‘আমরা বাঁচতে চাইঃ’ সিরিয়ার অবরুদ্ধ ইয়ারমুকে ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় কাতর হাজার হাজার লোক

Kafranbel stands in solidarity with Yarmouk, with a banner that reads: Yarmouk's stomachs are filled with dignity, you bastards. Source: The We Want to Live campaign's Facebook page

ইয়ারমুকের সাথে কাফরানবেলের সংহতি প্রকাশ, ব্যানারে লেখাঃ “ইয়ারমুকের উদর মর্যাদায় পূর্ণ, জারজের দল।” ছবি সূত্রঃ আমরা বাঁচতে চাই প্রচারাভিযানের ফেসবুক পেজ 

এই পোস্টটি পূর্বে অব্যক্ত সিরিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে।

সিরিয়ার করুণ গাঁথা দিনে দিনে বেড়েই চলছে। ফলশ্রুতিতে সিরিয়ার ভৌগোলিক, রাজনৈতিক এবং সামরিক সংঘর্ষের প্রতি আন্তর্জাতিক মনোযোগও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এগুলো ছাড়াও অন্যান্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু থাকা সত্ত্বেও সেদিকে দৃষ্টি দেয়া হচ্ছে না। এমনই একটি ইস্যু হচ্ছে ইয়ারমুকের ফিলিস্তিনি শিবির অবরোধ। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শিবিরটি অবরুদ্ধ রয়েছে। ইয়ারমুক অবরোধ করে রাখার সবচেয়ে সাম্প্রতিক ফলাফল হচ্ছে পিপাসা। কয়েক সপ্তাহ ধরে এখানকার বাসিন্দারা পিপাসার্ত হয়ে আছেন। এ সমস্যাটিকে তুলে ধরতে “আমরা বাঁচতে চাইঃ অবরোধে পিপাসার্ত” শিরোনামে তৃণমূল পর্যায়ে একটি প্রচারাভিযান চালিয়ে সবার মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করা হচ্ছে।

ইয়ারমুক শিবিরটি সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে অবস্থিত। সেখানে পূর্বে ১ লক্ষ ৬০ হাজার ফিলিস্তিনি এবং সিরিয়ার নাগরিক বসবাস করত। অবরুদ্ধ এই শিবিরে বর্তমানে মাত্র ১৮ হাজার শরনার্থী বসবাস করেন।

সিরিয়ান তরুণেরা এবং শিবিরের ভিতর ও বাইরে বসবাসকারী সিরিয়ান-ফিলিস্তিনিরা প্রচারাভিযানটি শুরু করেছেন। সিরিয়ার শাসনতন্ত্র প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে ইয়ারমুকের প্রতি যেভাবে নিষ্ঠুর আচরন করছে, সে সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করাই এই প্রচারাভিযানের লক্ষ্য। এই প্রচারাভিযানের একজন আয়োজক অব্যক্ত সিরিয়াকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “এ শিবিরের বাসিন্দাদের সরকার ক্ষুধা, তৃষ্ণা এবং রোগভোগে মরতে বাধ্য করছে”। তিনি আরও বলেছেন, “দীর্ঘ দিন ধরেই এই অবরোধ চলে আসছে, তা সত্ত্বেও যখন থেকে শাসনতন্ত্র এই শিবিরের পানি সরবরাহ লাইন কেটে দিয়েছে, তখন থেকে এখানকার পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে”।

২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর তারিখ থেকে ইয়ারমুক আংশিকভাবে অবরুদ্ধ রাখা হয়। আর ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই তারিখ থেকে ইয়ারমুক পুরোপুরিভাবে অবরুদ্ধ হয়ে আছে। এ পর্যন্ত এখানে কমপক্ষে ১৭০ জন লোক না খেতে পেয়ে মারা গেছেন। আরও ২০ হাজারেরও বেশি লোক এই অবরোধের ফলে কষ্ট ভোগ করছেন। এছাড়াও শহরটির উপর দফায় দফায় হামলা, বিমান হামলা এবং বোমা বর্ষণ করা হচ্ছে। সাধারন জনগণের দালানকোঠা, বিদ্যালয়, হাসপাতাল এবং মসজিদের উপর ভারি ভারি অস্ত্র ব্যবহার করে আঘাত হানা হচ্ছে।

পানি সরবরাহ লাইন বন্ধ করে দেয়ার ফলে ইয়ারমুকের অধিবাসীরা কুয়া থেকে পানি তুলে নিয়ে শরনার্থী শিবির পেরিয়ে তাদের বাড়িঘরে নিয়ে যাওয়ার পথ অবলম্বন করেছেন। তবে অনেক ক্ষেত্রেই এই পানি পানযোগ্য না হওয়ায় লোকজন এ পানি পান করে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

One of the We Want to Live campaign' designs. Source: the campaign's Facebook page

‘আমরা বাঁচতে চাই প্রচারাভিযানের’ অন্যতম একটি নকশা। ছবি সূত্রঃ প্রচারাভিযানটির ফেসবুক পেজ 

“আমরা বাঁচতে চাই” শিরোনামের প্রচারাভিযানটি ইয়ারমুককে কেন্দ্র করে সৃজনশীলতার এক বিচিত্র চিত্র উন্মোচন করেছে। শিবিরের বাসিন্দাদের উপর চাপিয়ে দেয়া ক্ষুধা ও তৃষ্ণার মর্মান্তিক ঘটনার উপর প্রচারাভিযানের দেয়া লিফলেট এবং ব্যানার প্রতিফলিত হতে শুরু করেছে। শরনার্থী শিবিরের ভিতরে বিভিন্ন নাটক মঞ্চস্থ করা হচ্ছে। অবরুদ্ধ জনগণের মাঝে সংহতি তৈরি করার লক্ষ্যে এসব কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। সক্রিয় কর্মীরা ইয়ারমুক থেকে খবরাখবর এবং ছবি শেয়ার করতে ইন্টারনেটের আশ্রয় নিচ্ছেন। তারা অন্যদেরকেও এই প্রচারাভিযানে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করছেন। এই শিবিরের বাসিন্দাদের সাথে সংহতি প্রকাশ করতে শত শত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী নিজেদের ছবি তুলেছেন এবং ফেসবুক এবং টুইটারে সেগুলো শেয়ার করেছেন। তারা #আমাদেরমুক্তহতেদিন এবং #অবরুদ্ধ_পিপাসা হ্যাশট্যাগগুলো ব্যবহার করেছেন।

ইয়ারমুকের জনগণের হাতে ধরে রাখা একটি ব্যানারে লেখা, “আমরা শুধু আমাদের প্রাপ্যটুকুই চাইঃ মর্যাদার সাথে বেঁচে থাকা”। কাফরানবেল শহরটি হাস্য রসাত্মক ব্যানারের জন্য বেশ পরিচিত। ব্যানারটির প্রতিক্রিয়ায় নিচের বার্তাটি শেয়ার করা হয়েছে। বার্তাটিতে স্পষ্টভাবে শাসনতন্ত্রকে নির্দেশ করা হয়েছেঃ

ইয়ারমুকের উদর মর্যাদায় পূর্ণ, জারজের দল।

এই পোস্টটি পূর্বে অব্যক্ত সিরিয়াতে প্রকাশিত হয়েছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .