মিশর: বাধ্যতামূলক সামরিক কর্মবিরোধী প্রচারাভিযান জোরদার

এই পোস্টটি আমাদের বিশেষ কাভারেজ মিশর বিপ্লব ২০১১ এর অংশ।

হোসনী মোবারকের পদত্যাগ থেকে শুরু করে গণতন্ত্রে পরিবর্তনের অন্তর্বর্তীকালীন পর্যবেক্ষণকারী সশস্ত্র বাহিনীর সুপ্রিম কাউন্সিলের (এসসিএএফ) কার্যক্রম অনেক বিশ্লেষণ এবং সমালোচনার মুখে পড়েছে। মিশরীয়রা প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিযোগিতার নাটক আর সংসদের কর্মদক্ষতা নিয়ে ব্যস্ত থাকার সময় অনেকেই তাদের অধিকার সম্বন্ধে বলার জন্যে নিজেদের সংগঠিত করতে শুরু করেছেন। সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক নিয়োগ বা বাধ্যতামূলক সামরিক সেবার বিরুদ্ধে একটি আলোচনার আবির্ভাব ঘটছে।

মিশরে ১৮-৩০ বছর বয়েসী পুরুষরা তাদের শিক্ষাগত মান এবং অন্যান্য বিষয় অনুযায়ী সামরিক বাহিনীতে ১-৩ বছর সেবাদানে বাধ্য। যাদের কোন ভাই নেই, দ্বৈত নাগরিক অথবা জন্যে চিকিৎসাজনিত সমস্যা আছে এমন পুরুষরা এর ব্যতিক্রম।

কয়েক দিন আগে এমাদ এল দাফ্রাউয়ি বাধ্যতামূলক সামরিক কর্মটির প্রতি তার আপত্তি ঘোষণা করে তার যুক্তিগুলো সম্পর্কে একটা ধারণা দেয়ার জন্যে একটি ভিডিও [আরবী, ইংরেজী সাবটাইটেলসহ] পোস্ট করেছেন:

এল দাফ্রাউয়ি এছাড়াও তার ব্লগে আরবী এবং ইংরেজী উভয় ভাষাতেই একটি বিবৃতি লিখেছেন:

আমি শান্তিবাদী এবং সামরিকবিরোধী যার মানে হলো অস্ত্র ধরে সহিংসতা ব্যবহার করাসহ যেকোন সামরিক কর্মকাণ্ড আমার বিশ্বাসের সাথে বিরোধাত্মক। আমি সামরিক কর্মের একজন বিবেকবান আপত্তিকারী। আমি সামরিক আদেশ মানতে চাই না এবং আমি সমস্ত যুদ্ধকে অপরাধ বিবেচনা করি।

We refuse to serve in an army that kills us! Image from the No to Compulsory Military Service Movement.

আমরা যে সেনাবাহিনী আমাদের হত্যা করে তার সেবা করতে অস্বীকার করি! ‘আর নয় বাধ্যতামূলক সামরিক কর্ম আন্দোলন’ থেকে নেয়া ছবি।

এমাদ এল দাফ্রাউয়ি সামরিক কর্মটির প্রথম সচেতন আপত্তিকারী নন। মাইকেল নাবিল সানাদ প্রথম এধরনের একটি পদক্ষেপ নেন এবং আর নয় বাধ্যতামূলক সামরিক কর্ম আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা। ২০০৯ সালের এপ্রিল মাসে আন্দোলনটি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং নাবিলের করা একটি ব্লগপোস্ট অনুসারে এর লক্ষ্য হলো “বাধ্যতামূলক নিয়োগ রদ করে ঐচ্ছিক সেনাবাহিনীতে নিয়োগ হিসেবে প্রতিস্থাপন করা।” তার উপর:

আমাদের লক্ষ্য হলো নাগরিক এবং সামরিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্পর্ক সংস্কার, বেসামরিক নাগরিকদের উপর যেকোন ধরনের সামরিকবাদী কর্তৃত্ব নিঃশেষ, সুশীল রাষ্ট্রকে সংহত করা এবং মিশরীয় সেনাবাহিনীতে যোগ্যতা, সংগঠন এবং স্বাধীনতা ও অধিকার সম্পর্কিত মানের বিবর্তন ঘটানো।

২০১০ সালের অক্টোবর মাসে নাবিল তার ব্লগে একটি বিবৃতি দেন যে তিনি সেনাবাহিনীতে যাবেন না এবং তার জন্যে তিনি যেকোন পরিণতি সহ্য করবেন। পরের মাসে তাকে তার তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে সামরিক হেফাজতে নেয়া হয়। তবে কয়েকদিন পরে তাকে চিকিৎসাজনিত কারণে রেহাই দেওয়া হয়েছিল। আরো সমালোচনা এড়ানোর জন্যে এতে বলা হয়েছিল যে তিনি একটি চারিত্রিক বিশৃংখলাজনিত রোগে ভুগছেন।

এছাড়াও বিখ্যাত পোস্ট “সেনাবাহিনী এবং জনগণ কখনোই একপক্ষে ছিল না”–এর কারণে নাবিল বিপ্লবে পর কারারুদ্ধ প্রথম ব্লগার যাতে সামরিক অপব্যবহার এবং লঙ্ঘনের নথিবদ্ধ ছিল। ২০১২ সালের জানুয়ারী মাসে তার মুক্তির পর আর নয় বাধ্যতামূলক সামরিক কর্ম আন্দোলনের উদ্ভব ঘটে এবং এটা তাদের ‘কারণ’ প্রচারাভিযানের জন্যে ফেসবুক, টুইটার এবং ইউটিউব ব্যবহার করে।

সম্প্রতি “আমরা কেন সামরিক কর্ম প্রত্যাখ্যান করছি” [আরবী]-এর মতো বিভিন্ন ভিডিওচিত্র তৈরী করা হয়েছে:

আরেকটির শিরোনাম হলো “আপনি কী এই সেনাবাহিনীর সেবা করতে চান?” [গ্রাফিক উপাদান]।

সম্প্রতি টুইটারে #ضد_التجنيد_الاجباري‏  (“বাধ্যতামূলক সামরিক কর্মের বিরুদ্ধে”) হ্যাশট্যাগে একটি বিতর্ক চলছে এবং অনেক টুইটার ব্যবহারকারী এবিষয়ে মতামত রেখেছেন।

ফাৎমা ওয়াগদি টুইট করেছেন:

@Fatma_Wagdy: ‎‫#ضد_التجنيد_الاجباري‬‏ عشان الدفاع عن قضيه مش بالإجبار

@ফাৎমা_ওয়াগদি: আমি বাধ্যতামূলক সামরিক কর্মের বিরোধী কারণ কোন কারণ রক্ষা বাধ্যতামূলক হতে পারে না

আহমেদ বলছেন লিখেছেন:

@singer_twitts: #ضد_التجنيد_الاجباري‬‏ لانه بيزرع مبدأ امشي جنب الحيط واوعي تعارض او تفتح بقك في الشباب

@সিঙ্গার_টুইটস: আমি বাধ্যতামূলক সামরিক কর্মের বিরোধী কারণ এটি আমাদের যুবকদের মধ্যে “নিষেধ না করার বা কথা না বলার” ধারণাটিকে উৎসাহিত করে।

মোতাজ আহমেদ বক্রোক্তি করে বলেন:

@mezzo812: رأيي لازم يبقى فيه خدمة مدنية إجبارية لظباط الجيش كل فترة, أول مرة أشوف مؤسسة كاملة عايزة علاج نفسي لكل أفرادها ‎‫#ضد_التجنيد_الاجباري‬‏

@মেজ্জো৮১২: আমার মতামত হচ্ছে যে সামরিক কর্মকর্তাদের জন্যে মাঝে মাঝেই বাধ্যতামূলক সামরিক কর্ম থাকা উচিৎ। এবারই প্রথম আমি একটি সমগ্র প্রতিষ্ঠানের সমস্ত সদস্যদের মানসিক চিকিৎসার প্রয়োজন অনুভব করছ!

ইব্রাহিম মাদি টুইট করেছেন:

@DrHumHum: أنا#ضد_التجنيد_الاجباري‬‏ لأن الجيش مهمته حماية الوطن ، مش قهر أبناؤه

@ড.হামহাম: আমি বাধ্যতামূলক সামরিক কর্মের বিরোধী কারণ সেনাবাহিনীর লক্ষ্য হলো জাতিকে রক্ষা করা, তার পুত্রদের প্রতি জুলুম করা নয়!

মিনা দি’আ যোগ করেছেন:

@MinaDaPharaoh: #ضد_التجنيد_الاجباري‬‏ لا تعني إنك ضد خدمة الوطن أو التضحية من أجله,,بالعكس.لكن إنك تنتهك بسبب قواعد بتخدم اللي فوقك دايما يبأة دا ظلم

@মিনাদাফারাওহ: বাধ্যতামূলক সামরিক কর্মের বিরুদ্ধে থাকার মানে এই নয় যে বিপরীতক্রমে আপনি জাতিকে সেবার অথবা এর জন্যে নিজেকে উৎসর্গ করার বিরুদ্ধে। কিন্তু আপনার বড়কর্তাদের সুবিধা করে দেয়া নিয়মের কারণে আপনি অত্যাচারিত হলে, সেটা আসলেই অবিচার

জিয়াদ আদলি লিখেছেন:

@ziadadly: ليه ابناء الفقرا يترموا في الاماكن البعيدة ف الصحاري و الجبال لمدة 3 سنين .. في شرع مين؟ ‎‫#ضد_التجنيد_الاجباري‬‏

@জিয়াদআদলি: কেন গরীব মানুষের ছেলেদের মরুভূমি অথবা পর্বতমালার দূরবর্তী কোন স্থানে তিন বছরের জন্যে ফেলে রাখা হয়? কার আইনে?

এক্টিভিস্ট এবং লেখক নাওয়ারা নেগম বলেন:

@nawaranegm: ولما لقيت بقى ان بنات طولهم متر ونص ووزنهم حوالي اربعين كيلو اشجع الف مرة من ظباط وعساكر بقيت ضد التجنيد الاجباري‬‏ فشخ

@নাওয়ারানেগম: আমি মাত্র ১৫০ সেমি লম্বা এবং ৪০কেজি ওজনের মেয়েদের (সামরিক) কর্মকর্তা এবং সৈন্যদের চেয়ে হাজার গুণ সাহসী দেখেছি, আমি দৃঢ়ভাবে বাধ্যতামূলক সামরিক কর্মের বিরোধিতা করি।

কিছু কিছু লোকের ভিন্ন মত ছিল। মোহামেদ হানি টুইট করেছেন:

@mohamed_hany87: إلى حين تعديل وتحسين ظروف التجنيد أنا ضده .لما يكون في دورة تدربية مكثفة مفيدة أول واحد هنضم ‎‫

@মোহামেদ_হানি৮৭: নিয়োগের শর্তাবলীর পরিবর্তন এবং উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত আমি বাধ্যতামূলক সামরিক কর্মের বিরুদ্ধে। এতে দরকারী কোন প্রশিক্ষণ কোর্স থাকলে আমিই প্রথম যোগদান করবো।

নারমিন বেদেয়ার লিখেছেন:

@Nermbed: ‎‫مش#ضد_التجنيد_الاجباري‬‏ اطلاقا.. ممكن أرفض ان المجندين اجباريا يشتغلوا في الفنادق والنوادي خصوصا انه شغل سخرة.. تجنيد يعني معسكرات جيش

@নার্মবেদ: আমি মোটেই বাধ্যতামূলক সামরিক কর্মের বিরোধী নই। আমি হয়তো মানবো না যে বিশেষ করে দাসত্বের কাজ বলেই সৈন্যদের হোটেল অথবা ক্লাবে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। সামরিক কর্ম মানেই সেনা ছাউনি!

অনেক দেশ যে আসলেই বাধ্যতামূলক সেনা নিয়োগের সীমা অতিক্রম করেছে তা বিশ্বের সেনা মোতায়েন মানচিত্র থেকে প্রতীয়মান হয়। মিশরীয় আন্দোলনটি আরো গতি পাবে কিনা তা আগামী দিনগুলোই বলে দিবে। ইতোমধ্যে হাইথাম এল কাশেফ নামের আরেকজন ব্লগার ঘোষণা করেছেন যে তিনি বাধ্যতামূলক সামরিক কর্ম মেনে নিবেন না। এল কাশেফ এবং এল দাফ্রাউয়ি উভয়েই সামরিক সেবা সামরিক কর্ম এড়ানোর অভিযোগে তিন বছরের জন্যে কারাদন্ড হতে পারে অথবা আরো অভিযোগ যুক্ত করা হতে পারে।

এই পোস্টটি আমাদের বিশেষ কাভারেজ মিশর বিপ্লব ২০১১ এর অংশ।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .