লেবাননের ঝড় সিরীয় শরণার্থীদের বেদনাদায়ক পরিস্থিতিকে আরো অবর্ণনীয় করে তুলছে

Arsal, North East Lebanon, covered with snow. Picture taken by 'Lebanese for Refugees' with Permission.

উত্তরপূর্ব লেবানন-এর আরসাল নামক এলাকা বরফে ঢেকে আছে। ছবি তুলেছেন “উদ্বাস্তুদের জন্য লেবানন” (লেবানিজ ফর রিফিউজি) । অনুমতিক্রমে প্রকাশিত।

লেবাননে বাস করা সিরীয় শরণার্থীরা ঝড়ো আবহওয়া এবং তুষারপাত দ্বারা প্রচণ্ডভাবে আক্রান্ত হয়েছে।

জানুয়ারিতে শুরু হওয়া শীতকালীন ঝড়ো হাওয়া যখন এই নিয়ে তৃতীয় বারে মত লেবাননের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শুরুর করেছে, তার প্রেক্ষাপটে ইতোমধ্যে এখানে আশ্রয় নেওয়া সিরীয় শরণার্থীদের ঠাণ্ডায় ভোগার সংবাদ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি এই প্রবন্ধটি যখন লেখা হচ্ছিল তখন অনেক উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া জোরালো বাতাস এবং তুষার-এ পরিণত হওয়ার ঘটনা এতটাই নীচে নেমে আসে যে তা ৩০০ মিটার উচ্চতায় বইতে থাকে, আর এই বাজে আবহাওয়া উত্তর লেবাননের বেহনিন-এর তিনজন শিশুর জীবন ছিনিয়ে নেয়। যেমনটা দি ডেইলি স্টার সংবাদ প্রদান করেছে বেহনিনের উত্তরের মিনয়েহ দিননিয়ে জেলা শহরে এক তাবুতে আগুন লাগার ফলে রাওয়া, তালাল এবং সাবাহ সুলেমান অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়। কাছে মিনয়েহ-এর হাসপাতালে তাদের লাশ নিয়ে যাওয়া হয়। বৃহস্পতিবার বাজে এই আবহাওয়ার কারণে ঘটা বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে এই অগ্নিকাণ্ডের উৎপত্তি ঘটে যার ফলে তাবুতে আগুন লেগে যায়, যার ফলে তাদের মৃত্যু ঘটে।

এই ঘটনার ফলে লেবানন দেখছে যে সে বিদ্যুৎ বিহীন হয়ে পড়েছে, নদীর পানি রাস্তা ও কৃষি ক্ষেত ভাসিয়ে নিয়ে যায় এবং বরফের স্তূপে অজস্র নাগরিক আটকে পড়ে, যে সকল ঝড় মূলত লেবাননের দূর্বল অবকাঠামোকে প্রভাবিত করে থাকে।

অতি সম্প্রতি ঘটা এই ঘটনা লেবাননে বাস করা উদ্বাস্তুদের অবর্ণনীয় দুর্দশার বিষয়টি তুলে ধরছে। লেবানন একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্র, যেখানে ৪০ লক্ষ নাগরিকের বাস, যে দেশটি আরো বেশী শরণার্থীকে গ্রহণ করেছে, যেখানে প্রায় ১২ লক্ষ নিবন্ধিত শরণার্থীর বাস, বিশ্বের সবগুলো দেশের সম্মিলিত শরণার্থীর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ শরণার্থীর বাস এদেশে। দেশটির বর্তমান মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশ হচ্ছে শরণার্থী। বিষয়টি একটি দৃষ্টিভঙ্গিতে আনার জন্য এখানে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল দ্বারা চালু করা সিরিয়ার জন্য উন্মুক্ত (#ওপেনটু সিরিয়া) নামক হ্যাশট্যাগের অধীনে এক ব্যাপকভাবে প্রদর্শিত ছবি এখানে তুলে ধরা হল। :

পরিসংখ্যানে সিরীয় শরণার্থী সঙ্কট, আর এ ক্ষেত্রে সরকারের করণীয় কি।

এদিকে লেবাননের সুশীল সমাজ সংগঠিত হয়ে শরণার্থীদের মৌলিক চাহিদা গুলো মেটার চেষ্টা করছে এবং তাদের সাহায্য করছে, যার মধ্যে রয়েছে তহবিল সংগ্রহের জন্য কনসার্টের আয়োজন করা থেকে প্রতি মাসে দান হিসেবে কাপড় সংগ্রহ অভিযান, তবে এই কাজের চাহিদা মেটানোর জন্য তা অপর্যাপ্ত রয়ে যাচ্ছে। এবং যেন পরিস্থিতিকে আরো খারাপের দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য, এমনকি জাতিসংঘ তহবিল সংগ্রহ এবং এই কাজে উপযুক্ত কর্মী জোগাড়ে হিমশিম খাচ্ছে।এই কাজে ২০১৪ সালে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন ( ইউএনএইচসিআর) যে ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সাহায্যের অনুরোধে জানায় তার মাত্র ৬০ শতাংশ ( ৭৫৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) ডিসেম্বরে ২০১৪-এ প্রদান করা হয়। একই সাথে জাতিংসংঘ সম্প্রতি ঘোষণা প্রদান করেছে যে শরণার্থীদের খাদ্য হিসেবে প্রদান করা সাহায্য থেকে ১.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছেঁটে ফেলছে, আর এর কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেছে “প্রতিশ্রুত প্রাপ্ত অর্থ সঠিক ব্যবহার না করাকে”।

এই পরিস্থিতি কেবল শরণার্থী শিবিরকে নয়,সাথে বৈরুতকেও আক্রান্ত করেছে। বৃটিশ–আরব উপলব্ধি পরিষদ-এর জোসেফ উইলিটস যেমনটা টুইট করেছে :

লেবাননের রাস্তায় বাস করা ও কাজ করা শিশুর ৭৩ শতাংশ সিরীয় শরণার্থী। তারা এখন বিপর্যয়কর অবস্থায় পতিত হয়েছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .