পাকিস্তানঃ দেশ বিভাগ আমলের লেখক সাদাত হাসান মান্টো আজও বিদ্যমান

পাঞ্জাবের সাদাত হাসান মান্টো একজন ছোটগল্প লেখক, নাট্যকার এবং একজন অনুবাদক ছিলেন। ভারত-পাকিস্তান বিভাগের সময়ে তাঁর সাহিত্যকর্মের তাৎপর্য তুলে ধরে আজ উপমহাদেশের জনগণ তাঁর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছে। পাকিস্তানের শিল্পকলা কেন্দ্র, প্রেসক্লাব এবং সাহিত্য ক্লাবগুলো তাঁর মাহাত্ম্য এবং আজকের সমাজে তাঁর গুরুত্বের কথা স্মরণ করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

উর্দু সাহিত্যে মান্টোর মূল অবদান হল যে তিনি দেশত্যাগের সময় হাজার হাজার হিন্দু মুসলমান হত্যাযজ্ঞকে ধর্মের বাইরে মানবতার হত্যাকাণ্ড বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেনঃ

“এটা বোলো না যে এক লাখ ও এক লাখ মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে। বল, দুই লাখ মানুষকে খুন করা হয়েছে।”  -সাদাত হাসান মান্টো

সাদাত হাসান মান্তো

সাদাত হাসান মান্তো। টুইটার থেকেঃ @siddharth426

ধর্মীয় বিভাগ যখন এর মূলে ছিল তখন এটি ছিল মান্তোর বার্তা। লোকজন ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত ও পৃথক হয়ে গিয়েছিল এবং হত্যাকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বলে গণ্য করতে পারে নি। এরকম সময়ে মান্তো উপমহাদেশীয় সাহিত্যে মানবতার এক দূত হিসেবে আবির্ভূত হলেন। তিনি ‘টোবাটেক সিং’ (পাকিস্তানি পাঞ্জাবের একটি গ্রামের নাম) –এর মত নাটক লিখলেন, যেখানে তিনি দেশবিভাগের ভোগান্তিগুলো তুলে ধরেছেন।

কিন্তু মান্টো কি আজও বিদ্যমান? হ্যাঁ! অবশ্যই তিনি বিদ্যমান। কপট সামাজিক ব্যবস্থার প্রতি তাঁর সমালোচনা, সামাজিক নিষেধাজ্ঞার উপর তাঁর আচরণ [Ur], এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তাঁর মনোভাব মনোভাব তাঁকে জীবন্ত কিংবদন্তীতে পরিণত করেছে। জাহিদা হিনা মান্টোকে এক কল্পনা হিসেবে যথার্থই উল্লেখ করেছেন। মান্টোর লেখনী আজ পাকিস্তানকে মৌলবাদ ও চরমপন্থার অতল গহ্বর যা দিন দিন বাড়ছে, তা থেকে বের হতে সাহায্য করতে পারে। সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংকট যা পাকিস্তান আজ দেখছে, তা বহু বছর আগে মান্টো তাঁর লেখা ‘আল্লাহ কা বারা ফাজ হ্যায়’ (সৃষ্টিকর্তার বদান্যতা অসীম) দ্বারা দেখেছিলেন।

সামাজিক মাধ্যমগুলো মান্টোর জীবন ও কর্ম সম্পর্কিত মন্তব্য দিয়ে ভরে গিয়েছিল।

বি.পি.সিং নিচের কথার মাধ্যমে মান্টোকে প্রশংসা করেছেন:

তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ, একজন সত্যিকার মানুষ, আমি ভারতে তাঁর একটি নাটকে অভিনয় করেছি, এবং সত্যি আমি ধর্মীয়ভাবে তাঁর কিছু লেখনী অনুসরণ করি। যদি মানবজাতি সত্যি তাঁর লেখার চেতনা অনুসরণ করে, তাহলে দুনিয়া সত্যি এক স্বর্গে পরিণত হবে! এক সুপুরুষ ‘মান্টোর’ প্রতি সত্যিকার শ্রদ্ধা ও সম্মান।

কিছু টুইটবার্তাঃ

@navedjaved: এক সফল লেখক এবং ঐ সময়ের এক প্রতিভাধর, সাদাত হাসান মান্টোকে তাঁর জন্মদিনে স্মরণ – আরআইপি কিংবদন্তি!

@manish0891: আজ উর্দু ভাষায় ছোটগল্পের এক শ্রেষ্ঠ লেখক সাদাত হাসান #মান্টোর ১০০তম জন্মবার্ষিকী।

@osamamotiwala: সাদাত হাসান মান্টো, যদিও আপনি এখন কেবলই স্মৃতি, কিন্তু কিছু স্মৃতি চিরদিন থাকে। হীরকের মত আলোকিত আপনি।

মান্তো তাঁর চিন্তাধারা প্রকাশের ক্ষেত্রে কখনো ভীত হন নি। তাঁর লেখার জন্য তাঁকে আদালতে যেতে হয়েছিল। কিন্তু, মান্তো তাই লিখেছেন যা তিনি দেখেছেন। নাজির আহমেদ মিন্টো মন্তব্য করেছেন:

মান্টো শুধু তাই লিখেছেন যা তিনি দেখেছেন,…এবং সেটাই, যা জনগণ দেখতে চায় নি !

নাভিদা ভ্যালেন্তিনা টুইটবার্তায় লিখেছেনঃ

@NaveedaV: Janam din mubarak (Happy Birthday) Saadat Hasan Manto! A man who pulled no punches indeed. *jaam chalkaoing*

@NaveedaV: শুভ জন্মদিন সাদাত হাসান মান্তো! এমন এক মানুষ যিনি আসলে কখনো হার মানেন নি।

মান্টো পাকিস্তানি মাধ্যমগুলোতে অভাবনীয় প্রাধান্য পাচ্ছেন (ইংরেজিতে দেখতে চাইলে ডন/ দি নিউজ)। এই ব্যাপারটি বেশ প্রশংসনীয়। যদিও সমাজে ধর্মীয় গোঁড়ামি সৃষ্টি হয়েছে, তারপরও মান্টোর কণ্ঠ অম্লান।

আহমেদ শাকিল টুইটবার্তায় লিখেছেনঃ

@Ahmed_Shakeel: এটি উৎসাহপূর্ণ যে, উর্দুভাষী ছোটগল্প লেখক সাদাত হাসান মান্টো বিশেষ করে অউর্দু মাধ্যমগুলোতে প্রাধান্য পেয়েছেন।

মান্তো ১৯৫৫ সালের ১৮ জানুয়ারি ৪৩ বছর বয়েসে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর চিন্তা ভাবনা সবসময়ই আমাদের সাথে থাকবে। বিবেক মারতোলিয়া মন্তব্য করেন:

manto sahab amar rahenge hamesha ke liye , he is alive in his stories.

মান্টো চিরকাল বেঁচে থাকবেন, তিনি তাঁর গল্পের মধ্যে চিরজীবী।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .