ইরাক: কে হতে যাচ্ছেন পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী

যদিও ইরাকী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ৭ মার্চ তারিখে, তবে নির্বাচনের ফলাফল অনুসারে দুটি প্রধান জোট প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণার বিষয়ে এখনো একমত হতে পারে নি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নুরী আল মালিকি দাবি করেন যে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত ফলাফল তৈরি করেছে এবং তারা নিশ্চিত করেছে যে আল মালিকির দাবি সত্যি নয়।

““ইরাকের সংসদ নির্বাচনের দুই মাস পার হয়ে যাবার পরও নির্বাচন কমিশন বলছে যে তারা পুনরায় কিছু আংশিক ভোট গণনা শেষ করেছে এবং এতে তারা কোন কারচুপির প্রমাণ পায়নি”, তথ্য ইরাকী মোজোর

ইরাকী পণ্ডিত সরকারি চূড়ান্ত ফলাফল সম্বন্ধে লিখেছে, যার মধ্যে দিয়ে আওয়াদ আলাউয়ির ইরাকিয়ার জয় নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়াও তিনি নির্দেশ করেন যে কি ভাবে এ রকম একটা গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ অন্য ঘটনার আড়ালে ঢাকা পড়ে যায়, যেমন “ গ্রীন জোন নামক এলাকার নিরাপত্তা যাচাই করার (গ্রীন জোন চেক পয়েন্ট) নিয়ন্ত্রণ কার হাতে যাচ্ছে” এবং “ইজরায়েলীরা গাজায় ত্রাণ পৌঁছানোর চেষ্টা করা জাহাজের উপর হামলা চালিয়েছে” :

ইরাকের সর্বোচ্চ আদালত ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফলকে অনুমোদন প্রদান করেছে। এবং তারা সরকারিভাবে আওয়াদ আলাউয়ির দল ইরাকিয়ার জয় ঘোষণা করেছে। এই ঘোষণা প্রায় সকলের নজর এড়িয়ে যায়। এখানে যে বিষয়টির উপর মনোযোগ প্রদান করা হয়, তা হচ্ছে গ্রীন জোন এর চেক পয়েন্ট বা যাচাই এলাকা, এখন পর্যন্ত তা ইরাকের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এবং এখনো ইরাকিরা গাজার পথে যাওয়া ত্রাণ বহরের জাহাজের উপর ইজরায়েলীয় হামলার বিষয়ে আলোচনা করছে।

ইরাকী পণ্ডিত অন্য এক পোস্টে একই রকম বিস্মিত, এরকম এক ঘোষণার মানে কি এই যে, ইরাকের প্রধান জোট সমূহ একটি একক প্রার্থীর ব্যাপারে একমত হতে যাচ্ছে, অথবা তারা আরো ক্রমাগত দুই মাস যাবত এই নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাবে।

রাজনীতিবীদরা বলছে, কয়েকদিনের মধ্যে তারা প্রার্থী নির্বাচনের কাজ শেষ করে ফেলবে। এর আগেও আমরা এই রকম কথা শুনেছি। কিন্তু আমরা আশা করি, এবার তারা তা কার্যে পরিণত করবে। নুরি আল মালিকি বলেছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর আসন থেকে পদত্যাগ করবেন না। এ সময় তাকে বেশ বেদনার্ত দেখাচ্ছিল, কারণ কারণ উচ্চ আদালত ঘোষণা দিয়েছে, ৭ মার্চের নির্বাচন বৈধ এবং তারা আওয়াদ আলাউয়ির দলকে সংসদে সর্বোচ্চ আসনের অধিকারী বলে ঘোষণা দিয়েছে।

এছাড়াও তিনি বিস্মিত সম্ভাব্য জোট এবং চুক্তির বিষয়ে, যা হয়ত ইরাকের ভিন্ন ভিন্ন দলগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য তৈরি করবে:

মালিকি বলেছেন, তিনি আইএনএ-এর সাথে একটি জোট বাঁধতে যাচ্ছে, কিন্তু তিনি এবং তার শিয়া জোট এখনো প্রধানমন্ত্রী মনোনয়নের ক্ষেত্রে একটি চুক্তিতে উপনীত হতে পারেনি। এবং এর কারণ, মালিকি ঘোষণা দিয়েছেন তিনি একমাত্র প্রার্থী। আলাউয়ি নিজে কুর্দি, সিসতানি ও এমনকি সদর বাহিনীর সাথে বিভিন্ন সময় বা সাক্ষাৎ করছেন। আলাউয়ির দলের এক সদস্য হায়দার এল মুল্লাহ আজ বলেছেন, তারা আবদেল অবদুল মাহদিকে হয়ত প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য মনোনয়ন প্রদান করতে পারে। যদি এই কাহিনী সত্য হয়, তা হলে এর মানে হচ্ছে মালিকির পায়ের নীচ থেকে আলাউয়ি মাটি সরিয়ে ফেলছেন। অবশ্যই এটাই ইরাক, এবং এখানে যে কোন কিছু ঘটতে পারে।

ইরাক এন্ড গাল্ফ এনলাইসিস ব্লগ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কি ঘটে তা দেখার এবং তারা ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে, যদি দুটি প্রধান জোট একক ভাবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাউকে নিয়োগ দিতে ব্যর্থ হয় তা হলে কি ঘটবে। তারা এই অচলাবস্থার বিষয়ে সদর দলের রাজনীতিবীদ বাহা আল-আরাজির এক বিবৃতি দিয়ে শুরু করেছে:

বিশেষত সদর দলের রাজনীতিবীদ বাহা আল আরজি বিশেষ এক কৌতুহলজনক বিবৃতি প্রদান করেছেন। সম্প্রতি তিনি প্রচার মাধ্যমকে বলেছেন যে এই বিষয়ে ইরাকের প্রধান দুটি শিয়া জোট ইরাকী ন্যাশনাল এলায়েন্স (আইএনএ) ও স্টেটস অফ ল (এসএলএ) এককভাবে কোন প্রার্থী দিতে ব্যর্থ হয়েছে। হয়ত সংসদে বেশ কয়েকজন প্রার্থীর মধ্যে থেকে গোপন ভোটের ভিত্তিতে একজনকে বেছে নেওয়া হবে!
বাস্তবতা হচ্ছে এটি আরাজারি দিক থেকে পাওয়া এক পরিষ্কার কল্পকাহিনী। অথবা তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের যে পদ্ধতি তার সাথে একে মিশিয়ে ফেলছেন। তিনি যা বলছেন এটা অনেকটা তার নিজস্ব মত (এর মধ্যে ব্যতিক্রম দিক হচ্ছে এতে গোপন কোন বিষয় নেই)। যদি আইএনএ এবং এসএলএ-এর কোন একক প্রার্থী না থাকে, তা হলে এই সংজ্ঞার মধ্যে দিয়ে পরিষ্কার হচ্ছে যে তারা “সবচেয়ে বড় জোটের জন্য একজন প্রার্থী” সরবরাহ করতে ব্যর্থ হচ্ছে, যারা শাসনতন্ত্রের অধীনে (একক ভাবে!) থাকার আহ্বান জানাচ্ছে এবং যে কেউ যতভাবে “সবচেয়ে বড় জোটের” ধারণা দিক না কেন, ইরাকিয়াকে সরকার গঠনের জন্য অভিযুক্ত করা উচিত, কারণ তাদের একজন প্রার্থী ছিল।

এরপর ব্লগ একধাপ এগিয়ে এসে এসএলএর ইজ্জত শাবানদারে আরেক পরামর্শের দিকে মনোযোগ প্রদান করেছে:

এছাড়াও এসএলএর ইজ্জত শাবানদার (যিনি ইরাকিয়া নামক দল ছেড়ে যাওয়া ব্যক্তি) পরামর্শ দিয়েছেন, যদি আইএনএ এবং এসএলএ একক কোন প্রার্থীর বিষয়ে একমত না হয়, তা হলে কে অন্য জোট প্রধানমন্ত্রীর পদে কাকে প্রার্থী করা যায়, সেই বিষয়ে যুক্ত হবার সুযোগ পাবে। যেমন ধরা যাক সর্বোচ্চ কেন্দ্রীয় বিচারালয় এই বিষয়ে যে আদেশ প্রদান করেছে সে বিষয়টির সাথে “সমঝোতায়” আসা!(বাস্তব ঘটনা হচ্ছে, এই বিষয়ে এই আদেশ এ ধরনের কোন কিছুই বলেনি)। আবার, এটা শাসনতন্ত্রে লঙ্ঘন করে, যা পরিষ্কারভাবে এমন একটি প্রক্রিয়াকে নির্দিষ্ট করে, যা রাষ্ট্রপতি এবং একটি বিশেষ প্রার্থী মধ্যে বিষয়টির সমাধান করবে, যে প্রার্থীকে সামনে তুলে ধরবে সবচেয়ে বড় জোট।

এদিকে ইরাক এন্ড গাল্ফ এনালাইসিস ক্রমাগত ভিন্ন ভিন্ন সম্ভাবনার বিষয় নিয়ে বিশ্লেষণ করে যাচ্ছে, ইনসাইড ইরাক-এর সাংবাদিকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তারা রাস্তায় নামবে এবং নির্বাচন বিষয়ে জনতার মতামত কি, তা গ্রহণ করবে:

গত মার্চে ইরাকের সংসদ নির্বাচন শেষ হয়েছে। ইরাকিরা নতুন সরকার গঠনের ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করে রয়েছে।
তিন মাসের অপেক্ষার পর, আমি ইরাকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই বিষযের উপর আমার দেশের লোকের মতামত জনার চেষ্টা করলাম। আমি আটটি প্রদেশের ২০ জন লোকের সাথে কথা বললাম। তারা সকলেই একই কথা বললো। আমি কেবল চারজন লোকের মতামতকে বেছে নিয়েছি। নিরাপত্তার কারণে যে সমস্ত লোকের উদ্ধৃতি আমি এখানে প্রদান করছি তাদের কেবল নামের প্রথম অংশ উল্লেখ করেছি।

বাস্তবতা হচ্ছে, আমি বিশ্বাস করি সেই চারজন ব্যক্তির করা উদ্ধৃতির মধ্যে হুসেন, যে কিনা এক বসরা প্রদেশের এক ট্যাক্সি ড্রাইভার হিসেবে কাজ করে, সেই ইরাকী জনতার বেশির ভাগের মন্তব্যের সারাংশ তার বক্তব্যে তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছে:

““ইরাক আর কখনোই উন্নত হবে না, এবং আমাদের জীবন আর ভালো হবে না, কারণ আমাদের রাজনীতিবিদেরা কেবল যে সমস্ত বিষয়ে তাদের আগ্রহ তার উপর মনোযোগ প্রদান করে। ইরাকে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ নির্বাচনে অংশ নিয়ে আমরা সবচেয়ে বড় ভুল করেছি। আমাদের রাজনীতিবিদেরা, এমনকি আগামী দুই মাসের মধ্যে সরকার গঠন করতে পারবে না, কারণ তারা এখনো প্রত্যেকটি দল ক্ষমতায় কত অংশ লাভ করবে সেই নিয়ে আলোচনা করছে, এটি তারা এমনভাবে আলোচনা করছে, যেন ইরাক তাদের সম্পত্তি। আমি নিশ্চিত যে ভবিষ্যৎ-এ যে সরকার ক্ষমতায় আসবে তারা ব্যর্থ হবে এবং তারা আমাদের সেই একই অজুহাত প্রদান করবে যা বিদায় নেওয়া সরকার প্রদান করেছিল।“ হুসাইন এই কথাগুলো উচ্চারণ করে।”.

সবশেষে বলা যায়, যখন রাজনীতিবিদেরা ১১ সপ্তাহ ধরে ক্ষমতার জন্য তাদের লড়াই জারি রেখেছে, তখন বিশ্বে বসবাসের জন্য সবচেয়ে খারাপ এলাকা হিসেবে বাগদাদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ইরাকী পণ্ডিত তার ব্লগে এক নতুন পোস্টে এই সংবাদের উপর মন্তব্য করেছে এই নামে, কোন সম্মান নেই, প্রচুর নিন্দা। সে লিখেছেন:

যখন ১১ সপ্তাহ ধরে রাজনীতিবিদেরা তাদের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, তখন বিশ্বে বসবাসের জন্য অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনাকে সবচেয়ে সেরা স্থান বলে ঘোষণা করা হয়েছে আর বসবাসের জন্য সবচেয়ে খারাপ স্থান হিসেবে এসেছে বাগদাদের নাম। স্থানীয় সংবাদপত্র এখানে উল্লেখ করেছে যে বিশ্বে বাগদাদ সবচেয়ে খারাপ স্থান হয়েছে নিরাপত্তার অভাবের কারণে নয়, বিদ্যুৎ ও পরিষ্কার খাবার পানির সরবরাহের অভাবের কারণে। রাজনীতিবিদদের মত মানুষদের আসলেই কোন লজ্জা নেই।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .