আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে চিকিত্সাসেবা দিয়ে তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিলাম।

এরপরে ময়দানে ফিরে গিয়ে সংসদের ঘটনার প্রতি নজর দেন।

এখন আবার ময়দানে ফিরে এসেছি। আশা করি বো দ্রুতই জ্ঞান ফিরে পাবে। সে মাথায় আঘাত পেয়েছে।

আমরা সংসদের সরাসরি সম্প্রচার দেখছি। কিছু বৃদ্ধা মহিলা বলছেন: “এরা বদমাইস। আজকে এরা সমস্যায় পড়বে।” বৃদ্ধ মহিলাদের খুব পছন্দ হলো।

ময়দানে বসে জনতা সরাসরি সম্প্রচার দেখছে। যেসব নারী এবং পুরুষ হেলমেট বা অন্যান্য নিরাপত্তামূলক পোশাক পরেননি, তাদের ময়দানে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।

সংসদের স্পিকারকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আন্দোলনকারীদের প্রতিক্রিয়া ছিল: এটা কী অ্যাম্বুলেন্স ছিল তা কে জানে? আমরা ককটেল নিক্ষেপ করবো!

তিনজন প্রতিবাদকারী মারা গেছেন। একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন যুদ্ধে রূপ নিলো।

বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী বারকুট আমাদের ওপর গুলি চালিয়েছে। গ্লোবাস থেকে পাথর ছুঁড়েছে। .

রাস্তায় প্রচুর মানুষ। মেট্রো বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষজন হেঁটে ময়দানে আসছেন।

৬টা বাজতে আর মাত্র ৭ মিনিট বাকি [ময়দান ছাড়তে আন্দোলনকারীদের প্রতি সরকারের বেঁধে দেয়া সময়সীমা]। আমি খুব গর্ববোধ করছি যে, কেউ ময়দান ছেড়ে যায়নি! এখানে অনেক বয়স্ক লোক এবং নারী রয়েছেন!

স্পেশাল বাহিনী আক্রমণের কারণে বিভিন্ন দিক থেকে আহত হওয়ার খবর আসছে। আন্দোলনকারীরা নারী এবং শিশুুদের সংঘর্ষ থেকে বের হয়ে যাওয়ার আহবান জানিয়েছেন ।

আমি বাসায় বসে থাকতে পারছি না। শোভকোভিচার হাসপাতালে যাচ্ছি।

আমি বাবা-মা এবং ড্যানের সাথে মিথ্যা বলতে পারবো না। তবে আমি ময়দান থেকেও দূরে থাকতে পারবো না। আমি মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখছি। আমাকে কোনো প্রশ্ন করবেন না।

তার পরের টুইট ছিল হাসপাতাল থেকে।

বো'র অবস্থা নিয়ে ডাক্তার কিছুই বলছেন না। আমি টুইটারে আপডেট পড়তে পারছি না। আমার ফোনের ব্যটারির চার্জ শেষ হয়ে যাচ্ছে। দেখা হবে ময়দানে।

আমরা সতের নম্বর হাসপাতালে এসেছি। এখানে অনেক আহত ব্যক্তি এসেছেন। যারা সামান্য আহত হয়েছেন, তাদের ঘরে নিয়ে যেতে ক্রিয়েভবাসী এগিয়ে আসুন।

অনেক অনেক রক্ত আর মৃতদেহ। এটা আমার জীবনের সবচে’ ভয়ের রাত।

একজন তরুণের মাথায় এবং পেটে গুলি লেগেছে। সে আমার কোলেই মারা গেল। আমি এই রাতের কথা জীবনেও ভুলবো না।

এই পোস্ট আমাদের ইউক্রেনের #ইউরোময়দান প্রতিবাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ। .

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .