বাংলাদেশ: ধর্মদ্রোহী বিষয়বস্তু সম্বলিত ফেসবুকের পাতা বন্ধে আদালতের আদেশ

২১শে মার্চ বাংলাদেশের একটি আদালত নবী মোহাম্মদ, কোরান, এবং অন্যান্য ধর্মীয় বিষয়ে ধর্ম বিরোধিতার কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পাঁচটি ফেসবুক পাতা এবং একটি ওয়েবসাইট বন্ধ করার আদেশ দিয়েছে। এ ছাড়াও আদেশটি জানতে চেয়েছে অশোভন বিষয়বস্তু আপলোডের জন্যে ওয়েবসাইটের/পাতাগুলোর হোস্ট/নির্মাতা/নিয়ন্ত্রককে কেন বিচারের সম্মুখীন করা হবে না? সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল আদেশটিতে আরো জানতে চাওয়া হয়েছে ভবিষ্যতে এধরনের ওয়েবসাইট বন্ধের উদ্যোগ কেন নেয়া হবে না।

ইতোপূর্বে দু’জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক এই পাতাগুলো এবং সাইটটি জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানছে বলে বলে অভিযোগ করে একটি মামলা দায়ের করে। ফেসবুক বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয় এবং অনুমিত ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২৫লক্ষ এবং দেশটির অবস্থান ৫৫তম। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে নোংরা প্রচারণা এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার কারণে ফেসবুক কিছু সময়ের জন্যে সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।

ফেসবুক বন্ধবিভিন্ন রিপোর্ট অনুসারে অভিযুক্ত পাতাগুলিতে নবী মোহাম্মদ, মুসলমানদের পবিত্র গ্রন্থ করান, যীশু, গৌতম বুদ্ধ এবং হিন্দু দেবতাদের সম্পর্কে প্রতিকূল মন্তব্য এবং কার্টুন ছিল। দেবতাদের কিছু কার্টুন ছিল প্রায় পর্নোগ্রাফির কাছাকাছি।

এই বিষয়ে নেটনাগরিকদের প্রতিক্রিয়া ছিল ধীর গতির, যেহেতু তারা জানে ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারণে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। উপরন্তু এটা বিভিন্ন রকম সব কাজের জন্যে ব্যবহার করা হয় বলে ঘনিষ্টভাবে ফেসবুক কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করার জন্যে সরকারের উপর ক্রমবর্ধমান চাপ রয়েছে। তারা আরো উদ্বিগ্ন এই আদেশটি প্রযুক্ত হলে তা নেটনাগরিকদের বাক স্বাধীনতা হরণের সুযোগ হিসেবে ব্যবহৃত হবে কিনা।

ফেসবুক ব্যবহারকারী তানভীর একটি মন্তব্যে প্রশ্ন করেন:

সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদঃ সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।

দেশে হিন্দু / বৌদ্ধ / খ্রিস্টান / নাস্তিক / মুক্ত-মনা / সংশয়বাদী / Agnostik ইত্যাদি দের সংখ্যা কম বিধায় তাদের অনুভুতি কম মূল্যবান এবং মুসলমানরা বেশি বিধায় তাদের অনুভুতি বেশী মূল্যবান এরকমটা আদালত মনে করেন কিনা জানতে চাই।

বিজ্ঞ আদালত শুধু ধর্মানুভুতিতে আঘাত থামাতে আগ্রহী নাকি সব ধরণের অনুভুতিতে আঘাত থামাতে আগ্রহী (উদাহরণস্বরূপঃ আদালতানুভুতি, বিজ্ঞানানুভুতি , ইতিহাসানুভুতি, ক্রীড়ানুভুতি)…ইদানীংকালে আমরা অনেক ধরণের অনুভুতিতে লোকজন কে আঘাত হানতে দেখি । বড়ই অনুভুতি পরায়ণ জাতি এই বাঙালি।

তানভীরের আরো মন্তব্য:

কিন্তু ধর্মকে অবান্তর ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ আর কটূক্তি অনুসরণযোগ্য না হলেও এই কাজগুলো বন্ধের চেষ্টায় ফোরাম /ব্লগ / ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়ার বিজ্ঞ আদালতের সিদ্ধান্ত কোন ভাবেই সমর্থনযোগ্য নয় কেননা এতে করে যৌক্তিক ও বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনার পথ ও রুদ্ধ করা হয় ।

মনে রাখতে হবে , কলমের জবাব সবসময় কলম দিয়েই দেয়া উচিও, তলোয়ার বা পেশিশক্তি দিয়ে নয়।

কিছু কিছু ফেসবুক ব্যবহারকারী এই নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করছেন আর মনে করিয়ে দেন বাংলাদেশে কিছু নাস্তিক সাইট রয়েছে যাদের  ধর্মবিরোধী কোনো বিষয়বস্তু নেই, বরং গঠনমূলক সমালোচনা রয়েছে। সাম্প্রতিক আদেশটি তাদের নিয়ে নয়, বরং যারা আসলেই ক্ষতিকর।

আরেকজন ফেসবুক ব্যবহারকারী রণদীপম বলেছেন:

কোন অন্তর্জালিক সাইটের নৈঃশব্দ আমাকে বিরক্ত বা ডিস্টার্ব করে না। ওগুলোতে ঢোকা বা না-ঢোকার স্বাধীনতা রয়েছে আমার। কিন্তু আশেপাশের আয়োজিত ধর্মসভা এবং অন্যান্য আয়োজনগুলোর কানফাটানো মাইকের চিৎকার আমি না-চাইলেও আমার ব্যক্তিস্বাধীনতা বিপন্ন করে আমাকে বিরক্ত করে। আমার সবরকমের অনুভূতিকে আঘাতপ্রাপ্ত করে। এর প্রতিকার আমি কার কাছে চাইবো?

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো বলছে তারা এই পাতাগুলোকে বন্ধ করার জন্যে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছেন এবং বাংলাদেশের নেটনাগরিকেরা এবার ভাগ্যবান যে এবার কর্তৃপক্ষগুলো আদালতের আদেশ প্রজ্ঞার সাথে অনুসরণ করছে এবং গড়ে ফেসবুকের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেয় নি।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .