উইচ্যাট কি হতে চলেছে পরবর্তী চীনা সিনা উইবো ?

চীনা সামাজিক মিডিয়ায় টেক্সট এবং ভয়েসমেইল সেবা উইচ্যাট এবং মাইক্রোব্লগিং ওয়েবসাইট সিনা উইবো এর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা জমে উঠেছে।

হুক্সিউ.কম অনুযায়ী, তৃতীয় পক্ষের ডেটা ট্র্যাকিং পরিসেবা দ্বারা সম্পন্ন একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১২ সালের মাঝামাঝির তুলনায় জনপ্রিয় সিনা উইবো ব্যবহারের পরিমাণ ৩০ শতাংশের অধিক কমে গেছে। গবেষণা থেকে জানা যায়, ৫০০ মিলিয়ন এর অধিক ব্যবহারকারী নিয়ে সিনা উইবোর গৌরবময় বছর ছিল ২০১১ এবং ২০১২ সাল, যখন এই সাইটের পোস্টের সংখ্যাই ছিল শীর্ষে।

গবেষণাটি বিস্ময় হয়ে আসেনি। উইবোর আয়ুর বিষয়ে ব্যবহারকারীরা ২০১২ সালেই তাদের সন্দেহ প্রকাশ শুরু করেন, যখন চীনা সামাজিক মিডিয়া ব্যবহারকারীরা মাইক্রোব্লগিং পরিষেবার পরিবর্তে টেনসেন্টের উইচ্যাটে বেশি সময় ব্যয় করতে শুরু করেন।

২০০৯ সালে শুরুর পর টুইটারের মত মাইক্রোব্লগিং ওয়েবসাইট সিনা উইবো সংবাদ ও গল্প শেয়ারের একটি উন্মুক্ত প্লাটফর্ম হিসাবে ২০১০ এবং ২০১১ সালে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। যাইহোক, ২০১২ সালে টেক্সট এবং ভয়েসমেইল সেবা উইচ্যাট সিনা উইবো’র জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। ২০১১ সালে শুরুর পর থেকে এখনও পর্যন্ত উইচ্যাটে ৩০০ মিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারি নিবন্ধন করেছে। এই পরিষেবাটি বিদেশে প্রসারের লক্ষে দ্রুত বর্ধনশীল হচ্ছে।

Wechat VS. Weibo

উইচ্যাট বনাম উইবো 

২০১২ সালের আগস্ট মাসে উইচ্যাট পাবলিক অ্যাকাউন্ট সেবা নামে আরেকটি সেবা চালু করে, যা এই প্ল্যাটফর্মটিকে একটি নতুন মার্কেটিং হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার জন্য সংবাদমাধ্যম, খুচরো বিক্রেতা এবং ই কমার্স প্রদানকারী কোম্পানিকে আকৃষ্ট করে। যদিও উইচ্যাট এখনও লাভ করছে না, কিন্তু সফটওয়্যারটির অর্থ উপার্জন করা এখন শুধু সময়ের ব্যাপার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

একটি মজার টুল এবং সম্ভাব্য অর্থকর ব্যবসা হিসেবে উইচ্যাটের বৃদ্ধি সত্ত্বেও বিতর্ক এবং খবরের জন্য এর বিভিন্ন কার্যাবলীর কারণে একটি প্ল্যাটফর্ম হিসাবে উইবোকে প্রতিস্থাপন করার সম্ভাবনা কম।

উইচ্যাট ব্যবহারকারী বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে যেখানে একটি বদ্ধ সম্প্রদায়, উইবো তা নয়। ফেসবুক -এর মতো, ব্যবহারকারীরা সেখানে তাদের বন্ধু পরিমণ্ডলে নিবন্ধ, ছবি এবং ভিডিও শেয়ার করতে পারেন। এমনকি উইবোতে যেকোন কেউ কাউকে অনুসরণ করতে পারে যেটি সহজে তথ্য ছড়িয়ে দিতে পারে।

এপ্রিল ২০১৩ সালে, উইবোতে ইন্টারনেট বিশ্লেষক কিয়ান হাও এবং চীনের প্রাক্তন গুগল প্রধান কাই-ফু লি’র মধ্যে উইবোর জন্য উইচ্যাট হুমকি শীর্ষক একটি বিতর্ক হয়েছিল। ব্যবহারকারীদের বাস্তব নাম নিয়ন্ত্রণের ফলে পরিষেবা ছাড়ার কারণে উইবোর গুরুত্ব কমছে বলে কিয়ান যুক্তি দেখান। যাইহোক, লি প্রস্তাব দিয়েছেন যে, “বন্ধ তত্ত্বাবধানই হলো জীবনীশক্তি,” এর অর্থ, উইবো হুমকিতে না থাকলে সরকার এদিকে মনোযোগ দিতো না।

সম্ভবত লি সঠিক হতে পারেন, কিন্তু তিনি বাস্তব নাম প্রচারণার দুর্বল প্রয়োগ করা হয়েছে উল্লেখ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। অনেক ব্যবহারকারী সে যোগ্যতার কাছাকাছি যেতে পেরেছেন। অন্যদিকে, উইচ্যাট একটি মোবাইল ভিত্তিক সেবা। অ্যাকাউন্টটি একটি সেল ফোন নম্বরে নিবন্ধিত করা প্রয়োজন, সামাজিক কাজকর্মের জন্য যেটি ব্যাপারটিকে কঠিন করে তোলে। এমনকি আবদ্ধ পরিমণ্ডলে, উইচ্যাটের পিছনের কোম্পানী টেনসেন্ট, চীন এবং বিদেশে উভয় ক্ষেত্রেই উইচ্যাট বার্তার সমালোচনা করেছে। যদিও বিভিন্ন দেশের নিয়ম ভিন্ন ভিন্ন।

উইবোর উপর কঠিন সেন্সরশিপ সত্ত্বেও, এটা সামাজিক ন্যায়বিচার এবং পরিবেশগত সমস্যার ক্ষেত্রে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এটি তথ্য সংগ্রহ ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং দুর্ঘটনার সময় সচেতনতা তৈরি করেছে।

শুধুমাত্র একটি সামাজিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম হিসেবে চীনা সমাজের অগ্রগতি তুলে ধরার ক্ষেত্রে যেহেতু এর একটি বড় প্রভাব রয়েছে, সেহেতু উইচ্যাটের সাথে যুদ্ধে উইবো হারবে না।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .