তাজিকিস্তান: আদিম প্রকৃতি আর ইতিহাসের অনুরণন

Irkht, Badakhshan. Photo by Bakhritdin Isamutdinov

আর্খট, বাদাখশান। ছবি তুলেছেন বখরুদ্দিন আইসামুটদিনভ।

পোস্টে ব্যবহৃত বেশিরভাগ ছবিই লেখকের, বাকিগুলো ফটোগ্রাফারদের অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

মধ্য এশিয়ার দেশ তাজিকিস্তানের ৯৩% শতাংশ অঞ্চলই পর্বতময়। সাথে আছে পাহাড়ি উচ্চতায় আলপাইন হ্রদ। আর এজন্যই দেশটি প্রকৃতিপ্রেমিকদের জন্য ভ্রমণস্বর্গ হয়ে উঠেছে। যদিও ভ্রমণ যাত্রায় এবড়োখেবড়ো রাস্তা আর আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

কেন না, আপনি যদি দেশটির রাজধানী দুশানবে আসার জন্য মাল্টি-কানেকশন বিমানের টিকিট কেটে থাকেন কিংবা ভ্রমণ ভিসার আবেদন করেন অথবা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ৬০ ডলার জমা দেন, তাহলে আপনি কোথায় যাবেন সেটা খুঁজে বের করতে একটু সময় লাগবে।

তবে মানচিত্রে তাজিকিস্তানকে খুঁজে পেয়ে যারা ভ্রমণ করতে আসেন, তাদের বেশিরভাগই আসেন পাহাড়ে চড়তে। আর এসে পর্বতাহোরণের যন্ত্রপাতি ও দক্ষ লোকের অভাব দেখতে পান। তাছাড়া তারা কোথাও যেতে যতোটা সময় লাগবে বলে মনে করেছিলেন, তার চেয়ে বেশি সময় লেগে যায়।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ট্রাভেলার তাদের মে ২০১৫ সংখ্যায় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর দেখার মতো ১০টি জায়গার তালিকা প্রকাশ করেছে। সেখানে পামির হাইওয়ে তিন নম্বরে আছে। অনেকেই এই হাইওয়েকে বিশ্বের অন্যতম রোমাঞ্চকর রাস্তা বলে মনে করেন।

জিপ গাড়িতে ধকল খেতে খেতে আপনি যখন দুশানবে থেকে পুর্বের মুরঘাবের দিকে যাবেন, তখন আমু-দরিয়া নদীর পাশে আফগানিস্তানের গ্রামগুলো দেখতে পাবেন। এঁকেবেঁকে বয়ে চলা এই নদী সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে দেশটিকে বিভক্ত করেছে। এই পথে যেতে যেতে নদীর অন্য পাড়ের দিকে তাকিয়ে মনে হবে, অন্য একটি বিশ্ব আপনাকে ডাকছে যেন!

আবার এই রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে আপনার চোখে পড়বে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সবচে’ উঁচু চূড়া পিক ইসমাইল সোমোনি। তাছাড়া পথিমধ্যে পড়বে জরস্ট্রটিয়ানদের মন্দির। চাইলে আপনি সেখানে গিয়ে প্রার্থনা করতে পারবেন। আবার পর্বতের গায়ে খোদাই করা লেখাও পড়তে পারবেন। তাছাড়া মুরঘাবে পৌঁছে আদিবাসী কিরঘিজদের চমরি গাইয়ের মাংস দিয়ে ভুড়িভোজন করতে পারবেন।

দুশানবে পর্যটনের মূল কেন্দ্র হলেও দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খুজান্দ ভ্রমণের জন্য চমৎকার একটি জায়গা। খুজান্দ ঘুরে আপনি দেশটির উত্তর-পশ্চিম দিকে অবস্থিত ফ্যান পর্বতও দেখতে যেতে পারেন।

Mountain climbing. Photo by Bakhriddin Isamutdinov

পর্বতারোহরণ। ছবি তুলেছেন বখরুদ্দিন আইসামুটদিনভ।

Afghan villages on other side of the river. Photo by Abdulfattoh Shafiev

নদীর ওপারে আফগানিস্তানের গ্রাম। ছবি তুলেছেন আবদুলফাত্তাহ শাফিয়েভ।

Road to Badakhshan. Photo by Abdulfattoh Shafiev

বাদাখশানের পথে। ছবি তুলেছেন আবদুলফাত্তাহ শাফিয়েভ।

Zarafshan valley. Photo by Abdulfattoh Shafiev

যারাফশান উপত্যকা। ছবি তুলেছেন আবদুলফাত্তাহ শাফিয়েভ।

Ziddeh village in Varzob. Photo by Bahrom Jalilov

ভারযবের জিদ্দেহ গ্রাম। ছবি তুলেছেন বাহরম জালিলভ।

যারাফশান উপত্যকার পথ ধরে এগোলেই আপনি দেখা পাবেন মধ্য এশিয়ার সবচে’ সুন্দর হ্রদগুলোর কয়েকটি। এদের একটি হলো ইসকান্দারকুল। এই হ্রদের সাথে মহাবীর আলেকজান্দ্রারের ইতিহাস জড়িয়ে আছে। এটি সমুদ্র সীমা থেকে ২,১৯৫ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। হ্রদের ডানকোনে তাকালে আপনি দেখতে পাবেন, হ্রদটি কীভাবে চারপাশের প্রকৃতির আয়না হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে ফেয়ারিতালিশের চূড়ার প্রতিচ্ছবি হ্রদের জলে পরিষ্কার দেখা যায়। তাছাড়া আপনি এখানেই দেখতে পাবেন শিং প্রিন্সেস হিসেবে খ্যাত সেভেন লেকস অব শিং-কেও।

Kharikul, Jirgatal. Photo by Bahriddin Isamutdinov

খারিকুল, জিরগাটাল। ছবি তুলেছেন বখরুদ্দিন আইসামুটদিনভ।

Haftkul lake in Zarafshan valley. Photographer: Nozim Qalandarov

যারাফশান উপত্যকার হাফটকুল হ্রদ। ছবি তুলেছেন নজিম কুয়ালানদারভ।

Iskandarkul lake in Zarafshan valley. Photographer: Nozim Qalandarov

যারাফশান উপত্যকার ইসকান্দার হ্রদ। ছবি তুলেছেন নজিম কুয়ালানদারভ।

তাজিকিস্তানের মানুষজন বিশ্বাস করে, উপকথার শহর বোখারা এবং সমরখন্দ সাংস্কৃতিকভাবে তাদের অংশ। কিন্তু বলশেভিকরা যখন মধ্য এশিয়ায় জাতিভিত্তিক পুনর্গঠন করে, তখন সিল্ক রোডের এই মনোরম স্থানগুলো উজবেকিস্তানকে দিয়ে দেয়া হয়।

তবে এশিয়ার ইতিহাসের এই গুরুত্বপূর্ণ দু’টি স্থান ছাড়াও তাজিকিস্তানের আরো কিছু ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে। এদের একটি হলো হিসর দুর্গ। এটি দুশানবে থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। খুব প্রাচীন স্থাপনা এটি। চলতি বছরেই এই দুর্গ প্রতিষ্ঠার ৩ হাজার বছর পূর্তি উদযাপন করা হয়েছে।

Hisor Fortress. Photographer: Nozim Qalandarov

হিসর দুর্গ। ছবি তুলেছেন নজিম কুয়ালানদারভ।

Reconstructed Hulbuk Palace, Khatlon. Photo by Abdulfattoh Shafiev

সংস্কারকৃত হালবুক প্রাসাদ, খাটলন। ছবি তুলেছেন আবদুলফাত্তাহ শাফিয়েভ।

Khujand city museum. Photo by Abdulfattoh Shafiev

খুজান্দ সিটি জাদুঘর। ছবি তুলেছেন আবদুলফাত্তাহ শাফিয়েভ।

পূর্বের ইতিহাসকে খুঁজে ফিরতে আপনি খুজান্দের শেখ মুসলিহিদ্দিন মসজিদ দেখতে যেতে পারেন। দেখতে যেতে পারেন ইস্তারাভশান শহর। এই শহরটি বিশ্ববিখ্যাত বীর আলেক্সান্দার দ্য গ্রেট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আগে শহরটি তার নামে আলেক্সান্দিয়া হিসেবে পরিচিত ছিল। দক্ষিণে গিয়ে দেখতে পারেন আজিনা-টেপে বৌদ্ধ মঠ। ১৯৬৬ সালে মাটি খননের ফলে এই মঠ আবিস্কৃত হয়। আর তখনই পাওয়া যায় মধ্য এশিয়ার সবচে’ বৃহত্তম বুদ্ধ মুর্তি। সেটার কোমর পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এটি এখন দুশানবের তাজিকিস্তানের পুরাতাত্ত্বিক জাতীয় জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য রাখা আছে।

Yamchun fortress, Wakhan Corridor. Photo by Bahriddin Isamutdinov

ওয়াখান করিডোরের ইয়ামচুন দুর্গ। ছবি তুলেছেন বখরুদ্দিন আইসামুটদিনভ।

Murghob. Photo by Abdulfattoh Shafiev

মুরঘাব। ছবি তুলেছেন আবদুলফাত্তাহ শাফিয়েভ।

Murghob. Photo by Bahriddin Isamutdinov

মুরঘাব। ছবি তুলেছেন বখরুদ্দিন আইসামুটদিনভ।

দুশানবেতে বুদ্ধের আধা-পুনরুদ্ধারকৃত মুর্তি ছাড়াও আরো অনেক কিছু্ই আছে। এদের মধ্যে পৃথিবীর দ্বিতীয় উচ্চতম পতাকাদণ্ড রয়েছে। রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম চায়ের দোকান। তবে আপনি যদি আগামী দুই-এক বছরের মধ্যে আবার তাজিকিস্তানে আসেন, তাহলে আপনি মধ্য এশিয়ার সবচে’ বড়ো মসজিদও দেখতে পাবেন।

ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের ট্রাভেল অ্যান্ড টুরিজম রাঙ্কিং-এ ১৪১টি দেশের মধ্যে তাজিকিস্তানের অবস্থান ১০৯তম। তাই দেরি না করে আজই তাজিকিস্তান ভ্রমণে আসুন।

Night vision of Dushanbe city. Photo by Bahrom Jalilov

দুশানবে শহরের রাতের দৃশ্য। ছবি তুলেছেন বাহরম জালিলভ।

Nawrooz Palace in Dushanbe city. Photo by Bahrom Jalilov

দুশানবে শহরের নওরোজ প্যালেস। ছবি তুলেছেন বাহরম জালিলভ।

The second tallest flagpole in the world. Dushanbe. Photographer: Nozim Qalandarov

বিশ্বের দ্বিতীয় উচ্চতম পতাকাদণ্ড। ছবি তুলেছেন নজিম কুয়ালানদারভ।

Tajikistan is known for colourful handicraft production. Photo by Bahriddin Isamutdinov

বৈচিত্র্যময় হ্যান্ডিক্রাফটের জন্য তাজিকিস্তানের খ্যাতি রয়েছে। ছবি তুলেছেন বখরুদ্দিন আইসামুটদিনভ।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .