সিরিয়াতে কুর্দীরা ইসলামপন্থী এবং পিকেকে নিয়ে উভয় সংকটে

আমরা সিরিয়া ডিপলি (গভীরভাবে সিরিয়া)র সঙ্গে আমাদের সহযোগিতার অংশ হিসেবে নিবন্ধের একটি ধারাবাহিক প্রকাশ করছি যাতে বিশ্বজুড়ে লেখকদের সংঘাত সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গীসহ ক্রসফায়ারে মধ্যে পড়া অসামরিক জনগণের কণ্ঠস্বর ধরা পড়েছে।

আজাজ, সিরিয়া: তুরস্ক-ভিত্তিক কুর্দিশ শ্রমিক পার্টি (পিকেকে) এবং এর সিরীয় রাজনৈতিক শাখা গণতান্ত্রিক ইউনিয়ন পার্টি (পিওয়াইডি) একটি অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্যে হোঁচট খেয়েছে। গত গ্রীষ্মে সিরীয় সেনাবাহিনী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পিকেকে’র কাছে অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করার পর তারা এখন হয় শহরগুলির তারা তুর্কি সীমান্ত বরাবর বিভিন্ন শহর এবং নগরের পরিচালনা করছে।

বাথপন্থী সিরিয়াতে বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার এবং স্বাধীন রাষ্ট্র প্রত্যাশী কুর্দীদের জন্যে এটা স্বপ্নের বাস্তবায়নের মতো হলেও তা দ্রুতই সিরিয়াতে তাদের আসাদ আমলের জীবনের চেয়ে আরো বেশি অত্যাচারের প্রতিরূপে পর্যবসিত হয়েছে।

বেওয়ার মুস্তাফা, বাম থেকে দ্বিতীয়, শাক্বী ওথমান, ডান থেকে দ্বিতীয়, এবং সালাদিন ব্রিগেডের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ। কৃতজ্ঞতা: মোহাম্মদ সার্গি

“আমরা আমাদের মুখ খুলতে পারি না,” বলেছেন আলেপ্পোর দক্ষিণের কুর্দিশ শহর জিন্দারেশের গণতন্ত্রপন্থী এক্টিভিস্ট ওয়ালাতো। “আসাদের শাসনামলের চেয়ে পিকেকের অধীনে আমাদের স্বাধীনতা কম।”

ওয়ালাতোর মতো এক্টিভিস্টদের জন্যে নতুন শাসকদের অধীনে একইসঙ্গে পিকেকে-নিয়ন্ত্রিত শহরগুলিতে বসবাসের মানে হলো আসাদের শাসনামলের চেয়ে আরো বেশি গোপনীয়তার সঙ্গে কাজ করা। সিরিয়ার বিপ্লবের প্রথমদিকে আফরিন, আমুদা এবং কোবানির মতো কুর্দিশ শহরগুলোতে বড় বড় বিক্ষোভ হতো। কিন্তু দেশের বাকি অংশের সঙ্গে প্রকাশ্য এই সব সাহসিকতা এবং সংহতির প্রদর্শন ক্রমেই বিরল হয়ে উঠছে।

“পিকেকে এমনকি দেয়ালগুলো থেকে ‘ইয়াস্কুত’ [মানে হলো আসাদ নিপাত যাক] শব্দটি মুছে ফেলেছে,” ওয়ালাতো বলেছেন। “মানবিক সাহায্য সংগঠিত করার মতো অরাজনৈতিক প্রচেষ্টার জন্যেও একটিভিস্টদের প্রায়ই হয়রানি করা হয়।”

(সিরিয়ার কুর্দীদের উপর আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপ পরিচালিত সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষা সম্পর্কে আরো জানতে এখানে এবং হেনরি জ্যাকসন সোসাইটির দু’টি প্রতিবেদনের জন্যে এখানে, আর এখানে ক্লিক করুন।)

আলেপ্পোতে যুদ্ধ করা সালাদিন ব্রিগেডের অধিনায়করা শেষ পর্যন্ত পিকেকে কুর্দী শহরগুলির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়ায় বিস্মিত হয়নি। শূন্যস্থান পূরণ করার মতো অস্ত্র এবং সংগঠণসহ একমাত্র গোষ্ঠী পিকেকে। তবে এর এতো সংগঠিত হওয়ার একটি কারণ রয়েছে। সালাদিন ব্রিগেডের প্রধান কর্ণেল শাক্বী ওথমান বলেছেন সিরিয়ার কুর্দীদের বিভক্ত করার জন্যে পিকেকে হাফেজ আল আসাদ সমর্থিত এবং কুর্দী রাজনীতিতে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী ধারা জোরদার করার মাধ্যমে তুরস্কের দিক থেকে চাপ সৃষ্টি করা।

এছাড়াও আসাদ শাসকগোষ্ঠীর পিকেকে’কে সাহায্য করার  একটি জাতিগত কারণ রয়েছে, বলেছেন ওথমান। পিকেকে’র নেতৃত্বের অধিকাংশই এসেছে বিরল একটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়: আলাপন্থী কুর্দীদের মধ্য থেকে। এখন তুর্কি জেলখানায় বন্দি পিকেকে’র প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল্লাহ ওসালান সিরিয়ার বেশিরভাগ, সম্ভবতঃ ২লক্ষ, আলাপন্থী কুর্দীদের শহর মা’বাতলির একজন আলাপন্থী। কুর্দীরা সিরিয়ার ২কোটি ৩০ লক্ষ জনসংখ্যার শতকরা ১০ ভাগের কিছু বেশি এবং বাকি বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি মাঝারি সংস্করণের সুন্নী ইসলাম মেনে চলে।

পিকেকে কর্মকর্তারা আসাদ সরকারের সঙ্গে বন্ধন অস্বীকার করলেও তাদের অস্ত্র কথা থেকে আসে জিজ্ঞাসা করা হলে এর শীর্ষ মুখপাত্র চাতুরীর সঙ্গে এড়িয়ে যান, জানিয়েছেন গোষ্ঠীটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা এবং সম্প্রতি এর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা ওয়াশিংটন-ভিত্তিক একজন গবেষক। সিরিয়া ডিপলি সিরিয়ার ভিতরে মাঠপর্যায়ে পিকেকে কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করতে সক্ষম হয়নি।

কুর্দী এক্টিভিস্ট এবং বিদ্রোহীরা বলেছে তারা পিকেকে’র অবদমন এবং হুমকির সম্মুখীন হলেও, তারা কুর্দীদের মধ্যে একটি মারাত্মক দ্বন্দ্ব এড়ানোর জন্যে গোষ্ঠীটিকে মোকাবেলা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তবে সশস্ত্র উপদলগুলোর মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।  আলেপ্পোতে যুদ্ধরত সালাদিন ব্রিগেডের একজন প্রতিষ্ঠাতা   আসাদ সরকার থেকে দলত্যাগ করা প্রথম কুর্দী কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন বেওয়ার মুস্তাফা বলেছেন তিনি এবং তার কিছু সহযোদ্ধা পিকেকে’র হিটলিস্টে রয়েছেন।

ওথমান বলেছেন তার দল জাতিগত ভাইদের রক্তপাত এড়ানোর চেষ্টা করবে এবং স্থানীয় কুর্দী জনগণ পিকেকেবিরোধী হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে ইচ্ছুক। হয়তো বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে না। ওয়ালাতো বলেছেন যে পিকেকে’র বাড়াবাড়ি যেমন কর আরোপ, অথবা বন্দীদের একটানা কয়েক দিন ধরে শহরের চত্ত্বরে খুঁটিতে বেঁধে রাখা গোষ্ঠীটির জনপ্রিয়তায় ধ্বস নামিয়ে দিচ্ছে। তবুও ইসলামী চরমপন্থীদের হুমকি কুর্দীদেরকে তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী আধা-সামরিক বাহিনীর উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের ব্যাপারে সতর্ক হতে বাধ্য করেছে।

“পছন্দ জাবহাত আল-নুসরা অথবা পিকেকে’র মধ্যে হলে আমি সবসময় পিকেকে পছন্দ করবো,” বলেছেন সালাদিন ব্রিগেডের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা এবং পিকেকে’কে ভাড়াটে ও অপরাধী অভিহিত করা একজন এক্টিভিস্ট মোহাম্মদ সুলেইমান।

কুর্দীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার একটি কারণ রয়েছে। গত সপ্তাহে রাস আল আইনে বিদ্রোহী এবং পিকেকে যোদ্ধাদের মধ্যে মারাত্মক সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটেছে। ইসলামপন্থী ব্রিগেড তুরস্ককের সঙ্গে সিরিয়ার উত্তরপূর্ব সীমান্তের এবং মাসের পর মাস ধরে নামমাত্র পিকেকে নিয়ন্ত্রণে থাকা শহরটিতে বোমাবর্ষণের জন্যে একটি ট্যাংক ব্যবহার করেছে (ভিডিওটি নীচে রয়েছে।) কুর্দী এবং বিরোধীদলীয় আরব নেতৃবৃন্দ সহিংসতা বন্ধের আহবান জানিয়েছেন এবং কুর্দী ও সিরীয় জাতীয় পরিষদের সাবেক সভাপতি আব্দুলবাসেত সিইদা বলেছেন যে রাস আল আইনে যুদ্ধ করা বৃথা কারণ এতে আসাদ শাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটবে না।

একথা বলার মানে এই নয় যে কুর্দীদের মধ্যে ইসলামপন্থীদের প্রতি কিছুটা আকর্ষণ নেই। প্রকৃতপক্ষে, সালাদিন ব্রিগেড কিছু কিছু গোষ্ঠীর সঙ্গে লড়াই করেছে। আলেপ্পো এবং তুর্কি সীমান্তের কাছাকাছি বিভিন্ন সার্জারি কেন্দ্রের একজন শল্যচিকিৎসক শারভান ইবেশ ভরবেগ বজায় রেখে আলেপ্পোতে শাসকগোষ্ঠীর প্রতিআক্রমণগুলোকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যে জাবহাত আল-নুসরা’র প্রশংসা করেছেন।

“ইসলামী ব্রিগেডগুলো সংগ্রামে ভারী বোঝা বহন করছে,” বলেছেন তিনি।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .