কিরগিজস্থানঃ বধূ অপহরণ প্রতিরোধে নাগরিক উদ্যোগের অনুসন্ধান

১১৯১ সালে কিরগিজস্থান যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীন হয়, তারপর থেকে আলা কাচু বা বধূ অপহরণ দেশটির প্রাদেশিক মফস্বল শহর এবং গ্রামগুলোত এক নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। যদিও কিরগিজস্থানের অপরাধ আইনের ধারায় একে অপরাধ হিসেবে নিবন্ধন করা হয়েছে, তবে অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার সবসময় তার রাজনৈতিক অনিচ্ছাকে প্রদর্শন করে যাচ্ছে। যারা এই কাণ্ড ঘটায় তাদের অনেকে গ্রামের পুরুষ-তারা এই কর্মটিকে এক ঐতিহ্য এবং জন্মগত অধিকার হিসেবে দাবী করে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সুশীল সমাজের সংগঠন সমূহ এবং সৃষ্টিশীল নাট্যদল অনুষ্ঠান প্রদর্শনের ক্ষমতার দ্বারা এই বিষয়টি প্রতিরোধের চেষ্টা করছে এবং এই বিষয়ে জনগণকে শিক্ষিত করেছে, আর এর মাধ্যমে এই ঘটনার অনুশীলনের পরিমাণ কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে।

‘ব্রাইড কিডনাপিং ইন কিরগিজস্থান’ (কিরগিজস্থানে বধূ অপহরণ) নামক ভিডিওর স্ক্রিনশট যা ১৭ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে ইউটিউব ব্যবহারকারী ভাইস আপলোড করেছে।

কিরগিজস্থানের ন্যায়পাল (অম্বুডজম্যান) তুরসানবেক আকুন বলেছেন যে, দেশটিতে বছরে প্রায় ৮০০০-এর বেশী তরুণী অপহৃত হয়। এই ধরনের ঘটনার খুব সামান্যই আদালত পর্যন্ত গড়ায়, যা খানিকটা স্থানীয় পুলিশের অনাগ্রহের কারণে এবং খানিকটা প্রথাগত সংস্কৃতির কারণে, যে সংস্কৃতি পরিবারসমূহকে নিরুৎসাহিত করে তাদের অপহৃত কন্যাকে ফিরিয়ে আনতে।

কিরগিজস্থানের সংসদ যা এখানকার পুরুষ সদস্যদের দ্বারা নিমন্ত্রিত, বছরের শুরুতে তারা সংসদীয় একটি আইনের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে, যে আইনে কাজিদের অনিবন্ধিত বিয়ে পড়ানো নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছিল (যেমন এই ধরনের অপহরণের মাধ্যমে সংগঠিত বিয়ে পড়ানো)।

এই ঘটনার উপর আন্তর্জাতিক আগ্রহ ব্যাপক এবং বিশ্ব অধিকার সংগঠন-এর কাছে এই ক্ষেত্রে খুব কমই সংস্কৃতিক উপাদান আছে, যা দিয়ে সে এই সমস্যার প্রতি সাড়া প্রদান করতে পারে, যে ঘটনা কিনা গ্রামীণ সম্প্রদায়ের মাঝে মেরুকরণের সৃষ্টি করছে। এই কারণে কিরগিজ এনজিও ওপেনলাইন-এর তত্বাবধানে তরুণদের জন্য মার্চ- ভিডিও নির্মাণ কর্মশালার আয়োজন করা হয় [রুশ ভাষায়] এবং তারা তাদের সামাজিক প্রচারণা গুরু জর্জি মলডোস্টভ–এর কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েছে, যা এই কর্মের অনুশীলন সম্বন্ধে বার্তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যা আবার স্থানীয় সম্প্রদায়ের মাঝে গ্রহণযোগ্য।

নীচের চারটি ভিডিও, যা কিনা ৪ এপ্রিল ২০১২ তারিখে এমএসবেকনাজারোভ-এর ইউটিউব প্রোফাইলে আপলোড করা হয়েছে, সেগুলো এই কর্মশালার প্রাপ্ত কিছু ফলাফল।

 

উপরের কিরগিজ এবং রুশ ভাষায় নির্মিত এই ভিডিও নাগরিকদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, বধূ হরণ অবৈধ এবং তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ভিডিওর বাম দিকে স্বর্ণ দিয়ে বাঁধাই করা দাঁতযুক্ত রমণী যিনি বিবাহের সাদা স্কার্ফ হাতে নিয়ে আছেন তিনি অপহরণ করা বধূর সম্পর্কে শ্বাশুড়ি, যিনি বধূর মাথায় সাদা স্কার্ফ দিয়ে তার উপর দাবী নিশ্চিত করবেন।

 

এই ভিডিওটি অপহরণ করা কন্যাকে ফিরিয়ে আনার ফলে যে নিন্দা সহ্য করতে হয় তার বিরুদ্ধে এক লড়াই-এর উদ্দেশ্য নির্মিত। গত বছর, কিরগিজস্থানের ইসয়িক কুল এলাকার অপহৃত দুই বধূ আত্মহত্যা করে, যে ঘটনার ফলে স্থানীয় জনতা আলা কাচু-এর বিরদ্ধে এক প্রচারণার শুরু করে, যার শিরোনাম, “তাদেরকে ছাড়াই বসন্ত”। উপরের ভিডিওতে রুশ এবং কিরগিজ ভাষায় যা লেখা হয়েছে তার অর্থ হচ্ছে, আপনি এখানে সবসময় আপনার কন্যাকে সমর্থনের জন্য রয়েছেন। এখন তাকে তার নিজের পছন্দ বেছে নিতে দিন”।

 

উপরের এই ভিডিওটি কুরমানজান দাতকা নামের এক চরিত্রের এলাকার উপর নির্মিত, যিনি কিরগিজ ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত এক রমণী। কুরমানজান দাতকা দক্ষিণ কিরগিজস্থানের কুখ্যাত এলাকা “আলিয়ার রাণী” হবার হাত থেকে বাঁচার জন্য, পারিবারিক সম্মতিতে আয়োজিত বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে যান। এই বিজ্ঞাপন কুরমানজান-এর নিজের পছন্দের দ্বারা উৎসাহিত হয়ে কিরগিজ তরুণীদের নিজেদের ভাগ্য নিজেদের হাতে তুলে নিতে এবং জোর করে একত্রীকরণ প্রতিরোধ করতে অনুপ্রাণিত করা হচ্ছে।

 

এই ভিডিও কিরগিজস্থানের তরুণদের উৎসাহ প্রদান করে যখন তারা কোন নারী অপহরণের প্রত্যক্ষদর্শী হয়, তখন যেন মোবাইল ফোনের “মূল ফাংশন” ব্যবহার করে এবং ১০২ ডায়াল করে- যা কিনা বধূ অপহরণ হওয়ার বিষয়ে তথ্য প্রদানের জন্য তৈরী করা হটলাইন। অপহরণের সময় ভিডিও ধারণ করে পরে তা বন্ধুদের দেখানোর বদলে তাদের স্মরণ রাখা উচিত, প্রত্যেক নারী কারো কন্যা বা বোনঃ এই বিজ্ঞাপন এই উপদেশ প্রদান করছে।

সব শেষ ভিডিও, যা কিনা রুশ এবং কিরগিজ ভাষায় নির্মিত, তা ১৭ মে ২০১২ তারিখে চালকান টিভি তার নিজস্ব ওয়েবসাইটে পোস্ট করেছে, যা এই কর্মশালার সাথে যুক্ত নয়। এই ভিডিও মে মাসে প্রাদেশিক মফস্বল শহর কারাকোল-এর ছাত্রদের প্রদর্শিত অনুষ্ঠানের উপর নির্মিত, যার শিরোনাম “নারীরা গবাদিপশু নয়’। অনুষ্ঠান শেষে এর অন্যতম এক আয়োজক জেপারগুল কাদিয়ালিয়ায়েভ ‘১৫৫’ নম্বর সম্বলিত বিবাহের সাদা স্কার্ফ দর্শকদের মাঝে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত, একই সাথে কেন অনুষ্ঠানের নামে ‘গবাদিপশুর’ মত শব্দ যুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে ব্যাখ্যা করেন [কিরগিজ ভাষায়]।

দেশের অপরাধ দমন আইনে ১৫৫ নম্বর একটি ধারা– এই ধারা অনুসারে বিয়ের জন্য নারী অপহরণ একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আমরা চাই এই আইনটি কাজ করুক। এই দেশে [কিরগিজস্থানে] কোন কারণে যদি কেউ কোন গবাদিপশু চুরি করে, তাহলে তাকে কঠোর সাজা দেওয়া হয়, কিন্তু যখন সে কোন নারীকে অপহরণ করে, তার জন্য তাকে কোন শাস্তি পেতে হয়না। আমরা সমাজের সবাইকে জানাতে চাই যে একজন রমণী আদতে এক ব্যক্তি, যে ভালবাসা পাওয়ার যোগ্য… আমরা সংসদে জোরালো আবেদন করতে চাই যাতে [আইনের ১৫৫ ধারা] তা কাজ করে অথবা এই আইনটিকে [বিয়ের জন্য নারীকে অপহরণ করা] পাল্টে সাধারণ ভাবে “একটি মানুষ অপহরণ আইনে” পরিণত করতে চাই …।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কাজ-কারগোন ইনিস্টিটিউট-এর গবেষণা অনুসারে ২০১০ থেকে ২০১১ সালে কারাকোল অঞ্চলের ৪৫ শতাংশ নারীকে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অপহরণ করা হয়, জোরপূর্বক বিয়ে করার আগে।
 

 

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .