চীনা সেন্সরশিপ আরোপের ক্ষেত্রে একটি আক্রমণাত্মক মোড়: ‘গ্রেট ক্যানন’

Simplified logical topology of the Great Cannon and Great Firewall. Screen Capture from Citizen Lab.

গ্রেট ক্যানন এবং গ্রেট ফায়ারওয়াল এর সরলীকৃত যৌক্তিক চিত্রায়ন। সিটিজেন ল্যাব থেকে স্ক্রিন ক্যাপচার।

সিটিজেন ল্যাব, টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিড় উপর একটি উন্নত, মানবাধিকার-বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র, চীনা ওপেন সোর্স প্ল্যাটফর্ম গীটহাবের সাম্প্রতিক ম্যান-ইন-দ্য-মিডল আক্রমণ পরিকাঠামো গ্রেট ফায়ারওয়ালের সঙ্গে অবস্থিত হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সিটিজেন ল্যাব এই নতুন উদ্ভাবিত প্রযুক্তিকে “গ্রেট ক্যানন” হিসাবে আখ্যায়িত করেছে।

তাদের অনুসন্ধান বলছে যে চীনা সেন্সরশিপ পদ্ধতি একটি আক্রমনাত্মক মোড় নিয়েছে। বিদেশ থেকে আসা বিষয়বস্তু ব্লক করার চেয়ে, গ্রেট ক্যানন “চীনের বাইরে থাকা সহকারী ব্যবস্থার ট্র্যাফিককে নিপূণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে, চুপি চুপি ব্রাউজার প্রোগ্রামিং থেকে একটি বৃহদায়তন ডিডস (DDoS) আক্রমণ তৈরির মাধ্যমে।” সিটিজেন ল্যাব আরও জানায় গ্রেট ক্যানন এনএসএ'র কোয়ান্টাম সিস্টেমের অনুরূপ যা যেকোনো বিদেশী কম্পিউটারকে লক্ষ্য বানাতে পারে যা যেকোন চীনভিত্তিক ওয়েবসাইটের সাথে যোগাযোগ করছে সম্পূর্ণরূপে এইচটিটিপিএস ব্যবহার না করে।”

কেন গিটহাব হামলা করা হলো?

২০১৩ সাল থেকে গিটহাব চীনা কর্তৃপক্ষের সেন্সরশিপের একটি লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। ওপেন সোর্স হোস্টিং মাধ্যম হিসেবে গিটহাব ভিন্নমত সরঞ্জাম এবং বিষয়বস্তু রেখেছে যা চৈনিক কর্তৃপক্ষ বন্ধ করতে চায়। এমনকি প্ল্যাটফর্মটি কিছু সময়ের জন্য ব্লক করা হয় ২০১৩ সালে এর শুধুমাত্র-এইচটিটিপিএস বৈশিষ্ট্যের কারণে, গ্রেট ফায়ারওয়ালের পক্ষে বিভিন্ন পৃষ্ঠা পৃথকভাবে ব্লক করাকে অসম্ভব করে তোলে, যেমন মঙ্গল প্রজেক্ট, যা গ্রেট ফায়ারওয়ালের অবস্থান ট্র্যাক করার হোস্ট একটি ওপেন সোর্স টুল। ২০১৩ এর ব্লক দীর্ঘস্থায়ী হয়নি কেননা ব্লক ওপেন সোর্স অবকাঠামোকে প্রভাবিত করে যা অন্যান্য ডেভেলপারদের জন্য অপরিহার্য।

চীনা গ্রেট ফায়ারওয়াল পাশ কাটানোর জন্য গিটহাবে হোস্টিং কৌশলকে  ওপেন ইন্টারনেট টুল প্রকল্পের গবেষকরা “সমান্তরাল স্বাধীনতা” হিসেবে বর্ণনা করছেন এবং মূল ভূ-খণ্ডের চীনা পাঠকদের জন্য বিষয়বস্তু সহজে উপলব্ধ করার জন্য অনেক ওয়েবসাইট এখন মিরর সাইট তৈরির কৌশল অবলম্বন করছেন।

চীনা গ্রেট ক্যানন এই বিশাল ট্রাফিকের দিক পরিবর্তন করে https://github.com/greatfire পাঠায়, গ্রেট ফায়ারের ভূমিকা পাতায়, যা নিউ ইয়র্ক টাইমস, চীন ডিজিটাল টাইমসের, বোক্সিন, ফ্রি ওয়েবু প্রজেক্ট এবং অন্যদের নিষিদ্ধ বিষয়বস্তু মিরর সাইট হোস্টিং দ্বারা গ্রেট ফায়ারওয়াল সেন্সরশিপের ফাঁদের বাইরে আনার কাজে নিয়োজিত। এই আক্রমণ গিটহাবকে এসকল পাতা অপসারণে চাপ প্রয়োগ করার জন্য করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

পরবর্তীতে কয়েকটি প্রযুক্তিগত রিপোর্ট ব্যাখ্যা করে যে আক্রমণটি একটি ম্যান-ইন-দ্য-মিডল যন্ত্র থেকে এসেছিল বিশ্বের অন্যান্য অংশ থেকে চীনের বৃহত্তম সার্চ ইঞ্জিন, বাইডুর (উচ্চারণ বাতু) বিশ্লেষণকে করা ওয়েব অনুরোধকে রুদ্ধ করতে পারে।

অনুরোধসমূহ যখন চীনে প্রবেশ করে, ডিভাইসটি ব্যবহারকারীর কম্পিউটারে ব্রাউজারে একটি জাভাস্ক্রিপ্ট প্রবেশ করায় যা গিটহাবকে আক্রমণ করে। আক্রমণটি, গিটহাবের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুতর একটি, বিশাল উৎস থেকে এসেছিল, যেকারণে কোম্পানিটির পক্ষে অনুরোধ অবরোধ করা অসম্ভব ছিল।

বাইডু (উচ্চারণ বাতু) যা যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান, আক্রমণে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে, যা সাধারণ মানুষকে এই হামলায় চীনা সেন্সরশিপ কর্তৃপক্ষের ভূমিকা ছিল কিনা সে বিষয়ে ভাবিত করেছে।

গ্রেট ক্যানন: রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সাইবার আক্রমণ

নেটিজেন ল্যাব গ্রেট ফায়ারওয়াল এবং গ্রেট ক্যাননের প্রযুক্তিগত বিবরণ তুলনা করেছে এবং তাদের প্রাপ্ত ফলাফল জানায় যে গ্রেট ক্যানন চীনা সরকার কর্তৃক পরিচালিত হয়। পরীক্ষার বিভিন্ন পর্যায়ে ল্যাবটি যা খুঁজে পায় তা হলো:

১. গ্রেট ক্যানন গ্রেট ফায়ারওয়াল সঙ্গে একই জায়গায় অবস্থিত।
২. গ্রেট ফায়ারওয়াল এবং গ্রেট ক্যাননের একই ধরনের টিটিএল পার্শ্ব চ্যানেল আছে, যা থেকে বোঝা যায় তারা কিছু সোর্স কোড শেয়ার করে।
৩. গ্রেট ফায়ারওয়ালের সহযোগী, গ্রেট ক্যাননের নকশার কারণে গ্রেট ওয়াল আটকাতে পারে না এমন যেকোন ট্র্যাফিক সেন্সর করতে পারে। এর ভূমিকা ট্রাফিক সেন্সর করা নয়, বরং একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে ট্রাফিককে উদ্বুদ্ধ করা।
৪. গ্রেট ক্যানন গ্রেট ফায়ারকে লক্ষ্য বানায়, যাকে চীনা কর্তৃপক্ষ একটি “বিদেশী চীনা-বিরোধী প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।

রিপোর্টটি আরও জানিয়েছে যে গ্রেট ক্যানন উদ্বোধনের জন্য চীনা সরকারের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের কর্তৃপক্ষের অনুমোদন প্রয়োজন হবে:

গ্রেট ক্যাননকে নিয়োজিত করা বড় কৌশলগত পরিবর্তন, এবং এর অত্যন্ত দৃশ্যমান প্রভাব রয়েছে। সম্ভবত এই আক্রমণের যে নেতিবাচক রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া রয়েছে, তা মাথায় রেখে মনে করা হচ্ছে যে চীনা সরকারের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে তা করা হয়েছে। এই কর্তৃপক্ষদের মধ্যে সরকারী ইন্টারনেট তথ্য অফিস (এসআইআইও), যা ইন্টারনেট সেন্সরশিপের জন্য দায়ী অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। এটাও সম্ভব যে চীনের সবোর্চ্চ সাইবারনিরাপত্তা সমন্বয়ের কাজে নিয়োজিত, সাইবার নিরাপত্তা কার্যক্রম ও তথ্যায়ন অগ্রণী দল (সিআইএলজি) জড়িত থাকতে পারে। সিআইএলজি'র সভাপতি শি জিনপিং এবং এর সাথে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা রয়েছেন; এর প্রশাসনিক অফিস এসআইআইও'তে রয়েছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .