পরিবেশবাদীদের আন্দোলন সত্ত্বেও জ্যামাইকাতে ছাগল দ্বীপ গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত

Savegoatislands.org screen capture.

ছাগলদ্বীপ রক্ষা কর ডট ওআরজি স্ক্রিন ছবি। 

জ্যামাইকার পরিবেশবাদী সক্রিয় কর্মীরা যতোটা পারছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছেন। সুরক্ষিত ভূমিতে একটি সমুদ্র বন্দর তৈরি করতে গৃহীত পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যেতে তারা মাধ্যমগুলো ব্যবহার করছেন। প্রস্তাবিত এই উন্নয়ন জ্যামাইকার সরকারকে এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সরকারের একদিকে পরিবেশ সংরক্ষণ করতে নাগরিকদের আন্দোলনের চাপ অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয়ের সুযোগ যা আইএমএফ থেকে নেয়া সাম্প্রতিক ঋণ পরিশোধ করতে সাহায্য করবে।

এ বছরের শুরুতে মে মাসে অনুষ্ঠিত দ্বিবার্ষিক জ্যামাইকান ব্লগ দিবসে ব্লগাররা “পরিবেশ বনাম উন্নয়ন” শিরোনামে একটি র‍্যালী আয়োজন করেছেন। এ গুরুত্বপূর্ণ র‍্যালীর আয়োজকেরা ব্যাখ্যা করেছেনঃ 

আমাদের পরিবেশ এবং উন্নয়ন একটি সাম্প্রতিক বিষয়ঃ অদূরবর্তী ছাগল দ্বীপের ব্যবহার সম্পর্কে এবং পোর্টল্যান্ড উপসাগরীয় সুরক্ষিত এলাকাটিকে ব্যক্তি ও মালপত্রের সরবরাহ, বন্টন ও বদলির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ব্যবহার প্রসঙ্গে বছরব্যাপী প্রবল বিতর্ক চলার সময় থেকে […] খরা শুরু হওয়া পর্যন্ত এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এই খরা এখনও দ্বীপটিকে শক্ত হাতে আঁকড়ে ধরে রেখেছে। অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, পরিবেশবাদীগণ, ব্যবসায়ীগণ, প্রচার মাধ্যমগুলো এবং পাহাড়ের উপরের ‘সাধারণ’ জ্যামাইকান নাগরিকরা বা অভিবাসীরা বিতর্ক করছেন, উন্নয়নের সন্ধান করতে যেয়ে জ্যামাইকা কীভাবে…পরিবেশ রক্ষা করবে।

ছাগল দ্বীপ নিয়ে উত্তেজনা মে মাসের পর থেকে এখনও কমেনি। এখন রিচার্ড কনিফ জ্যামাইকান ব্লগে “জাতির সবচেয়ে বড় সুরক্ষিত প্রাকৃতিক এলাকাতে জলপথে পণ্যদ্রব্য পরিবহনের সবচেয়ে বড় সমুদ্রবন্দর তৈরি করতে কোন চীনা কোম্পানির সাথে গোপন চুক্তি করার” পরামর্শ দিয়েছেন। এটি দ্বীপটির আর্থিকভাবে লাভজনক পর্যটন শিল্পকে ঝুকিগ্রস্ত করে তুলতে পারে। তাঁর সাথে সাথে এটি জ্যামাইকার আন্তর্জাতিক সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে পারেঃ

নতুন এই সমুদ্র বন্দরটি এমন একটি জায়গাতে হতে যাচ্ছে যেখানে বিস্তৃত এলাকা জুড়ে লবনাক্ততা সহিষ্ণু ঘাসের সমতল ভূমি রয়েছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উপরে ও নিচে কোরালের শৈলশ্রেণী, জলাভূমি এবং জ্যামাইকার সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল রয়েছে। এই সুরক্ষিত অঞ্চলটিতে জ্যামাইকান ইগুয়ানার বাসস্থান। বিশ্বাস করা হত প্রজাতিটির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। কিন্তু ১৯৯০ সালে পুনরায় এক নাটকীয় আবিষ্কারের পর প্রজাতিটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। সে সময়ের পর থেকে আন্তর্জাতিক সংরক্ষণ সম্প্রদায় হেলশায়ার পাহাড়ি অঞ্চলের সুরক্ষিত বনে ইগুয়ানার সংখ্যা বৃদ্ধির চেষ্টায় কয়েক মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। হেলশায়ার পাহাড়ি অঞ্চলের সংরক্ষিত এলাকাটি প্রস্তাবিত সমুদ্র বন্দরের খুব কাছাকাছি অবস্থিত। এই বিনিয়োগের বেশিরভাগ অংশ সরকারের অঙ্গীকারের উপর নির্ভর করে। যদিও এখন স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে তা বাতিল হয়ে যাবে। সরকার অঙ্গীকার করেছিল যে ছাগল দ্বীপটি ইগুয়ানাদের স্থায়ী আবাস ভূমিতে পরিণত করা হবে। উল্লেখ্য ইগুয়ানা জ্যামাইকার সর্ববৃহৎ প্রজাতির মেরুদন্ডী প্রানী।

কনিফ সরকারের বিরুদ্ধে অঙ্গীকার ভঙ্গের অভিযোগ তুলেছেনঃ গত বছরই কেবল কনিফ এই প্রকল্পকে “একটি বৈশ্বিক প্রাণীমন্ডল সংরক্ষণ” আখ্যা দিয়েছেন। তবে “১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের” প্রলোভন অবজ্ঞা করা সম্ভবত বেশ দুরূহ হয়ে উঠেছে। জ্যামাইকা অর্থনৈতিকভাবে খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই। কারন দেশটি এক অর্থে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের কাছে বাধা পরে আছে। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের কাছ থেকে দেশটি ২০১৩ সালে ৯৩২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ নিয়েছে। এ সপ্তাহেই জ্যামাইকা অবজার্ভার প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে, আইএমএফ জ্যামাইকাকে আরও ৬৮.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ ছাড় দিবে

জ্যামাইকা পরিবেশ তহবিলের প্রধান ডায়ানা ম্যাককাউলের মতো পরিবেশবাদীরা অন্যান্য বেশ কয়েকটি সুশীল সমাজ গ্রুপের সাথে একত্রিত হয়ে এ ইস্যুটি নিয়ে শিক্ষা বিষয়ক প্রচারণা এবং গণসেবা ঘোষণার মাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন। এগুলোর পাশাপাশি তারা মূলধারার বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম এবং সামাজিক বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করেছেন। দ্বীপটি রক্ষার্থে একটি ওয়েবসাইটও তৈরি করা হয়েছে। দ্বীপের এলাকাটিকে একটি মালামাল পরিবহনের জন্য ব্যবহারযোগ্য সমুদ্র বন্দরে পরিণত করার পরিকল্পনা বন্ধ করতে প্রধানমন্ত্রী পোর্সিয়া সিম্পসন-মিলারের উদ্দেশ্যে একটি অনলাইন আইনি আবেদন জানানো হয়েছে।  

ম্যাককাউলে ১৪ আগস্ট তারিখে টুইট করেছেনঃ 

‘গ্রেট ছাগল দ্বীপে আমি শুধুমাত্র যে বন্যপ্রাণী দেখেছি তা হচ্ছে দুইটি পিঁপড়ে এবং একটি প্রাইভেট সেক্টর নেতার পক্ষ থেকে আমি তাদের উভয়কে হত্যা করেছি।’ এটিই সব বলছে। 

পরিবেশবাদীদের মাঝে নিঃসন্দেহে কিছু বিচ্ছিন্নতা কাজ করছে। একদিকে তারা দেশের দীর্ঘকালীন কল্যাণ এবং অন্যদিকে বিশাল আকারে বিস্তৃত ব্যবসা বাণিজ্যের কথা বিবেচনা করছেন। কেননা স্বল্প স্থায়ী সুফলের কিছু ধ্বংসকারী পরিকল্পনাকে কেন্দ্র করে এসব বড় বড় ব্যবসা গড়ে উঠবে। এক্ষেত্রে প্রশ্ন থেকেই গেল – কাদের কণ্ঠস্বর জ্যামাইকান সরকারকে নাড়া দিবে ? 

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .