তাইওয়ান: অর্কিড দ্বীপে পারমাণবিক বর্জ

পারমাণবিক জ্বালানী রিয়েক্টরের ব্যবহারের পরে যে অব্যবহার্য বস্তুতে পরিণত হয় তাকে পারমাণবিক বর্জ বলে। এটি বিপজ্জনকভাবে তেজষ্ক্রিয় আর হাজার বছর ধরে এমনি থেকে যায়।

১৯৭০ সালে তাইওয়ানের প্রথম পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র নির্মানের চার বছর পরে, তাইওয়ান অ্যাটমিক এনার্জি কাউন্সিল তাদের পারমাণবিক বর্জ অর্কিড দ্বীপে (লানিউ) ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়, যেখানে বংশ পরম্পরায় আদিবাসী তাও (ইয়ামি) রা বাস করছে। বিশ বছরের বেশী সময় অতিবাহিত হয়েছে, তেজষ্ক্রিয় বর্জের পাত্র জং ধরে ক্ষয়ে গেছে আর মনে হচ্ছে এই সমস্যার কেউ সমাধান করতে চায় না।

আকাশ থেকে তাইওয়ানের অর্কিড দ্বীপের চিত্র, ছবি ফ্লিকার ব্যবহারকারী ব্যাম্বিক্রোর সৌজন্যে (সিসি বাই-এনসি ২.০)

আকাশ থেকে তাইওয়ানের অর্কিড দ্বীপের চিত্র, ছবি ফ্লিকার ব্যবহারকারী ব্যাম্বিক্রোর সৌজন্যে (সিসি বাই-এনসি ২.০)

অর্কিড দ্বীপে পারমানবিক বর্জ রাখার দুটো এলাকা আছে। প্রত্যেক সপ্তাহে তাইওয়ান থেকে নৌকা করে তেজষ্ক্রিয় পদার্থ অর্কিড দ্বীপে আসে আর বছরে ৪৫,০০০ ব্যারেল বর্জ এই সুন্দর দ্বীপে ফেলা হয়।

তাওদের ভাগ্য চিরতরে বদলিয়ে দিয়েছে এই পারমানবিক বর্জ ফেলার এলাকা। পাবলিক টেলিভিশন ওয়েবসাইটে প্রচারণার পাতায়, তাওরা দাবি করেছে যে সরকার যেন তাদের সন্তানদের শান্তিপূর্ণ শৈশব ফিরিয়ে দেয়:

民國六十九年核廢料從台灣漂洋過海到蘭嶼,從此以後,伴隨著蘭嶼小朋友長大的,除了飛魚、迷你豬,還有核廢料桶。

১৯৮০ সালে অর্কিড দ্বীপে তাইওয়ান থেকে পারমাণবিক বর্জ পাঠানোর সময় থেকে, অর্কিড দ্বীপের বাচ্চারা বড় হচ্ছে উড়ন্ত মাছ, ছোট শূকর আর ব্যারেল ভরা পারমাণবিক বর্জের সাথে।

বিস্তারিত এক রিপোর্ট অনুসারে তাও এর মানুষ পারমাণবিক বর্জ ফেলার এলাকার নির্মাণ সম্বন্ধে জানত না:

當年貯存場地施工的時候,鄉民根本不知道是在建核廢料貯存場。當時的鄉長江瓦斯甚至不懂中文!少數鄉民聽施工的人說是正在蓋「罐頭工廠」,今天運送廢料的專用碼頭被說成某種軍事用途的港口……。

এটা যখন নির্মিত হচ্ছিল [১৯৭৯ সালে] আমরা কেউ জানতাম না যে এটা পারমাণবিক বর্জ রাখার জন্য নির্মিত হচ্ছে। সেই সময়ে আমাদের গ্রামের প্রধান চীনা ভাষা বুঝত না। নির্মান কর্মীরা কিছু গ্রামবাসীকে বলেছিল যে তারা ‘টিনজাত খাদ্যের কারখানা’ নির্মাণ করছে আর পারমাণবিক বর্জ ফেলার স্থানকে সেনা সৈকত বলা হয়েছিল…

তাওরা যখন অবশেষে পারমাণবিক বর্জের ভয়াবহতা সম্পর্কে ১৯৮৭ সালে জানতে পারে, তারা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করে আর এই যুদ্ধ ২০ বছরের বেশী সময় ধরে চলছে। ১৯৯৫ সালে তারা ‘পারমাণবিক ভুতকে বের করে দেবার’ কথা ঘোষণা করে:

雅美族,全球只有三千人,一個吟詩的民族,一個和平的民族,我們不願意再以我們族人的血肉之軀去作為台電核能人體實驗的對象。

তাওরা বিশ্বে মাত্র ৩০০০ জনের বেঁচে থাকা একটা আদিবাসী দল। আমরা কবি। আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি। আমরা আর কিছুতেই এটা মানতে পারি না যে তাইওয়ানের পাওয়ার কোম্পানি আমাদের দেহকে গিনিপিগের মতো ব্যবহার করবে।

নীচে ‘দ্যা বর্ডারল্যান্ড’ নামে একটি প্রামাণ্য চিত্রের অংশ বিশেষ। এখানে অর্কিড দ্বীপে তাওদের জীবন আর সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়েছে আর এই ভিডিও ক্লিপের ১.২০ থেকে ২.৫৮ মিনিট দৈর্ঘ পর্যন্ত কিছু মূল্যবান ঐতিহাসিক ছবি রয়েছে যা ১৯৮৭ সাল থেকে তাওদের পারমাণবিক বর্জ রাখার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ছবি দেখায়:

২০০২ সালের ৩১শে ডিসেম্বর তাওরা সক্ষম হয় তাইওয়ান পাওয়ার কোম্পানির সাথে চুক্তি বাতিল করতে। তবে তাইওয়ান সরকারের কোন ইচ্ছা নেই দ্বীপ থেকে পারমাণবিক বর্জ সরানোর। তাওদের জন্য এর পরের পর্যায়ের যুদ্ধ হচ্ছে সরকারের উপরে চাপ প্রয়োগ করা যাতে বর্জের এই সমস্যার সমাধান করা হয়।

নীচে অর্কিড দ্বীপের পারমানবিক বর্জ সমস্যা নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন। রিপোর্টার পরিবেশবিদ, সরকার আর বিক্ষোভকারীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে, কিন্তু কেউ এই সমস্যার যথাযথ সমাধান দিতে পারেনি:

২০০৮ সালে প্রথম ব্যারেল পারমাণবিক বর্জ অর্কিড দ্বীপে রাখার ২৬ বছর পরে, সরকার অবশেষে উদ্যোগ নেয় এই সকল পারমাণবিক বর্জ ব্যারেলের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা তদন্ত করে দেখার। স্থানীয় একটা সংবাদ রিপোর্ট যেটা অর্কিড দ্বীপ ই- সংবাদ ওয়েবসাইটে আবার পুন:মুদ্রণ করা হয়, সেখানে বলা হয় ফলাফল দুশ্চিন্তার ছিল। তাইওয়ান অ্যাটমিক এনার্জি কাউন্সিলের ইন্সপেক্টররা জানতে পারেন যে:

首座開蓋檢整的壕溝貯放的四千多桶核廢料全部鏽蝕,部分廢料桶甚至已開膛剖肚。

প্রথম তদন্তের সময় বিবেচনা করা ৪০০০ এর বেশী ব্যারেল সব জং ধরে নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু ব্যারেল এই পরিমাণ নষ্ট হয়ে গেছে যে লোহার পাতের গায়ে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে।

核廢料桶禁不起蘭嶼高溫潮濕和高鹽分的惡劣環境,八十一年起陸續出現鏽蝕。

১৯৯২ সাল থেকে, এইসব পারমাণবিক বর্জের ব্যারেল উচ্চ তাপমাত্রা, জলীয় বাষ্পের উচ্চমাত্রা আর অর্কিড দ্বীপের লবনাক্ত পরিবেশের কারনে ধ্বংস হচ্ছে।

পারমাণবিক বর্জের কে দেখভাল করবে? পারমানবিক বর্জের জন্য কে দায়ী থাকবে? পারমাণবিক বর্জ কোথায় যাবে? ব্লগার আনপো দেখিয়েছে যে পারমাণবিক বর্জের সমস্যা তাইওয়ানের শক্তির নীতিতে অবহেলা করা যাবে না, আর এর সাথে থাকবে পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্রের নিরাপত্তার বিষয়:

當年,國家發展重工業,需要大量電力,今日國家依然要大力發展,生產更多需要被消化被解決的問題,發展之後留下的都是「債」。債,誰要還?誰來還?要不,根據用電統計,用電量最多的地區,作為核廢料掩埋場,好不?支持興建核電的,一人抱一桶回家,好不?

অতীতে, আমাদের দেশে শক্তির অনেক দরকার ছিল বৃহত কারখানা তৈরির জন্য। আজকেও আমাদের দেশ উন্নয়নের এই পথ অনুসরন করতে চায় যা থেকে অরো বেশী সমস্যা হবে যা ভবিষ্যৎে সমাধান করতে হবে। উন্নয়নের পরে সবসময়ে ‘দেনা’ থেকে যায়। কে দেনা আদায় করবে? আমরা কি শক্তির ব্যবহারের মাত্রার উপরে তা নির্ধারণ করবো আর প্রস্তাব করবো যে যে স্থানের মানুষ সব থেকে বেশী বিদ্যুত খরচ করে সেখানে নতুন পারমাণবিক বর্জ রাখার স্থান করা হয়? আর জিজ্ঞাসা করা যে যারা পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্রকে সমর্থন করে তারা যেন বাসায় একটা করে ব্যারেল নিয়ে যায়?

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .