গ্রিস: এথেন্স স্কয়ারে ৭৭ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ আত্মাহুতি দিলেন

এই পোস্ট আমাদের ইউরোপ সমস্যার বিশেষ কভারেজের অংশ

সেদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই গ্রিসের মানুষ ৭৭ বছর বয়সী দিমিত্রিস ক্রিস্টোলাসে আত্মহুতির হৃদয়বিদারক খবরটি শুনলেন। সংসদ ভবন পার করে এথেন্সের সিনট্যাগমা স্কয়ারে সকাল ৯টার দিকে নিজের মাথায় গুলি করার দৃশ্যটি পথচারীরা দেখেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট ছিলেন। ১৯৯৪ সালে তার ঔষধের দোকান বিক্রি করে দেন। গুলি করার আগে তিনি চিৎকার করে বলেন, তিনি “তার সন্তানের জন্য কোনো ঋণ রেখে যেতে চান না”।

একটি ফেসবুক অনুষ্ঠানে আজ বিকেলে সিনট্যাগমা স্কয়ারে সবাইকে জড়ো হওয়ার আহবান জানানো হয়েছে। “সবাই সিনট্যাগমায়। মৃত্যু নিয়ে এরকম ছেলেখেলা চলতে দেয়া যায় না।”

এই ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় যেসব প্রতিবেদন এবং পোস্ট এসেছে, গ্লোবাল ভয়েসের লেখক অ্যাস্টেরিস মাসুউরাস সেগুলোর একটি সংকলন তৈরি করেছেন।

এটা কোনো আত্মহত্যা ছিল না। এটা খুন।

আজ সন্ধ্যায় সিনট্যাগমা স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত ফেসবুক অনুষ্ঠান থেকে পোস্টারটি নেয়া হয়েছে। পড়ুন:এটা কোনো আত্মহত্যা ছিল না। এটা খুন। মৃত্যু নিয়ে এরকম ছেলেখেলা চলতে দেয়া যায় না।”

হৃদয়বিদারক এই ঘটনা নিয়ে সারাদিনই গ্রিসের টুইটারে নানা ধরনের মন্তব্য এবং মিশ্র প্রতিক্রিয়া এসেছে:

@ইয়ানকিকোটস: আজ সকালে সিনট্যাগমা স্কয়ারে ৭৭ বছর বয়সী বৃদ্ধ মানুষটির আত্মাহুতির ঘটনা মর্মান্তিক #গ্রিস। “এটা সম্মানের সাথে শেষ করার একটা মাত্রই রাস্তা আছে, আমি আবর্জনা থেকে খেতে পারবো না।”

টুইটার ব্যবহারকারী আরকোদুস ইভেন্টের পেছনে যারা ছিলেন তাদেরকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন:

@arkoudos: Μακάρι να μη φύγεις. Μακάρι να μείνεις, να παλέψεις. Κι άλλο. Μακάρι.Μακάρι να μη ντρέπεσαι. Μακάρι να ντραπούμε, πρώτα, εμείς.

@আরকোদুস: আমি বিশ্বাস করি, আপনারা কেউই ছেড়ে যাবেন না। সবাই থাকবেন, লড়াই করবেন। আমি আরো বিশ্বাস করি, আপনারা কেউই লজ্জা পাবেন না। আমি মনে করি, আমরা সবাই প্রথমেই লজ্জিত হবো।

টুইটার ব্যবহারকারী ম্যাজিকা এই বিতর্কিত বিষয় নিয়ে দুই দিকের লজ্জার উপরই জোর দিয়েছেন:

@magicasland: ειναι ντροπή αυτο που κανει το κράτος στο λαό του. αλλά ειναι και ντροπή να αυτοκτονείς ενω επιβίωσε με πεισμα τόσος κοσμος επι κατοχής

@ম্যাজিকাসল্যান্ড: এটা রাষ্ট্রের লজ্জা, রাষ্ট্র তার জনগণের কী করছে! আবার এটা আত্মহত্যা করারও লজ্জা, যখন নাজি দখলদারিত্বের সময় [দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ] জনগণ কেমন করে বেঁচে ছিল।
সিনট্যাগমা স্কয়ার, এথেন্স, গ্রিস।

সিনট্যাগমা স্কয়ার, এথেন্স, গ্রিস। ছবি ইয়াননিকোটস এর ফ্লিকার থেকে নেয়া (সিসি বিওয়াই-এনসি-এসএ ২.০)।

এ ঘটনার মানবিক দিক উপেক্ষা করে অনলাইনের বিতর্ক চলে গেছে রাজনীতির দিকে। সাংবাদিক আরিস চ্যাটজিসটিফানাও তিউনিসিয়ার [ইংরেজি ভাষায়] বুয়াডিজির আত্মহত্যার সাথে তুলনা করেছেন।

@xstefanou: Η Ελλάδα έχει το δικό της Μπουαζίζι. Πρέπει να δείξει αν έχει και λαό ισάξιο της Τυνησίας και της Αιγύπτου η μόνο ψηφοφόρους ΠΑΣΟΚ -ΝΔ-ΛΑΟΣ.

@এক্সটিফানাও: গ্রিসেরও একজন বুয়াডিজি আছে। এটা প্রমাণ করে, তারা যদি পিএএসওকে-এনডি-এলএওএস (গত দুই দশক ধরে পিএএসওকে এবং এনডি গ্রিসের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল। আর এলএওএস হলো ডানপন্থী রাজনৈতিক দল)-এর শুধুমাত্র ভোটার না হয়ে তিউনিসিয়া এবং মিশরের মতো মূল্যবান হতো।

ঈলিকাস ন্যায়বিচার খুঁজেছেন:

@Elikas: Κάποια στιγμή πρέπει να δικαστούν και οι ηθικοί αυτουργοί για όλες αυτές τις αυτοκτονίες. Που στην πραγματικότητα είναι δολοφονίες.

@ঈলিকাস: কিছু সময়ে এইসব আত্মহত্যা নিয়ে আদালতে যাওয়া দরকার। [এই আত্মহত্যা গুলো] এগুলো এক প্রকার খুন।

সারা ফিথ গ্রিসের পুনরুদ্ধারের ইউরোপীয়ও পদ্ধতি নিয়ে সমালোচনা করেছেন:

@সারাফিথ_আরটি: ইউরোপ [সিক] গ্রিসের [অর্থনীতির বেহাল দশা থেকে] উদ্ধারের যে পদ্ধতি নিয়েছে, সত্যি বলতে তা গ্রিসের জনগণকেই মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সিনট্যাগমার আত্মহত্যা কখনোই ঘটতো না।

এথেন্স নিউজ জানিয়েছে, আত্মহত্যাকারীর একটি সুইসাইড নোট পাওয়া গেছে। সেখানে তিনি গ্রিসের বর্তমান শাসক দলকে যুদ্ধকালীন মিত্র সরকারের সাথে তুলনা করেছেন।

টল্কোগলিউ সরকার আমার বেঁচে থাকার সব ধরনের রাস্তা ধ্বংস করে দিয়েছিল। আমি যেহেতু ন্যায় বিচার পাই নি, তাই ভাগাড়ে গিয়ে বেঁচে থাকার খাদ্য খোঁজার আগেই প্রতিক্রিয়া হিসেবে নিজেকে শেষ করার এর চেয়ে কোনো ভদ্রোচিত উপায় পেলাম না।

জর্জিও টল্কোগলিউ গ্রিসের সেনা অফিসার ছিলেন। পরে ১৯৪১-১৯৪২ সালে অক্ষ শক্তির অপারেশনের সময় গ্রিসের মিত্র সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন। যুদ্ধকালীন সরকার এবং বর্তমানের লুকাস পাপাদেমোস সরকারের মধ্যেকার তুলনা হিসেবে এর উল্লেখ এসেছে।

গত গ্রীষ্মে এথেন্সের মেয়র জর্জিও কামিনিসের সিনট্যাগমা স্কোয়ার থেকে বিক্ষোভকারীদের জোর করে উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্তকে ব্যঙ্গ করেছেন পেনেলোপডি১০। কেন না, এটা পর্যটকদের কাছে এথেন্সের বাজে ইমেজকে তুলে ধরেছে। পরিহাসচ্ছলে তিনি বলেছেন:

@PenelopeD10: Μη βγάλει κι άλλο φιρμάνι ο Καμίνης “απαγορεύονται οι αυτοκτονίες στο κέντρο γιατί βλάπτουν τον τουρισμό”…

@পেনোলোপডি১০: আমি ভাবতে চাই না, কামিনিস এরকম একটা আদেশ জারি করেছেন, “[এথেন্স সিটি] সেন্টারে আত্মহত্যা নিষিদ্ধ। কারণ এটা পর্যটনের জন্য খারাপ।”…

অনেক মানুষ অভিযোগ করেছেন, একজন সাধারণ মানুষের মৃত্যু নিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থে অথবা নিজের সুবিধামতো ব্যবহারের চেষ্টা চলছে:

@ডায়ানালিজিয়া: লজ্জাকর! একজন মানুষ যিনি আজ সকালে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক এবং সিস্টেমের প্রতিবাদ করে আত্মহুতি দিলেন, সুবিধাবাদীরা তাকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে।

@mindstripper: Οι δημοσιογράφοι πανηγυρίζουν, οι πολιτικοί παπαγαλίζουν κι εμείς στις εκλογές θα κάψουμε γι άλλη μία φορά τη χώρα. Καλό ταξίδι στον άνθρωπο

@মাইন্ডস্ট্রিপার: সাংবাদিকরা বিজয়ী, রাজনীতিবিদরা তোতাপাখি, আর আমরা একের অধিক জাতীয় নির্বাচনের দেশটাকে “দগ্ধ” করে দিই। বিদায় এই মানুষ।

এই হৃদয়বিদারক ঘটনার রাজনৈতিক ব্যাখ্যার বাইরে টুইটার ব্যবহারকারী সার্ক০১ মানুষের বেঁচে একটি সরল সত্য তুলে এনেছেন:

@serk01: κανε ενα βήμα ‘πισω’ και σκέψου τι σημαίνει να αυτοκτονεί ενας ανθρωπος.

@সার্ক০১: এক ধাপ পেছনে যান এবং ভাবুন একজন মানুষ কেন আত্মহত্যা করতে মনস্থ করে।

এই পোস্ট আমাদের ইউরোপ সমস্যার বিশেষ কভারেজের অংশ

আত্মহত্যা করার প্রথম কারণটাই হলো বিষাদগ্রস্ততার চিকিৎসা না করা। বিষাদগ্রস্ততা চিকিৎসার মাধ্যমে সারিয়ে তোলা যায়। আত্মহত্যাও প্রতিরোধ করা যায়। আবেগজাত সমস্যা এবং আত্মহত্যা করার মতো অবস্থায় আপনি সাহায্য পেতে পারেন। বিফ্রেন্ডার্সডটঅর্গ-এ ভিজিট করে আপনার দেশে আত্মহত্যা থেকে রক্ষা পাবার উপায় জানুন ।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .