আমাজন বন উজাড়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অন্যান্য দেশকে সাহায্যের পরিকল্পনা ব্রাজিলের

Ministra do Meio Ambiente Izabella Teixeira (centro)

সিওপি ২০ সম্মেলনে উপস্থিত ব্রাজিলিয়ান পরিবেশ মন্ত্রী ইসাবেলা টেইজেইরা (মাঝে) আমাজনের সীমান্তবর্তী অন্যান্য দেশের কাছে একটি পর্যবেক্ষণ পরিকল্পনা প্রস্তাব করছেন। ছবিঃ গুস্তাভো ফালেইরোস। 

ইনফোআমাজোনিয়ার প্রধান সম্পাদক গুস্তাভো ফালেইরোস লিমাতে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন কনফারেন্সের (সিওপি ২০) সংবাদ সংগ্রহ করতে সেখানে অবস্থান করছেন। উল্লেখ্য, ইনফোআমাজোনিয়া গ্লোবাল ভয়েসেসের একটি অংশীদার প্রকল্প।  

বন উজাড়ের বিরুদ্ধে ব্রাজিলের যুদ্ধ করার ৩০ বছরেরও বেশি সময়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাদের একই অভিজ্ঞতা তারা অন্যান্য আমাজন সীমান্তবর্তী দেশে কাজে লাগাবে। পেরুর রাজধানী লিমাতে জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন কনফারেন্সের ২০ তম আসরের আয়োজন করা হয়েছে। এখানে ব্রাজিল সরকার এবং ব্রাজিলিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (বিএনডিইএস) আমাজন সহযোগীতা চুক্তি সংস্থার (ওসিটিএ) সাথে যৌথ উদ্যোগে একটি পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে।

ওসিটিএ এর মহাসচিব সুরিনামিজ রবি দেওনারায়েন রামলক্ষনের মতে, আমাজন তহবিলের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে। ব্রাজিল এবং সারা আমাজনের সীমান্তবর্তী দেশগুলোতে বিএনডিইএস এর ব্যবস্থাপনায় হাতে নেয়া বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালনা করতে ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের তহবিল গঠন করা হয়েছে।

বলা হয়েছে, এই সম্পদগুলোর ব্যয়-পরিশোধ যোগ্য নয়। এগুলো কোন প্রকারের ঋণ নয়। ব্রাজিলিয়ান এবং পেরুভিয়ান প্রতিনিধি দলের অংশগ্রহণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ঘোষণা করা হয়েছে, এই প্রকল্পের অধীনে স্যাটেলাইট তথ্যের জন্য পর্যবেক্ষণ কক্ষ তৈরি করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এছাড়াও ১৫০ জন প্রকৌশলীকে প্রশিক্ষণ দেয়া এবং ওটিসিএ এর অন্যান্য সাতটি সদস্য দেশের জন্য নজরদারী কাজের সুবিধার জন্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কেনার পরিকল্পনাও করা হচ্ছে।

এগুলোর পাশাপাশি এ প্রকল্পে ২০০০ সাল থেকে ২০১০ সালের মধ্যে আমাজন বনাঞ্চল ও সকল সংযোজিত অংশের একটি ঐতিহাসিক মানচিত্র আঁকতে উদ্যোগ নেয়ার সংকল্প করা হয়েছিল। ব্রাজিল ১৯৮৮ সাল থেকে বন উজাড়ের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আসছে। তবে অন্যান্য দেশগুলো ব্রাজিলের মতো নয়। বন নিয়ে তাদের ঐতিহাসিক ডাটাবেস এখনও তৈরি করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ব্রাজিলিয়ান জাতীয় মহাকাশ গবেষণা ইন্সটিটিউটের ব্যবহৃত পদ্ধতি সমুহ ওটিসিএ অনুসরণ করবে। ব্রাজিলিয়ান জাতীয় মহাকাশ গবেষণা ইন্সটিটিউট ব্রাজিলের সীমানাতে অবস্থিত আমাজন বনাঞ্চল অংশের বন উজাড়ের হার দাপ্তরিকভাবে গণনা করেছে।

পেরুর জাতীয় বন কার্যক্রমের কো-অর্ডিনেটর গুস্তাভো সাউরেজ বলেছেন, “প্রতিটি দেশের আমাজন বন উজাড়ের হার ভিন্ন। পেরুতে এক হেক্টরেরও কম আয়তনে এই হার শতকরা ৯০ শতাংশ। বিপুল এই হার পর্যবেক্ষণ করা অত্যন্ত কঠিন।” ব্রাজিলের বড় বড় এলাকাগুলোতে (নিচের বন উজাড়ের মানচিত্রটি দেখুন) বন উজাড় বেশি পরিমানে হয়ে থাকে।

বনাঞ্চল পুনরুদ্ধার

ব্রাজিলের পরিবেশ মন্ত্রী ইসাবেলা টেইজেইরাও বুধবারের কনফারেন্সে সকলের উপস্থিতিতে একটি ভাষণ প্রদান করেন। তিনি তাঁর ভাষণে আবারও বন উজাড়ের হার কমাতে ব্রাজিলের গৃহীত উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তিনি সরকারের ঘোষিত বন উজাড় হারের সাম্প্রতিক সংখ্যা উল্লেখ করেন – যা ২০১৪ সালে কমে শতকরা ১৮ শতাংশে নেমে এসেছে – গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমন কমানোর যে প্রতিশ্রুতি ব্রাজিল দিয়েছিল তা পূরণের প্রমাণ তারা দিয়েছে।

এখনও ব্রাজিলে গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমণের অন্যতম প্রধান একটি উৎস হচ্ছে ভূমির ব্যবহার (বন দাবানল, বন উজাড়) পরিবর্তন। অবিরতভাবে বন উজাড় হার কমিয়ে ফেলতে সক্ষম হওয়ায় দেশটি জলবায়ু সমঝোতার ক্ষেত্রে একটি স্বস্তিপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছেছে। বর্তমানে জাতিসংঘ বৈশ্বিক উষ্ণতার কারন এবং প্রভাবগুলো কমিয়ে আনতে একটি নতুন চুক্তির খসড়া তৈরি করার চেষ্টা করছে।

মন্ত্রী বলেছেন, “গত ১০ বছরে শুধুমাত্র বন উজাড়ের হার শতকরা ৮২ ভাগ কমানো হয়েছে তাই নয়, বরং বন পূনর্জীবিত হওয়ার একটি সুদৃঢ় প্রক্রিয়া আমরা লক্ষ্য করেছি”। তিনি কয়েক সপ্তাহ আগে আইএনপিই থেকে টেরাক্লাস ব্যবস্থার দেয়া তথ্যের উদ্ধৃতি দেন। এটি বলছে, আমাজনের বন উজাড় হয়ে যাওয়া শতকরা ২৩ ভাগ ভূমিতে গাছপালা পূনর্জীবিত হয়ে উঠেছে। “এ প্রতিবেদনে দেখা গেছে ব্রাজিল প্রতি বছর ৬৫০ মিলিয়ন টন কার্বন নির্গমন বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছে”।

আমাজনে বন উজাড়ের একটি পরস্পর সক্রিয় মানচিত্র – আইএনপিই (প্রডস ব্যবস্থা) এবং টেরা-আই ব্যবস্থা কর্তৃক প্রদত্ত তথ্য। 

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .