সৌদি আরব: যুবরাজ নাইফ আসছেন

সম্প্রতি সৌদি সিংহাসনের উত্তরাধিকারী যুবরাজ সুলতান বিন আব্দুল আজিজ আল সাউদ-এর মৃত্যুর ঘটনায়, সৌদি নাগরিকরা টুইটারে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করার জন্য কয়েক মিনিট মাত্র সময় নেয়, এবং যতক্ষণ রাজপ্রাসাদ থেকে কোন সংবাদ প্রদান করা হয়নি, ততক্ষণ তাদের অনেকে একই প্রশ্ন করতে থাকে- সেটি হচ্ছে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী পরবর্তী যুবরাজ কে হতে যাচ্ছে? ২৭ অক্টোবর ২০১১-এ মধ্যরাতে রাজপ্রাসাদ থেকে ঘোষণা প্রদান করা হয় যে যুবরাজ নাইফ বিন আব্দুল আজিজ আল সাউদকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসাবে মনোনীত করা হয়েছে। তিনি ১৯৭৮ সাল থেকে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং দ্বিতীয় সহকারী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এখন তিনি সিংহাসনের পরবর্তী উত্তরাধিকারী মনোনীত হলেন।

এমন নয় যে সৌদি নাগরিকরা এই মনোনয়ন সম্বন্ধে অবগত ছিল না; তবে অনেকে মনে মনে আশা করছিলেন যে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসেবে সৌদি বাদশাহ হয়ত অন্য কাউকে বেছে নেবেন। কিন্তু এখন সরকারি সংবাদে জানানো হয়েছে যে নাইফকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী মনোনীত করা হয়েছে, একই সাথে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করে যাবেন। সৌদি নাগরিকরা এখন ধর্মীয় কতৃপক্ষ এবং পুলিশের কাছ থেকে তার প্রতি আরো জোরালো সমর্থন এবং একই সাথে কম স্বাধীনতা বেশী বেশী গ্রেফতারের মত ঘটনার আশঙ্কা করছে। যুবরাজ নাইফ তার এই সব কর্মকাণ্ডের জন্য সুপরিচিত। সে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তার প্রশাসন এই সব কর্মকাণ্ডের জন্য খ্যাতি অর্জন করে।

সৌদি টুইটারকারীরা যুবরাজ নাইফের একটি উদ্ধৃতি সহ এই ছবি টুইট করেছে

সৌদি টুইটারকারীরা যুবরাজ নাইফের একটি উদ্ধৃতি সহ এই ছবি টুইট করেছে, যা নারীর গাড়ি চালানোর বিষয়ে তার বিরোধিতাকে তুলে ধরছে। তিনি বলেন, “ আমি শুরা পরিষদকে বলেছি, আমি জীবিত থাকতে নারীরা এদেশে গাড়ী চালাতে পারবে না।

অনলাইন প্রতিক্রিয়া

সৌদি টুইটারকারী আলী জে. আল দাউদ ( @আবু_জাফার) এই সংবাদে ঠাট্টার সাথে মন্তব্য করেছে, তিনি বলেন, এই নতুন যুগ সকল সৌদিকে জেলে ভরবে:

والله عندي إحساس ان الشعب السعودي كله راح يتهشتق

@আবু_জাফর: আমার অনুভূতি আমাকে বলছে যে সৌদি নাগরিকদের এখন (জেলে যেতে হবে) [হ্যাশট্যাগ]

ওয়ালিদ আল-খোদাইরি (@আই_ওয়ালিদ), যুবরাজ নাইফের শাসনকালের সময় গ্রেফতারের পরিমাণ বেড়ে যাবার বিষয়ে ধারণা দিচ্ছেন:

اللهم موّت الشعب في يوم واحد ويصحى بعدها الزعيم ما يلاقي حد يسجنه

@আই_ওয়ালিদ: হে পরম করুণাময়, জাতির সকলে যেন একদিনে মারা যায়, যাতে এ জাতির নেতার যখন জেগে উঠবে, তখন তারা যেন জেলে পোরার জন্য হাতের সামনে কাউকে না পায়।

সৌদি সাংবাদিক এবতিহাল মুবারক (@এবতিহালমুবারক) তিনদিন আগে ফেসবুকের গ্রুপে একটি লিঙ্ক পোস্ট করেছেন:

@এবতিহালমুবারক সৌদি ফেসবুকে একটি পাতা রয়েছে “সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসেবে নাইফ কে না বলুন” لا للأمير نايف ولياً للعهد on.fb.me/nlsiGH

আর যখন আনুষ্ঠানিক ভাবে এই ঘোষণা আসে। তখন ভদ্রমহিলা দুটি টুইট পোস্ট করেন:

@এবতিহালমুবারক: আজ রাতে সৌদি নাগরিকদের প্রিয় শব্দ “আতঙ্ক, আতঙ্ক” http://bit.ly/cSjlpq ##নাইফহ্যালোইন

@এবতিহালমুবারক:এমনটা নয় যে সৌদি নাগরিকরা বাদশাহ আব্দুল্লাহ-এর রাজত্বে গণতন্ত্রের অভিজ্ঞতা লাভ করেছে, কিন্তু তারা শীঘ্রই তার শেষ দিনগুলোর জন্য কাঁদবে।

আরেকজন সৌদি নারী নোরাহ টুইটারকারী (@হিট_জিরো) আগামীতে যুবরাজ নাইফের রাজত্বে বাক স্বাধীনতার বিষয়টি কেমন হবে তা উল্লেখ করেছেন:

تويتر في الطريق للحجب .. حفلة وداعية لجميع حديث العقل.. واقبال متوالي لشراء الطيران

@হিট_জিরো: আগামীতে টুইটার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। জাতীয় আলোচনার বিদায় সম্বর্ধনার আয়োজন এবং বিমানের টিকেট কাটা শুরু হোক।

খালেদ হোতহালি (@কে হোতহালি) [আরবী ভাষায়] গ্রেফতারের বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছেন:

إعدام أعمار البشر في المعتقلات كإعدام الأجساد بالرصاص .. لا فرق

@কে_হোতহলি: বন্দী দশায় কারো জীবন নেওয়া,আর বুলেটের মাধ্যমে কারো প্রাণ নেওয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।

সৌদি আরবের এক ১৫ বছরের স্কুল ছাত্র সাউদ বিন খালেদ (@সাউদবিনখালেদ) যুবরাজ নাইফকে উদ্দেশ্য করে বলছে:

يجب على الامير نايف .. ان يلتزم بالدين لا بالعُرف ، و أن يعترف بالحوار

@সাউদবিনখালেদ: যুবরাজ নাইফকে ধর্মীয় পথ অনুসারে চলতে হবে, ঐতিহ্য অনুসারে নয় এবং তাকে অবশ্যই সংলাপের বিষয়ে জ্ঞাত হতে হবে।

আরেক সৌদি ছাত্র (@রিফা_) [আরবী ভাষায়], তার আগামী দিনের শঙ্কার কথা টুইট করেছে:

الله يطول بعمر ابو متعب اعتقد ايامه راح تكون ايام دلع ب النسبه لنا عقب مايصير نايف ملك اللهم اعطنا خيره وأكفنا شره

@রিফা_: পরম করুণাময় যেন এই বাদশাহর আয়ু আরো দীর্ঘ করে। আমি মনে করি, যখন নাইফ বাদশাহ হবেন, তখন তার দিনগুলোর তুলনায় বর্তমান বাদশাহ-এ দিনগুলো সুন্দর বলে বিবেচিত হবে। সৃষ্টিকর্তা নাইফের ভালো দিকগুলো আমাদের জন্য প্রদান করুন এবং তার খারাপ দিকগুলোর হাত থেকে আমাদের রক্ষা করুন।

আরেক ছাত্র ( @আওথাহাআবস) [আরবী ভাষায়] নাইফের শাসনামলে বাক স্বাধীনতার বিষয়টি কেমন হতে পারে, সে বিষয়টি উল্লেখ করছে:

إلحمدلله اني وقفت توترة عن بعض المواضيع تجهزا لهاليوم المبارك:$

@আওথাহাআবস: স্রষ্টাকে ধন্যবাদ, আমি বিশেষ বিষয় নিয়ে টুইট করা বন্ধ করে দিয়েছি, কারণ আমি নিজেকে সেই সব [পবিত্র] দিনের জন্য প্রস্তুত করছি।

কুয়েতের টুইটারকারী সাদ আলআজমি (@আলআজমি_সাদ) [আরবী ভাষায়] এই বিষয়টি উল্লেখ করছে যে, কেন নাইফের যুগ নারীদের দাবীর পক্ষে যাবে না। :

كان يا ما كان، كان فيه نساء حلوين يحلموا يقودوا السيارات

@আলআজমি_সাদ: এক সময় কিছু মিষ্টি মেয়ে গাড়ি চালানোর স্বপ্ন দেখেছিল!

من منطلق استراتيجي مرحلي، ادعو المرأة السعودية للمطالبة بحق قيادة المرأة “للدراجة الهوائية”! أما السيارة ففي الجنة ان شاالله

@আলআজমি_সাদ: এক কৌশলগত কারণে আমি সৌদি নারীদের বাইসাইকেল চালানোর আহ্বান জানাচ্ছি এবং হয়ত তারা বেহেশতে গাড়ি চলাতে পারবে।

হানিন আলহাওয়াস (@হানিন_আলহাওয়াস) [আরবী ভাষায়] নারী অধিকারের ক্ষেত্রে সেই একই বিষয়ের কথা উল্লেখ করেছেন :

اقول جميع نساء المملكة انسي انك تسوقين سيكل بحوشكم

@হানিন_আলহাওয়াস: আমি সৌদির সকল নারীদের বলব, এমনকি তারা যেন তাদের বাড়ীর পেছনের অংশে মোটরসাইকেল চালানোর স্বপ্ন না দেখে। !

সৌদি ব্লগার ফুয়াদ আল ফারহান (@আলফারহান ) [সৌদি ভাষায়] সব সময় উল্লেখ করে আসছে যে যুবরাজ নাইফের অধীনে সৌদি আরব নতুন এক উত্তর কোরিয়ায় পরিণত হবে। আর আজ সে এই সংবাদ লাভ করার পর এক তিক্ত ব্যাঙ্গাত্মক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে সে উত্তর কোরিয়ার জাতীয় সঙ্গীত পোস্ট করেছে।

النشيد الوطني لـ كوريا الشمالية http://bit.ly/vR3n77

@আলফারহান: উত্তর কোরিয়ার জাতীয় সঙ্গীতhttp://bit.ly/vR3n77

আলি আল আমের (@_আমের) [আরবী ভাষায়] গ্রেফতারের বিষয়ে আরেকটি টুইট করেছে:

كل مواطن الآن زادت نسبة احتمالية دخوله السجن ثلاثة أضعاف

@_আমের: এখন প্রতিটি নাগরিক তিনবারের বেশী জেলে যাবে ।

আবদুল্লাহ আব্দুলরহমান (@৩বাডি৮) [আরবী ভাষায়] পুলিশের প্রতি যে ভয়, সেই বিষয়টি প্রদর্শন করেছেন:

جيب الشرطة البني صار مرعب أكثر من قبل

@৩বাডি৮:এখন পুলিশের বাদামী বর্ণের গাড়ি আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশী ভয় ধরায়।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .