তাজিকিস্তান: আকার যেখানে বিবেচ্য

কোনো প্রাচীন রোমান রাজনীতিবিদের কাছে যেমন তার লবণের মূল্য জানেন, তেমনি তাজিক প্রেসিডেন্ট ইমোমালি রাহমন জানেন বিশাল এবং দেখানোর মতো গণপূর্ত প্রকল্পের মাধ্যমে রাজধানীকে গড়তে। তবে তিনি চিরায়ত নগরীর সিজার, সুলা, পম্পেই এবং ক্যাটোদের মতো নন। তিনি এগুলোর জন্যে তার নিজের পকেট থেকে খরচ করতে অনিচ্ছুক।

এক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক তাজিকিস্তান জাতীয় গ্রন্থাগার, যা মধ্য এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তম হিসেবে সুবিদিত। দালানটির আবশ্যিক পরিসংখ্যান হলো ৫২ × ১৬৭ মিটার যা চাপের মধ্যে থাকা রাষ্ট্রীয় বাজেট থেকে ৪০ কোটি মার্কিন ডলার খরচ করে তৈরী। তার উপর তাজিক সরকার দেশের সাধারণ নাগরিকদের তাদের যে কোন সাহিত্য দিয়ে এর তাক ভরাট করতে বলেছে এবং ক্লুপ.টিজে-এর একটি সংবাদ প্রতিবেদন অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের কাছ থেকে জোর করে বই চেয়ে নিয়েছে

তাজিকিস্তানের বৈদেশিক ঋণ ২শত কোটি মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। দেশটির স্থূল জাতীয় উৎপাদন বর্তমানে মাথাপিছু প্রায় ২,০০০ মার্কিন ডলারে, যা একে বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র এবং স্থাপত্য আড়ম্বরপূর্ণ প্রদর্শনের কম সামর্থ্যের একটি দেশে পরিণত করেছে।

কিন্তু বিশ বছর ধরে সোভিয়েত উত্তর প্রজাতন্ত্রটির রাষ্ট্রপ্রধান পদে থাকা রাহমনকে এটা নিয়ে বিশেষ চিন্তিত মনে হচ্ছে না। কারো কারো মতে তিনি অঞ্চল, বিশ্ব, বহুমূখী এবং আরো অনেকক্ষেত্রে বৃহত্তম, উচ্চতম, প্রশস্ততম, দীর্ঘতম (এবং অন্য যে কোন পরিমাপে সেরা) জিনিষ নির্মাণে ইচ্ছুক দুবাই রোগে সংক্রমিত। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো এর কাছে এসব পরিকল্পনার জন্যে খরচ করার কোন তেল-বেচা অর্থ নেই।

তার পতাকাবাহী জাহাজের পতাকাদণ্ড প্রকল্প

ইউটিউবে পোস্ট করা একটি ভয়েস অব আমেরিকা ভিডিওর একটি সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতির পছন্দের ৫০০ মিটার উঁচু সরকারী বাজেটের ৩৫ লক্ষ মার্কিন ডলারের বিশ্বের উচ্চতম পতাকাদণ্ড প্রকল্পটি সম্পর্কে বিরোধীদলীয় তাজিক রাজনীতিবিদ মুহিদ্দিন কবিরী বলেছেন:

“আপনারা জানেন তারা কী বলে। খাটো মানুষ তাদের উচ্চতার ঘাটতি পূরণ করার জন্যে উঁচু গোড়ালীর জুতা পরেন। আমরা আমাদের অর্থনীতি, পর্যটন, ঊচ্চমানের প্রযুক্তি শিল্প, গণতন্ত্র অথবা মানবাধিকারের প্রতি মনোযোগ দেয়ার লোক না পেলে, তবেই তো আমরা বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা পতাকাদণ্ডের মতো প্রকল্পের প্রতি নজর দেয়ার নাগরিক এবং অতিথি পাবো।”

প্রখ্যাত তাজিক ব্লগার জাফর আব্দুলায়েভ [রুশ] তার ফেসবুক পৃষ্ঠায় বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা পতাকাদণ্ডটির অদূরে মধ্যএশিয়ার বৃহত্তম গ্রন্থাগারটিতে একটি প্রহসনমূলক ভ্রমণ রচনা করেছেন:

 আগামীকাল আমি আমার বন্ধুদের সাথে জাতীয় গ্রন্থাগারটিতে যাবো। আমি কয়েকটি বই সাথে নিয়ে এসেছি। কারো ইচ্ছে হলে আমাদের সাথে আসতে পারেন! ইসমাইল সোমোনির মূর্তির ১০.০০ পিছনে। বইগুলো আপনাকে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি জীবন দেখতে সাহায্য করবে।

কিন্তু কন্সতান্তিন বোদারেনকো [রুশ] তার বই দিয়ে দেয়ার ধারণাটি পছন্দ করেন নি:

আমি কিন্তু আমার বই দিয়ে দিতে চাই না – ওখানে ওগুলো কার প্রয়োজন হবে?

আব্দুলায়েভ [রুশ] নিশ্চিত করেছেন যে তার গ্রন্থাগার সফর গ্রুপটি:

“শহরের চারিদিক থেকে দৃশ্যমান হবে, শুধু পতাকাদণ্ডটির সঙ্গে আমাদেরকে গুলিয়ে ফেলবেন না।”

রুস্তম রাহমাতভ [রুশ] যার জবাব দিয়েছেন:

“যদি হঠাৎ.. আমি আমার হাতের উপর পতাকাদণ্ডটি উত্তোলন করি এবং সেই পতাকাদণ্ডের উপরে জাফর না থাকে!”

আব্দুরাহমন রাহমনভ [তাজিক] চর্চাটির প্রতি একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন:

সাব্বাস জাফর, আপনি আগামী প্রজন্মের জন্যে কাজ করছে্ন! যদি তারা আজকে না পড়ে ভবিষ্যৎ ভাল হবে না। আশা করি (ইনশা’ল্লাহ) আরো বই পড়ুয়া/পাঠক হোক।

অস্থিতিশীল শাসকগোষ্ঠী স্বাধীন মিডিয়া পছন্দ করে না

কিন্তু তাজিকিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এমনকি সরকারের ‘দুবাই রোগ’ নিয়ে মজা করাও কঠিন হয়ে উঠছে। দেশের মধ্যে অসন্তুষ্টি বেড়ে চলার কারণে দুশানবে বিরতি দিয়ে দিয়ে ফেসবুক ব্লক করছে করেছে, যার ফলে ব্যবহারকারীদেরকে গত মাসে ওএসসিই থেকে সাহায্য নিয়ে ব্লক সরানোর পূর্ব পর্যন্ত প্রক্সির মাধ্যম হয়ে সাইটটিতে ঢুকতে হচ্ছিলো। সামাজিক নেটওয়ার্ক নিয়ে রাহমন শাসকগোষ্ঠীর উদ্বেগের কারণ হলো তাজিকরা মাঝে মাঝেই স্থানটিকে বিভিন্ন সামাজিক বিষয় এবং রাজনৈতিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার একটি ফোরাম হিসেবে ব্যবহার করে। সাইটটির ‘‘তাজিকিস্তান বিপ্লব ২০১২’‘র মতো পৃষ্ঠাগুলি কারো কদাচিৎ দেখা হলেও, দীর্ঘমেয়াদে নাগরিক মিডিয়াতে এদের মৃদু ধরনের প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা কম।

ব্লকটি এই বছর মার্চের প্রথম দিকে শুরু হওয়া প্রকাশের স্বাধীনতার উপর একটি বৃহত্তর কঠোর ব্যবস্থারই অংশ। রাহমন শাসকগোষ্ঠীর পতনের পূর্বাভাস দেয়া একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হলে যভেজদা.আরইউ এবং মধ্যএশিয়া.আরইউ নিষিদ্ধ হয়, আর ফারঘানা.আরইউ দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন বন্ধ হয়ে থাকে।

লিখিত শব্দ অবদমন ছাড়াও তাজিক কর্তৃপক্ষ মুসলিম অধ্যুষিত দেশটিতে ধর্মীয় স্বাধীনতার বিরুদ্ধে একটি পদ্ধতিগত প্রচারাভিযান চালু করেছে। ২০শে মার্চের একটি মার্কিন সরকারী রিপোর্ট ​​বিশ্বের নিকৃষ্ট ষোলটি ধর্মীয় স্বাধীনতা পরিপন্থী আচরণকারী রাষ্ট্রের মধ্যে দেশটিকে রেখেছে, দেশটির ক্ষমতাসীন পরিবার হয়তো সেই রেকর্ডটি ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা করছে বলে মনে হচ্ছে।

ইউরোনিউজের সঙ্গে সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে বাগাড়ম্বরকারী রাহমন বলেছেন যে তার দেশে “গণতন্ত্রের কোন কাটাপথ (বিকল্পপথ) নেই।” রাশিয়ার সাম্প্রতিক সংসদীয় এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পর্কে তিনি আরো বলেন:

“রাশিয়া বা অন্যান্য সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রে রাতারাতি একটি ইউরোপীয় অথবা মার্কিন ধাঁচে গণতন্ত্র বা এমন কিছু [নির্মাণ করা] – অসম্ভব – একটি স্বপ্ন মাত্র।”

এবং এক পর্যায়ে তাই বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা পতাকাদণ্ডটি নির্মিত হচ্ছে:

ছবি www.trident-support.com থেকে

লেখকের টীকা: নাগরিক সাংবাদিক তহি পালায়েভ এই নিবন্ধের অনুবাদে অবদান রেখেছেন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .