ব্রাজিল: অধুনা দাসত্ব এবং প্রতিরোধ প্রস্তাব

আমাদের স্কুলে আমরা প্রথম কয়েক বছরে জেনেছি ১৮৮৮ সালের ১৩ই মে তারিখে রাজকুমারী ইসাবেল-এর সোনালী আইন স্বাক্ষরের মাধ্যমে ব্রাজিলে দাসত্ব বিলুপ্ত হয়। তাত্ত্বিকভাবে এই দিনে ব্রাজিলে আরেকজন মানুষের উপর মালিকানা অবৈধ হয়ে যায়: কিন্তু বাস্তবে ব্রাজিলীয় এলাকায় নতুন ছদ্মবেশে দাস শ্রম শোষণ এখনো অব্যহত।

ব্রাজিলে দাসত্ব: শুরু থেকে আজ পর্যন্ত

দাস প্রথা মানুষের সভ্যতার মতোই পুরোনো। যুদ্ধে বিজিত জনগণকে সাধারণত তাদের দখলকারীরা দাস বানাতো অথবা তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করে দেয়া হতো; একটা শাসনামলে ঋণ পরিশোধের জন্যে কাজ করতে বাধ্য হওয়া জনগণও অধীনস্ত [পিটি] বলে পরিচিত হতো।

প্যারাতির দাস, অ্যান্ডারসন- ব্রাজিলের একমাত্র জীবন্ত দাসমূর্তি।

প্যারাতির দাস, অ্যান্ডারসন- ব্রাজিলের একমাত্র জীবন্ত দাসমূর্তি। ফ্লিকারে মারিও ক্রেমা’র পাঠানো ছবি (সিসি-বাই-এনসি-এনডি-২.০)

প্রথম ক্ষেত্রটিতে জাতিগত উপাদানের সাথে প্রভূ হিসেবে বিজেতার শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপন্ন করার শক্তি প্রয়োগটি যুক্ত। দ্বিতীয় ক্ষেত্রটিতে কর্মীরা প্রভুর সম্পত্তি নয়, তাদের স্বাধীনতা ছিল – অন্ততঃ তাত্ত্বিকভাবে, একবার তার পাওনাদারের ঋণ পরিশোধিত হলেই আবার তা কিনে নিতে পারতো।

ব্রাজিলের সমসাময়িক দাসত্ব অনেকটা অধীনতা’র মতো এবং গ্রামীণ এবং শহুরে উভয় অঞ্চলেই বিদ্যমান। গ্রা্মের দিকে কৃষি সম্প্রসারণ এলাকাগুলোতে খামার-মালিকদের ভাড়া করা সংগ্রহকারীরা/ব্যাপারীরা জঙ্গল পরিষ্কার এবং বীজ বোনার জন্যে শ্রমিকদের নিয়োগ করে। শ্রমিকদের রাজি করানোর জন্যে ব্যবহৃত মিথ্যা প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে বিনামূল্যে পরিবহন, উপযুক্ত বেতন ও বাসস্থান  এবং নিয়োগকর্তার টাকায় খাবার। তারপর শ্রমিকরা সেই বর্ণনার চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা একটি পরিবেশে নিজেদের খুঁজে পায়, যেমন বেসরকারী সংস্থা (এনজিও) ‘ব্রাজিল প্রতিবেদক’-এর ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনে বর্ণিত হয়েছে  [পিটি] কীভাবে জনগণ গ্রামাঞ্চলে দাস হতে আসে:

Ao chegarem ao local do trabalho, eles são surpreendidos com situações completamente diferente das prometidas. Para começar, o gato [aliciador] lhes informa que já estão devendo. O adiantamento, o transporte e as despesas com alimentação na viagem já foram anotados no caderno de dívida do trabalhador que ficará de posse do gato. […] despesas com os emporcalhados e improvisados alojamentos e com a precária alimentação serão anotados, tudo a preço muito acima dos praticados no comércio. Se o trabalhador pensar em ir embora, será impedido sob a alegação de que está endividado e de que não poderá sair enquanto não pagar o que deve. Muitas vezes, aqueles que reclamam das condições ou tentam fugir são vítimas de surras.

কাজের জায়গায় এসে প্রতিশ্রুতি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিস্থিতি দেখে তারা অবাক হয়ে যায়। শুরুতেই ‘গ্যাটো’ (ব্যাপারীরা যে নামে পরিচিত) তাদের জানায় যে ইতোমধ্যেই তারা ঋণগ্রস্ত হয়ে গিয়েছে। অগ্রিম, পরিবহন ফি এবং যাত্রার সময় দেওয়া রাহা খরচ ব্যাপারীর কাছে রাখা শ্রমিকের ঋণের খাতায় তোলা হয়ে গিয়েছে। […] তাৎক্ষণিকভাবে দেয়া নোংরা বাসস্থান এবং নিকৃষ্ট মানের খাবারের সব খরচও লিপিবদ্ধ হবে, সাধারণভাবে দাবি করা দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে। শ্রমিক ফিরে যাওয়ার চিন্তা করলে ইতোমধ্যেই সে ঋণগ্রস্ত এবং পাওনা পরিশোধ না করা পর্যন্ত সে যেতে পারবে না বলে অভিযোগ করে তাকে তা করতে দেয়া হয় না। প্রায়শই পরিবেশ নিয়ে কেউ নালিশ করলে বা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে পেটানো হয়।

২০১১ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা’র (আইএলও) ব্রাজিলীয় দপ্তর প্রকাশিত “ব্রাজিলে গ্রামীণ দাসশ্রমে জড়িত প্রধান প্রধান নিয়ামকগুলোর প্রোফাইল” [পিটি] সমীক্ষাটিতে বর্তমান পরিস্থিতির মারাত্বক অবস্থা পরিলক্ষিত হয়। প্রতিবেদনটিতে আইএলও বলেছে, ১৯৯৫ সাল (যে বছর ব্রাজিলীয় সরকার তার রাজ্যগুলোতে দাসশ্রমের অস্তিত্ব স্বীকার করে নেয়) থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ৪০ হাজারেরও বেশি শ্রমিককে দাসত্ব থেকে উদ্ধার করা হয়।

সমসাময়িক দাসত্ব মোকাবেলার নীতি  

সম্মানজনক স্বীকৃতি থেকে যথেষ্ট দূরের হলেও ব্রাজিলে দাসত্বের অব্যাহত অস্তিত্বের সরকারী স্বীকৃতিটি এই প্রথাটির বিরুদ্ধে লড়াই করার – জোরপূর্বক শ্রম দমনের জন্যে নির্বাহী গোষ্ঠী (জিইআরটিআরএফ) এবং দাসত্ব দূরীকরণ ও দাস ব্যবহারকারীদের আর্থিকভাবে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা প্রথম এবং দ্বিতীয় দাসশ্রম দূরীকরণ জাতীয় পরিকল্পনার – মতো বিভিন্ন সরকারী অবকাঠামো সৃষ্টির সুযোগ করে দিয়েছে। ঘটনাক্রমে, ২০০৪ সালের ২৮শে জানুয়ারি ইউনাই (মাইনাস জেরাই) গ্রামাঞ্চলে তিনজন শ্রম-নীরিক্ষককে খুন করা হলে তারিখটিকে জাতীয় দাসশ্রম প্রতিরোধ দিবস হিসেবে স্মরণ করার জন্যে নির্বাচিত করা হয়।

জাতীয় দাসশ্রম প্রতিরোধ দিবস, ২৮শে জানুয়ারী।

জাতীয় দাসশ্রম প্রতিরোধ দিবস, ২৮শে জানুয়ারী। ছবি: ব্রাজিল আতুয়ালে, ভেরেনা গ্লাস (সিসি বাই ৩.০)

অন্যান্য দাসশ্রম প্রতিরোধে প্রচেষ্টার মধ্যে সাংবিধানিক সংশোধন প্রস্তাব (পিইসি) ৪৩৮/২০০১ রয়েছে, যাতে দাসশ্রমে ব্যবহৃত সমস্ত খামার বাজেয়াপ্ত করে ভূমি সংস্কার করার জন্যে প্রস্তাবনা করা হয়েছে। ব্রাজিলীয় সিনেট ২০০১ সালে ‘দাসশ্রমের জন্যে পিইসি’ অনুমোদন করে প্রতিনিধি সভায় পাঠিয়ে দেয়, যেখানে “গ্রামীণ বেঞ্চ” এটিতে পরিবর্তন আনার জন্যে চাপ সৃষ্টি করে।

জন-প্রশাসনের ছাত্র আঁদ্রে আল্ভেস ফার্ণান্দেজ “দিরেইতো এম কুয়েস্তাও” [“প্রশ্নবিদ্ধ আইন”] ব্লগে বলছেন যে অন্যান্য সাজার সঙ্গে যুক্ত করে বাজেয়াপ্তকরণ হলো দাসশ্রম প্রতিরোধের [পিটি] শ্রেষ্ঠ উপায়:

A expropriação das terras onde ocorre o uso de trabalho escravo é perfeitamente cabível como forma de fazer o agente criminoso pagar pelos danos infligidos aos trabalhadores. […] No caso de crimes contra a liberdade, como é o caso de reduzir alguém à condição análoga à de escravo, a multa deve ser aplicada sem prejuízo das medidas penais cabíveis, em vista do tratamento degradante aos quais os trabalhadores estão submetidos.

দাসশ্রমে ব্যবহৃত জমি বাজেয়াপ্তকরণ শ্রমিকদের উপর অপরাধীদের করা ক্ষতি পূরণের একটি উপায় হিসেবে পুরোপুরি যুক্তিসঙ্গত। […] স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অপরাধের ক্ষেত্রে, যেমন কাউকে দাসের মতো পর্যায়ে নামিয়ে আনার ক্ষেত্রে কোনরকম কুসংস্কার ছাড়া অবশ্যই শ্রমিকদের ভোগ করা অধ:পতিত অবস্থার কষ্টের সাথে মাননসই জরিমানা হতে হবে।
টাম্বলারে জারা’র দাসশ্রমকে নিন্দা জানিয়ে ফ্রান্সিসকো মেন্দিজের (@মেটালোজিস) ছবি (আগস্ট ২০১১)

টাম্বলারে জারা’র দাসশ্রমকে নিন্দা জানিয়ে ফ্রান্সিসকো মেন্দিজের (@মেটালোজিস) ছবি (আগস্ট ২০১১)

কিন্তু দাসদের মতো অবস্থায় শুধু গ্রামাঞ্চলেই মানুষকে পাওয়া যায় না। বড় শহরগুলোতেও মানবিক মর্যাদাকে অধ:পতিত করার মতো কর্মকে মেনে নেয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই এমন মানুষের দুর্বলতাকে কাজে লাগানোর সুযোগসন্ধানীদের উর্বর ভূমি রয়েছে। এধরনের ব্যক্তিদের মধ্যে দরিদ্র অঞ্চল থেকে আসা অথবা  তীব্র দারিদ্র্য বা সশস্ত্র যুদ্ধাক্রান্ত বিভিন্ন দেশ থেকে অনিয়মিতভাবে আসা অভিবাসী ব্রাজিলীয়রা রয়েছে।

কিছু কিছু গৃহস্থালী শ্রমিকদের প্রতি আচরণ বিষয়ে কথা বলার সময় [পিটি] ওয়াশিংটন আরাউজো তার ব্লগে ব্রাজিলীয় নৃতত্ববিদ গিলবার্তো ফ্রেয়রির কাজ ‘প্রভূ এবং দাস’-এর কথা স্মরণ করেছেন:

[…] muitas dessas moças são praticamente forçadas a realizarem trabalhos domésticos, sem qualquer contrapartida financeira, vivendo em celas improvisadas, aqueles cubículos de apartamentos, geralmente conhecidos como “dependência da empregada”. É triste constatar que ainda temos –e muito– a transferência da Casa Grande e Senzala dos campos para os centros urbanos.

[…] বাস্তবে এরকম বহু মেয়েকে জোর করে গার্হস্থ্যকর্ম করতে বাধ্য করা হয় যার জন্যে তাদের কোন আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেয়া হয় না এবং সাধারণভাবে “দাসী’র বাইরের ঘর” নামে পরিচিত আলমারি মত বসতির নোংরা প্রকোষ্ঠে রাখা হয়। দুঃখের সাথে উল্লেখ করতে হচ্ছে যে গ্রামাঞ্চলের এই প্রভূ এবং দাসেরা আমাদের শহুরে কেন্দ্রগুলোতেও চলে এসেছে।

দাসশ্রমের বিরুদ্ধে লড়াইটি ঝুঁকির সম্মূখীন জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন এবং সরকারী নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে করা হচ্ছে। কিন্তু শুধু এটাই যথেষ্ট নয়: দেশ থেকে এই অধ:পতিত চর্চা নির্মূলে ব্রাজিলীয় জনগণের অংশগ্রহণ জরুরী। সাহায্য করার একটি উপায় হলো অপরাধীরা যাদের দাসে পরিণত করতে পারে এমন ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের অর্থাৎ ‘মুক্ত’ পুরুষ এবং নারীদের এবিষয়ে সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানিয়ে নিরাসক্ত করা। ‘সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানানোর মানে হলো দাসশ্রম ব্যবহার করা কোম্পানিগুলোকে বয়কট করা, আর এক্ষেত্রে কর্ম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কোন এক সময় দাসশ্রম ব্যবহার করতে গিয়ে ধরা পড়ে অভিযুক্ত নিয়োগকারীদের একটি তালিকা [পিটি] দিয়েছে যারা সরকারী ব্যাংক থেকে ঋণ লাভের অধিকার হারিয়েছে এবং তাদের পণ্যের বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পরিশেষে, মাদক পাচার এবং অপহরণ-খুনের মত অপরাধের বিদ্যমান শাস্তিকে দৃষ্টান্তমূলক করা জন্যে রাজনীতিবিদদের উপর চাপ সৃষ্টি করা গুরুত্বপূর্ণ।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .