থাইল্যান্ডের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী?

৩ জুলাই ২০১১-এ, অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া থাইল্যান্ডের সাধারণ নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী অভিশিত ভিজাজিভা এবং ফিউ থাই পার্টির ইংলাক সিনাওয়াত্রা দেশটির সর্বোচ্চ পদটির জন্য লড়বেন।

ইংলাক হচ্ছে থাইল্যান্ডের নির্বাসিত প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার বোন। গত কয়েক সপ্তাহে সে এক জনপ্রিয় এবং গুরুত্বপুর্ণ প্রার্থী হিসেবে নিজেকে মেলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। হয়তোবা এমন ঘটনা ঘটতে পারে, তাতে ইংলাক হতে পারে আগামীতে থাইল্যান্ডের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী।

ইংলাক-এর প্রার্থিতার ব্যাপারে নিয়ে অনলাইনে প্রতিক্রিয়া কি ধরনের? এন্ড্রু ওয়াকার, যে নিউ মান্দালায়-এ লিখে থাকে, সে ইংলাক-এর শক্তিমত্তাকে চিহ্নিত করছে:

থাকসিনের জন্য ইংলাক হচ্ছে সামাকের চেয়ে ভাল বিকল্প, যে আসলে তার হয়ে কাজ করবে। অন্য কোন কিছু না বলে, শুধু এ কথা বলা যায় যে, সে হচ্ছে আরো বেশি সাজিয়ে উপস্থাপনের যোগ্য…।

থাইল্যান্ডে যে প্রজন্ম গত যে পরিবর্তন ঘটছে, ইংলাক তার ক্ষেত্রে থাকসিনের এক উপযুক্ত প্রতীক হিসেবে আবেদন রাখতে পারবে; তার নারীত্ব, থাকসিনের যে ক্ষমতার প্রকাশভঙ্গিকে চ্যালেঞ্জ করার অভ্যাস, তার নীচে চাপা থাকবে। ইংলাক বাণিজ্যিক এক পরিবেশ থেকে উঠে এসেছে, যা থাকসিনের সিইও স্টাইলের বাস্তবতার প্রতিধ্বনি ঘটায়। ইংলাক অর্থনৈতিক সাফল্য সেই উৎসাহকে উদ্দীপ্ত করে, যা থাকসিন শুরু করে গেছে; আর রাজনীতিতে ইংলাকের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি সবচেয়ে সম্ভাবনাময়, সেটি হচ্ছে তার নামের সাথে সিনাওয়াত্রা যুক্ত রয়েছে।

রাজনৈতিক পরিভাষায়, ইংলাক হচ্ছে থাই রাজনীতিতে আরেক পোষাকে থাকসিনের হাজির হওয়া।

দি লস্ট বয়, এই অঞ্চলের অন্যান্য নারী নেত্রীদের সাথে ইংলাককে যুক্ত করেছে:

এই অঞ্চলের যে সব নারী নেত্রী রয়েছে সাধারণত তাদের যে ধরন, তার সাথে ইংলাকের সবকিছু মিলে যায়। সে এক অভিজাত পরিবার থেকে এসেছে, তার মধ্যে এক শক্তিশালী নারীত্বের গুণাবলী বিদ্যমান, সে শিক্ষিত, সে পরিবর্তনের সম্ভব্য এক এজেন্ট, পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণে লোকজন তার কথা শুনবে তার এবং সে এক শান্ত স্বভাবের নেত্রী হবে।

কিন্তু সাকসিত সাইয়াসোমাবাট নিশ্চিত নয় এই কারণে যে, সেসব ভোটাররা এখনো কাকে ভোট দেবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়নি, কেবল তাদের ভোটে সে জিততে পারবে কি না:

যে সমস্ত ব্যক্তি থাকাসিনকে পছন্দ করে না, তারা ফি থাই নামক দলটিকে ভোট দেবে না এবং যারা এখনো বড় বেশী থাকসিনের কথা ভাবে সেই সব ভোটাররা তার বোনকে ভোট দেবে- এই ঘটনার ক্ষেত্রে কোন ধরনের পরিবর্তন ঘটবে না। তবে এখন যে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ তা হচ্ছে যে সমস্ত ভোটার এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি, তদের ভোটে কি ইংলাক জিততে পারবে। এর জন্য আমাদের প্রচারণার শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, যে ইংলাক কি তার নিজের স্বপক্ষে দাড়াতে পারবে কিনা। সে যে কেবল থাকসিনের বোন নয়, এক রাজনীতিবিদ, তা প্রমাণ করার জন্য তার হাতে যথেষ্ট সময় আছে।

এখন যে বিতর্ক চলছে সেটি হচ্ছে ইংলাক কি তার বিখ্যাত ভাইয়ের দুর্বল এক ক্লোন (হুবহু একই রকম সৃষ্টি করা মানুষ) হবে। হ্যরিসন জর্জ, প্রাচিতাই-এ লিখে থাকেন, তিনি এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন:

নিঃসন্দেহে থাকসিন তার বোন ইংলাককে রোবটের মত ব্যবহার করার পরিকল্পনা করেছে। যার মাধ্যমে সে দূর থেকে তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে এবং এর মাধ্যমে সে নির্বাচিত না হয়েও প্রধানমন্ত্রীর মতই কাজ চালিয়ে যেতে পারবে।

কিন্তু ভাবা দরকার যে, বোনের মাধ্যমে থাকসিনের থাই রাজনীতিতে প্রবেশের চেষ্টা যে কিনা তার “ক্লোন”, এই বিষয়টি হয়ত অনেককে ভুল বোঝাতে পারে:

এখন এর মানে হয়ত এটা ছাড়া আর কিছুই না যে, বংশ ধারার বিষয়ে থাকসিনের উপলব্ধি ততটাই দুর্বল যেমনটা ইংরেজী ব্যাকরণের ক্ষেত্রে তার ধারনা। কিন্তু এই বিষয়টি এই ধারণা প্রদান করার সুযোগ করে দিতে পারে যে, ইংলাক কেবল রিমোট কন্ট্রোলে পরিচালিত কোন পুতুল নয়, কিন্তু তার বদলে সে রাজনীতির এক শিক্ষার্থী যে, প্রায় থাকসিনের আদর্শে চলা প্রশাসনকে চালাতে শিখবে।

ঘটনা যাই হোক, ক্লোন নামক বিষয়টি রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে:

রাজনৈতিক ধারাভাষ্যকারদের এই বিষয়ে এক মাঠকর্ম করার বিষয় রয়েছে, তারা রাজনৈতিক শ্রেণীর মধ্যে সম্ভব্য কে কে ক্লোন হতে পারে তার ধারনা দিচ্ছে। এক্ষেত্রে তারা উল্লেখ করছে যে আসল মডেলের সাথে যে কোন ধরনের পার্থক্য দূর জন্য ক্লোন প্লাস্টিক সার্জারি করতে পারে।

নির্বাচনী প্রচারণা দিক থেকে ইংলাক কেমন করছে? এখানে এক টুইটার প্রতিক্রিয়া:

@জিলিপ: আরটি@টরিফ্রাডঃ উত্তম, ইংলাক খুব ভালো বক্তা নন, কিন্তু আমি ধারণা করি তার তা হবার প্রয়োজন নেই। তার কর্মশক্তি রয়েছে, সে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারে- আর তার নামের কথা নাই বা উল্লেখ করলাম।

আনেক সাও লাও মনে সন্দেহ পোষণ করেন বিরোধী দল ফিউ থাই-এর বিজয় মানবতার বিজয় হবে কিনা:

তিনি প্রশ্ন করেছেন যদি রেড শার্ট এবং তাদের প্রতি সহানুভুতিশীল ব্যক্তিরা কি আসলেই মনে করে একটি রাজনৈতিক দল হিসেব ফিউ থাই (পিটি) দল মানবাধিকার এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমি তার সাথে পুরোপুরি একমত এবং একই সাথে বিস্মিত হব যদি রেড শার্টরা সদস্যরা বোকার মত মনে করে বসে যে দলটি হচ্ছে সকল সমস্যার সমাধান।

এটা বেশ আশঙ্কা জনক যে কিছু রেড শার্ট অনুসারী বিশ্বাস করে যে যদি পিটি নির্বাচনে জয়লাভ করে তাহলে, দলটি “আমাত” (অভিজাত) এবং “ প্রতিষ্ঠানের” বিরুদ্ধে একেবারে সর্ব শক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে।

আমি সন্দেহ করি যে এমনটা ঘটতে পারে। না ইংলাক, না থাকসিন বাম পন্থী কোন রাজনৈতিক কর্মী। তারা উভয়ে ব্যবসায়ী।

উদ্ধৃতিতে যে রেডশার্টদের কথা বলা হল তারা সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারী যারা ব্যাংককে গতবছর সরকারের সাথে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। অনেকেই তাদের থাকসিনের একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন।

অন্য অনেক দেশের মত আজকের থাই রাজনীতিবিদেরা বৃহত্তর শ্রোতাদের কাছে পৌঁছার জন্য সক্রিয়ভাবে সামাজিক প্রচার মাধ্যম ব্যবহার করে থাকে। তারা তাদের প্রচারণার কৌশল জন্য সম্মিলিত ভাবে ফেসবুক, টুইটার, এবং পিক ব্যাজ ব্যবহার করে থাকে। টুইটারে থাই নির্বাচন সম্বন্ধে তাজা সংবাদ জানার জন্য #থাইলেকশন এবং #টিএইচইলেকশন নামক হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে।

ইংলাক এবং অভিশিত উভয়েরটুইটার একাউন্ট রয়েছে। টুইট ইয়োরসেলফ থাই উভয় দলের প্রার্থীদের টুইটের মধ্যে তুলনা করে দেখেছে। জন রাসেল তার দুটি পোস্টে আলোচনা করেছেন যে কি ভাবে ইংলাক এবং অভিশিত কি ভাবে তাদের নির্বাচনী প্রচারণার জন্য ইন্টারনেটকে ব্যবহার করছে

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .