যুদ্ধ ও মর্মান্তিক ঘটনার বাইরে ফিলিস্তিনিদের জীবনকে আলাদা ফ্রেমে বন্দী করা ছবি

This image, simply entitled "Seen in Gaza" shows two Palestinian men in Gaza overlooking their destroyed city which was destroyed by an Israeli attack

এই ছবিটির সহজ ক্যাপশন হচ্ছে “গাজার দৃশ্য”। সেখানে দেখা যাচ্ছে, গাজার দুই জন অধিবাসী তাঁদের শহরকে দেখছে, যেটি ইসরায়েলের গোলার আঘাতে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেছে।

আজ পর্যন্ত ব্র্যান্ডন স্ট্যানটনের সবচেয়ে জনপ্রিয় পেজ নিউইয়র্কের মানুষেরা (এইচওএনওয়াই) ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে শুরু হয়েছিল। পেজটির অনুকরণে এরপর সারা বিশ্বজুড়ে কয়েক শত এমন পেজ তৈরি করা হয়েছে। তবে সবগুলো পেজের মূল বিষয়টি একই রাখা হয়েছিল। মূল বিষয়টি বরং খুবই সাদাসিধেঃ একজন আলোকচিত্রী অথবা একদল আলোকচিত্রী নিকটবর্তী কোন স্থানে, গ্রামে, শহরে কিংবা আশপাশের দেশে চলে যান এবং সেখানকার লোকেদের বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পাশাপাশি মূহুর্তটি স্মৃতিময় ছবিতে ধারণ করে রাখেন। 

প্রকল্পটি একেবারে এই গ্রহের প্রতিটি কোনাতে পৌঁছে গেছে। রিও ডি জেনিরো থেকে একেবারে তেহরান পর্যন্ত। এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ এবং আমেরিকা মহাদেশের বেশিরভাগ দেশে। প্রকল্পটির সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক সম্ভাবনা এখন আর অজানা নেই। সম্প্রতি একটি এইচওএনওয়াই ছবিতে যেমনটি দেখা গেল। একজন মন্তব্যকারী বলেছেনঃ “আমি এখন প্রতিদিন ছবিগুলো পোস্ট হওয়ার আশায় বসে থাকি। তারা মানবতার প্রতি আমার বিশ্বাসকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করেছে।” এই মন্তব্যটি ৭,০০০ বারেরও বেশি সংখ্যক লাইক পেয়েছে।  

দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন তাতে কোন সন্দেহ নেই। আর এ কারনেই “ফিলিস্তিনের মানুষ” তাই করার চেষ্টা করছেন। ফিলিস্তিনের মানুষ দলের একজন সদস্য জাফর জুয়াবিকে গ্লোবাল ভয়েসেস যখন অনলাইনে ফিলিস্তিনের মানুষ দলটি গঠনের পেছনে তাদের মধ্যে কাজ করা চিন্তাটি বর্ননা করতে বলেছে, তখন তিনি ব্যাখ্যা করেছেনঃ

ফিলিস্তিনের মানুষের স্বপ্ন এবং তাদের নিত্যদিনের জীবনযাপনকে প্রতিফলিত করতেই ফিলিস্তিনের মানুষ দলটি গঠন করা হয়েছে। তবে যখন থেকে ইসরাইলি হামলা শুরু হয়েছে তখন থেকে পেজটি মানবতা পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। কারন ফিলিস্তিনিরা প্রতিনিয়ত সংখ্যাগতভাবে মৃত্যু বরণ করছে, মৃতদের নাম ভুলে যাচ্ছে, পুড়ে যাচ্ছে এবং শরীরগুলো বিকলাঙ্গ হয়ে যাচ্ছে, তখন মাঝে মাঝেই মানবতা বিবস্ত্র হয়ে পড়ছে। যারা প্রিয় মানুষদের সাথে বিভিন্ন গল্প, স্বপ্ন এবং আশা আকাঙ্ক্ষা শেয়ার করছেন তারা বরং এখনও কিছুটা মানবতা ধরে রাখতে পেরেছেন।  

The image, shared on August 15, is captioned: "This is the first baby to be delivered by me. His name is Mazen. The labor was under the supervision of Dr. Nashwa Skaik at al-Shifaa hospital. This is one of the greatest moments in my life."

“আমার ডেলিভারি করা এটাই প্রথম শিশু। তাঁর নাম মাজেন। আল শিফা হাসপাতালে ড. নাশয়া কাইকের তত্ত্বাবধানে শিশুটির জন্ম হয়। আমার জীবনের এটি অন্যতম একটি আনন্দের মুহূর্ত।” (লিংক)

ফেসবুকে পেজটির ২২ হাজার এবং টুইটারে ৭,৫০০ অনুসারী রয়েছে। পাতাটি কভারেজের হিসেবে অন্যান্য হনি-টাইপ পাতা থেকে ভিন্ন, এর ফিলিস্তিনের সীমান্তে ফিলিস্তিনিদের এবং অভিবাসী ও উদ্বাস্তু উভয়দের নিয়ে কাজ করেছে। ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনের মানুষ দলটি গাজা, পশ্চিম তীর, ইসরাইল এবং সমগ্র আরব বিশ্ব ও ফিলিস্তিন সীমান্ত জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ফিলিস্তিনিদের উদ্বাস্তু শিবিরগুলো কভার করেছে।   

পেজটি কীভাবে কাজ করে? জাফর উত্তরে বলেছেনঃ

ফিলিস্তিনের মানুষ দলে আমাদের পাঁচজনের একটি দল কাজ করেঃ পেজটির প্রতিষ্ঠাতা আনাস হামরা গাজা থেকে কাজ করেন। ইউ’আম, হানিন এবং আমি রামাল্লাহ থেকে এবং সিরিয়ার শরনার্থী শিবির ইয়ারমুক থেকে যোগ দিয়েছেন নিরাজ। 

বেশ কিছুটা আশাবাদ ব্যক্ত করে আমরা আমাদের কথোপকথন শেষ করলামঃ

আমরা মনে করি, আমরা কিছুটা হলেও পরিবর্তন আনতে পেরেছি। আমাদের বার্তাগুলো আরও বেশি বেশি করে প্রতিদিন আরব এবং পশ্চিমা দেশগুলোতে পৌঁছে দিতে পারছি।

পেজটিতে শেয়ার করা হয়েছে এমন কয়েকটি ছবি এখানে দেয়া হলঃ

"Noor, is a passionate young girl from Gaza, she's always wanted to start her own Palestinian English channel in Gaza, but she didn't know that the first news to report would be a "War" on Gaza! Noor stands where Israeli military destroyed a whole neighborhood called Shujaiya and she is making a report about it" (link)

“গাজার এক স্বপ্নচারী যুবতি হচ্ছে নূর, যে সব সময় গাজায় তাঁর নিজস্ব ফিলিস্তিন ইংরেজি চ্যানেল চালু করার স্বপ্ন দেখে এসেছে, কিন্তু সে জানত না যে তাঁর করা প্রথম খবরটি হবে গাজার ‘যুদ্ধ’ নিয়ে! ইসরায়েলের গোলার আঘাতে বিধ্বস্ত হওয়া শুজাইয়ার উপর দাঁড়িয়ে নূর সে ব্যাপারে রিপোর্ট করছে।”
(লিংক)

"I was sitting opposite  Naji Al-Ali's (Palestinian cartoonist) grave, thinking of all the great people Israel had wiped off the map, and how they all stay in our lives. When I think of those people, I don't think of them as 'dead'. So what's death after all? It is as Ghassan Kanafani deliberately put it: "A man is, at the end of the day, a cause." When I think of martyrs, I don't think of them as numbers. They are people with collective memories, families, dreams- which all was simply taken away from them. The idea brings my defenses down. For those who gave their lives ardently, for those whose dreams were brutally taken away, all the tears of the world will not bring your pure souls back. I salute you"

“আমি নাজি আল আলির (ফিলিস্তিন কার্টুনিস্ট) কবরের পাশে বসে ছিলাম, ভাবছিলাম সেই সব মহান মানুষদের কথা, ইসরায়েল যাদের মানচিত্র থেকে মুছে ফেলেছে এবং এর পরও তাঁরা যেভাবে আমাদের জীবনের সাথে মিশে আছেন। আমি যখন সে সব মানুষদের কথা ভাবি, তাঁদের তখন আমি মৃত মনে করি না। তাই, মৃত্যুর পরে কি আছে? ঘাসান কানাফানি সুচিন্তিতভাবে বলেছেন: “দিনের শেষে মানুষ হচ্ছে, একটি কারণ।” আমি যখন শহীদদের কথা ভাবি, আমি তখন সংখ্যাতত্তের বিচারে তাঁদের ভাবি না। সমষ্টিগতভাবে সৃতি, পরিবার, স্বপ্নের সহযোগে তাঁরা আমাদের কাছে মানুষ – যেগুলো তাঁদের কাছ থেকে খুব সহজেই কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এই ধারণা আমাদের প্রতিবন্ধকতাকে কমিয়ে এনেছে,  তাঁদের জন্য যারা তাঁদের জীবন দিয়েছেন, তাঁদের জন্য যাদের স্বপ্ন ন্রশংসভাবে কেড়ে নেওয়া হয়েছে, পৃথিবীর সমস্থ কান্না আমাদের খাঁটি জীবনগুলোকে ফিরিয়ে আনতে পারবে না। তোমাদের জানাই স্যালুট।” (লিংক)

- How would you describe yourself? - I am not as sneaky and demanding as most people would think

- আপনি নিজেকে কিভাবে বর্ণনা করবেন?
- আমি খুব গোপনীয় কিছু নই এবং অধিকাংশ মানুষ যেভাবে চিন্তা করে আমিও ঠিক তেমনটিই চাই (লিংক)

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .