ইউরোপঃ অর্থনৈতিক সঙ্কট অভিবাসন বিরোধী রাজনীতিতে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে

ফরাসী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের হয়ত পরিসমাপ্তি ঘটেছে, তবে বাস্তবতা হচ্ছে বিদায়ী রাষ্ট্রপতি নিকোলাস সারকোজি তাঁর প্রচারণার মূল লক্ষ্যবস্তু হিসেবে অভিবাসী বিরোধিতাকে বেছে নিয়েছিল [ফরাসী ভাষায়], যা এখনো ওয়েবে এক বহুল আলোচিত বিতর্কের বিষয়। অনেক নেট নাগরিক বিস্মিত এই কারণে যে নির্বাচনে ডানপন্থীদের সাথে মাখামাখির এই বিষয় তাঁর পরাজয়কে স্বাগত জানিয়েছে নাকি এর বিপরীতে, এই ঘটনায় ভোটাররা তাঁর প্রতি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে [ফরাসী ভাষায়]।

ইউরোপের ভোটারদের বহু সংস্কৃতিবাদের প্রতি আগ্রহ হ্রাস পাওয়ার বিষয়টিকে মাথায় রেখে অভিবাসনকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কটের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করার ঘটনা পুরো ইউরোপ মহাদেশ জুড়ে উগ্র-ডানপন্থীদের জন্য ফলপ্রসূ বলে প্রমাণিত হয়েছে।

Réfugiés Africains par Vito Manzari on Flickr (CC BY 2.0).

আফ্রিকার উদ্বাস্তু নাগরিক, ছবি ভিটো মানজারি-এর (সিসি বাই ২.০)

অভিবাসীদের নিয়ে তৈরী করা এই আলঙ্কারিক শব্দগুলো পরিচিত মনে হবার কারণ হচ্ছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে অভিবাসন চক্রাকারে এই পুরোনো মহাদেশটিকে ঠিক সঙ্কটের সময় আক্রান্ত করে। ভ্যালেরি তাঁর ব্লগ ক্রেপে গ্রেগোরিত্তে-এ, ফ্রান্সে অভিবাসন সংক্রান্ত ধারণার সময়কালের পুনর্গণনা করেছেন [ফরাসী ভাষায়], ১৯ শতকের প্রথমার্ধ থেকে আজকের দিন পর্যন্ত:

S’il est une idée en vogue, c’est bien de penser que les anciennes vagues d’immigration (italiennes, polonaises, espagnoles, belges …) se sont parfaitement intégrées au contraire des vagues, plus récentes, maghrébines et africaines.
Les anciennes vagues d’immigrés étaient travailleuses, ne posaient aucun problème et les français les ont d’ailleurs parfaitement acceptées, entend-on souvent.
Constatons donc que les propos actuels sur les immigrés les plus récents ne sont qu’une répétition d’idées reçues anciennes et qui se sont exercées à l’encontre de toutes les communautés migrantes (qu’elles viennent de province ou de pays étrangers).

এখানে একটি বিশেষ ধারায়, বিশ্বাস করা হয় যে, পুরোনো অভিবাসন-এর ঢেউ-এর সময় যারা অভিবাসী হিসেবে এসেছে, ( ইতালী, স্পেন, বেলজিয়াম ইত্যাদি রাষ্ট্রের নাগরিক…), তারা এখন আমাদের সমাজের সাথে পুরোপুরি মিশে গেছে, যা কিনা একেবারে সাম্প্রতিক মাঘরেব ( উত্তর আফ্রিকার অঞ্চল) এবং আফ্রিকা থেকে তৈরী হওয়া অভিবাসনের ঢেউ থেকে একেবারে আলাদাঃ

আমরা প্রায়শই শুনে থাকি যে “এর আগে যে সমস্ত অভিবাসনের ঢেউ-এর সৃষ্টি হয়েছিল, তা ছিল শ্রম সংক্রান্ত, যা কিনা সমস্যার সৃষ্টি করেনি, এবং ফ্রান্স বিষয়টিকে নির্দ্বিধায় গ্রহণ করেছিল” ।

আসুন আমরা একেবারে সম্প্রতি সৃষ্ট অভিবাসনের ঢেউ সর্ম্পকে বর্তমানে করা মন্তব্যগুলোকে চিহ্নিত করি, যা কিনা প্রায় পুরোনো গতানুগতিক মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি, আর সকল অভিবাসী সম্প্রদায় এই সকল মন্তব্যের মুখোমুখি হয়েছে (তা সে গ্রাম থেকে উঠে আসা কিংবা বিদেশ থেকে আসা অভিবাসী হোক)।

ইতালীয় এবং স্প্যানিশ অভিবাসীরা যে মুল ধারার সাথে সংযুক্ত হতে পারেনি আর তারা তা পারে না, এবং যারা আজকে পূর্ব ইউরোপ এবং আফ্রিকা থেকে আসা অভিবাসীদের বিপক্ষে, এই দুটি অভিযোগের বিষয়ের ভ্যালেরি একটি সমান্তরাল তুলনা করেছে:

Toutes les populations d’immigrés – mais aussi les populations pauvres de manière générale – sont vues au cours des siècles comme sales, non intégrées, se vautrant dans la luxure et des coutumes exotiques. Ce qu’on entend à l’heure actuelle sur les quartiers « islamisés », « envahis » de femmes en burqa avec 10 enfants n’est que la répétition, comme vous le constatez, de propos tenus sur toutes les vagues d’immigration précédentes. L’italien lui aussi fait une cuisine infâme, trop d’enfants et se vêt d’oripeaux. Le polonais se ridiculise avec son catholicisme particulier et à se tenir debout pendant la messe alors que le bon français est assis.

সকল অভিবাসী জনগোষ্ঠী—কিন্তু যারা সাধারণত গরীব-তারা শতাব্দী ধরে অনুজ্জ্বল ভাবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে, তারা নোংরা, এরা মূলধারার সমাজের সাথে মিশতে পারে না, এরা অনুগ্রহ প্রার্থী, তারা কামুক, এবং অন্যান্য উত্তেজক প্রথার দ্বারা পরিচালিত। যেমনটা আপনার অনেকে পর্যবেক্ষণ করেছেন, বর্তমানে অভিবাসন সম্পর্কে “ইসলামিকরণ” প্রতিবেশীকরণ” “প্লাবিত করে ফেলা” , মেয়েদের বোরখা পড়া, এবং তাদের দশের মত সন্তান থাকা, এই কথাগুলো শুনছেন, যা কিনা এর আগের অভিবাসনের ঢেউ–এর সময় করা উক্তির পুনরাবৃত্তি। ইতালীয় অভিবাসী ভয়াবহ খাবার রান্না করে, তাদের অনেক বেশী সন্তান সন্ততি এবং তারা অরুচিকর পোষাক পড়ে। পোলিশ অভিবাসী অদ্ভুত এক নিজস্ব ক্যাথলিক ধর্ম চর্চা করে, এবং সমাবেশে তারা দাড়িয়ে পড়ে, যেখানে যথাযথ একজন ফরাসী নাগরিক বসে থাকে।

অর্থনৈতিক সঙ্কট একমাত্র কারণ নয়

সর্বোপরি, কেবলমাত্র অভিবাসন অর্থনৈতিক সঙ্কট দিয়ে বিরোধী যুক্তির আকর্ষণকে ব্যাখ্যা করা যাবে না। ফ্রান্সের বহু-সংস্কৃতিক বিষয়ক ভবিষ্যৎ নিয়ে এক সম্পাদকীয়তে জুলি ওয়ানো উক্ত বিষয় সম্পর্কে উল্লেখ করেন:

ইউরোপের ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে বাড়তে থাকা উদ্বেগের কারণ কেবল এই অর্থনৈতিক সঙ্কট নয়। কিছু রাজনীতিবিদ প্রথম রাউন্ড ভোটের দিন সন্ধ্যায় দ্রুত ব্যাখ্যা প্রদান করেছিল, তাদের বিশ্লেষণের বিপরীতে মনে হচ্ছে, যে সমস্ত ফরাসী উগ্রবাদকে ভোট দিয়েছে, তারা অভিবাসন সংক্রান্ত কারণে সৃষ্ট সঙ্কটের দ্বারা খুব একটা আক্রান্ত হয়নি। ফরাসী বিশ্লেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে, যে সমস্ত ফরাসীরা উগ্রবাদকে ভোট দিয়েছে, তারা ন্যাশনাল ফ্রন্টের মোট ভোটের ৬২ শতাংশ, তারা যে সমস্ত এলাকার বাসিন্দা, সেখানে অভিবাসনের হার খুব সামান্য।

একটি ইউরোপীয় প্রপঞ্চ।

Foreigners in Europe by Digital Dreams on FlickR License-CC-BY

ইউরোপে বিদেশীর সংখ্যা, ছবি ফ্লিকারের ডিজিটাল ড্রিমস-এর, লাইসেন্স-সিসি-বাই

অভিবাসীদের বিরুদ্ধে রাজনীতিবিদেরা যে একই সুরে সেই পুরোনো গান গেয়ে আসছে তা কেবল ফ্রান্সের মাঝে সীমাবদ্ধ নয়। গ্রিসে নব্য নাৎসি দল, যারা গোল্ডেন ডাউন নামে পরিচিত তারা দেশটির অর্থনৈতিক সঙ্কটের সুযোগ নিয়েছে এবং একেবারে সম্প্রতি হওয়া সাধারণ নির্বাচনে সাফল্য লাভ করেছে। যুক্তরাজ্যে, জেমস নামের এক মন্তব্যকারী এই বাস্তবাতায় তাঁর প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করেছে যে ক্যামেরন, মরকেল, সারকোজি ইউরোপে বহুসংস্কৃতিবাদের ব্যর্থতার কথা ঘোষণা করেছে:

সে [ মরকেল] চায় যে সম্পদশালী জাতি গরীব এলাকার মানুষকে আলিঙ্গন করুক এবং তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করুক! এই বিষয়টি কাজ করছে না, এর জন্য আমাদের কোটি কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়েছে এবং প্রতি বছর তা ক্রমশ ব্যায়বহুল হয়ে উঠছে। বিষয়টি যেন এমন যে, রোমানিয়ার এক কৃষক, যে কিনা ব্রিটেনে কাজ করে, নিজেকে গরীব দাবী করে সে সকল টাকা বাড়ীতে পাঠাচ্ছে, একটি রাজকীয় বাড়ি বানানোর জন্য, বাস্তবে এমনটাই ঘটছে।

ভ্যালেরী বলছে যে অভিবাসন বিরোধী আলঙ্কারিক শব্দের পুনরায় আগমনে, তিনি তেমন বিস্মিত নন। ভ্যালেরী বলছে যে অভিবাসন বিরোধী আলঙ্কারিক শব্দের পুনরায় আগমনে, তিনি তেমন বিস্মিত নন। ভদ্রমহিলা তাঁর ব্লগে এই বিতর্ক উন্মুক্ত করার জন্য আরো কিছু প্রবন্ধ পাঠে পরামর্শ প্রদান করেছে:

Pour combattre les craintes face aux immigrés maghrébins et africains, on gagnerait à lire les textes du 19eme et du début du 20eme pour comprendre comment se fondent ces peurs et comment l’on ne fait que répéter les mêmes idées ayant cours dans les siècles précédents. Conseils de lecture :

- Conseillé par Melle S. : A. SAYAD « L’immigration ou les paradoxes de l’altérité » (1. L’illusion du provisoire et 2. Les enfants illégitimes).
– Gérard Noiriel, « Le creuset français ».
– Laurent Dornel, « La France hostile. Histoire de la xénophobie en France au XIXe siècle ”

মাঘরেব এবং আফ্রিকা থেকে আসা অভিবাসীদের নিয়ে যে উদ্বেগ সেই বিষয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে, যে কেউ ১৯ শতক এবং ২০ শতকের শুরুর সময়কার পাঠ থেকে কিছু অর্জন করতে পারবে, যে সবের মধ্যে দিয়ে জানা যাবে যে এ রকম ভয়ের ভিত্তি কোথায় এবং শতাব্দী ধরে এই বিষয়ে সেই একই যুক্তি প্রদান করে আসা হচ্ছে। এই বিষয়ে আরো পাঠের জন্য
-এস মেলাস যে সমস্ত প্রবন্ধ পাঠ করার পরামর্শ প্রদান করেছে [ফরাসী ভাষায়]-এ. সাইদ, অভিবাসন অথবা রাষ্ট্রের ভিন্নতার ধাঁধাঁ [ফরাসী ভাষায়] (১. এক অসাধারণত্বের বিভ্রান্তি এবং ২. অবৈধ সন্তানেরা)
-জেরার্ড নোইরিয়েল, ফরাসি এক গলিত–পাত্র
-লরা দোনেল, আক্রমণাত্মক ফ্রান্স, ১৯ শতকে ফ্রান্সে জাতিগত বিদ্বেষের ইতিহাস [ফরাসী ভাষায়]।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .