দক্ষিণ কোরিয়া: ন্যায্য সাংবাদিকতার জন্যে তিনটি প্রধান টিভি কেন্দ্রের প্রতিবাদ

দক্ষিণ কোরিয়াতে বৃহত্তম  একটি টেলিভিশন নেটওয়ার্কের প্রেসিডেন্টকে অন্যায্য সংবাদ কাভারেজ এবং দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত করতে মরিয়া হলে তাদের পক্ষ নিয়ে আরো দু’টি প্রধান টিভি কেন্দ্র নিজেদের – সরকারের পক্ষ নিয়ে শাসকগোষ্ঠীর সমালোচনামূলক সংবাদ সেন্সরকারী – ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

জানুয়ারি ২০১২ থেকে এমবিসি অনির্দিষ্টকালের জন্যে ধর্মঘটে রয়েছে। কিছু কিছু প্রদর্শনী এখন পর্যন্ত দু’মাস ধরে বন্ধ আছে এবং প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে সাথের সহকর্মীরা গণ-পদত্যাগ করার আগে কোম্পানিটির প্রেসিডেন্ট কয়েকজন সাংবাদিককে বরখাস্ত করেছেন।

দেশের সবচেয়ে বড় সরকারী সম্প্রচারক – কেবিএস এবং দেশের শীর্ষ ২৪-ঘণ্টার সংবাদ চ্যানেল – ওয়াইটিএন তাদের নিজেদের সম্পাদকীয় সেন্সরশীপের বিরুদ্ধে এবং এমবিসি’র ধর্মঘটের সমর্থনে একসাথে হয়েছে।

প্রতিবাদের ভিডিওগুলো

নিচের ‘ঐসব মিডিয়া প্যারাসুটের (ভবিষ্যৎ) নিবন্ধনের জন্যে উৎসব’ শিরোনামের এই ভিডিওটি শুরু হয়েছে তিনটি  কোম্পানীর প্রতিটির প্রেসিডেন্টের আকাশ থেকে পড়ে প্যারাসুটে ভাসমান অবস্থার একটি ছবি দিয়ে। দক্ষিণ কোরিয়ার কর্পোরেট জগতে ‘প্যারাসুট’টি (অথবা ‘প্যারাসুট কর্মী’) ‘উচ্চপদস্থ’ কারো – সাধারণতঃ রাজনৈতিক প্রভাবে বা শীর্ষস্থানীয় নির্বাহীদের কারো – সিদ্ধান্তে যোগ্যতা নির্বিচারে চাকুরী পাওয়া কোনো ব্যক্তিকে নির্দেশ করে। পরবর্তীতে ভিডিওটি ব্যাখ্যা করেছে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ কীভাবে সরকারের পক্ষে সংবাদগুলোকে বিকৃত করেছে (ধর্মঘটটি সম্পর্কে আরো পড়ুন গ্লোবাল ভয়েসেসের আরেকটি নিবন্ধে, এখানে)।

এমবিসিইউনিয়ন২০১২-এর আপলোড করা আরো কয়েকটি ভিডিও কার্যকরী এবং সৃজনশীলভাবে ধর্মঘটটির উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে। নিচের এটি করা হয়েছে গান প্রচারের ভিডিওর মতো করে, ‘ইতাওন স্বাধীনতা’ গান থেকে সুর নিয়ে ভিন্ন একটি কথায় নতুন ‘এমবিসি স্বাধীনতা’ শিরোনামে।

এই দৃশ্যটি এমবিসি ভবনের ভিতরে এর সম্প্রচারকদের বাস্তব অংশগ্রহণে নাচ এবং গান দেখাচ্ছে, যা কোরীয় সাংবাদিকতায় খুবই বিরল। এখানে সংবাদ প্রচারকদের  গম্ভীর এবং কর্তৃত্বপরায়ণ মনোভাব আশা করা হয়। ২মিনিট ১৫ সেকেন্ড পর এমবিসি’র অসংখ্য কর্মী একসাথে গান গাইতে এলে আপনি একটি বিশাল মাপের প্রতিবা্দ দৃশ্য অবলোকন করবেন।

কিছু কিছু গানের কথা এরকম:

0 min 20 sec: 요즘 MBC는 안봐 나꼼수면 충분 시청자 왜 눈돌렸나, 정권 비판 뉴스 실종, 누가 MBC 망쳤나. 1 min 비판 실종 MBC, 막장 인사 MBC, 징계 남발 MBC, MB 방송 MBC. 1 min 45 sec 정권엔 충성, 진실 눈감아, 어이가 없어, 더 이상 못 참아.

০মি. ২০সে.: আজকাল আর কেউ এমবিসি দেখে না। নাগোমসু দেখাই যথেষ্ট। কেন দর্শকেরা আমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। খবর থেকে সরকারের সমালোচনা উধাও। কে আমাদের এমবিসি’কে নষ্ট করেছে? [নাগোমসু প্রেসিডেন্ট এবং সরকারী দলকে নিয়ে ব্যাঙ্গকারী দেশের শীর্ষ পডকাস্ট]
১মি.: এমবিসি থেকে সমালোচনা উধাও! এমবিসি’র লোকনিয়োগ সাংঘাতিক! [ব্যক্তিগত রাগ মেটাতে] এমবিসি’তে অহরহ শাস্তি! এমবি সম্প্রচার করে এমবিসি! [এমবি হলো প্রেসিডেন্ট লী মাইউং-বাক-এর ছোট স্বাক্ষর]
১মি. ৪৫সে.: [নেতৃত্ব] শাসকগোষ্ঠীর প্রতি অনুগত। সত্যের চোখগুলো নীমিলিত। এটা তামাশারও বাইরে। আমরা আর সহ্য করতে পারছি না।

এমবিসি’র কর্মীরা একই গানটি নিয়মিত নিয়ে যায় দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধান ভ্রমণ প্রবেশপথ সিউল রেলওয়ে ষ্টেশনে চলমান জনতাকে শোনানোর জন্যে।  নিচের ভিডিওটিতে আপনি বিভিন্নরকম অভিব্যক্তি দেখতে পাবেন পথচারীদের – বিহ্বলিত বৃদ্ধ নাগরিক থেকে শুরু করে উত্তেজিত তরুণদের এবং ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়েসী জনগণের – মাঝে, যাদের বার্তাটির প্রতি সত্যিকারের আগ্রহ রয়েছে।

এমনকি সহকর্মীদের সমর্থন করে গতমাসে এমবিসি’র প্রাইম-টাইম সংবাদ পাঠক চোই ইল-গু পদত্যাগ করেছেন। নিচের ইউটিউব ভিডিওটিতে মি. চোই অশ্রুসজল নয়নে তার সহকর্মীদের প্রতি চিৎকার করে বলেছেন “এটা সংবাদ প্রস্তুতকারী দলের জন্যে সবচেয়ে ব্যস্ততম সময় হওয়া উচিৎ। আপনারা কেন [বাধ্য হয়ে] এখানে এটা [বিক্ষোভটিকে নির্দেশ করে] করছেন?” (০মি. ১২সে.)।

তারপর চোই অনুতাপের সাথে অনুযোগ করেছেন যে দক্ষিণ কোরিয়াতে বাকস্বাধীনতা “১৯৮৭ সালের মতো সংকুচিত হয়ে গিয়েছে অথবা এমনকি অতীতের চেয়েও খারাপ”। ১৯৮০র দশকের শেষভাগে কর্তৃত্বপরায়ণ সামরিক শাসকগোষ্ঠী নির্মমভাবে বিক্ষোভ দমন করে এবং মিডিয়াকে চুপ করিয়ে রাখত।

এমবিসি’র পদক্ষেপটিকে সমর্থন করতে কেবিএস ইউনিয়ন যোগদান করেছে এবং কেবিএস কর্মীদের এই ‘সাম্বো ইলবায়ে’ (三步一拜) – “প্রতি তিন পদক্ষেপে মাটিতে হাঁটু এবং কনুই দিয়ে ঝুঁকে” গভীর দুঃখ, ক্ষমা প্রার্থনা এবং দৃঢ় সংকল্প প্রকাশের – ভিডিওটি পোস্ট করেছে।

এই ভিডিও ক্লিপটি কেবিএস-এর অতীত কাভারেজ দেখাচ্ছে যেখানে রাখঢাক না করে বর্তমান প্রেসিডেন্টকে ভাল মানুষ দেখিয়ে প্রশংসা, অন্যায্যভাবে তার রাজনৈতিক বিরোধীদের আক্রমণ এবং পরিবর্তিত সংবাদ কাভারেজের জন্যে ক্ষমা চেয়ে কেবিএস কর্মীদের এই ‘সাম্বো ইলবায়ে’ রয়েছে।

‘রিসেট (পুনরারম্ভ) কেবিএস’ নামের এই ভিডিও ক্লিপটিতে স্থানীয় বিভিন্ন ব্যুরো থেকে কেবিএস কর্মীদের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে জনগণকে ভয় না করে ক্ষমতাবানদের ভয় পাওয়া নেতৃত্ব বদল করে সাংবাদিকতায় ন্যায্যতা ফিরিয়ে আনার আহবান করতে দেখা যাচ্ছে।

প্যারিসের রিপোর্টারস উইদাউট বর্ডারস প্রধান বেঞ্জামিন ইসমাইলের সাথে ভিডিও সাক্ষাৎকার সম্বলিত ‘রাগান্বিত ওয়াইটিএন’ নামের ভিডিও পোস্ট করে সংবাদ চ্যানেল ওয়াইটিএন-এর কর্মীরাও ধর্মঘটে যোগদান করেছে। ফরাসী এবং কোরীয় ভাষার সাবটাইটেল দেয়া সাক্ষাৎকারটিতে ইসমাইল ধর্মঘটটির প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থনের আহবান জানিয়েছেন।

দেশের বৃহত্তম সংবাদ সংস্থা ইওনহ্যাপ সংবাদ সংস্থার ইউনিয়ন কর্মীরাও তাদের অন্যায্য কাভারেজের জন্যে ক্ষমা চেয়ে একটি ইউটিউব ভিডিও [কোরীয় ভাষায়] আপলোড করেছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত ইওনহ্যাপের প্রতিবাদের মাত্রা খুবই ছোটই থেকে গিয়েছে।

এখানে ধর্মঘটটি সম্পর্কে আরো কয়েকটি এমবিসি ইউনিয়ন ভিডিও ক্লিপ রয়েছে। ঠিক নিচেরটি পেঙ্গুইনদের সমস্যার সাথে এমবিসি কর্মীদের পরিস্থিতির তুলনা করে সম্রাট পেঙ্গুইন বিলুপ্তি সম্পর্কে এমবিসি’র তথ্যচিত্রের একটি প্যারোডি, এখানে তাদের টিকে থাকার জন্যে ঠাণ্ডা আবহাওয়ার সাথে লড়াই করতে হয়।

নিচের এই ভিডিওটি এমবিসি’র সবচেয়ে নামকরা প্রযোজক, সাংবাদিক এবং এংকরদের একসাথে গাওয়া ‘নীল তিমি’ নামের একটি সুন্দর গানের একটি প্রচারণামূলক ভিডিও। গানের কথাগুলো প্রতিকূল যুদ্ধে লড়াই করতে জনগণকে উৎসাহিত করা সম্পর্কে এবং গাওয়ার সময় এর তত্ত্বাবধান করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় একজন রক সঙ্গীতশিল্পী ইউন দো-হিউন

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .