থাইল্যান্ডের নতুন নিরাপত্তা আইন “মত প্রকাশের স্বাধীনতার ইতি ঘটাতে যাচ্ছে”

File photo of General Prayuth Chan-ocha (right), the incumbent Prime Minister of Thailand. Prayuth signed a new security law to replace martial law in the country. Photo by Vichan Poti, Copyright @Demotix (9/4/2014)

থাইল্যান্ডের অন্তবর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী জেনারেল প্রায়ুথ চান ওচার ছবি। প্রায়ুথ থাইল্যান্ডে সামরিক শাসনের বদলে প্রয়োগ হতে যাওয়া নতুন এক নিরাপত্তা আইনে স্বাক্ষর করেছে। ছবি ভিচান পোতি-এর। কপিরাইট @ডেমোটিক্সের (৯/৪/২০১৪)।

সংঘঠিত সামরিক অভ্যুত্থানের প্রায় এগারো মাস পরে, থাই সামরিক সরকার অবশেষে ১ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে দেশ থেকে সামরিক শাসন প্রত্যাহার করে নেয়; তবে এই সরকার দ্রুত নতুন এক নিরাপত্তা আইনে স্বাক্ষর করে যা কিছু মানবাধিকার কর্মীর মতে এমনকি আরো বেশী নিপীড়ন মূলক।

গত বছরের মে মাসে থাইল্যান্ডের সামরিক বাহিনী এক অভ্যুত্থান ঘটায়, দৃশ্যত যার উদ্দেশ্য ছিল বিরোধী দল এবং সরকারপন্থীদের মাঝে রাস্তায় চলতে থাকা সংঘর্ষ থামানো। এই অভ্যুথানের নেতারা ঘটনার পর দেশটিতে সামরিক শাসন জারী করে, তারা দেশের প্রধান প্রধান সব সংবাদপত্রের সংবাদ নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করে, এবং রাজনৈতিক সমাবেশ নিষিদ্ধ করে। অভ্যুত্থানের পর এক অন্তবর্তীকালীন সংবিধান রচনা করে হয়, যা জেনারেল প্রায়ুথ চান ওচার নেতৃত্বে এক সামরিক বাহিনী সমর্থিত বেসামরিক সরকারকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করে। নতুন এই সরকার জাতীয় শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষা পরিষদ নামে পরিচিত হয়। কিন্তু বেসামরিক কর্তৃপক্ষের নিয়োগ প্রদান করা সত্ত্বেও আগের মত সামরিক শাসন বজায় থাকে

অন্তবর্তীকালীন সংবিধানের ৪৪ নাম্বার ধারা উদ্ধৃতি প্রদান করে প্রায়ুথ ৩/২৫৫৮ (৩/২০১৫) নাম্বার অধ্যাদেশে স্বাক্ষর করে, যা সামরিক আইনের বদলে জারী করা হয়েছে, তবে তা আরো কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এই নতুন আদেশ “ শান্তি ও শৃঙ্খলা বাস্তবায়নে” পদ অনুসারে সামরিক বাহিনীর থেকে কর্মকর্তা নিয়োগে জারি করা হয়, দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় যাদের অসীম ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। সামরিক বাহিনী থেকে নিয়োগ প্রাপ্ত এই সমস্ত কর্মমকর্তারা গৃহ তল্লাশী চালাতে পারবে, সমস্যা তৈরী করতে পারে এমন ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সমন জারি ও তাদের গ্রেফতার করতে, সম্পত্তি জব্দ করতে, এবং এমনকি বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের কোন ধরনের অনুমতি ছাড়াই সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে বিশেষ এলাকায় সাতদিনের জন্য আটকে রাখতে পারবে।

একত্রে সমবেত হওয়া স্বাধীনতাকে এখনো খর্ব করে রাখা হয়েছে যেহেতু ১২ নাম্বার অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে “পাঁচ বা তার বেশী ব্যাক্তির রাজনৈতিক সমাবেশ” নিষিদ্ধ।

থাই সংবিধানের ৪৪ নাম্বার ধারা নিয়ে করা @স্টেফআর্টের এই সকল কার্টুন থাইল্যান্ডের অনেক একটিভিস্ট ও গণতন্ত্রের দাবিতে সোচ্চার নাগরিকের আবেগকে তুলে ধরেছে:

উন্মাদ সামরিক জান্তা-গণতন্ত্রের পথে এক উন্মত্ততা (অথবা তা নয়)-দ্বিতীয় কার্টুন।

জাতির সোমবারের জন্য কার্টুন- প্রায়ুথ ম্যাক্স ৩

এই আদেশটি একই সাথে বাক স্বাধীনতার জন্য হুমকি। ভিন্নমতকে চুপ করিয়ে দেওয়ার জন্য ৫ নাম্বার অনুচ্ছেদটি ব্যবহার করা হতে পারে, এই ধারায় যা বলা হয়েছে:

শান্তিরক্ষা কর্মকর্তাদের যে কোন ধরনের সংবাদের প্রচারণা, অথবা কোন বইয়ের বিতরণ, অথবা কোন প্রকাশনা, অথবা কোন উপাদান, যা জনগণকে উদ্বিগ্ন করে অথবা ক্রমাগত মিথ্যা তথ্য প্রদান করে, কিংবা যে সব বিষয় জাতীয় নিরাপত্তা অথবা গণ শৃঙ্খলা নির্ধারণের ক্ষেত্রে জনগণকে বিভ্রান্ত করে, সেগুলো নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। (মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ক ঘটনার নথিবদ্ধকরণ কেন্দ্র, আইলয়ের অনানুষ্ঠনিক অনুবাদ)

এই বিধানের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে থাইল্যান্ডের সব বড় বড় প্রচার মাধ্যম, যাদের প্রতিনিধি থাই সাংবাদিক সংস্থা, থাই জাতীয় প্রেস কাউন্সিল, থাই সম্প্রচার সাংবাদিক সংগঠন এবং থাই সংবাদ সম্প্রচার সংস্থা, একত্রিত হয়ে এক বিবৃতি প্রকাশ করেছে, তাতে এই অনুচ্ছেদের সমালোচনা করা হয়েছে এই বলে যে “এটি সংবাদপত্র ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে তুলে নেওয়া সামরিক শাসনের চেয়েও আরো বেশী হুমকিস্বরূপ”। ”

তারা এনসিপিও-এর কাছে এই অনুচ্ছেদের বিষয়টি পরিষ্কার করার আহ্বান জানায় এবং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি এবং ভুয়া তথ্যের বিষয়ে আরো সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা প্রদানের আহ্বান জানিয়েছে।

জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি, নাগরিকদের জন্য উদ্বেগ সৃষ্টি করে এবং ভুয়া তথ্য ছড়ানোর বিষয়ে কোন সুস্পষ্ট সংজ্ঞা প্রদান না করার ফলে কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে বাড়াবাড়ি রকমের ক্ষমতার ব্যবহার অথবা এর অপব্যবহার করতে পারে, যা এনসিপিও-এর আদেশের ক্ষেত্রে এক বৈপরীত্য তৈরী করে।

একই সাথে তারা সতর্ক করে দিয়েছে যে এই বিশেষ বিধান লক্ষ লক্ষ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে আক্রান্ত করতে পারে:

এই অনুচ্ছেদের কারণে সাধারণ নাগরিকেরাও এর দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে, বিশেষ করে সেই সমস্ত নাগরিক যারা স্যোশাল মিডিয়া একে অন্যের সাথে যোগাযোগ তৈরী করে এবং সেই সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করে যেগুলো কর্তৃপক্ষের কাছে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ, যেমন উদ্বেগ তৈরী করা, ভুয়া তথ্য ছড়ানো, অথবা জনগণকে বিভ্রান্ত করে এমন তথ্যের আদান প্রদান, যার কারণে একই শর্তে উক্ত নাগরিকদেরও শাস্তি প্রদান করা হতে পারে।

এই একই অনুচ্ছেদকে উল্লেখ করে দক্ষিণপূর্ব এশীয় সংবাদ সহযোগী সংস্থা ( সাউথইস্ট এশিয়ান প্রেস এ্যালায়েন্স) প্রশ্ন করছে :

যে লেখা “উদ্বেগ তৈরী করার” মত প্রশ্নের সম্মুখীন অথবা “ভুয়া তথ্য” যা জনগণকে বিভ্রান্ত করতে পারে, তার সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা কি? লেখাটা সত্য বা ঘটনার প্রেক্ষিতে লেখা কিনা যদি এই প্রশ্নের আলোকে একে বিচার করা হয়, তাহলে সত্য এই ধরনের এক নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে এক রক্ষা কবচে পরিণত পারে কি?

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত জেইদ রা’আদ আল হুসেইনি সরাসরি এনসিপিও নতুন এই আদেশের তীব্র সমালোচনা করেন কারণ এই নতুন আদেশকে থাইল্যান্ডের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে নিশ্চিহ্ন করার এক মাধ্যম হিসেবে দেখা হচ্ছে, এতে তিনি আরো যোগ করেন :

স্বাভাবিক ভাবে আমি থাইল্যান্ডে সামরিক শাসন প্রত্যাহারের ঘটনাকে আনন্দের সাথে স্বাগত জানিয়েছিলাম, কিন্তু আমি এই সিদ্ধান্তে উদ্বিগ্ন যে সামরিক শাসনের বদলে দেশটিতে এমন এক আইন জারী করা হচ্ছে, যা এমনকি আরো বেশী নির্মম, যা কোন ধরনের বিচারিক কোন ভুলের দায়ভার ছাড়াই প্রধানমন্ত্রীকে অসীম ক্ষমতা প্রদান করতে যাচ্ছে।

থাইল্যান্ডে সামরিক শাসন প্রত্যাহারের সংবাদটিকে প্রথমে সন্দেহের চোখে দেখা হয়, বিশেষ করে যখন এটি ১এপ্রিল বা এপ্রিল ফুল নামক দিবসে এই ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এই বিষয়টি পরিষ্কার যে সামরিক শাসকেরা এখন সামরিক শাসনের বদলে আরো কঠোর এক আইন জারী করেছে সেটা কোন রসিকতা নয়।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .