বাহরাইন, ইসরায়েল এবং আইএসআইএস এ চলছে ইলেক্ট্রনিক মুখোশ উন্মোচন

A photograph from www.B4BH.com calling  people who have any information about the child in the picture to share it in a campaign to reveal "traitors" in Bahrain.  The website, part of the electronic witch hunt which followed the Bahrain protests in 2011,  is called "Pictures of traitors of Bahrain" http://b4bh.com/album/categories.php?cat_id=441

বাহরাইনে “বিশ্বাসঘাতক”দের মুখোশ উন্মোচন করতে একটি প্রচারাভিযানে আহ্বান জানানো হয়েছে। www.B4BH.com থেকে পাওয়া এই ছবিটির শিশুটি সম্পর্কে কেউ জেনে থাকলে তা জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। ২০১১ সালে বাহরাইনে চলমান প্রতিবাদ সমাবেশে ইলেকট্রনিক ভাবে খোঁজার (উইচ-হান্টের) অংশ হিসেবে এই ওয়েবসাইটটিকে বলা হয় “বাহরাইনের বিশ্বাসঘাতকদের ছবি” 

কলিন্স ইংরেজী অভিধান উইচ-হান্টের সংজ্ঞায় বলছে, জনগণের কল্যাণকে সুরক্ষিত রাখার অজুহাতে ভিন্নমতাবলম্বীদের তাড়া করে বা গ্রেপ্তারের মাধ্যমে একত্রিত করা অথবা তাদেরকে বিদ্রোহী হিসেবে পরিচিতি দেয়ার একটি সরব প্রচারাভিযান হচ্ছে উইচ-হান্ট। 

বর্তমান সময়ে ইসরায়েল, বাহরাইন এবং ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক এ্যান্ড সিরিয়াতে (আইএসআইএস) ইলেক্ট্রনিক উইচ-হান্ট করা হচ্ছে।

ডাকিনীবিদ্যা অথবা আসুরিক বিভিন্ন কাজ করার সন্দেহে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে তাকে বিচারের অধীন করাকে ঐতিহাসিকভাবে উইচ-হান্ট বলা হয়। স্কটিশ সাংবাদিক চার্লস ম্যাকে তাঁর বইতে উইচ-হান্টকে “বিশেষ উদ্দেশ্যে নিযুক্ত জনপ্রিয় প্রতারণা এবং জনসাধারণের উন্মাদনা” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, উইচ-হান্টের অজুহাতে হাজার হাজার লোকের বিচার করে তাঁদের হত্যা করা হয়েছে। এসব মামলাতে একেবারে নিম্নমানের প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে। অনেক মামলার ক্ষেত্রে প্রতিবেশী অথবা সংশ্লিষ্ট অন্যান্যরা একে অন্যের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার উদ্দেশ্যে এ ধরনের মামলা সাজিয়েছে। 

ম্যাককারথিজম যুগ বা দ্বিতীয় লোহিত ত্রাসের সময়ে শব্দটি খুব বেশি ব্যবহার করা হয়েছিল। মার্কিন সিনেটর জোসেফ ম্যাককারথি সম্ভাব্য সাম্যবাদীতা সমর্থকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যখন একটি প্রচারণাতে আক্রমণের পুরোভাগে ছিলেন তখন তিনি এই কৌশল অনুসরণ করেছিলেন।

ইসরায়েল

গাজা যুদ্ধের বিরুদ্ধে যেসব ইসরায়েলি জনগণ প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, তাদেরকে মূলত উইচ-হান্টের শিকারে পরিণত করা হচ্ছে। তেল-আবিব ভিত্তিক গ্লোবাল ভয়েসেসের ইসরায়েলি লেখক এলিজাবেথ সুরকভ টুইট করেছেনঃ 

ডানপন্থী সৈন্যবাহিনী “শ্যাডোস লায়ন্স” ইজরায়েলের কাছে বিশ্বাসঘাতকদের ছবি [যুদ্ধের বিরোধিতা করে] চেয়েছে। 

আইএসআইএস

জিহাদি দল আইএসআইএস গত মাসে মসুলের কাছাকাছি অবস্থিত ইরাকের সোয়াত উপত্যকা দখল করে নিয়েছেন। মোটেও অবাক করা কোন বিষয় নয় যে তারা তাদের “বিরোধীদের” চিহ্নিত করতে একটি অনলাইন প্রচারাভিযান শুরু করেছেন। একটি টুইটার একাউন্টের মাধ্যমে তারা আইএসআইএস এর জন্য সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে নিহত কয়েকজন লোকের ছবি দিয়েছেন। লোকগুলোকে হত্যা করা হয়েছে। কারন, তারা আইএসআইএস বিরোধী ছিলেনঃ 

প্রতিহিংসা, প্রতিহিংসা! আলখাইর জেলার [আইএসআইএস সিরিয়ার দায়ের আলজুরকে যে নামে ডাকে] শাইতাত অঞ্চলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। (১) কয়েকজন নিখোঁজ লোকের ছবি।  

আইএসআইএস এর একই লোগো ব্যবহারকারী আরেকটি একাউন্ট থেকে আইএসআইএস এর সমর্থনে বিভিন্ন লেখা পোস্ট এবং টুইট করা হয়। একাউন্টটি থেকে ২ হাজার জন “বিরোধী” লোকের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তাদেরকে হত্যা করারও আহ্বান জানানো হয়েছেঃ 

২ হাজার লোকের নাম একটি লিঙ্ক থেকে প্রকাশ করা হয়েছে। তাদেরকে সৃষ্টিকর্তার নামে উৎসর্গ করা হবে। #ইসলামিক_স্টেট_অব_ইরাক_শাম  

ইরাক থেকে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে এক ঝাক জীবন্ত ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। ভিডিওগুলোতে আইএসআইএস “বিরোধী” হিসেবে চিহ্নিত কয়েকজন সংখ্যা লঘু লোকের মাথা কেটে ফেলতে দেখা গেছে।  

বাহরাইন 

ভার্চুয়াল দুনিয়াতে উইচ-হান্টের এই আধুনিক সংস্করণ দেখা যাচ্ছে। এগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে আগেই সেকেলে হয়ে গেছে। এর ফলে বাহরাইনে বিপুল সংখ্যক লোক গ্রেপ্তার এবং নির্যাতিত হচ্ছে। এই ছোট তেল সম্পদে পূর্ণ দ্বীপটিতে ২০১১ সালে একটি জনপ্রিয় উত্থান ঘটতে দেখা যায়। এই উত্থানের ফলে একটি রক্তাক্ত আন্দোলন সংঘটিত হয়। এই আন্দোলনের একটি অংশে জনগণকে “বিশ্বাসঘাতক” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় এবং তাদের ছবি শেয়ার করা হয়। সেই উইচ-হান্টের সময়ে সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মাদ খালিদ তাঁর সমর্থকদের উদ্দেশ্যে টুইট করেছেনঃ 

আমি আলফাতিহের [এটি একটি মসজিদের নাম, যা দিয়ে বাহরাইনের সরকার সমর্থকদেরকে আখ্যায়িত করা হয়] মহান লোকদের সেসব বিশ্বাসঘাতকদের ছবি প্রকাশ করতে বলছি। দেশকে ধ্বংস করে দিতে যখন হায়েনারা একটানা হুঙ্কার দিয়ে চলেছে, তখন আলোচনা চলাকালীন আলফাতিহরাই শান্তির পায়রা হয়ে আমাদের কাছে এসেছেন। 

অনেকগুলো পেজেই প্রতিবাদকারীদের ছবি পোস্ট করা শুরু হয়েছে। জনগণকে তাদের শনাক্ত করতে আহ্বান জানানো হয়েছে। ফলাফল স্বরূপ বিপুল সংখ্যক লোককে তাদের ছবি দেখে শনাক্ত করার পর গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এমনকি রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন চ্যানেলও এসব প্রচারাভিযানে অংশ নিয়েছে।

বাহরাইনের মোহাম্মাদ জালাল আলমোসাবি এই পরিস্থিতির ব্যাখ্যা দিয়ে টুইট করেছেনঃ 

(বিশ্বাসঘাতকদের খুঁজে বের করতে আমরা একতাবদ্ধ) [শিরোনামের ফেসবুক পেজটি ব্যবহার করে অনেক ভিন্নমতাবলম্বীদের শনাক্ত করা এবং গ্রেপ্তার করা হয়। পরে পেজটি সরিয়ে নেয়া হয়েছে] যাদের কাছে নিজের সহকর্মীদের ছবি আছে তারা ছবিগুলো পাঠিয়ে দিন…আপনাদের আত্মসম্মান বোধ কোথায় গেল? এটি নৈতিক অবক্ষয়ের এক নিলাম যেন। 

তাদের খুঁজে বের করতে বাহরাইনে এখনও “বিশ্বাসঘাতকদের ছবি” শিরোনামের একটি ওয়েব পেজ অনলাইনে রয়ে গেছে। যারা পেজটি শুরু করেছেন, এ ধরনের প্রচারাভিযানের প্রচার ঘটিয়েছেন বা এতে অংশ নিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করা হয়নি। ২০১১ সাল থেকে ইলেক্ট্রনিক উইচ-হান্ট বিকশিত হয়েছে। টুইটার এবং ইন্সটাগ্রাম ব্যবহারকারীদের শনাক্ত করতে এবং তাদেরকে গ্রেপ্তার করতে এখন স্পাইওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে। 

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .