সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বাংলাদেশে বিদ্যুত বৈষম্য কমিয়ে আনছে

চট্টগ্রামের সন্দীপের সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প। ছবি উইকিমিডিয়ার সৌজন্যে।

চট্টগ্রামের সন্দীপের সোলার প্যানেল প্রকল্প। ছবি উইকিমিডিয়ার সৌজন্যে।

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশই বিদ্যুৎ সুবিধা পান না। বিদ্যুত সুবিধাবঞ্চিত এই মানুষের বেশিরভাগই বসবাস করেন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে। আজ তাদের কাছে আর্শীবাদ হয়ে এসেছে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প যা ২০০৭ সালে শুরু হয়েছে। বিশ্ব ব্যাঙ্কের সহায়তায় পরিচালিত সরকারি ইডকল প্রকল্প ৪০টি সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারের সহায়তায় ইতোমধ্যে ৩০ লাখ বাড়ি সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারের আওতায় এনেছে। এই বিদ্যুৎ ২ কোটি মানুষের জীবনে বিরাট পরিবর্তন এনেছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ‘বাড়িভিত্তিক সৌরবিদ্যুতের ৩০ লাখ প্যানেল স্থাপনের মাইলফলক উদযাপন করেছে। এই সাফল্য অর্জনে বিগত দিনগুলোতে কী পরিমাণ পরিশ্রম করতে হয়েছে, সেটাই টুইটারে তুলে ধরেছেন নাওমি আহমাদ:

বাংলাদেশ চলতি মাসে ৩ মিলিয়ন বাড়িতে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপনের মাইলফলক উদযাপন করেছে। এজন্য বিগত বছরে আমাদের কী পরিমাণ পরিশ্রম না করতে হয়েছে, আজ তা স্মরণ করছি।

বাংলাদেশের এমন সাফল্যে গ্রিনপিস ইন্ডিয়ার টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশ সৌরবিদ্যুতের বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলছে এমন মন্তব্যও করা হয়েছে:

পৃথিবী কি সবচে’ বৃহত্তম সৌর বিপ্লবকে এড়িয়ে যাচ্ছে? হ্যাঁ, এটা আমাদের উপমহাদেশের একটি দেশ বাংলাদেশে হচ্ছে।

বাংলাদেশে প্রতি মাসে প্রায় ৬৫ হাজার বাড়িতে সোলার প্যানেল স্থাপিত হচ্ছে। বাংলাদেশে সোলার সিস্টেমের জনপ্রিয়তার কারণ অনুসন্ধান করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ জুবায়ের কে এম সাদেকী। তিনি গ্রামীণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি, এনজিওগুলোর ক্ষুদ্র ঋণ সহযোগিতা, লিড লাইটের মতো প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কথা বলেছেন।

সৌরবিদ্যুতের জন্য বাংলাদেশ খুবই সম্ভাবনাময় একটি দেশ। কারণ বাংলাদেশ ২০° ৩০´ এবং ২৬° ৪৫´ উত্তর অক্ষাংশের মধ্যে অবস্থিত। এখানে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আবহাওয়া বিরাজ করে। যার ফলে বছরের ৩০০ দিনের বেশি রোদ থাকে।

বাংলাদেশে কৃষিকাজেও সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার শুরু হয়েছে। ১৯১টি সৌরশক্তি ভিত্তিক সেচ পাম্প অনুমোদন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৯টি সেচ পাম্প চালু হয়েছে। তাছাড়া গ্রামীণ জনপদের ব্যবসাবাণিজ্যের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে। কাজের সময় বৃদ্ধি পেয়েছে, দোকানপাট, মুদি দোকান, ফার্মেসি, দর্জির দোকান, সেলুন অধিক রাত পর্যন্ত খোলা রাখা সম্ভব হচ্ছে। ফলে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধিসহ জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে।

বাংলাদেশে সোলার প্যানেল স্থাপনের খরচ বেশ বেশিই। তবুও এর দ্রুত বিকাশ চান প্রবীর বিধান:

বাংলাদেশের জন্য সৌরবিদ্যুৎ এখনো বেশ ব্যয়বহুল। তবুও এর দ্রুত বিকাশ খুব দরকার।

বর্তমানে বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ বেকার। প্রতি বছর এই হার বাড়ছে। কিন্তু এই বেকার মানুষদের কাছেও আশীর্বাদ হয়ে এসেছে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প। এই প্রকল্পে ১ লক্ষ ১৪ হাজার মানুষের চাকরি হয়েছে। ২০১১ এবং ২০১৩ সালের মধ্যে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পে চাকরি দ্বিগুণ হয়েছে।

জলবায়ু ও জ্বালানি বিপ্লবী মাইক হুডেমা বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব চাকরি বৃদ্ধির বিষয়ে টুইট করেছেন:

বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব চাকরি (গ্রিন জব) বাড়ছে। এখানে প্রতি মাসে ৮০ হাজার বাড়িতে সোলার প্যানেল বসছে।

বাংলাদেশে বাড়িভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। আর শুরু করেছিল গ্রামীণ ব্যাংকের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান গ্রামীণ শক্তি। এখন পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানটিই সবচে’ বেশি বাড়িতে (১৩ লাখেরও বেশি) সোলার প্যানেল স্থাপন করেছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .