চ্যাপেল হিলে মর্মান্তিক দূর্ঘটনাঃ “খুনিরা মুসলমান হলে, গল্পটি ভিন্ন হতো”

A tribute to Deah Barakat and Yusor and Razan Abu-Salha, by @_mz_cool

দিয়াহ বারাকাত, ইয়ুসর এবং রাজান আবু-সালহার প্রতি @_এমজেড_কুল এর শ্রদ্ধাঞ্জলি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেড়ে ওঠা তরুণদের নিয়ে কাজ করেছে সেনাদলগল্প প্রকল্প।  এ প্রকল্পের অধীনে গত বছর কিছু সাক্ষাৎকার ধারণ করা হয়েছে। ২১ বছর বয়সী একজন শিক্ষার্থী ইয়ুসর আবু-সালহা তাঁর সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, “আমরা সবাই এক, একই সংস্কৃতি”। 

উত্তর ক্যারোলিনার চ্যাপেল হিল এলাকায় অবস্থিত নিজ বাসায় এ সপ্তাহে আবু-সালহাকে তাঁর বোন রাজান (১৯) এবং স্বামী দিয়াহ বারাকাত (২৩) সহ নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় তাদের প্রতিবেশী ক্রেইগ স্টিফেন হিকসকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে এবং তাঁর বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে। দুই তরুণীর বন্ধুবান্ধবদের বলা গল্পগুলো থেকে হিকসকে একজন রাগী লোক হিসেবে সচিত্র বর্ননার পরিচয় পাওয়া যায়। কেননা তিনি মাঝে মধ্যে তাদের ভয় দেখাতেন। অপরদিকে হিকসের স্ত্রী তাকে যথেষ্ট সহনশীল একজন মানুষ হিসেবে চিত্রিত করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, “গাড়ি পার্কিং বিরোধ” নিয়ে তিন খুনের ঘটনাটি ঘটেছে। 

ঘৃণা তাড়িত হয়ে এই অপরাধ কর্মটি ঘটানো হয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন। আর এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় তারা তাই জানিয়েছেন। ইয়ুসর এবং রাজানের বাবা ডঃ মুহাম্মাদ আবু-সালহা খুনের ঘটনাটিকে একটি ঘৃণ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে তদন্ত করতে তাদের শেষকৃত্য অনুষ্ঠান থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বস্তুত এফবিআই তদন্ত কাজ হাতে নিয়েছে।

খুনের ঘটনাটি নিয়ে প্রেসিডেন্ট ওবামার নীরব থাকা প্রসঙ্গে সমালোচনা করে তুর্কি প্রেসিডেন্ট তাইয়্যেপ রিসেপ এরদোগান বলেছেনঃ “এমন একটি ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরেও যদি আপনি নীরব থাকেন এবং কোন বিবৃতি না দেন, তবে বিশ্বও আপনার প্রতি নীরব হয়ে থাকবে”। অনেকেই তাঁর আবেগ প্রতিধ্বনিত করেছেন। এদের মাঝে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক রাজনীতিবিদও রয়েছেন। জুয়ান কোল যেমনটি উল্লেখ করেছেন।  

সামাজিক বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে লোকজন এই ঘটনায় প্রচার মাধ্যমের প্রতিক্রিয়া নিয়ে সমালোচনা করেছেন। তারা উল্লেখ করেছেন, একই ধরনের অন্য যেকোন অপরাধের চেয়ে এক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া বেশ ধীর। অভিযুক্ত খুনীর পটভূমি এক্ষেত্রে আলোচনার কোন বিষয় হয়ে দাঁড়ায়নি। তবে তিনি যদি কোন আরব বা মুসলিম হতেন, তবে তা অবশ্যই আলোচনার বিষয়ে পরিণত হতো। 

ফিলিস্তিনি সাংবাদিক আলি আবুনিমাহ টুইট করেছেনঃ

আমি আপনাদের মনে করিয়ে দিচ্ছি, কানসাস শহরের ইহুদি কেন্দ্রে গুলি বর্ষনের ঘটনায় ওবামা তাৎক্ষনিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। পক্ষান্তরে চ্যাপেল হিলের ঘটনায় তিনি একেবারে নীরব।

মরক্কান বংশোদ্ভূত আমেরিকান লেখিকা লাইলা লালামি এক ধারাবাহিক টুইটে অনেকের প্রতিক্রিয়া একত্রিত করেছেন। তিনি বলেছেনঃ

শ্বেতাঙ্গ খুনি এবং মুসলমান শিকারদের সম্পর্কে হতে পারে আমরা কিছুই জানি না, তবে এদের ভূমিকা যদি উলটে যেত অর্থাৎ শ্বেতাঙ্গ শিকার এবং মুসলমান খুনী হতো তবে আমরা জানি প্রচার মাধ্যম কতোটা উদ্বেগ নিয়ে তা প্রচার করতো।

একটি গাড়ি পার্কিং জায়গা নিয়ে বিরোধের নিষ্ফল চেষ্টা ইতোমধ্যেই প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেখানে প্রমাণের চেষ্টা চলছে যে কোন প্রকার ধর্মীয় গোঁড়ামির বশবর্তী হয়ে খুন করা হয়নি।

কিন্তু একটি গাড়ি পার্কিং জায়গার জন্য যদি এক্ষেত্রে একজন মুসলমান তিনজন মানুষকে গুলি করে মেরে ফেলতেন, তবে এই বিরোধের ব্যর্থ চেষ্টাকে তাঁর অসভ্যতার প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হতো।

ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত আমেরিকান সাংবাদিক সারা ইয়াসিন এই টুইটের সাথে প্রচার মাধ্যমের নির্দিস্ট কিছু দাবির অযৌক্তিকতা দেখিয়েছেনঃ

আপনারা যদি এখনও তদন্ত না করে থাকেন তবে কি করে বুঝবেন এটি কোণ ঘৃণ্য অপরাধ নয়?

সৌদি আরব থেকে মুহাম্মাদ আল সুহেল মন্তব্য করেছেনঃ

যখন কোন মুসলিম অপরাধী প্রমাণিত হন তখন ইসলাম ধর্মের অনুগামী সকলেই সন্ত্রাসী হয়ে যান। কিন্তু চ্যাপেল হিল হত্যাকান্ডের ক্ষেত্রে এটি শুধুই একটি অপরাধ আর কিছুই নয়…  

সৌদি আরবের আল কাসেম থেকে একজন শিক্ষক মুথকের বেন সামহান একটি টুইট করেছেন। টুইটটি আরও ৯৫ বার পুনরায় টুইট করা হয়েছে, যা অনেকটা এরকমঃ  

খুনি যদি একজন মুসলমান হতেন তবে পশ্চিমা প্রচার মাধ্যমগুলো ইসলাম এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে যেত। কিন্তু এক্ষেত্রে যেহেতু খুনি তাদের মতোই একজন তাই এটি শুধুই একটি দূর্ঘটনা।

আর সৌদি সৌদ বাস তাঁর ৮ হাজার অনুসারীর উদ্দেশ্যে টুইট করেছেনঃ

চ্যাপেল হিলের খুনিকে প্রচার মাধ্যমগুলোতে শুধুমাত্র একজন খুনি বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে, সন্ত্রাসী বলে আখ্যায়িত করা হয়নি। সন্ত্রাসী কর্মকান্ড শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্য সীমিত করে রাখা হয়েছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .