হিজাবব্লগিং: “হিজাব নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা”

হিজাবব্লগস্ফেয়ারে” সবসময় এই বিষয়ে অনেক বিস্তারিত আলোচনা এবং বিতর্ক চলছে, কিন্তু এর ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি প্রকাশিত এক ব্লগ পোস্ট একটি কৌশলী বিষয়ের উপর অনুসন্ধান চালিয়েছে: যখন একটি মেয়ে তারহিজাব খুলে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় তখন কি ঘটে।

প্রথমে, মিশরীয় ব্লগার নাদিয়া এলাওয়াদির একটি ব্লগপোস্ট যা মে মাসের শেষের দিকে ছাপা হয়েছিল। এই পোস্টটি ব্লগস্ফেয়ারে এক উত্তেজনার সৃষ্টি করে এবং এই পোস্টে উপর প্রায় একশত মন্তব্য পড়েছে। এই পোস্টে নাদিয়া, আমাদের তার “গোপনীয় এক রহস্যের বিষয়ে” জানাচ্ছে:

গত সপ্তাহে আমি এই বিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করেছি। আমি আমার হিজাব- মাথা ঢাকার জন্য অনেক মহিলা যা ব্যবহার করে তা খুলে ফেলেছি।
আমি তখন থেকে হিজাব পড়া শুরু করি, যখন আমি আমার গৃহের গোপনীয়তা ত্যাগ করি, এখন থেকে ১৭ বছর আগে। মানববর্ষ হিসেবে বলা যায়, সে অনেক আগের কথা।

সম্প্রতি ইউরোপ যাত্রায় আমি আমার হিজাব খুলে ফেলি। আমি জানতে চেয়েছিলাম এর ফলে কি অনুভূতি তৈরি হয়। আমি জানতে চেয়েছিলাম এর ফলে আমার প্রতি অন্যদের এবং আমার নিজের ধারণার কতটুকু পরিবর্তিত হয়।

Woman in desert near Sharm el Sheik, Egypt. Image by Flickr user DavidDennisPhotos.com (CC BY-SA 2.0).

মিশরের সামার এল শেইখ নামক মরুভূমির কাছে এক নারী। ছবি ফ্লিকার ব্যবহারকারী ডেভিডডেনিশফটো.কমের।( সিসি বাই-এসএ ২.০ )।

নাদিয়া তার পাঠকদের বলছে, কেন সে এই সিদ্ধান্ত নিল এবং এই ঘটনায় তার অনুভূতি কি, সে সংক্ষেপে সেই প্রক্রিয়া সম্বন্ধে বর্ণনা করছে যা তাকে এই কাজে উদ্বুদ্ধ করেছে। সে উপসংহারে লিখেছে:

আমি আমার ঘর কায়রোতে ফিরে এসেছি, আবার হিজাব পড়া শুরু করেছে। এই ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য আমি কোন অনুশোচনা করেনি। আর আমার মনে হয়নি যে চিরদিনের জন্য হিজাব খুলে রাখব। কেন আমি এ রকমটা অনুভব করি তার পেছনে কিছু কারণ রয়েছে। মিশরে হিজাব খুলে ফেলার কারণে লোকজন বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করবে, আমি তেমনটা আশা করি না- এখানে আমি যাদের চিনি-তারা এটাকে ভালোভাবে নেবে অথবা এর প্রতি সমর্থন প্রদর্শন করবে কিংবা তারা এই বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাবে না। এর সাথে অনেক নাটকীয়তা যুক্ত থাকবে এবং আমি জানি না আমি সেগুলোর সাথে যুক্ত থাকব কিনা। আমার ভেতরে একজন রয়েছে যে এখনো মনে করে যে হিজাব পড়া একটি বাধ্যতামূলক কাজ। হয়ত স্রষ্টা সত্যই চান যে, আমি মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে রাখি। আমি এখনো তা বের করার চেষ্টায় আছি।

খুব সম্প্রতি, কায়রোর আরেক নারী ফাতেমা এমাম, তার চিরদিনের জন্য হিজাব খুলে রাখার সিদ্ধান্তের বিষয়ে লিখেছে। কেন সে এ রকম এক সিদ্ধান্ত নিল সে বিষয়ে এক আলোচনায় ফাতেমা ব্যাখ্যা করেছে:

আমার মনে হত যেন আমি এক সীমাবদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গির মাঝে বন্দী, যা বিশ্বকে, ক্ষমতার সম্পর্ককে, বিনয় এবং নারী সংগঠনকে এক সংকীর্ণ মনোভাব দিয়ে দেখে। আমার মনে হল আমার অন্য সব দৃষ্টিভঙ্গি সম্বন্ধে পাঠ করা উচিত। এই সময়ে আমার কখনো মনে হয়নি যে আমার তত্ত্বগত বিশ্বাস আমাকে কোন ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের দিকে ঠেলে দেবে, এটা ছিল ইসলামিক মতাদর্শের মাঝে যে ভিন্নতা রয়েছে সেই বিষয়টি প্রমাণের জন্য আমার এক তত্ত্বগত যুদ্ধ।

এই ধরনের অনুভূতিগুলো শাহিন পাঠান খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করেছে। “হিজাব নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা”: খুলে ফেলা …মাথায় রেখে দেওয়া”- এই শিরোনামে লেখা এক পোস্টে ভদ্রমহিলা ব্যাখ্যা করছেন কি ভাবে খুলে ফেলার এক মাসের মধ্যে তিনি আবার হিজাব পড়া শুরু করেন। শাহিন এরপর হিজাব পড়া এবং বিনয়ের যে আরো ব্যাপক ধারণার মাঝে যে তিনি বিচ্ছিন্নতা দেখতা পান সে বিষয়ে আলোচনা করেন:

এমনকি হিজাব পড়ার আগে তা নিয়ে দু'বার ভাবুন, যদিও তা বিনয়ী পোশাক পরার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক বিষয় এবং নবী হজরত মোহাম্মদ (সঃ)-এর সুন্নত। আপনি কি সঠিক ভাবে হিজাবের প্রতিনিধিত্ব করছেন? আপনি কি এর মাধ্যমে আপনার জীবন আদর্শে পরিবর্তন আনছেন এবং সঠিক কারণে তা পরছেন।

যদি আপনি এক বিনয়ী নারীর মত আচরণ না করেন, তাহলে হিজাব পড়ার কোন মানে নেই। আমি হয়ত এই ধর্মের সকল মানুষদের প্রতিনিধি নই, কিন্তু আমি যা জনি তা হল যে আমি বিনয়ী হয়ে রাস্তায় গর্বের সাথে চলতে পারি, হিজাবের মূল্যকে বিনষ্ট না করে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .