“লাইসেন্স বিহীন” সব ধরণের ওয়েবসাইট বন্ধের ঘোষণা দিল ইরান

Rouhani supporters in Tehran. Photo by Tabarez2 via Wikimedia Commons (CC BY-SA 3.0)

তেহরানে রুহানির সমর্থক গোষ্ঠী। ছবিঃ উইকিমিডিয়া কমনস থেকে তাবারেজ২ (CC BY-SA 3.0)

ইরানের সংস্কৃতি এবং ইসলামিক নেতৃত্ব মন্ত্রণালয় গত সপ্তাহে ঘোষণা দিয়েছে, যে সকল খবর সম্প্রচারকারী ওয়েবসাইটের সরকার অনুমোদিত লাইসেন্স নেই, সে সকল ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়া হবে। 

মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় প্রেস নিয়ন্ত্রণের পরিচালক হাসান মেহরাবি বলেছেন, খবর সম্প্রচারকারী সকল ওয়েবসাইটকে ভবিষ্যতে উক্ত মন্ত্রণালয়ের প্রেস সুপারভাইজারি বোর্ডের কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। ইরানি ছাত্র সংবাদ সংস্থার (আইএসএনএ) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই নতুন নীতিমালা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। “সাংবাদিক দিবসে” ঘোষণাটি দেয়া হল। অস্পষ্টভাবে ঘোষিত এই জাতীয় দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে, সাংবাদিকদের কাজের স্বীকৃতি দেয়া। সীমানা বিহীন প্রতিবেদকদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রচার মাধ্যম ক্ষেত্রে কর্মরত সাংবাদিকদের জেল জরিমানা করা শীর্ষ পাঁচটি দেশের তালিকায় ইরান অন্যতম। এখানে বর্তমানে ৬৫ জন সাংবাদিক এবং নেটিজেন কারাবন্দি রয়েছেন। 

নতুন নীতিমালাকে সামনে রেখে ইরানের ভেতরে সরকারী অনুমোদন প্রাপ্ত বেশিরভাগ ওয়েবসাইট বন্ধ হয়ে যাওয়া রোধ করতে নিজেরাই নিজেদের প্রচার সূচী সেন্সর করবেন। মূলত সংস্কারবাদী ওয়েবসাইটগুলোকে লক্ষ্য করে এই ফিল্টার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। যেমন সবুজ বিপ্লব এবং এর নেতৃবৃন্দের সাথে সম্পর্কিত ওয়েবসাইটগুলো তাদের প্রধান লক্ষ্যবস্তু।  

মধ্যপন্থী প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে একটি কনফারেন্সের আয়োজন করেছিলেন। সেখানে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, “আমরা তথ্যের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কে নাগরিকদের প্রবেশের অধিকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছি। তবে আমরা কেন এত বিচলিত হব? আমরা আমাদের তরুনদের কেন বিশ্বাস করব না?” তাঁর কনফারেন্সের তিন মাস পর এই নতুন ঘোষণাটি এলো।  

নতুন বিধিমালার জন্য টুইটার ব্যবহারকারীরা নতুন প্রেসিডেন্টকে তাঁর সরকারের অধীনে খুব দ্রুততার সাথে সমালোচনা করেছেন। রুহানির প্রগতিশীল প্রচারাভিযান প্রতিশ্রুতিগুলোই ছিল ২০১৩ সালের নির্বাচনে তাঁর জয়ী হওয়ার মূলমন্ত্র। সে সব প্রতিশ্রুতির মাঝে আরও মুক্তভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারের নিশ্চয়তা ছিল অন্যতম একটি প্রতিশ্রুতি। 

নারিমান ঘারিব একজন ইন্টারনেট গবেষক এবং উৎসুক টুইটার ব্যবহারকারী। তিনি @লিসেনটুআস নামে পরিচিত। উন্মুক্ত ওয়েবের মূল তত্ত্বকে প্রকাশ্যে অপমান করতে তিনি নতুন এই নীতিমালার সমালোচনা করেছেনঃ  

“হাসান রুহানি এটিকে তাঁর করনীয় বিষয়ে পরিণত করেছেন। তিনি অবশ্যই জানবেন যে একবার কোন কিছু অনলাইনে প্রকাশিত হয়ে গেলে তা আর মুছে ফেলা যায় না। কোন বিষয় ইন্টারনেটে ঢুকে গেলে সেটি সেখানেই থেকে যায় এবং এটিকে আর নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।” 

“তথ্য স্বাধীনতা পরিস্থিতি নামে কিছু শব্দ আমরা জানি। মনে হয় জনাব রুহানি সে পরিস্থিতি দেশে আনতে চান না। তাঁর পরিবর্তে তিনি শিশুসুলভ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন।” 

ঘারিব নতুন ওয়েবসাইট নীতিমালা সম্পর্কে সমালোচনা করে একটি টুইট করেছেন। তাঁর টুইটে তিনি জনপ্রিয় স্লোগান, “রুহানি মোচাকেরিম” উদ্ধৃত করেছেনঃ  

“কৃতজ্ঞ? সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ঃ “সকল খবর প্রচারকারী ওয়েবসাইটকে লাইসেন্স নিতে হবে, নতুবা সেটিকে বন্ধ করে দেয়া হবে।”।”

২০১৩ সালে রুহানির জয়ী হওয়ার পর ইরানের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা (#روحانی_مچکریم) বাক্যাংশটি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করতে শুরু করেন। মধ্যপন্থী প্রেসিডেন্টের অধীনে এক নতুন যুগ শুরু হওয়ার আশা নিয়ে এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে তারা এই বাক্যাংশটি ব্যবহার করা শুরু করেন। মোচাকেরিম একটি ফার্সী শব্দ, যার অর্থ হচ্ছে “কৃতজ্ঞ”। তবে খুব দ্রুতই এটি চরমভাবে বিদ্রূপাত্মক একটি বাক্যাংশে পরিণত হয়। এটি রুহানির জনপ্রিয়তার এক নীরব উল্লেখ। বাক্যাংশটি এখনও জনগণের মনে রয়ে গেছে। যদিও তিনি দেশটিতে তেমন উল্লেখযোগ্যা কোন পরিবর্তনই আনতে পারেননি।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .