মোবাইল অ্যাপ বাংলাদেশের নারীদের অকুণ্ঠচিত্তে কথা বলার প্লাটফর্ম দিয়েছে

অর্থনেতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ বাড়লেও নারীর স্বাস্থ্যের ব্যাপারটি এখনো বাংলাদেশে অবহেলিতই রয়ে গেছে। ছবি তুলেছেন জাকির হোসেন চৌধুরী। স্বত্ত্ব: ডেমোটিক্স (০৩/১০/২০১১)

অর্থনেতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ বাড়লেও নারীর স্বাস্থ্যের ব্যাপারটি এখনো বাংলাদেশে অবহেলিতই রয়ে গেছে। ছবি তুলেছেন জাকির হোসেন চৌধুরী। স্বত্ত্ব: ডেমোটিক্স (০৩/১০/২০১১)

মায়া আপা। নাম শুনে মনে হবে কোনো রক্ত মাংসের মানুষ বুঝি। আসলে তা নয়। এটি একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন (অ্যাপ)। এই অ্যাপসের মাধ্যমে নারীরা স্বাস্থ্য সমস্যার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও আইনি সমস্যা সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্যসেবা পাবেন।

যেকোনো নারী নিজের নাম-পরিচয় গোপন রেখেই প্রশ্ন করতে পারবেন। আর ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই পেয়ে যাবেন কাঙ্ক্ষিত ভাষায় (ইংরেজি বা বাংলায়) বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ।

ব্র্যাকের অংশীদারত্ব ও সহযোগিতায় মায়া ডটকম ডট বিডি ওয়েবসাইট বাংলাদেশের নারীদের জন্য এই মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনটি বানিয়েছে। এর নির্মাতা আসিয়া খালেদা নীলা এবং মৌটুসি মউ জানিয়েছেন দেশের নারীর ক্ষমতায়নে এই অ্যাপসটি কাজ করবে।

বাংলাদেশে নারী স্বাস্থ্যের চিত্র মোটেও সন্তোষজনক নয়। প্রতিবছর প্রসবজনিত জটিলতায় ৬ লাখ নারী মৃত্যুবরণ করেন। ১৮ বছরের আগেই ৬৬ শতাংশ কিশোরীর বিয়ে হয়। আর কিশোরী অবস্থাতেই গর্ভধারণ করে ৬৪.৩ শতাংশ নারী। তাছাড়া আরো নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগেন। কিন্তু নিজেদের স্বাস্থ্য সমস্যার বিষয়টি অন্যজনের কাছে বলতে সংকোচ বোধ করেন। এমনকি কাছের মানুষদেরও মুখ ফুটে বলতে পারেন না। ফলে স্বাস্থ্য ছাড়াও নানা ধরনের সামাজিক ও আইনি সমস্যার সমাধান পান না। এই নারীদের সাহায্য করতেই এ ধরনের অ্যাপ বানানো হয়েছে।

মায়ার বিষয়বস্তু ও যোগাযোগের প্রধান শাহানা সিদ্দিকি নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকাকে বলেনঃ

In Bangladesh, women’s health and bodies are always discussed within the context of pregnancy, and prior to that it is as though their health is not an issue. Maya provides a platform where women can freely speak about their emotional, medical, legal, and social needs anonymously, without being judged.

বাংলাদেশে মেয়েদের স্বাস্থ্যের কথা আলোচনা করা হয় শুধু গর্ভধারণের সময়, অন্য সময় যেন তাদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সবাই উদাসীন। মায়া এমন একটি প্লাটফরম এনে দিয়েছে যেখানে মেয়েরা নিঃসঙ্কোচে তাদের স্বাস্থ্য, আবেগ, আইনি ও সামাজিক সমস্যা ইত্যাদি নিয়ে আলাপ করতে পারে কোন ভয় ছাড়া।

তানিজা টি একজন ডাক্তার। খুব কাছ থেকে দেখেছেন নারীর স্বাস্থ্য সমস্যার বিষয়গুলো। তিনি গুগল স্টোরের অ্যাপটির রিভিউ পেজে লিখেছেন:

Impressive Being a doctor I know how ppl hesitate to talk about their health related issues for long time before actually consulting to a professional. I love the concept and the app is phenomenal. But I would really like to see rapid response to questions. So 4 stars. I see great possibilities.

অ্যাপটি দেখে ভালো লাগলো। আমি ডাক্তারি করতে গিয়ে দেখেছি, নারীরা ডাক্তারদের সাথে পরামর্শ করার আগে, দীর্ঘদিন ধরেই নিজেদের স্বাস্থ্য সমস্যার বিষয়টি চেপে রাখেন। এটা নিয়ে কথা বলতে সংকোচ বোধ করেন। আইডিয়াটা আমার ভালো লেগেছে। অ্যাপটাও বেশ ভালো। তবে আমি দেখতে চাই, প্রশ্নগুলোর যেন দ্রুত উত্তর দেয়া হয়। তাই চার তারা দিয়েছি। আমি এর বিপুল সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি।

উদ্যোক্তা সংস্থা তাদের ফেসবুক পেজ মায়া ভিলেজে অ্যাপটি নিয়ে ইতিবাচক সাড়া পাবার কথা উল্লেখ করেছেন। অনেকেই এসে তাদের নানা ধরনের সমস্যার পরামর্শ জানতে চেয়েছেন।

বাংলাদেশের প্রত্যেক নারী এই অ্যাপ থেকে লাভবান হবে বলে মনে করেন আনিকা ইসলাম। তিনি টুইট করেছেন:

মায়া আপা: বাংলাদেশের সকল নারীকে তথ্যসেবা দিবে।

গুগল প্লে স্টোর থেকে অ্যাপটি বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যাবে। এদিকে স্যামসাং বাংলাদেশ তাদের ফোনে এই অ্যাপ রাখার ঘোষণা দিয়েছে।

বাংলাদেশের মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটির উপরে। এদের অর্ধেকই নারী। তাছাড়া ২০১৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট পৌঁছে যাবে। আর এর ফলে দেশের বিপুল সংখ্যক নারীর কাছে তথ্যসেবা নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। তবে সবার কাছে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের নারীদের কাছে যাতে তথ্যসেবা নিয়ে যাওয়া যায়, সেজন্য অ্যাপটি বেসিক স্মার্টফোনের উপযোগী করে বানানো হয়েছে।

শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর যেকোনো দেশের নারীরা এই অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে তাদের সমস্যার ব্যাপারে পরামর্শ নিতে পারেন।

মায়া ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠাতা আইভি এইচ রাসেল প্রযুক্তির মাধ্যমে নারীদের কাছে তথ্যসেবা পৌঁছে দিতে অ্যাপটির আরো উন্নয়ন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তিনি স্থানীয় মিডিয়ার সাথে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, আমরা চাই মায়া আপা অ্যাপটি প্রতিনিয়তই উদ্ভাবনের উত্কর্ষে আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করুক। যে তথ্য নারীরা খুঁজছেন, প্রযুক্তির মাধ্যমে সেই তথ্য তাদের কাছে পৌঁছে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য। এ বছরে আমাদের পথ পরিক্রমায় এরকম আরও অনেক চমকই থাকছে।’

নীচে আইভি রাসেলের টেড এক্স ঢাকায় দেয়া বক্তৃতা রয়েছে যেখানে তিনি এই উদ্যোগটি নিয়ে আলোকপাত করেছেনঃ

এদিকে মায়া টিম স্টার্টআপ ক্যাটেগরিতে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম আয়োজিত অনুপ্রেরণাদায়ী নারী পুরস্কার ২০১৫ জিতেছে।

1 টি মন্তব্য

আলোচনায় যোগ দিন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .