সৌদি বিচারক মানবাধিকার কর্মীর শুনানীর সময় আদালতে নারীর উপস্থিতি নিষিদ্ধ করেছে

এই প্রবন্ধটি সৌদি আরবের সংস্কারপন্থীদের বিচার বিষয়ে করা আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ

প্রথম কোন সৌদি নারী আইন পেশার সনদ লাভের ঠিক দশ দিনের মাথায় একজন বিচারক একটিভিস্ট ডা আব্দুল কারিম আল খুদার–এর প্রকাশ্য আদালতে বিচারের শুনানিতে নারীদের উপস্থিতিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তিনি দেশটির অন্যতম মানবাধিকার সংগঠন সৌদি নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংস্থা (সৌদি সিভিল এন্ড পলিটিক্যাল রাইটস অ্যাসোসিয়েশন এসিপিআরএ)–এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।

সৌদি আইনে এসিপিআরএ-এর মত প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকা কঠিন। দেশটির রাজতন্ত্র মৌলিক মানবাধিকার, যেমন বাকস্বাধীনতার মত বিষয়কে স্বীকৃতি প্রদান করে না। দেশটিতে এই ধরনের সকল প্রকারের সংগঠন এবং গণসমাবেশ নিষিদ্ধ।

২৪ এপ্রিলে ২০১৩ তারিখে বুরাইদাহ সিটির আদালতে ডা আল খুদারের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের চতুর্থ দফা শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রায় ৪০ জনের মত তার পুরুষ ও নারী সমর্থক আদালতে উপস্থিত হয। এই ঘটনা ২০১২ সাল থেকে শুরু হওয়া এসিপিআরএ-এর সদস্যদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আইনগত প্রক্রিয়ার মধ্যে সাম্প্রতিকতম। বর্তমানে সৌদি আরবে ডজন খানেক প্রখ্যাত অধিকার আন্দোলন কর্মী কারাগারে বন্দী।

আল খুদার,তার বিচারের সময় নারীদের উপস্থিতির উপর প্রতিবন্ধকতা আরোপের বিরুদ্ধে আপত্তি জানান এবং আদালতে প্রবেশ করতে অস্বীকার করেন। যখন তিনি আদালতের বাইরে অবস্থান করছিলেন, তখন এক পুলিশ তাকে আটকে রাখে। তার আইনজীবী আব্দুলআজিজ শুবালাই (@এ_আব্দুলাজিজ৩০০) বুরাইদাহের প্রধান অপরাধ আদালতে যান এই বিষয়টি জানতে যে কেন তার মক্কেলকে আটকে রাখা হয়েছে এবং টুইট করেন [ আরবী ভাষায়] :

ذهبت للمحكمة وقابلت رئيس المحكمة على العمر قال أن القاضي إبراهيم الحسني أصدر أمربالإيقاف٤أشهر والجلسة القادمة لم تحددبعد.

@এ_ আব্দুলআজিজ আমি আদালতে গিয়েছিলাম এবং এর প্রধান আলি আল আমারের সাথে সাক্ষাত করি। তিনি বলেন যে বিচারক ইব্রাহিম আল হুসাইনি চার মাসের এক আটকাদেশ জারি করেছে।

গত মাসে এসিপিআরএ–এর দুই সদস্য ডা মোহাম্মদ আল খাতানি ও ডা আবদুল্লাহ আল হামিদের বিরুদ্ধে নয় মাসের এক শুনানীর পর রায় ঘোষণা করা হয়। তাদের যথাক্রমে দশ ও এগারো বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়, “শাসক এবং তার উত্তরসূরির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা” ও “দেশের উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্থ করার কারণে”।

এসিপিআরএ এই বিষয়টি উন্মোচন করেছে যে, আল খাতানি এবং আল হামেদ উভয়কে সরকারের তরফ থেকে বলা হ্‌য় যদি তারা তাদের কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে রাজী হয়, তাহলে সরকার তাদের আনা অভিযোগ থেকে অব্যহতি প্রদান করবে। কিন্তু উভয়ে বলেন যে “নিরব থাকার বদলে তারা জেলে যেতে প্রস্তুত”।

সাধারণত এই সব শুনানিতে নারীদের উপস্থিত থাকতে দেওয়া হয়। কিন্তু আজ বিচারক নারীদের উপস্থিতি নিষিদ্ধ করার কারণ হিসেবে কোরানের এক আয়াত উচ্চারণ করেন। এসিপিআর-এর সদস্য আবদুল্লাহ আল সিয়েদ (@আব্দুল্লাহ১৪০৬) টুইট করেছেন [আরবি ভাষায়]:

Dr. al-Khudar (in the middle) before the beginning of the session.

আদালতের কার্য শুরুর আগে ডা আল-খুদার (মাঝের জন)। ছবি আপলোড করেছে @এসিপারাহ

القاضي ابراهيم الحسني يستدل بآية ( وقرن في بيوتكن ) على منعه لدخول النساء #محاكمة_حسم_القصيم

@abdulllah1406: “এবং তোমাদের গৃহে তা মেনে চল”, বিচারক ইব্রাহিম আল হুসাইনি কোরানের এই আয়াত উদ্ধৃত করেন। তিনি এসিপিআরএ-এর শুনানিতে নারীদের উপস্থিতি নিষিদ্ধের জন্য তা উচ্চারন করেন।

আনুষ্ঠানিক ভাবে সৌদি আরবে শরিয়া আইন প্রযোজ্য। দেশটির অপরাধ আদালত লিখিত কোন আইনের উপর নির্ভর করে না তার বদলে সেই সমস্ত উদ্ধৃতি এবং ভাবধারার উপর নির্ভর করে যা কিনা কোরান এবং শরিয়া আইন থেকে উদ্ভূত। সরকার এ ক্ষেত্রে ধর্মীয় ভাবে জ্ঞানীদের এই ক্ষেত্রে বিচারক হিসেবে নিযুক্ত প্রদান করে থাকে যারা অনেকটা আবেগপ্রসূত হয়ে বিচার করে।

মানবাধিকার কর্মী বান্দার শামরি (@এক্সালসামারি) এই শুনানিতে উপস্থিত থাকার জন্য বুরাইদাহতে গিয়ে হাজির হন। কিন্তু তার চেহারার কারণে তাকে আদালতে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। তিনি টুইট করেছেন [আরবি ভাষায়]:

حرس المحكمة الجزائية ببريدة منعوني من الدخول بحجة “ان شكلي ليس كالسعودي” 🙁

@এক্সালসামারি: বুরাইদাহ অপরাধ আদালতের নিরাপত্তা রক্ষীরা আমাকে ভবনে প্রবেশ করতে দেয়নি, কারণ আমি নাকি দেখতে সৌদিদের মত নই।” 🙁

একটিভিস্ট ওয়ালিদ আবুল কায়ের (@আবুলখায়ের) [আরবি ভাষায়] টুইট করেছে :

السياسي يقول للخارج بأنه يسعى لضمان حقوق المرأة لكن المشكلة في مجتمعنا .. بينما هو يعزز من مكانة القاضي الذي يحتقر المرأة ويسجن الإصلاحيين

@ আবুলখায়ের : রাজনীতিবিদেরা [শাসকেরা] বিদেশীদের বলছে, তারা নারীদের অধিকার রক্ষা করে। কিন্তু এই সমস্যাটির শিকড় এই সমাজের মধ্যে গ্রোথিত… এখন [এই শাসকেরা] এমন বিচারকদের সমর্থন করছে, যারা মেয়েদের অপমান করছে এবং সংস্কারবাদীদের কারাগারে আটকে রাখছে।

এর আগের শুনানিতে , আল-খুদার অনুরোধ জানিয়েছিলেন, যেন তার মামলাটি অন্য কোন বিচারকের অধীনে হস্তান্তর করা হয়,কারণ শুনানীর আগে এই বিচারকের সাথে তিনি ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিলেন। তবে বিচারক তার এই অনুরোধ রাখতে অস্বীকার করে বলেন যে, বিষয়টি বিচারকার্যের উপর কোন প্রভাব ফেলবে না।

বিশ্বে যে কয়টি দেশে নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্র প্রচলিত আছে সৌদি আরব তার মধ্যে অন্যতম এবং দেশটির মানবাধিকার পরিস্থিতি অতি জঘন্য, যেখানে বিনা বিচারে ৩০,০০০ নাগরিক কারাগারে আটক আছে।

এই প্রবন্ধটি সৌদি আরবের সংস্কারপন্থীদের বিচার বিষয়ে করা আমাদের বিশেষ কাভারেজের অংশ

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .