কাতিফ-এর শিয়া মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে আইসিস যে ঘটনায় ২১ জন উপাসক মারা গিয়েছে

Some of those killed in the ISIS suicide bombing in a mosque in Qatif, Saudi Arabia. The photograph has gone viral on social media

সৌদী আরবের কাতিফ-এর একটি মসজিদে আত্মঘাতী বোমায় মৃত্যুবরণ করা কয়েকজনের ছবি। এই ছবিটি সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে।

আজকে (২২ শে মে ২০১৫) শুক্রবারের নামাজের পর সৌদী আরবের পশ্চিম প্রদেশের কাতিফ-এর একটি শিয়া মসজিদের ভিতর একজন আত্মঘাতী বোমারু নিজেকে উড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় একটি শিশুসহ কমপক্ষে ২০ জন উপাসনাকারী মৃত্যুবরণ করে এবং ১০২ জন আহত হয়।

ইতোমধ্যে সিরিয়ার অর্ধেক এবং ইরাকে বিরাট একটি অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়া আল-কায়দার একটি প্রশাখা আইসিস সামাজিক মাধ্যমগুলোতে এই আক্রমণের দায়িত্ব শিকার করে নিয়েছে, যেটি এই শিয়া জনগোষ্ঠীর উপর দ্বিতীয় আক্রমণ।

বর্তমানে আর দেখা যাচ্ছে না এমন একটি টুইটসহ তেল-সমৃদ্ধ দেশে নাজ্দ প্রদেশে ও কাতিফে আক্রমণের মাধ্যমে আইসিস-এর কার্যক্রম শুরু করার বিষয়ে আইসিসের বিবৃতি অনেকেই বিনিময় করেছেন, যে আক্রমণগুলোর মাধ্যমে সুন্নি-শাসিত সৌদী আরব ও তাদের সকল উপসাগরীয় প্রতিবেশীদের দ্বারা মর্যাদাহানিকরভাবে রাওয়াফেদ নামে ডাকা শিয়াদেরকে হত্যা করা হয়।

নভেম্বরে আল আহসাতে ৮ জন ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়, যেটিও পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ ছিল, যেখানে বন্দুকধারীরা একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলাকালীন একটি শিয়া কমিউনিটি কেন্দ্র আক্রমণ করে।

আক্রমণটি ঘটে যখন শুক্রবারের নামাজের সময় একজন আত্মঘাতী বোমারু কাতিফের আল-কাদিহ্‌-এর ইমান আলী মসজিদে প্রবেশ করে নিজেকে উড়িয়ে দেয়।

সৌদি সাংবাদিক আহমেদ আল ওমরান টুইট করেছে:

আত্মঘাতী বোমারু তার জামার নীচে লুকিয়ে রাখা বিষ্ফোরক কোমরবন্ধনীটি ফাটিয়ে এই আক্রমণটি করে বলে সৌদী এমওআই বলেছে।

তিনি আরও বলেন:

গত নভেম্বরে দালওয়াহ্‌ আক্রমণের পর আজকে কাতিফের মসজিদে বোমা সৌদী আরবে শিয়াদের উপাসনালয়ে করা দ্বিতীয় আক্রমণ।

বাহরাইনীয় কর্মী আলা'আ শেহাবী একটি ভিডিও শেয়ার করেছে যেখানে রাগান্বিত সৌদী জনগণ সমবেতভাবে লাব্বাইক ইয়া হুসেইন বলে শিয়াদের একটি স্তব ধ্বনিত করছে, যার অনূদিত অর্থ হলো ‘ও হুসেইন আমরা তোমার সেবায় আছি':

গত নভেম্বরে দালওয়াহ্‌ আক্রমণের পর আজকে কাতিফের মসজিদে বোমা সৌদী আরবে শিয়াদের উপাসনালয়ে করা দ্বিতীয় আক্রমণ।

হুসেইন হলেন হযরত মোহাম্মদের নাতী যাকে শিয়া মুসলমানরা গভীর শ্রদ্ধা করে এবং এই দিনে ৬৮০ সালে তার মৃত্যুর পরিতাপ করে।

এই আক্রমণের উপর রাগান্বিত সৌদী জনগণের প্রতিবাদের আরও ভিডিও ও ছবি পোষ্ট হচ্ছে সৌদী আরব থেকে, যেখানে ভিন্নমত বা প্রতিবাদের ব্যাপারে কোন সহিষ্ণুতা দেখানো হয় না:

ইসমাইল আল মাদানি এই ছবিগুলো বিনিময় করেছে:

সৌদী আরবের আল-কাতিফবাসী আজ রাতে আল সৌদ-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে

এবং আতহার আলকাতিফ এই ভিডিওটি শেয়ার করেছে যার মধ্যে প্রতিবাদকারীদেরকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ধ্বনি তুলতে দেখা যাচ্ছে:

কাতিফে সন্ত্রাসবাদকে নিন্দাজ্ঞাপন করে প্রবল প্রতিবাদ ‘আমরা আল্লাহ্‌ ছাড়া আর কারও কাছে মাথা নত করবো না’ বলে মুহুর্মুহু ধ্বনি তুলেছে’

সৌদী বুদ্ধিজীবি ড: মাদাওয়ী আল রশীদ এই আক্রমণের জন্য গোষ্ঠীতন্ত্রকে দায়ী করে বলেছেন:

এই অঞ্চলকে ঝড়ের বেগে গ্রাস করা পুঞ্জিভূত গোষ্ঠীভিত্তিক উত্তেজনা যেখানে শুরু হয়েছিল সেখানেই শেষ হয়েছে এবং নির্দোষ কিছু প্রাণ কেরে নিয়েছে।

অন্যান্যরা ওহাবি ধর্মীয় পণ্ডিত ও লেখকদের দ্বারা ক্রমবর্ধমান গোষ্ঠীতান্ত্রিক অনুভূতিকে জাগিয়ে তোলার বিষয়ে মুখ ফিরিয়ে রেখে গোষ্ঠীতন্ত্রকে সমাজের মধ্যে গেড়ে বসতে সুযোগ দেয়ার জন্য সৌদী আরবের উপরই দোষ অর্পন করেছে।

আইয়াদ এল-বাঘদাদি ব্যাখা করেছেন:

সৌদী শাসকরা চরম গোষ্ঠীতান্ত্রিক সুন্নি ভাষণ দেবার সুযোগ দিচ্ছে, এবং যখন এধরনের ঘটনা ঘটে তখন তারা একেবারে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ার ভাব দেখায়। কী যাচ্ছেতাই অবস্থা?

তিনি সৌদী চ্যানেলগুলোতে সম্প্রচারিত বিশিষ্ট সৌদী পণ্ডিত কর্তৃক শিয়া মতাদর্শধারীদেরকে অবিশ্বাসী বলে আখ্যায়িত করা কয়েকটি ভিডিও শেয়ার করেছেন, সেই সাথে কয়েকটি টুইটও শেয়ার করেছেন যেগুলোতে শিয়াদেরকে নিশ্চিহ্ন করে দেবার আহ্বান রয়েছে। সৌদী আরবে ঘৃণাত্মক কথন সহ্য করার কয়েকটি উদাহরণ এখানে দেয়া হলো:

জ্যেষ্ঠ পণ্ডিতদের সৌদী পরিষদের সদস্য সালেহ আল ফউজান এখানে সকল শিয়াদেরকে (হ্যাঁ সকল) অবিশ্বাসী ঘোষণা করছে।

এখানে ‘সাংবাদিক’ খালেদ আল ঘামিদি একটি সৌদী সম্প্রচার কেন্দ্রে শিয়াদেরকে বলছে: ‘আমরা তোমাদের এলাকাতে আসবো এবং তোমাদেরকে জ্যান্ত খেয়ে ফেলবো'।

এপ্রিল থেকে এই টুইটটি ঘুরছে, অনুবাদ করলে: ‘ঈশ্বর সকল শিয়াদেরকে ধ্বংস করো! ইরানে ও কাতিফে ও মদিনায় ও নাজরানে'।

যদিও অনেকেই এই আক্রমণের নিন্দা জানিয়েছে, জাকি সাফ্‌র ব্যাখ্যা করে:

আমরা এক হাত দিয়ে সন্ত্রাসবাদের সাথে লড়াই করি, এবং আর এক হাত দিয়ে একে মদদ যোগাই

এই আক্রমণ ও শিয়াদেরকে হত্যার সমর্থন করে এতোজন সামাজিক মাধ্যমগুলোতে বক্তব্য রেখেছে তা দেখে এল বাঘদাদি হতভম্ব হয়েছেন। তিনি টুইট করেছেন:

আপনি যদি আরবী পড়তে পারেন, তবে আরবীতে লেখা এই হ্যাসট্যাগ খুঁজুন ও দেখুন যে কতোগুলো টুইটকারী এই আত্মঘাতী আক্রমণের সমর্থন করছে।

ইতোমধ্যে আব্দুল্লা আল শামারি একটি সমাধান বাতলেছেন:

শিয়া ও সুন্নি আমার বিবেচ্চ বিষষ নয়, একজন ঈশ্বর আছেন যিনি তাদের বিচার করবেন।
আমরা শান্তির মধ্যে বাঁচতে চাই এবং যারা শান্তির পথে বাধা সৃষ্টি করতে চায় তাদেরকে আমাদের চিহ্নিত করতে হবে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .