জর্ডানঃ ইন্টারনেট সেন্সরশিপকে না বলুন

জর্ডানের নাগরিকরা এখনো এক অন্ধকারে রয়ে গেছে, যেখানে আজ [২২ আগস্ট, ২০১২] দেশটির সরকার ইন্টারনেট স্বাধীনতার উপর নতুন নিয়ন্ত্রণ আরোপের বিষয়টি অনুমোদন করেছে। প্রথমত সরকার কোন ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেওয়ার ক্ষমতা প্রশাসনকে প্রদান করেছে, আর এখন নতুন এক প্রকাশনা আইন জারি করা হল, যে বিষয়টি ইন্টারনেটের উপর আরো নিয়ন্ত্রণ এবং সেন্সরশিপ আরোপ করার অনুমতি প্রদান করে, যা কিনা খসড়া আইন হিসেবে অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে।

সংবাদপত্র আল ঘাদ-এর [আরবী ভাষায়] সূত্রানুসারে, জর্ডান সরকার প্রকাশনা এবং সংবাদপত্র আইনের সংশোধনের অনুমতি প্রদান করেছে, যে আইনের অধীনে একটি ওয়েবসাইটের মালিকেরও, ঠিক অন্য সব প্রকাশনার মতই সরকারী নিবন্ধন এবং লাইসেন্সের প্রয়োজন হবে। একই সাথে এই সমস্ত ওয়েবসাইটে পাঠকদের প্রকাশিত লেখা এবং মন্তব্যের দায়ভার মালিকদেরই নিতে হবে।

এখন এই খসড়া আইনকে আইনে পরিণত করতে সংসদের অনুমোদন প্রয়োজনঃ

জর্ডানের ব্লগার মোয়ি বেশ কিছু ধারাবাহিক ভিডিও পোস্ট করেছে, যে সব ভিডিওতে দেশটির ইন্টারনেটে সেন্সরশিপ আরোপের সাম্প্রতিক উদ্যোগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা হয়েছে।

মোয়ির পোস্টের শিরোনাম “না” এবং তার পোস্টের ভেতরে যে লেখা রয়েছে তা পাঠ করুন:

একটি লাইনও লিখবেন না, দেখুন এবং বিচার করুন!

ভিডিওগুলো এখানে প্রদান করা হল :

এটা হচ্ছে সেন্সর করা মোয়ি:

এখানে সেন্সর করা সারাহ:

আর সেন্সর করার পর এই হচ্ছে ওমর :

ফেসবুকে জর্ডানের প্রাক্তন তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী মারওয়ান জুমা জর্ডান সরকারের উদ্দেশ্য এক চিঠি লিখেছেন। তাতে তিনি বলেছেন:

এই বিষয়ে কথা বলা আমার এক দায়িত্ব! এই কারণে নয় যে আমার পরিচালিত কোম্পানী জর্ডানে প্রথম ইমেইল চালু করে, অথবা এটি ছিল জর্ডানের সমৃদ্ধ এক উদ্যোগের অন্যতম এক প্রতিষ্ঠাতা, আর এ কারণে নয় যে সম্প্রতি আমি তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলাম, বরঞ্চ এর কারণ হচ্ছে আমাদের এই খাতে যে ঘটনা ঘটছে, মূলত ইন্টারনেটকে সেন্সর করার কারণে, খুব সাধারণ ভাবে বলা যায়, এটা একটা ভুল সিদ্ধান্ত, যদি না কেউ নিছক নির্বোধ হয়ে থাকে!

সেন্সরশিপ প্রত্যাখান করার পেছনে তার কারণসমূহ হচ্ছেঃ

১. এটা কাজ করবে না!

যে সমস্ত রাষ্ট্র বিভিন্ন সাইট বন্ধ করতে চেয়েছে তারা তা করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং তারা শোচনীয় ভাবে ব্যর্থ হয়েছে! এর জন্য তাদের লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে এবং তা মোটেও কাজ করেনি!

জুমা এর সাথে যোগ করেছে:

২. ইতোমধ্যে এই বিষয়ক আইন তৈরি করা হয়েছে! !

জর্ডানে সাইবার অপরাধ বিষয়ক আইন চালু করা হয়েছে যা অপ্রাপ্তবয়স্কদের মাঝে পর্নোগ্রাফি বিস্তার বিষয়টির মোকাবেলা করার জন্য, এক্ষেত্রে শাস্তি হিসেবে কঠোর অর্থদণ্ড এবং জেল দুটোই রয়েছে। এবং এটি হচ্ছে এখনকার জন্য প্রকৃত হুমকি। আর ইতোমধ্যে বিষয়টি মোকাবেলার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাহলে কেন এখন বিষয়গুলোকে জটিল করা?

এবং সে আরো উল্লেখ করেছে:

৩. আমরা এর সীমানা টানবো কোথায়?

প্রথমে বিষয়টি পর্নোগ্রাফি দিয়ে শুরু হয়েছে এবং এরপর তা অন্য সাইটের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে অথবা এমন একটি বিষয়ে পরিণত হবে যা অনেকটা আক্রমণাত্মক! আমরা একটা রহস্যময় [প্যান্ডোরার] বাক্স খুলতে যাচ্ছি যা কিনা বন্ধ করা অসম্ভব হবে। আর যদি আমরা কোন সাইট বন্ধ করতে চাই, তাহলে কি আমরা সেই সব ইমেইল বন্ধ করে দেব, যে সব ইমেইলে অশ্লীল ছবি বা ভিডিও উপাদান রয়েছে? অথবা স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ করে দেব, যা কিনা নগ্নতা প্রদর্শন করে? আমরা কোথায় এর সীমানা টানব?

সে উপসংহার টেনেছে:

আসুন আমরা ইন্টারনেটকে উন্মুক্ত এবং অবাধ করে রাখি, আর তথ্য প্রযুক্তি খাতে অগ্রদূত হিসেবে জর্ডানের অবস্থানকে অটুট রাখি এবং উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ রাষ্ট্র হিসেবে জর্ডানের ভাবমূর্তি রক্ষা করি।

জুমার অবশিষ্ট যুক্তি জানার জন্য উপরের লিঙ্কটি যাচাই করুন।

7or ya net

৭ওর ইয়া নেটঃ জর্ডানের নেট নাগরিকরা, সামাজিক প্রচার মাধ্যমে সেন্সরশিপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জন্য সবাইকে এই ছবিটি নিজেদের প্রোফাইলে ব্যবহার করার জন্য উৎসাহ প্রদান করছে।

একই সাথে ইন্টারনেট সেন্সর করার সরকারি প্রচেষ্টা বিরুদ্ধে এবং ফিল্টার করা ও বাক স্বাধীনতার বিষয়ে সচেতনতার লক্ষ্যে ৭ওর ইয়া নেট [আরবী ভাষায়] (ইন্টারনেট, তুমি মুক্ত) নামক একটি নতুন ব্লগ চালু করা হয়েছে।

এর সাম্প্রতিক এক পোস্টে, সাইটটি বলছে:

في الربع الثاني من عام ٢٠١٢، بدأ الحديث من قبل الحكومة الأردنية ومجموعة من المواطنيين عن نيتهم تمرير قوانيين وقرارات لحجب المواقع على الإنترنت على اساس أن محتواها يشكل خطورة على المواطنيين. وبالفعل قررت الحكومة الأردنية مؤخراً تطبيق سياسة حجب المواقع والوصاية الحكومية بأن أصدرت قراراً لحجب المواقع الإباحية، كمدخل سهل لتمريربسط سلطتها التقديرية في منع مواقع لأسباب “يشكل محتواها خطورة على المواطنيين”
২০১২ সালের মে থেকে আগস্ট মাসে জর্ডান সরকার এবং কিছু নেট নাগরিক এই আইন অনুমোদনের বিষয়ে তাদের পরিকল্পনার কথা বলতে শুরু করে, যে আইনের মাধ্যমে ইন্টারনেটে সাইটসমূহ সেন্সর করা হবে, এই প্রেক্ষাপটে যে এই সমস্ত সাইটের উপাদান জনতার জন্য বিপজ্জনক। বাস্তবতা হচ্ছে জর্ডান সরকার অতি সম্প্রতি সাইট বন্ধ করার নীতি প্রয়োগ করা শুরু করেছে এবং পর্নোগ্রাফি সাইটসমূহ বন্ধ করার আদেশ জারী করে সরকার জনতার উপর তার নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করেছে। নিজের ক্ষমতা ব্যবহার এবং সাইট বন্ধ করে দেওয়ার জন্য এটা একটা সহজ অজুহাত যে, এই সমস্ত সাইটের উপাদান “জনতার জন্য বিপজ্জনক”।
قطاعات كبيرة من المواطنيين وشركات تكنولوجيا المعلومات والمحتوى الرقمي ترى أن سياسة حجب المواقع والوصاية والرقابة الحكومية على المحتوى الموجود على الانترنت تعطي الحكومات صلاحيات كبيرة لا يمكن ضمان عدم إساءة إستعمالها ضد مواطنيها وهدر حقك كمواطن في حرية التعبير وتلقي المعلومات والشفافية، والإستفادة من خصائص شبكة الإنترنت في كونها شبكة مفتوحة متصلة ومرفق عام لجميع الناس ليبدعوا ويشاركوا ويتحاوروا مع بعضهم البعض
অনেক নাগরিক এবং তথ্য প্রযুক্তি ও ডিজিটাল উপাদান যুক্ত কোম্পানী ইন্টারনেটের উপর সরকারের সেন্সরশিপ, নিয়ন্ত্রণ এবং নজরদারির এই প্রচেষ্টাকে ইন্টারনেটের উপর সরকারের আরো ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছে, যার মধ্যে এই নিশ্চয়তা নেই যে সরকার এই আইনের অপব্যবহার করবে না এবং নাগরিক হিসেবে আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, তথ্য পাবার অধিকার, স্বচ্ছতা এবং ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব-এর বৈশিষ্ট্যের মধ্যে দিয়ে প্রাপ্ত সুবিধা ছিনিয়ে নেবে, যে ওয়েবে উন্মুক্ত এবং আন্ত বিশ্বের সাথে যুক্ত এবং জনতার জন্য এক সাধারণ স্থান যেখানে তারা তাদের সৃষ্টিশীলতা তুলে ধরে এবং একে অন্যের সাথে যুক্ত হয়।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .