রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ সত্ত্বেও সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ান কার্টুনিস্টের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা

From the Facebook page of Zunar Kartunis

জুনার কার্তুনিসের ফেইসবুক পেইজ থেকে নেয়া ছবি।

বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রদ্রোহ অভিযোগে অভিযুক্ত একজন মালয়েশিয়ান কার্টুনিস্ট প্রতিজ্ঞা করেছেন যে সরকারের দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে তিনি তাঁর কলম চালিয়ে যাবেন।

জুলকিফলি এসএম আনোয়ার-উল-হক মালয়েশিয়াতে জুনার নামেই বেশি পরিচিত। তিনি একজন রাজনৈতিক কার্টুনিস্ট, যিনি ঔপনিবেশিক-যুগের একটি রাষ্ট্রদ্রোহ আইন লঙ্ঘনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে দুই বার গ্রেপ্তার হয়েছেন। জুনারকে এ মাসের শুরুতে গ্রেপ্তার করা হয়, যার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে আনা এই অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে তাকে সর্বোচ্চ ৪৩ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। তিনি বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।

জুনার ক্ষমতাসীন জোটের একজন কট্টর সমালোচক। এই জোট ১৯৫০ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছে। তাঁর এই সমালোচনামূলক কাজের কারণে তাঁর পাঁচটি কার্টুন সংকলন মালয়েশিয়াতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এমনকি যারা তাঁর এই বইগুলো ছাপানো, বন্টন এবং বিক্রয় করবে তাদেরকেও সরকারের হয়রানির মুখে পড়তে হবে।

মুষড়ে পড়ার পরিবর্তে জুনার এ ধরণের ভীতি প্রদর্শনের বিরুদ্ধে আরও সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। তিনি একবার বলেছেন, “শাসনতন্ত্র তাদের মুষ্টি যত বেশি শক্ত করবে, আমার কলমও তত বেশি ধারালো হবে”!

তিনি আরও বলেছেনঃ

মেধা স্রষ্টা প্রদত্ত কোন উপহার নয়, বরং এটি এক ধরণের দায়বদ্ধতা। তাই আরও উন্নত মালয়েশিয়া গড়ে তুলতে সামগ্রিক সংস্কারের জন্য সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করতে এবং শিল্পের মাধ্যমে জনগণের আওয়াজ তাদের কাছে পৌঁছে দিতে আমি এই মেধাকে একটি সহায়ক যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করব। আমি চুপ করে থাকব না। যেখানে আমার কলমেরও একটি প্রতিরোধ শক্তি আছে, সেখানে আমি কি করে নির্বিকার থাকতে পারি!

From the Facebook page of Zunar Kartunis

জুনার কার্তুনিসের ফেইসবুক পেইজ থেকে নেয়া ছবি।

তাঁর কৌশল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে জুনার ব্যাখ্যা করেছেন যে কোন ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো’ এবং পাঠকদের কাছে সঠিক বার্তাটি পৌঁছে দেয়া একজন শিল্পীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণঃ

সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যু, বিশেষকরে রাজনীতিকে কেন্দ্র করে আমি কার্টুন আঁকি। যখন কোন ইস্যু আমার সামনে আসে তখন বিভিন্ন সূত্র এবং প্রেক্ষিত থেকে ইস্যুটিকে বুঝতে চেষ্টা করাই হচ্ছে আমার প্রথম পদক্ষেপ। সকল তথ্য সংগ্রহের পর আমার দ্বিতীয় পদক্ষেপ হচ্ছে ইস্যুটি সম্পর্কে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ, কেননা এটি আমার কার্টুনের গতিবিধি নির্ধারণ করবে। কেবলমাত্র সঠিক প্রতিরোধই একটি সঠিক বার্তা পৌঁছে দিতে সক্ষম হবে। কেবলমাত্র মানুষকে হাসানোর জন্য আমি কোন ধরণের ভুল বার্তা পৌঁছে দিতে চাই না।

এ মাসে জুনারকে গ্রেপ্তারের পর এই কার্টুনটি ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হয়েছে। জুনার বলেছেন, তাকে শাস্তি প্রদান করা সত্ত্বেও তিনি কার্টুন এঁকে যাবেনঃ

জুনারের কার্টুনঃ দেহে শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত!

জুনারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়েরের মূল ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে কার্টুনটি। কারাদণ্ডে দণ্ডিত বিরোধীদলীয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে সমালোচকদের দাবিয়ে রাখতে আদালতকে ব্যবহার করার অভিযোগ এনেছেন। উল্লেখ্য সমকামীতার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে আনোয়ারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে।

জুনারের কার্টুনঃ প্রধানমন্ত্রী নাজিব বিচারক!

মানবাধিকার দল সুয়ারাম জুনারের পক্ষাবলম্বন করেছে এবং সরকারের সমালোচনা করার কারণে তাকে গ্রেপ্তার করায় সরকারের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেঃ

সরকারের সাথে ভিন্নমত প্রকাশ অথবা সরকারের সমালোচনা করার জন্য জনগণকে শাস্তি প্রদান করা এবং মামলা দায়ের করা গণতন্ত্র এবং সরকারের জবাবদিহিতার মৌলিক আচরণ রীতির পরিপন্থী। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ গনতন্ত্রের মৌলিক চাহিদা। আর এর মধ্যে সমালোচনা করার অধিকার এবং আজকের জন্য সরকার নির্বাচনের অধিকার অন্যতম।

টুইটারে পোস্ট করা জুনারের কয়েকটি কার্টুন নিচে দেয়া হল। সরকারের নতুন কর নীতির (জিএসটি) সমালোচনা করেছেন জুনার এবং এটাকে তিনি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের চলমান দুর্নীতি হিসেবে দেখছেন। তিনি দেখিয়েছেন জিএসটি কি করে সাধারন রাকিয়াতকে (জনগণ) পীড়া দিবেঃ

জুনারের কার্টুনঃ শতকরা ৬ শতাংশ, শতকরা ৬ শতাংশ!

জুনারের কার্টুনঃ রাকিয়াত শতকরা ৬ শতাংশ, সরকার ৭ ক্রম

নতুন রাষ্ট্রদ্রোহ আইন পাস সম্পর্কে জুনারের কার্টুন। সক্রিয়কর্মীরা মনে করেন, আইনটি অনলাইনে ভিন্নমত পোষণের ভিত্তিকে দূর্বল করে দিবেঃ

জুনারের কার্টুনঃ মালয়েশিয়া রাষ্ট্রদ্রোহ আইন

জুনার নতুন পাস করা সন্ত্রাস-বিরোধী আইনের চিত্র অংকন করেছেন (পিওটিএ)। আইনটি এ মাসে দমনমূলক পদক্ষেপের একটি অংশ হিসেবে সংসদে পাস করা হয়েছেঃ

জুনারের কার্টুনঃ পিওসিএ অমানবিক!

ওয়াশিংটন ভিত্তিক আন্তর্জাতিক কার্টুনিস্ট অধিকার নেটওয়ার্ক ২০১১ সালে জুনারকে ‘সম্পাদকীয় কার্টুন অঙ্কনের জন্য সাহসিকতা পুরস্কারে’ ভূষিত করেছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .